শান্ত মামুন
১৪ ফেব্রæয়ারি, ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসর। ১৬টি দেশের ক্রিকেট তারকাদের মহামিলন ঘটবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। একটি শিরোপাকে লক্ষ্য করে ১৬টি দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরের মোকাবেলা করবে। থাকবে মন মাতানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। থাকবে ক্রিকেটীয় বিনোদন। এসব কিছু নিয়েই ‘এডুকেশন টুডে’ পাঠকদের জন্য বিশেষ আয়োজনÑ
বর্তমানে সারা বিশ্বে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশ বর্তমানে ক্রিকেট খেলে। আর উপমহাদেশের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রত্যাশার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে খেলাটির ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, আজ ক্রিকেট যে জায়গায় এসে সমৃদ্ধ হয়েছে তার যাত্রাকালে এরকম ছিল না। ক্রিকেট খেলার এত ফরম্যাটও ছিল না। বর্তমানে টেস্ট, ওয়ানডে, টি টোয়েন্টি তিন ধরণের ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ক্রিকেটের জনক কে তা নিয়ে আজো মতভেদ রয়েছে। তারপরেও ক্রিকেটের জন্মস্থান বলা হয় ইংল্যান্ডেকে। অবশ্য অনেকে মনে করেন যে, ক্রিকেটের জন্মটা হয় ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাব অঞ্চলের ‘দোয়াব’ এলাকায়। দক্ষিণ ভারতে ব্যাটকে বলা হত ডান্ডা। এটি ৭ম শতাব্দীতে চালু হয় বলে জানা যায়। তারপরেই খেলাটি ৮ম শতাব্দীর আরও কিছু পরে পারস্যের দিকে চালু হতে থাকে। এরপরই ইউরোপীয়দের মধ্যে খেলাটির প্রচলন হয়।
১০৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিজয়ের পর নরম্যানরা সেখানেও এই খেলাটা চালু করে। তখন শুধুমাত্র সপ্তাহের রোববার এই খেলাটি খেলা হতো। ১১৮৩ খ্রীস্টাব্দে জোসেফ অব এক্সেটার নামক লেখকের লেখা থেকে জানা যায়, একটি বল একজন ব্যাটসম্যানের দিকে ছুড়ে মারা হতো যার পিছনেই আজকের স্ট্যা¤েপর মতো তিনটি লাঠির কাঠামো থাকতো। ব্যাটসম্যানের হাতে থাকা কাঠের লাঠি থাকত। তিনি ওই লাঠি দিয়ে বলটিকে বাড়ি মারতো তার পিছনের তিনটি লাটিকে বলের আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য। আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতো ব্যাটসম্যানের বাড়ি মারা বলটিকে ধরতে। ঠিক অনেকটা আজকের দিনের ক্রিকেটের মতই।
কিন্তু ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের শুরুতেই আসে ক্রিকেটের উপর ধাক্কা। তখন নরম্যানদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজ্য জয়ের প্রতিযোগিতা। ক্রিকেট খেলার কারণে যুদ্ধ করার মতো প্রয়োজনীয় সৈনিক পাওয়া যাচ্ছিল না বলে রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড ইংল্যান্ডে ওই সময়ে ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করেন। নিষেধ অমান্য করলেই ছিল শাস্তির ব্যবস্থা। তবে ১৫০০ সালের পর এই ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হতে থাকে। ফলে ক্রিকেটের উন্নয়নে আর কোন বাধাই আর সামনে দাঁড়াতে পারে নি।
মূলত যখন থেকে কাউন্টি ম্যাচ খেলা শুরু হয় তখন থেকেই আধুনিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু। প্রথম ম্যাচটি ছিল ১৭১৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও কেন্ট দলের মধ্যে। আর আমাদের ভারতবর্ষে ১৭২১ সালে আধুনিক ক্রিকেটের প্রচলন হয়। এরপর ১৮৭৭ সালে এসে জন্ম নেয় টেস্ট ক্রিকেট। ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ প্রথম টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও অংশ গ্রহণ করে এই দুটি দল। দুই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া জয় লাভ করে।
যখন বিভিন্ন দেশে ক্রিকেটর খেলার প্রচলন শুরু হলো তখন বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে ‘ই¤েপরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে। পরে ১৯৫৬ সালে ‘ই¤েপরিয়াল’ কথাটি পরিবর্তন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল’ শব্দটি যোগ করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল’ রাখা হয়। যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ‘আইসিসি’।
শুরুর দিকে টেস্ট ম্যাচগুলোর নির্দিষ্ট কোনো দিনের হিসাব ছিল না। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে আসে আরো ব্যাপক পরিবর্তন। জিলেট কাপ নামে ৬০ ওভারের এক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ইংল্যান্ডে। এরও অনেক পরে ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের শুরু হয়। তারপর শুরু হয় বিশ্বকাপের ধারণা।
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ‘আইসিসি’ ক্রিকেট খেলুড়ে সবগুলো দেশ একসাথে নিয়ে নতুন এক টুর্নামেন্টের চিন্তা করে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই ১৯৭৫ সালের ৭ জুন প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা ওঠে। প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। সেই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, পূর্ব আফ্রিকা, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করে। এতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড।
পরের দুই বিশ্বকাপ যথাক্রমে ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালেও ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফির প্রবর্তন করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় কেবলমাত্র টেস্ট ক্রিকেট বহির্ভূত শ্রীলঙ্কা ও কানাডা দলকে বিশ্বকাপের জন্য মনোনীত করা হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯২ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে পুণরায় শিরোপা জয় করে। বিশ্বকাপ চলাকালীন এক সভায় আইসিসি প্রতি চার বছর অন্তর বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা দল টেস্টভ‚ক্ত দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে। আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে জিম্বাবুয়ে দলও বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। ফাইনাল খেলায় শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ৪৩ রানের ব্যবধানে পরাভ‚ত করে অঘটন ঘটায় ও প্রথমবারের মতো শিরোপা লাভ করে ভারত। অথচ প্রতিযোগিতার শুরুতে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে।
১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ভারত ও পাকিস্তানে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে এটিই প্রথম বিশ্বকাপ যা ইংল্যান্ডের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়াও, প্রথম প্রতিযোগিতা হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি। ইংল্যান্ডের সাথে সময়ের পার্থক্যজনিত কারণে দলের ইনিংসে ৬০-ওভারের পরিবর্তে ৫০-ওভারে নির্ধারণ করা হয়। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে শিরোপা লাভ করে। যা বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বল্প ব্যবধানের জয় হিসেবে এখনও বহাল।
১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। রঙিন পোশাক, সাদা বলের ব্যবহার, দিবারাত্রির খেলা এবং ফিল্ডিংয়ের সীমাবদ্ধতার পরিবর্তন ইত্যাদির প্রবর্তন ঘটানো হয় এ বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। পাকিস্তানকে শুরুতে কেউ হিসেবে না রাখলেও ইমরান খানের অসাধারণ নেতৃত্বে পাকিস্তানই ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে পরাজিত করে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পায়।
১৯৯৬ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলংকা ক্রিকেট দল। এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলংকা।
ষোল বছর পর ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে আবারও বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ফিরে আসে। আর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য তো ইতিহাসই। কারণ, ১৯৯৯ সালেই বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালের মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেনিয়াকে হারিয়ে এ যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। প্রথম আসরে অংশ নিয়েই বাংলাদেশ স্কটল্যান্ড এবং শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়। এ বছর চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তারা পাকিস্তানকে মাত্র ১৩২ রানে অল-আউট করে দিয়ে ৮ উইকেটে জয়লাভ করে। এ বছর থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য। ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপেও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তারা ভারতকে ১২৫ রানে পরাজিত করে। ২০০৭ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয়ের হ্যাটট্রিক করে। এই টুর্নামেন্টেও তারা অপরাজিত থাকে।
২০১১ বিশ্বকাপ ফিরে আসে উপমহাদেশে। ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই উপমহাদেশের দল ভারতই বিশ্বকাপ জয় করে। ভারতের কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান। ফাইনালে ভারত উপমহাদেশের আরেক প্রতিদ্ব›দ্বী শ্রীলংকাকে পরাজিত করে।
এবার আসা যাক ২০১৫ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে এই বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ। বিশ্বকাপের উদ্বোধন হবে নিউজিল্যান্ডে। আর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়। এটা হবে আইসিসি বিশ্বকাপের ১১তম আসর। এ আসরে ১৬টি দল দুটি গ্রæপে ভাগ হয়ে অংশগ্রহণ করবে। গ্রæপ এ’তে খেলবে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আফগানিস্তান। অন্যদিকে গ্রæপ বি’তে খেলবে, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, আরব আমিরাত।
বিশ্বকাপে সবসময়ই স্বাগতিক দেশ ফেভারিট থাকে। এবার যেহেতু অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ফেভারিট তালিকায় থাকবেই। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া সা¤প্রতিক সময়ে যে ফর্মে রয়েছে তাতে তারা পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের আশায় বুক বাধতেই পারেন। বিশ্বকাপের আগে তিন জাতির সিরিজে যেভাবে ভারত ও ইংল্যান্ডকে তারা নাস্তানুবাদ করেছে তাতে এশিয়ার সেরা দল ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে নিয়ে বড় আশা করা যায় না। অন্যদিকে ২০১১ বিশ্বকাপের রানারআপ দল শ্রীলংকাকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে নাস্তানুবাদ করে ছেড়েছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানও নিউজিল্যান্ডের একাডেমি দলের সঙ্গে টানা ২ ম্যাচ হেরেছে। এ থেকেই একটা ধারণা করা যায় যে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডই ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ফেভারিট।
বর্তমান অস্ট্রেলিয়াই সবচেয়ে ব্যালেন্সড দল। তাদের রয়েছে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারোন ফিঞ্চ, শেন ওয়াটসন ও গেøন ম্যাক্সওয়েলের মতো হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। আরও রয়েছেন আস্থার প্রতীক স্টিভেন স্মিথ, দলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, অলরাউন্ডার জেমস ফকনার। বোলিংয়ে আছেন মিচেল জনসন, মাইকেল স্টার্ক, হ্যাজেলউডসহ তারকারা।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তারা সবসময়ই ভয়ংকর। বর্তমান সময়ে ভালো ফর্মেও রয়েছে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় তারকা হচ্ছে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও রস টেইলর। এছাড়া রয়েছেন তরুন কোরে এন্ডারসন, উইলিয়ামসনরা। বোলিংয়ে দুর্দান্ত গতির টিম সাউর্দির সঙ্গে ট্রেন্ট বোল্টও রয়েছেন।
১৯৯৬ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রত্যেক বিশ্বকাপেই ফেভারিট থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু তাদের বিশ্বকাপ ভাগ্য খুবই খারাপ। বিশ্বকাপ মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো ট্রাজেডি লুকিয়ে থাকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ট্রাজেডি এখনও ভুলেনি ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১৫ বিশ্বকাপেও ফেভারিট তালিকায় প্রথম দিকেই থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশেষ করে বিশ্বকাপের আগের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে যেভাবে তারা ছেলেখেলা খেলল। সেটা দেখে ক্রিকেটবোদ্ধারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে আশা করতেই পারেন। টিম দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং বোলিং সম্পূর্ণ ব্যালেন্সড। ব্যাটিংয়ে হাশিম আমলা একের পর এক প্রত্যাশিত ইনিংস খেলে যাচ্ছেন। নির্ভর হয়ে উঠেছেন ডু প্লেসিস। যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বের করে আনতে সক্ষম জেপি ডুমিনি ও ডেভিড মিলার। আর সবচেয়ে বড় ব্যাটিং তাকার নাম হচ্ছে এবিডি ভিলিয়ার্স। বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে দ্রæততম সেঞ্চুরির মালিক যিনি। বর্তমান ওয়ানডে ক্রিকেটের নাম্বার ওয়ান র্যাংকিংধারী খেলোয়াড়ও তিনি। বোলিংয়েও এক নাম্বার র্যাংকিংধারী ডেল স্টেইন। যার একার বোলিংয়েই তছনছ হয়ে যেতে পারে বিপক্ষের ব্যাটিং লাইন।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে যতই ভরাডুবি হোক তবুও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকেও রাখতে হবে হিসেবে। কারণ ওয়ানডেতে ভারত অন্য এক টিম। ভিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, শেখর ধাওয়ান, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মাদের নিয়ে গড়া ভারতের ব্যাটিং লাইন খুবই শক্তিশালী। তারা যেকোন দলের বিপক্ষেই চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তাদের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ দিক হচ্ছে বোলিং। এক ভ‚বেনশ্বর কুমার ছাড়া আর কারও ওপরই বড় কিছু আশা করা যায় না।
বিশ্বকাপ আসলেই বদলে যাওয়া দলের নাম হচ্ছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে পাকিস্তান তাদের সেরা খেলাটা খেলে থাকে। এজন্যই তাদের নাম আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। পাকিস্তান দলে এবারও রয়েছেন অভিজ্ঞ শহীদ আফ্রিদি। রয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ, আহমেদ শেহজাদ ও অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। বোলিংয়ে রয়েছেন মোঃ ইরফান ও জুনায়েদ খানরা।
টিম শ্রীলংকাকে বিশ্বকাপে হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। বিশেষ করে তাদের তিন অভিজ্ঞ কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও তিলকারতেœ দিলশানের ওপর আলাদা করে নজর রাখতেই হবে। এছাড়া রয়েছেন ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সমান পারদর্শী অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস। রয়েছেন ল্যাসিথ মালিঙ্গা।
ইংল্যান্ড দলে তারুণ্যের সংমিশ্রনে বিশ্বকাপ। দলীয় অধিনায়ক ইয়ন মরগান, রয়েছেন তরুন অলরাউন্ডার স্টুয়ার্ট ব্রড, ব্যাটসম্যান ইয়ান বেল, বোলার জেমস এন্ডারসনরা।
এরপরই আসে বাংলাদেশের নাম। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সংমিশ্রনে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। দলে রয়েছেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, রয়েছেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি মর্তুজা।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটর দলের বর্তমান অবস্থা ও পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। বিশ্বকাপের আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা পেয়েছে। বাকি দলগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ডের চমক দেখানোর যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে আফগানিস্তানও যথেষ্ট অঘটনা ঘটানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মামুন হোসেন
১৪ ফেব্রæয়ারি, ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসর। ১৬টি দেশের ক্রিকেট তারকাদের মহামিলন ঘটবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। একটি শিরোপাকে লক্ষ্য করে ১৬টি দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরের মোকাবেলা করবে। থাকবে মন মাতানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। থাকবে ক্রিকেটীয় বিনোদন। এসব কিছু নিয়েই ‘এডুকেশন টুডে’ পাঠকদের জন্য বিশেষ আয়োজনÑ
বর্তমানে সারা বিশ্বে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশ বর্তমানে ক্রিকেট খেলে। আর উপমহাদেশের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রত্যাশার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে খেলাটির ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, আজ ক্রিকেট যে জায়গায় এসে সমৃদ্ধ হয়েছে তার যাত্রাকালে এরকম ছিল না। ক্রিকেট খেলার এত ফরম্যাটও ছিল না। বর্তমানে টেস্ট, ওয়ানডে, টি টোয়েন্টি তিন ধরণের ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ক্রিকেটের জনক কে তা নিয়ে আজো মতভেদ রয়েছে। তারপরেও ক্রিকেটের জন্মস্থান বলা হয় ইংল্যান্ডেকে। অবশ্য অনেকে মনে করেন যে, ক্রিকেটের জন্মটা হয় ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাব অঞ্চলের ‘দোয়াব’ এলাকায়। দক্ষিণ ভারতে ব্যাটকে বলা হত ডান্ডা। এটি ৭ম শতাব্দীতে চালু হয় বলে জানা যায়। তারপরেই খেলাটি ৮ম শতাব্দীর আরও কিছু পরে পারস্যের দিকে চালু হতে থাকে। এরপরই ইউরোপীয়দের মধ্যে খেলাটির প্রচলন হয়।
১০৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিজয়ের পর নরম্যানরা সেখানেও এই খেলাটা চালু করে। তখন শুধুমাত্র সপ্তাহের রোববার এই খেলাটি খেলা হতো। ১১৮৩ খ্রীস্টাব্দে জোসেফ অব এক্সেটার নামক লেখকের লেখা থেকে জানা যায়, একটি বল একজন ব্যাটসম্যানের দিকে ছুড়ে মারা হতো যার পিছনেই আজকের স্ট্যা¤েপর মতো তিনটি লাঠির কাঠামো থাকতো। ব্যাটসম্যানের হাতে থাকা কাঠের লাঠি থাকত। তিনি ওই লাঠি দিয়ে বলটিকে বাড়ি মারতো তার পিছনের তিনটি লাটিকে বলের আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য। আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতো ব্যাটসম্যানের বাড়ি মারা বলটিকে ধরতে। ঠিক অনেকটা আজকের দিনের ক্রিকেটের মতই।
কিন্তু ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের শুরুতেই আসে ক্রিকেটের উপর ধাক্কা। তখন নরম্যানদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজ্য জয়ের প্রতিযোগিতা। ক্রিকেট খেলার কারণে যুদ্ধ করার মতো প্রয়োজনীয় সৈনিক পাওয়া যাচ্ছিল না বলে রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড ইংল্যান্ডে ওই সময়ে ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করেন। নিষেধ অমান্য করলেই ছিল শাস্তির ব্যবস্থা। তবে ১৫০০ সালের পর এই ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হতে থাকে। ফলে ক্রিকেটের উন্নয়নে আর কোন বাধাই আর সামনে দাঁড়াতে পারে নি।
মূলত যখন থেকে কাউন্টি ম্যাচ খেলা শুরু হয় তখন থেকেই আধুনিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু। প্রথম ম্যাচটি ছিল ১৭১৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও কেন্ট দলের মধ্যে। আর আমাদের ভারতবর্ষে ১৭২১ সালে আধুনিক ক্রিকেটের প্রচলন হয়। এরপর ১৮৭৭ সালে এসে জন্ম নেয় টেস্ট ক্রিকেট। ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ প্রথম টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও অংশ গ্রহণ করে এই দুটি দল। দুই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া জয় লাভ করে।
যখন বিভিন্ন দেশে ক্রিকেটর খেলার প্রচলন শুরু হলো তখন বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে ‘ই¤েপরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে। পরে ১৯৫৬ সালে ‘ই¤েপরিয়াল’ কথাটি পরিবর্তন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল’ শব্দটি যোগ করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল’ রাখা হয়। যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ‘আইসিসি’।
শুরুর দিকে টেস্ট ম্যাচগুলোর নির্দিষ্ট কোনো দিনের হিসাব ছিল না। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে আসে আরো ব্যাপক পরিবর্তন। জিলেট কাপ নামে ৬০ ওভারের এক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ইংল্যান্ডে। এরও অনেক পরে ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের শুরু হয়। তারপর শুরু হয় বিশ্বকাপের ধারণা।
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ‘আইসিসি’ ক্রিকেট খেলুড়ে সবগুলো দেশ একসাথে নিয়ে নতুন এক টুর্নামেন্টের চিন্তা করে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই ১৯৭৫ সালের ৭ জুন প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা ওঠে। প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। সেই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, পূর্ব আফ্রিকা, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করে। এতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড।
পরের দুই বিশ্বকাপ যথাক্রমে ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালেও ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফির প্রবর্তন করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় কেবলমাত্র টেস্ট ক্রিকেট বহির্ভূত শ্রীলঙ্কা ও কানাডা দলকে বিশ্বকাপের জন্য মনোনীত করা হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯২ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে পুণরায় শিরোপা জয় করে। বিশ্বকাপ চলাকালীন এক সভায় আইসিসি প্রতি চার বছর অন্তর বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা দল টেস্টভ‚ক্ত দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে। আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে জিম্বাবুয়ে দলও বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। ফাইনাল খেলায় শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ৪৩ রানের ব্যবধানে পরাভ‚ত করে অঘটন ঘটায় ও প্রথমবারের মতো শিরোপা লাভ করে ভারত। অথচ প্রতিযোগিতার শুরুতে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে।
১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ভারত ও পাকিস্তানে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে এটিই প্রথম বিশ্বকাপ যা ইংল্যান্ডের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়াও, প্রথম প্রতিযোগিতা হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি। ইংল্যান্ডের সাথে সময়ের পার্থক্যজনিত কারণে দলের ইনিংসে ৬০-ওভারের পরিবর্তে ৫০-ওভারে নির্ধারণ করা হয়। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে শিরোপা লাভ করে। যা বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বল্প ব্যবধানের জয় হিসেবে এখনও বহাল।
১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। রঙিন পোশাক, সাদা বলের ব্যবহার, দিবারাত্রির খেলা এবং ফিল্ডিংয়ের সীমাবদ্ধতার পরিবর্তন ইত্যাদির প্রবর্তন ঘটানো হয় এ বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। পাকিস্তানকে শুরুতে কেউ হিসেবে না রাখলেও ইমরান খানের অসাধারণ নেতৃত্বে পাকিস্তানই ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে পরাজিত করে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পায়।
১৯৯৬ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলংকা ক্রিকেট দল। এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলংকা।
ষোল বছর পর ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে আবারও বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ফিরে আসে। আর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য তো ইতিহাসই। কারণ, ১৯৯৯ সালেই বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালের মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেনিয়াকে হারিয়ে এ যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। প্রথম আসরে অংশ নিয়েই বাংলাদেশ স্কটল্যান্ড এবং শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়। এ বছর চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তারা পাকিস্তানকে মাত্র ১৩২ রানে অল-আউট করে দিয়ে ৮ উইকেটে জয়লাভ করে। এ বছর থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য। ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপেও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তারা ভারতকে ১২৫ রানে পরাজিত করে। ২০০৭ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয়ের হ্যাটট্রিক করে। এই টুর্নামেন্টেও তারা অপরাজিত থাকে।
২০১১ বিশ্বকাপ ফিরে আসে উপমহাদেশে। ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই উপমহাদেশের দল ভারতই বিশ্বকাপ জয় করে। ভারতের কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান। ফাইনালে ভারত উপমহাদেশের আরেক প্রতিদ্ব›দ্বী শ্রীলংকাকে পরাজিত করে।
এবার আসা যাক ২০১৫ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে এই বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ। বিশ্বকাপের উদ্বোধন হবে নিউজিল্যান্ডে। আর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়। এটা হবে আইসিসি বিশ্বকাপের ১১তম আসর। এ আসরে ১৬টি দল দুটি গ্রæপে ভাগ হয়ে অংশগ্রহণ করবে। গ্রæপ এ’তে খেলবে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আফগানিস্তান। অন্যদিকে গ্রæপ বি’তে খেলবে, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, আরব আমিরাত।
বিশ্বকাপে সবসময়ই স্বাগতিক দেশ ফেভারিট থাকে। এবার যেহেতু অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ফেভারিট তালিকায় থাকবেই। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া সা¤প্রতিক সময়ে যে ফর্মে রয়েছে তাতে তারা পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের আশায় বুক বাধতেই পারেন। বিশ্বকাপের আগে তিন জাতির সিরিজে যেভাবে ভারত ও ইংল্যান্ডকে তারা নাস্তানুবাদ করেছে তাতে এশিয়ার সেরা দল ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে নিয়ে বড় আশা করা যায় না। অন্যদিকে ২০১১ বিশ্বকাপের রানারআপ দল শ্রীলংকাকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে নাস্তানুবাদ করে ছেড়েছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানও নিউজিল্যান্ডের একাডেমি দলের সঙ্গে টানা ২ ম্যাচ হেরেছে। এ থেকেই একটা ধারণা করা যায় যে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডই ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ফেভারিট।
বর্তমান অস্ট্রেলিয়াই সবচেয়ে ব্যালেন্সড দল। তাদের রয়েছে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারোন ফিঞ্চ, শেন ওয়াটসন ও গেøন ম্যাক্সওয়েলের মতো হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। আরও রয়েছেন আস্থার প্রতীক স্টিভেন স্মিথ, দলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, অলরাউন্ডার জেমস ফকনার। বোলিংয়ে আছেন মিচেল জনসন, মাইকেল স্টার্ক, হ্যাজেলউডসহ তারকারা।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তারা সবসময়ই ভয়ংকর। বর্তমান সময়ে ভালো ফর্মেও রয়েছে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় তারকা হচ্ছে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও রস টেইলর। এছাড়া রয়েছেন তরুন কোরে এন্ডারসন, উইলিয়ামসনরা। বোলিংয়ে দুর্দান্ত গতির টিম সাউর্দির সঙ্গে ট্রেন্ট বোল্টও রয়েছেন।
১৯৯৬ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রত্যেক বিশ্বকাপেই ফেভারিট থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু তাদের বিশ্বকাপ ভাগ্য খুবই খারাপ। বিশ্বকাপ মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো ট্রাজেডি লুকিয়ে থাকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ট্রাজেডি এখনও ভুলেনি ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১৫ বিশ্বকাপেও ফেভারিট তালিকায় প্রথম দিকেই থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশেষ করে বিশ্বকাপের আগের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে যেভাবে তারা ছেলেখেলা খেলল। সেটা দেখে ক্রিকেটবোদ্ধারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে আশা করতেই পারেন। টিম দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং বোলিং সম্পূর্ণ ব্যালেন্সড। ব্যাটিংয়ে হাশিম আমলা একের পর এক প্রত্যাশিত ইনিংস খেলে যাচ্ছেন। নির্ভর হয়ে উঠেছেন ডু প্লেসিস। যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বের করে আনতে সক্ষম জেপি ডুমিনি ও ডেভিড মিলার। আর সবচেয়ে বড় ব্যাটিং তাকার নাম হচ্ছে এবিডি ভিলিয়ার্স। বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে দ্রæততম সেঞ্চুরির মালিক যিনি। বর্তমান ওয়ানডে ক্রিকেটের নাম্বার ওয়ান র্যাংকিংধারী খেলোয়াড়ও তিনি। বোলিংয়েও এক নাম্বার র্যাংকিংধারী ডেল স্টেইন। যার একার বোলিংয়েই তছনছ হয়ে যেতে পারে বিপক্ষের ব্যাটিং লাইন।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে যতই ভরাডুবি হোক তবুও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকেও রাখতে হবে হিসেবে। কারণ ওয়ানডেতে ভারত অন্য এক টিম। ভিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, শেখর ধাওয়ান, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মাদের নিয়ে গড়া ভারতের ব্যাটিং লাইন খুবই শক্তিশালী। তারা যেকোন দলের বিপক্ষেই চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তাদের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ দিক হচ্ছে বোলিং। এক ভ‚বেনশ্বর কুমার ছাড়া আর কারও ওপরই বড় কিছু আশা করা যায় না।
বিশ্বকাপ আসলেই বদলে যাওয়া দলের নাম হচ্ছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে পাকিস্তান তাদের সেরা খেলাটা খেলে থাকে। এজন্যই তাদের নাম আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। পাকিস্তান দলে এবারও রয়েছেন অভিজ্ঞ শহীদ আফ্রিদি। রয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ, আহমেদ শেহজাদ ও অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। বোলিংয়ে রয়েছেন মোঃ ইরফান ও জুনায়েদ খানরা।
টিম শ্রীলংকাকে বিশ্বকাপে হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। বিশেষ করে তাদের তিন অভিজ্ঞ কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও তিলকারতেœ দিলশানের ওপর আলাদা করে নজর রাখতেই হবে। এছাড়া রয়েছেন ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সমান পারদর্শী অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস। রয়েছেন ল্যাসিথ মালিঙ্গা।
ইংল্যান্ড দলে তারুণ্যের সংমিশ্রনে বিশ্বকাপ। দলীয় অধিনায়ক ইয়ন মরগান, রয়েছেন তরুন অলরাউন্ডার স্টুয়ার্ট ব্রড, ব্যাটসম্যান ইয়ান বেল, বোলার জেমস এন্ডারসনরা।
এরপরই আসে বাংলাদেশের নাম। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সংমিশ্রনে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। দলে রয়েছেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, রয়েছেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি মর্তুজা।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটর দলের বর্তমান অবস্থা ও পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। বিশ্বকাপের আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা পেয়েছে। বাকি দলগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ডের চমক দেখানোর যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে আফগানিস্তানও যথেষ্ট অঘটনা ঘটানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।ম
১৪ ফেব্রæয়ারি, ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসর। ১৬টি দেশের ক্রিকেট তারকাদের মহামিলন ঘটবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। একটি শিরোপাকে লক্ষ্য করে ১৬টি দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরের মোকাবেলা করবে। থাকবে মন মাতানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। থাকবে ক্রিকেটীয় বিনোদন। এসব কিছু নিয়েই ‘এডুকেশন টুডে’ পাঠকদের জন্য বিশেষ আয়োজনÑ
বর্তমানে সারা বিশ্বে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশ বর্তমানে ক্রিকেট খেলে। আর উপমহাদেশের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রত্যাশার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে খেলাটির ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, আজ ক্রিকেট যে জায়গায় এসে সমৃদ্ধ হয়েছে তার যাত্রাকালে এরকম ছিল না। ক্রিকেট খেলার এত ফরম্যাটও ছিল না। বর্তমানে টেস্ট, ওয়ানডে, টি টোয়েন্টি তিন ধরণের ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ক্রিকেটের জনক কে তা নিয়ে আজো মতভেদ রয়েছে। তারপরেও ক্রিকেটের জন্মস্থান বলা হয় ইংল্যান্ডেকে। অবশ্য অনেকে মনে করেন যে, ক্রিকেটের জন্মটা হয় ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাব অঞ্চলের ‘দোয়াব’ এলাকায়। দক্ষিণ ভারতে ব্যাটকে বলা হত ডান্ডা। এটি ৭ম শতাব্দীতে চালু হয় বলে জানা যায়। তারপরেই খেলাটি ৮ম শতাব্দীর আরও কিছু পরে পারস্যের দিকে চালু হতে থাকে। এরপরই ইউরোপীয়দের মধ্যে খেলাটির প্রচলন হয়।
১০৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিজয়ের পর নরম্যানরা সেখানেও এই খেলাটা চালু করে। তখন শুধুমাত্র সপ্তাহের রোববার এই খেলাটি খেলা হতো। ১১৮৩ খ্রীস্টাব্দে জোসেফ অব এক্সেটার নামক লেখকের লেখা থেকে জানা যায়, একটি বল একজন ব্যাটসম্যানের দিকে ছুড়ে মারা হতো যার পিছনেই আজকের স্ট্যা¤েপর মতো তিনটি লাঠির কাঠামো থাকতো। ব্যাটসম্যানের হাতে থাকা কাঠের লাঠি থাকত। তিনি ওই লাঠি দিয়ে বলটিকে বাড়ি মারতো তার পিছনের তিনটি লাটিকে বলের আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য। আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতো ব্যাটসম্যানের বাড়ি মারা বলটিকে ধরতে। ঠিক অনেকটা আজকের দিনের ক্রিকেটের মতই।
কিন্তু ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের শুরুতেই আসে ক্রিকেটের উপর ধাক্কা। তখন নরম্যানদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজ্য জয়ের প্রতিযোগিতা। ক্রিকেট খেলার কারণে যুদ্ধ করার মতো প্রয়োজনীয় সৈনিক পাওয়া যাচ্ছিল না বলে রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড ইংল্যান্ডে ওই সময়ে ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করেন। নিষেধ অমান্য করলেই ছিল শাস্তির ব্যবস্থা। তবে ১৫০০ সালের পর এই ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হতে থাকে। ফলে ক্রিকেটের উন্নয়নে আর কোন বাধাই আর সামনে দাঁড়াতে পারে নি।
মূলত যখন থেকে কাউন্টি ম্যাচ খেলা শুরু হয় তখন থেকেই আধুনিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু। প্রথম ম্যাচটি ছিল ১৭১৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও কেন্ট দলের মধ্যে। আর আমাদের ভারতবর্ষে ১৭২১ সালে আধুনিক ক্রিকেটের প্রচলন হয়। এরপর ১৮৭৭ সালে এসে জন্ম নেয় টেস্ট ক্রিকেট। ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ প্রথম টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও অংশ গ্রহণ করে এই দুটি দল। দুই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া জয় লাভ করে।
যখন বিভিন্ন দেশে ক্রিকেটর খেলার প্রচলন শুরু হলো তখন বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে ‘ই¤েপরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে। পরে ১৯৫৬ সালে ‘ই¤েপরিয়াল’ কথাটি পরিবর্তন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল’ শব্দটি যোগ করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল’ রাখা হয়। যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ‘আইসিসি’।
শুরুর দিকে টেস্ট ম্যাচগুলোর নির্দিষ্ট কোনো দিনের হিসাব ছিল না। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে আসে আরো ব্যাপক পরিবর্তন। জিলেট কাপ নামে ৬০ ওভারের এক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ইংল্যান্ডে। এরও অনেক পরে ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের শুরু হয়। তারপর শুরু হয় বিশ্বকাপের ধারণা।
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ‘আইসিসি’ ক্রিকেট খেলুড়ে সবগুলো দেশ একসাথে নিয়ে নতুন এক টুর্নামেন্টের চিন্তা করে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই ১৯৭৫ সালের ৭ জুন প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা ওঠে। প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। সেই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, পূর্ব আফ্রিকা, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করে। এতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড।
পরের দুই বিশ্বকাপ যথাক্রমে ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালেও ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফির প্রবর্তন করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় কেবলমাত্র টেস্ট ক্রিকেট বহির্ভূত শ্রীলঙ্কা ও কানাডা দলকে বিশ্বকাপের জন্য মনোনীত করা হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯২ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে পুণরায় শিরোপা জয় করে। বিশ্বকাপ চলাকালীন এক সভায় আইসিসি প্রতি চার বছর অন্তর বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা দল টেস্টভ‚ক্ত দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে। আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে জিম্বাবুয়ে দলও বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। ফাইনাল খেলায় শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ৪৩ রানের ব্যবধানে পরাভ‚ত করে অঘটন ঘটায় ও প্রথমবারের মতো শিরোপা লাভ করে ভারত। অথচ প্রতিযোগিতার শুরুতে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে।
১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ভারত ও পাকিস্তানে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে এটিই প্রথম বিশ্বকাপ যা ইংল্যান্ডের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়াও, প্রথম প্রতিযোগিতা হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি। ইংল্যান্ডের সাথে সময়ের পার্থক্যজনিত কারণে দলের ইনিংসে ৬০-ওভারের পরিবর্তে ৫০-ওভারে নির্ধারণ করা হয়। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে শিরোপা লাভ করে। যা বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বল্প ব্যবধানের জয় হিসেবে এখনও বহাল।
১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। রঙিন পোশাক, সাদা বলের ব্যবহার, দিবারাত্রির খেলা এবং ফিল্ডিংয়ের সীমাবদ্ধতার পরিবর্তন ইত্যাদির প্রবর্তন ঘটানো হয় এ বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। পাকিস্তানকে শুরুতে কেউ হিসেবে না রাখলেও ইমরান খানের অসাধারণ নেতৃত্বে পাকিস্তানই ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে পরাজিত করে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পায়।
১৯৯৬ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলংকা ক্রিকেট দল। এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলংকা।
ষোল বছর পর ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে আবারও বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ফিরে আসে। আর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য তো ইতিহাসই। কারণ, ১৯৯৯ সালেই বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালের মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেনিয়াকে হারিয়ে এ যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। প্রথম আসরে অংশ নিয়েই বাংলাদেশ স্কটল্যান্ড এবং শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়। এ বছর চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তারা পাকিস্তানকে মাত্র ১৩২ রানে অল-আউট করে দিয়ে ৮ উইকেটে জয়লাভ করে। এ বছর থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য। ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপেও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তারা ভারতকে ১২৫ রানে পরাজিত করে। ২০০৭ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয়ের হ্যাটট্রিক করে। এই টুর্নামেন্টেও তারা অপরাজিত থাকে।
২০১১ বিশ্বকাপ ফিরে আসে উপমহাদেশে। ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই উপমহাদেশের দল ভারতই বিশ্বকাপ জয় করে। ভারতের কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান। ফাইনালে ভারত উপমহাদেশের আরেক প্রতিদ্ব›দ্বী শ্রীলংকাকে পরাজিত করে।
এবার আসা যাক ২০১৫ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে এই বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ। বিশ্বকাপের উদ্বোধন হবে নিউজিল্যান্ডে। আর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়। এটা হবে আইসিসি বিশ্বকাপের ১১তম আসর। এ আসরে ১৬টি দল দুটি গ্রæপে ভাগ হয়ে অংশগ্রহণ করবে। গ্রæপ এ’তে খেলবে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আফগানিস্তান। অন্যদিকে গ্রæপ বি’তে খেলবে, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, আরব আমিরাত।
বিশ্বকাপে সবসময়ই স্বাগতিক দেশ ফেভারিট থাকে। এবার যেহেতু অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ফেভারিট তালিকায় থাকবেই। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া সা¤প্রতিক সময়ে যে ফর্মে রয়েছে তাতে তারা পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের আশায় বুক বাধতেই পারেন। বিশ্বকাপের আগে তিন জাতির সিরিজে যেভাবে ভারত ও ইংল্যান্ডকে তারা নাস্তানুবাদ করেছে তাতে এশিয়ার সেরা দল ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে নিয়ে বড় আশা করা যায় না। অন্যদিকে ২০১১ বিশ্বকাপের রানারআপ দল শ্রীলংকাকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে নাস্তানুবাদ করে ছেড়েছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানও নিউজিল্যান্ডের একাডেমি দলের সঙ্গে টানা ২ ম্যাচ হেরেছে। এ থেকেই একটা ধারণা করা যায় যে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডই ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ফেভারিট।
বর্তমান অস্ট্রেলিয়াই সবচেয়ে ব্যালেন্সড দল। তাদের রয়েছে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারোন ফিঞ্চ, শেন ওয়াটসন ও গেøন ম্যাক্সওয়েলের মতো হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। আরও রয়েছেন আস্থার প্রতীক স্টিভেন স্মিথ, দলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, অলরাউন্ডার জেমস ফকনার। বোলিংয়ে আছেন মিচেল জনসন, মাইকেল স্টার্ক, হ্যাজেলউডসহ তারকারা।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তারা সবসময়ই ভয়ংকর। বর্তমান সময়ে ভালো ফর্মেও রয়েছে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় তারকা হচ্ছে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও রস টেইলর। এছাড়া রয়েছেন তরুন কোরে এন্ডারসন, উইলিয়ামসনরা। বোলিংয়ে দুর্দান্ত গতির টিম সাউর্দির সঙ্গে ট্রেন্ট বোল্টও রয়েছেন।
১৯৯৬ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রত্যেক বিশ্বকাপেই ফেভারিট থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু তাদের বিশ্বকাপ ভাগ্য খুবই খারাপ। বিশ্বকাপ মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো ট্রাজেডি লুকিয়ে থাকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ট্রাজেডি এখনও ভুলেনি ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১৫ বিশ্বকাপেও ফেভারিট তালিকায় প্রথম দিকেই থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশেষ করে বিশ্বকাপের আগের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে যেভাবে তারা ছেলেখেলা খেলল। সেটা দেখে ক্রিকেটবোদ্ধারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে আশা করতেই পারেন। টিম দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং বোলিং সম্পূর্ণ ব্যালেন্সড। ব্যাটিংয়ে হাশিম আমলা একের পর এক প্রত্যাশিত ইনিংস খেলে যাচ্ছেন। নির্ভর হয়ে উঠেছেন ডু প্লেসিস। যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বের করে আনতে সক্ষম জেপি ডুমিনি ও ডেভিড মিলার। আর সবচেয়ে বড় ব্যাটিং তাকার নাম হচ্ছে এবিডি ভিলিয়ার্স। বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে দ্রæততম সেঞ্চুরির মালিক যিনি। বর্তমান ওয়ানডে ক্রিকেটের নাম্বার ওয়ান র্যাংকিংধারী খেলোয়াড়ও তিনি। বোলিংয়েও এক নাম্বার র্যাংকিংধারী ডেল স্টেইন। যার একার বোলিংয়েই তছনছ হয়ে যেতে পারে বিপক্ষের ব্যাটিং লাইন।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে যতই ভরাডুবি হোক তবুও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকেও রাখতে হবে হিসেবে। কারণ ওয়ানডেতে ভারত অন্য এক টিম। ভিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, শেখর ধাওয়ান, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মাদের নিয়ে গড়া ভারতের ব্যাটিং লাইন খুবই শক্তিশালী। তারা যেকোন দলের বিপক্ষেই চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তাদের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ দিক হচ্ছে বোলিং। এক ভ‚বেনশ্বর কুমার ছাড়া আর কারও ওপরই বড় কিছু আশা করা যায় না।
বিশ্বকাপ আসলেই বদলে যাওয়া দলের নাম হচ্ছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে পাকিস্তান তাদের সেরা খেলাটা খেলে থাকে। এজন্যই তাদের নাম আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। পাকিস্তান দলে এবারও রয়েছেন অভিজ্ঞ শহীদ আফ্রিদি। রয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ, আহমেদ শেহজাদ ও অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। বোলিংয়ে রয়েছেন মোঃ ইরফান ও জুনায়েদ খানরা।
টিম শ্রীলংকাকে বিশ্বকাপে হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। বিশেষ করে তাদের তিন অভিজ্ঞ কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও তিলকারতেœ দিলশানের ওপর আলাদা করে নজর রাখতেই হবে। এছাড়া রয়েছেন ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সমান পারদর্শী অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস। রয়েছেন ল্যাসিথ মালিঙ্গা।
ইংল্যান্ড দলে তারুণ্যের সংমিশ্রনে বিশ্বকাপ। দলীয় অধিনায়ক ইয়ন মরগান, রয়েছেন তরুন অলরাউন্ডার স্টুয়ার্ট ব্রড, ব্যাটসম্যান ইয়ান বেল, বোলার জেমস এন্ডারসনরা।
এরপরই আসে বাংলাদেশের নাম। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সংমিশ্রনে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। দলে রয়েছেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, রয়েছেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি মর্তুজা।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটর দলের বর্তমান অবস্থা ও পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। বিশ্বকাপের আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা পেয়েছে। বাকি দলগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ডের চমক দেখানোর যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে আফগানিস্তানও যথেষ্ট অঘটনা ঘটানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মামুন হোসেন
১৪ ফেব্রæয়ারি, ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসর। ১৬টি দেশের ক্রিকেট তারকাদের মহামিলন ঘটবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। একটি শিরোপাকে লক্ষ্য করে ১৬টি দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরের মোকাবেলা করবে। থাকবে মন মাতানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। থাকবে ক্রিকেটীয় বিনোদন। এসব কিছু নিয়েই ‘এডুকেশন টুডে’ পাঠকদের জন্য বিশেষ আয়োজনÑ
বর্তমানে সারা বিশ্বে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশ বর্তমানে ক্রিকেট খেলে। আর উপমহাদেশের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রত্যাশার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে খেলাটির ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, আজ ক্রিকেট যে জায়গায় এসে সমৃদ্ধ হয়েছে তার যাত্রাকালে এরকম ছিল না। ক্রিকেট খেলার এত ফরম্যাটও ছিল না। বর্তমানে টেস্ট, ওয়ানডে, টি টোয়েন্টি তিন ধরণের ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ক্রিকেটের জনক কে তা নিয়ে আজো মতভেদ রয়েছে। তারপরেও ক্রিকেটের জন্মস্থান বলা হয় ইংল্যান্ডেকে। অবশ্য অনেকে মনে করেন যে, ক্রিকেটের জন্মটা হয় ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাব অঞ্চলের ‘দোয়াব’ এলাকায়। দক্ষিণ ভারতে ব্যাটকে বলা হত ডান্ডা। এটি ৭ম শতাব্দীতে চালু হয় বলে জানা যায়। তারপরেই খেলাটি ৮ম শতাব্দীর আরও কিছু পরে পারস্যের দিকে চালু হতে থাকে। এরপরই ইউরোপীয়দের মধ্যে খেলাটির প্রচলন হয়।
১০৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিজয়ের পর নরম্যানরা সেখানেও এই খেলাটা চালু করে। তখন শুধুমাত্র সপ্তাহের রোববার এই খেলাটি খেলা হতো। ১১৮৩ খ্রীস্টাব্দে জোসেফ অব এক্সেটার নামক লেখকের লেখা থেকে জানা যায়, একটি বল একজন ব্যাটসম্যানের দিকে ছুড়ে মারা হতো যার পিছনেই আজকের স্ট্যা¤েপর মতো তিনটি লাঠির কাঠামো থাকতো। ব্যাটসম্যানের হাতে থাকা কাঠের লাঠি থাকত। তিনি ওই লাঠি দিয়ে বলটিকে বাড়ি মারতো তার পিছনের তিনটি লাটিকে বলের আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য। আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতো ব্যাটসম্যানের বাড়ি মারা বলটিকে ধরতে। ঠিক অনেকটা আজকের দিনের ক্রিকেটের মতই।
কিন্তু ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের শুরুতেই আসে ক্রিকেটের উপর ধাক্কা। তখন নরম্যানদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজ্য জয়ের প্রতিযোগিতা। ক্রিকেট খেলার কারণে যুদ্ধ করার মতো প্রয়োজনীয় সৈনিক পাওয়া যাচ্ছিল না বলে রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড ইংল্যান্ডে ওই সময়ে ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করেন। নিষেধ অমান্য করলেই ছিল শাস্তির ব্যবস্থা। তবে ১৫০০ সালের পর এই ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হতে থাকে। ফলে ক্রিকেটের উন্নয়নে আর কোন বাধাই আর সামনে দাঁড়াতে পারে নি।
মূলত যখন থেকে কাউন্টি ম্যাচ খেলা শুরু হয় তখন থেকেই আধুনিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু। প্রথম ম্যাচটি ছিল ১৭১৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও কেন্ট দলের মধ্যে। আর আমাদের ভারতবর্ষে ১৭২১ সালে আধুনিক ক্রিকেটের প্রচলন হয়। এরপর ১৮৭৭ সালে এসে জন্ম নেয় টেস্ট ক্রিকেট। ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ প্রথম টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও অংশ গ্রহণ করে এই দুটি দল। দুই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া জয় লাভ করে।
যখন বিভিন্ন দেশে ক্রিকেটর খেলার প্রচলন শুরু হলো তখন বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে ‘ই¤েপরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে। পরে ১৯৫৬ সালে ‘ই¤েপরিয়াল’ কথাটি পরিবর্তন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল’ শব্দটি যোগ করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল’ রাখা হয়। যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ‘আইসিসি’।
শুরুর দিকে টেস্ট ম্যাচগুলোর নির্দিষ্ট কোনো দিনের হিসাব ছিল না। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে আসে আরো ব্যাপক পরিবর্তন। জিলেট কাপ নামে ৬০ ওভারের এক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ইংল্যান্ডে। এরও অনেক পরে ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের শুরু হয়। তারপর শুরু হয় বিশ্বকাপের ধারণা।
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ‘আইসিসি’ ক্রিকেট খেলুড়ে সবগুলো দেশ একসাথে নিয়ে নতুন এক টুর্নামেন্টের চিন্তা করে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই ১৯৭৫ সালের ৭ জুন প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা ওঠে। প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। সেই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, পূর্ব আফ্রিকা, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করে। এতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড।
পরের দুই বিশ্বকাপ যথাক্রমে ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালেও ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফির প্রবর্তন করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় কেবলমাত্র টেস্ট ক্রিকেট বহির্ভূত শ্রীলঙ্কা ও কানাডা দলকে বিশ্বকাপের জন্য মনোনীত করা হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯২ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে পুণরায় শিরোপা জয় করে। বিশ্বকাপ চলাকালীন এক সভায় আইসিসি প্রতি চার বছর অন্তর বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা দল টেস্টভ‚ক্ত দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে। আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে জিম্বাবুয়ে দলও বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। ফাইনাল খেলায় শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ৪৩ রানের ব্যবধানে পরাভ‚ত করে অঘটন ঘটায় ও প্রথমবারের মতো শিরোপা লাভ করে ভারত। অথচ প্রতিযোগিতার শুরুতে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে।
১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ভারত ও পাকিস্তানে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে এটিই প্রথম বিশ্বকাপ যা ইংল্যান্ডের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়াও, প্রথম প্রতিযোগিতা হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি। ইংল্যান্ডের সাথে সময়ের পার্থক্যজনিত কারণে দলের ইনিংসে ৬০-ওভারের পরিবর্তে ৫০-ওভারে নির্ধারণ করা হয়। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে শিরোপা লাভ করে। যা বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বল্প ব্যবধানের জয় হিসেবে এখনও বহাল।
১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। রঙিন পোশাক, সাদা বলের ব্যবহার, দিবারাত্রির খেলা এবং ফিল্ডিংয়ের সীমাবদ্ধতার পরিবর্তন ইত্যাদির প্রবর্তন ঘটানো হয় এ বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। পাকিস্তানকে শুরুতে কেউ হিসেবে না রাখলেও ইমরান খানের অসাধারণ নেতৃত্বে পাকিস্তানই ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে পরাজিত করে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পায়।
১৯৯৬ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলংকা ক্রিকেট দল। এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলংকা।
ষোল বছর পর ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে আবারও বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ফিরে আসে। আর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য তো ইতিহাসই। কারণ, ১৯৯৯ সালেই বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালের মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেনিয়াকে হারিয়ে এ যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। প্রথম আসরে অংশ নিয়েই বাংলাদেশ স্কটল্যান্ড এবং শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়। এ বছর চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তারা পাকিস্তানকে মাত্র ১৩২ রানে অল-আউট করে দিয়ে ৮ উইকেটে জয়লাভ করে। এ বছর থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য। ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপেও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তারা ভারতকে ১২৫ রানে পরাজিত করে। ২০০৭ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয়ের হ্যাটট্রিক করে। এই টুর্নামেন্টেও তারা অপরাজিত থাকে।
২০১১ বিশ্বকাপ ফিরে আসে উপমহাদেশে। ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই উপমহাদেশের দল ভারতই বিশ্বকাপ জয় করে। ভারতের কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান। ফাইনালে ভারত উপমহাদেশের আরেক প্রতিদ্ব›দ্বী শ্রীলংকাকে পরাজিত করে।
এবার আসা যাক ২০১৫ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে এই বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ। বিশ্বকাপের উদ্বোধন হবে নিউজিল্যান্ডে। আর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়। এটা হবে আইসিসি বিশ্বকাপের ১১তম আসর। এ আসরে ১৬টি দল দুটি গ্রæপে ভাগ হয়ে অংশগ্রহণ করবে। গ্রæপ এ’তে খেলবে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আফগানিস্তান। অন্যদিকে গ্রæপ বি’তে খেলবে, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, আরব আমিরাত।
বিশ্বকাপে সবসময়ই স্বাগতিক দেশ ফেভারিট থাকে। এবার যেহেতু অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ফেভারিট তালিকায় থাকবেই। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া সা¤প্রতিক সময়ে যে ফর্মে রয়েছে তাতে তারা পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের আশায় বুক বাধতেই পারেন। বিশ্বকাপের আগে তিন জাতির সিরিজে যেভাবে ভারত ও ইংল্যান্ডকে তারা নাস্তানুবাদ করেছে তাতে এশিয়ার সেরা দল ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে নিয়ে বড় আশা করা যায় না। অন্যদিকে ২০১১ বিশ্বকাপের রানারআপ দল শ্রীলংকাকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে নাস্তানুবাদ করে ছেড়েছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানও নিউজিল্যান্ডের একাডেমি দলের সঙ্গে টানা ২ ম্যাচ হেরেছে। এ থেকেই একটা ধারণা করা যায় যে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডই ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ফেভারিট।
বর্তমান অস্ট্রেলিয়াই সবচেয়ে ব্যালেন্সড দল। তাদের রয়েছে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারোন ফিঞ্চ, শেন ওয়াটসন ও গেøন ম্যাক্সওয়েলের মতো হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। আরও রয়েছেন আস্থার প্রতীক স্টিভেন স্মিথ, দলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, অলরাউন্ডার জেমস ফকনার। বোলিংয়ে আছেন মিচেল জনসন, মাইকেল স্টার্ক, হ্যাজেলউডসহ তারকারা।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তারা সবসময়ই ভয়ংকর। বর্তমান সময়ে ভালো ফর্মেও রয়েছে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় তারকা হচ্ছে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও রস টেইলর। এছাড়া রয়েছেন তরুন কোরে এন্ডারসন, উইলিয়ামসনরা। বোলিংয়ে দুর্দান্ত গতির টিম সাউর্দির সঙ্গে ট্রেন্ট বোল্টও রয়েছেন।
১৯৯৬ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রত্যেক বিশ্বকাপেই ফেভারিট থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু তাদের বিশ্বকাপ ভাগ্য খুবই খারাপ। বিশ্বকাপ মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো ট্রাজেডি লুকিয়ে থাকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ট্রাজেডি এখনও ভুলেনি ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১৫ বিশ্বকাপেও ফেভারিট তালিকায় প্রথম দিকেই থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশেষ করে বিশ্বকাপের আগের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে যেভাবে তারা ছেলেখেলা খেলল। সেটা দেখে ক্রিকেটবোদ্ধারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে আশা করতেই পারেন। টিম দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং বোলিং সম্পূর্ণ ব্যালেন্সড। ব্যাটিংয়ে হাশিম আমলা একের পর এক প্রত্যাশিত ইনিংস খেলে যাচ্ছেন। নির্ভর হয়ে উঠেছেন ডু প্লেসিস। যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বের করে আনতে সক্ষম জেপি ডুমিনি ও ডেভিড মিলার। আর সবচেয়ে বড় ব্যাটিং তাকার নাম হচ্ছে এবিডি ভিলিয়ার্স। বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে দ্রæততম সেঞ্চুরির মালিক যিনি। বর্তমান ওয়ানডে ক্রিকেটের নাম্বার ওয়ান র্যাংকিংধারী খেলোয়াড়ও তিনি। বোলিংয়েও এক নাম্বার র্যাংকিংধারী ডেল স্টেইন। যার একার বোলিংয়েই তছনছ হয়ে যেতে পারে বিপক্ষের ব্যাটিং লাইন।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে যতই ভরাডুবি হোক তবুও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকেও রাখতে হবে হিসেবে। কারণ ওয়ানডেতে ভারত অন্য এক টিম। ভিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, শেখর ধাওয়ান, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মাদের নিয়ে গড়া ভারতের ব্যাটিং লাইন খুবই শক্তিশালী। তারা যেকোন দলের বিপক্ষেই চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তাদের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ দিক হচ্ছে বোলিং। এক ভ‚বেনশ্বর কুমার ছাড়া আর কারও ওপরই বড় কিছু আশা করা যায় না।
বিশ্বকাপ আসলেই বদলে যাওয়া দলের নাম হচ্ছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে পাকিস্তান তাদের সেরা খেলাটা খেলে থাকে। এজন্যই তাদের নাম আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। পাকিস্তান দলে এবারও রয়েছেন অভিজ্ঞ শহীদ আফ্রিদি। রয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ, আহমেদ শেহজাদ ও অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। বোলিংয়ে রয়েছেন মোঃ ইরফান ও জুনায়েদ খানরা।
টিম শ্রীলংকাকে বিশ্বকাপে হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। বিশেষ করে তাদের তিন অভিজ্ঞ কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও তিলকারতেœ দিলশানের ওপর আলাদা করে নজর রাখতেই হবে। এছাড়া রয়েছেন ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সমান পারদর্শী অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস। রয়েছেন ল্যাসিথ মালিঙ্গা।
ইংল্যান্ড দলে তারুণ্যের সংমিশ্রনে বিশ্বকাপ। দলীয় অধিনায়ক ইয়ন মরগান, রয়েছেন তরুন অলরাউন্ডার স্টুয়ার্ট ব্রড, ব্যাটসম্যান ইয়ান বেল, বোলার জেমস এন্ডারসনরা।
এরপরই আসে বাংলাদেশের নাম। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সংমিশ্রনে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। দলে রয়েছেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, রয়েছেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি মর্তুজা।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটর দলের বর্তমান অবস্থা ও পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। বিশ্বকাপের আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা পেয়েছে। বাকি দলগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ডের চমক দেখানোর যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে আফগানিস্তানও যথেষ্ট অঘটনা ঘটানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।