শান্ত মামুন
মেঘনা-গোমতী-তিতাস-ডাকাতিয়া বিধৌত কুমিল্লা একটি প্রাচীন জনপদ। সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণ, রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, কুমিল্লা মডেলের পথিকৃত ড. আখতার হামিদ খান প্রমুখের স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লা। এ জেলায় লালমাই, ময়নামতি, শালবন বিহার, শাহ সুজা মসজিদ, কোটিলা মুড়া, চণ্ডীমুড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওয়ার সিমেট্রি, ধর্মসাগর, রাণীর দীঘিসহ নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে যা আকর্ষণ করে ইতিহাসবিদ ও পর্যটকদের। এছাড়া কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও খ্যাতি অর্জন করেছে
সীমানা : উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, দক্ষিণে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমে চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলা।
জেলার পটভ‚মি
প্রাচীনকালে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল।
এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শননদী থেকে যতদূর জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৌদ্ধ দেববংশ রাজত্ব করে। নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা হরিকেলের রাজাগণের শাসনাধীনে আসে। প্রতœপ্রমাণ হতে পাওয়া যায় যে, দশম হতে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর এ অঞ্চল চন্দ্র রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে।
মধ্যবর্তী সময়ে মোঘলদের দ্বারা শাসিত হওয়ার পরে ১৭৬৫ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানির অধীনে আসে। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কো¤পানি ১৭৬৯ সালে প্রদেশে একজন তত্ত¡াবধায়ক (ঝঁঢ়বৎরহঃবহফবহঃ) নিয়োগ করে। তখন কুমিল্লা ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল।
১৭৭৬ সালে কুমিল্লাকে কালেক্টরের অধীন করা হয়। ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা গঠনের মাধ্যমে ত্রিপুরা কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু হয়। ১৭৯৩ সালে তৃতীয় রেগুলেশন (জবমঁষধঃরড়হ ওওও) অনুযায়ী ত্রিপুরা জেলার জন্য একজন দেওয়ানি জজ নিযুক্ত করা হয় এবং সে বছরই তাকে ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা দেওয়া হয়। ১৮৩৭ সালে ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরের পদগুলিকে পৃথক করা হয়। ১৮৫৯ সালে আবার এই দুটি পদকে একত্রিত করা হয়।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা এবং তখন থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদটির নামকরণ হয় জেলা প্রশাসক (উবঢ়ঁঃু ঈড়সসরংংরড়হবৎ)। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লার দুটি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়।
দেশের বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে কুমিল্লার স¤পৃক্ততার ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। ১৭৬৪ সালে সমশের গাজীর নেতৃত্বে সংঘটিত ত্রিপুরার রাজাদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন কুমিল্লার ইতিহাসে উজ্জ্বল ঘটনা। প্রিন্স ওয়ালেসের ভারত ভ্রমণের প্রতিবাদে ২১ নভেম্বর ১৯২১ সালে দেশব্যাপী আহুত ধর্মঘটে কুমিল্লাবাসী সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। সে সময় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লায় অবস্থান করছিলেন এবং তিনি বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা লিখে কুমিল্লার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। গান্ধী অভয়াশ্রম নামের প্রতিষ্ঠানটি এসময় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। এসময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লা ভ্রমণ করেন। ১৯৩১ সালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় মোহিনী গ্রামের প্রায় চার হাজার চাষি রাজস্ব প্রদানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এসময় ব্রিটিশ গুর্খা সৈনিকরা বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করলে চারজন চাষি প্রাণ হারান।
১৯৩২ সালে লাকসামের হাসনাবাদে কৃষকদের বিশাল মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হলে বেশ কিছু লোক প্রাণ হারান। কুমিল্লার জনগণ কখনই কোনো অন্যায় শোষণকে মেনে নেয়নি এবং সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। যেসব বীর এসব প্রতিবাদে প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাদেরকে কুমিল্লাবাসী গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কুমিল্লার জনগণ অংশগ্রহণ করেছে। কুমিল্লায় বেশ কয়েকটি স্থানে গণহত্যা সংঘটিত হয় যেমনÑ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট, লাকসাম, হোমনা, বেলতলী এবং রসুলপুর। বেতিয়ারা, মুদাফফরগঞ্জ নগরিপাড়া, ক্যান্টনমেন্ট, কৃষ্ণপুর, ধনঞ্জয়, দিলাবাদ ও লাকসাম বিড়ি ফ্যাক্টরিতে গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়।
নামকরণ
কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মতের মধ্যে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া (করধসড়ষড়হশরধ) নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে বলে পণ্ডিতরা অভিমত দিয়েছেন।
দর্শনীয় স্থান
শালবন বৌদ্ধ বিহার
শালবন বৌদ্ধ বিহার কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে অবস্থান। বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অনতম। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট।
১৮৭৫ সালের শেষ দিকে বর্তমান কোটবাড়ি এলাকায় একটি সড়ক তৈরির সময় একটি ইমারতের ধ্বংশাবশেষ উন্মোচিত হয়ে পড়ে। সে সময় আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষকে একটি দুর্গ বলে অনুমান করা হয়েছিল। ১৯১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধ্যক্ষ নলিনী কান্ত ভট্টাশালী সে এলাকায় যান এবং উক্ত এলাকায় অনুসন্ধান পরিচালনাকালে ধ্বংশাবশেষটিকে রণবংকমল্ল হরিকেল দেবের তাম্রশাসনের (খ্রিষ্টীয় তের শতক) দুর্গ ও বিহার পরিবেষ্টিত পট্টিকেরা নগর বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যদিও অপর প্রতœতাত্তিকদের মত অনুযায়ী এটি ছিল জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ। যদিও একাধিক মত অনুযায়ী ধারণা করা হয় যে খ্রিষ্টিয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। খৃষ্টিয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয় বলে অনুমান করা হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও সংস্কার কাজ স¤পন্ন হয় নবম-দশম শতাব্দীতে।
আকারে চৌকো শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার বাই ২০ মিটার। নানা সময়ে প্রতœতাত্তি¡ক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে।
ময়নামতি ওয়ার সেমিট্রি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের সমাধিস্থান। কুমিল্লা থেকে সিলেটমুখী মহাসড়কের এক কিলোমিটারের মধ্যে ও ময়নামতি মিলিটারি হাসপাতালের অল্প দূরত্বে এর অবস্থান। সেমিট্রিটি রাস্তার পশ্চিম পাশে একটি অনুচ্চ পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত। যুদ্ধের প্রাক্কালে ময়নামতি ছিল স্বল্প জনবসতিপূর্ণ একটি ছোট গ্রাম। এ গ্রামই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে সেনাবাহিনীর শক্ত ও বৃহৎ ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। এ স্থানে একাধিক অর্ডন্যান্স ডিপো এবং ব্রিটিশ ও ভারতীয় সেনা হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও এখানে ছিল ১৪ ও ১৫০ নং ব্রিটিশ জেনারেল হাসপাতাল। যুদ্ধাহত সৈন্যদের এ হাসপাতালসমূহে মৃত্যু হলে তাদেরকে ময়নামতি ওয়ার সেমিট্রিতে সমাধিস্থ করা হতো। ময়নামতি সেমিট্রিটি সেনাবাহিনী কর্তৃক স্থাপিত হলেও এর পরিকল্পনায় ছিল গ্যারিসনের প্রকৌশলীরা। একটি পাহাড়ি উঁচু ভ‚মির সমতল শীর্ষে অবস্থিত সেমিট্রির প্রবেশ পথের পরেই খ্রিস্টান সৈন্যদের এবং অনতি দূরত্বে রয়েছে মুসলিম সৈন্যদের সমাধি। প্রবেশ পথের দিকে মুখ করে পাহাড়ের দিকে অর্ধেক পথ অতিক্রম করলে দেখা যাবে একটি হলিক্রস বা ঈৎড়ংং ড়ভ ঝধপৎরভরপব দণ্ডায়মান। অপরদিকে গাছ সদৃশ্য ছায়া বা আচ্ছাদনের নিচে রয়েছে মুসলিমদের সমাধি। এখানে বর্তমানে ১৯৩৯-৪৫ পর্যন্ত যুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া বা সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত ৭৩৭ সৈন্যের সমাধি রয়েছে। যাদের অধিকাংশের বাসস্থান ছিল ভারত, পাকিস্তান, জাপান, আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি অঞ্চলে।
গ্রন্থনা : এডুকেশন টুডে ডেস্ক
আয়তন ৩০৮৭.৩৩
(বর্গকিলোমিটার)
উপজেলা ১৬টি
সংসদীয় আসন সংখ্যা ১১টি
সিটি কর্পোরেশন ০১টি
পৌরসভা ০৮টি
গ্রাম ৩,৬৮৭টি
মোট জনসংখ্যা ৫৬,০২,৬২৫
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ০১টি
মেডিকেল কলেজ (সরকারি) ০১টি
মেডিকেল কলেজ (বেসরকারি) ০৩টি
ক্যাডেট কলেজ ০১টি
বেসরকারি কলেজ ৩১টি
বাণিজ্যিক কলেজ (সরকারি) ০২টি
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ০১টি
পিটিআই ০১টি
এইচএসটিটিআই ০১টি
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ০১টি
মেডিকেল কলেজ (সরকারি) ০১টি
মেডিকেল কলেজ (বেসরকারি) ০৩টি
ক্যাডেট কলেজ ০১টি
বেসরকারি কলেজ ৩১টি
বাণিজ্যিক কলেজ (সরকারি) ০২টি
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ০১টি
পিটিআই ০১টি
এইচএসটিটিআই ০১টি
নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৫টি
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯০টি
(স্কুল ও কলেজ)
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ০৯টি
সরকারি কলেজ ১০টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৮০টি
দাখিল মাদ্রাসা ২৩৩টি
আলিম মাদ্রাসা ৭৫টি
ফাজিল মাদ্রাসা ৬৩টি
কামিল মাদ্রাসা ১০টি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৩০টি
শিক্ষার হার ৬০.০২% (২০১১ সালের শিক্ষা জরিপ)
কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত স্থান কুমিল্লার দৌলতপুর
নজরুলের অনেকখানি সময় কাটে দৌলতপুরে। এখানে তার থাকার ঘর, আমগাছ, পুকুরের সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতি রয়েছে। কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত স্থান কুমিল্লার দৌলতপুর। প্রবেশমুখে নজরুল তোরণ। তোরণের দুপাশে নজরুলের রচনার পক্সিক্ত দিয়ে একাধিক স্মৃতিফলক রয়েছে। সত্যিই দৌলতপুর গ্রামটি খুবই মায়াময়। দ্বিতল এ বাড়িটি নান্দনিক কারুকার্যে নির্মিত। বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে ১৯২১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি কবি এ বাড়িতে আসেন। এখানে থাকাকালে কবি তার বন্ধুর বোনের মেয়ে সৈয়দা খাতুনের প্রেমে পড়েন। তখন কবি সৈয়দা খাতুনের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নার্গিস আসার খানম। সে বছর ১৭ জুন তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের রাতেই কবি কাউকে কিছু না বলে বাসরঘর ছেড়ে কুমিল্লা শহরে চলে আসেন। এরপর আর কখনও নার্গিসের সঙ্গে কবির দেখা হয়নি। তারপর কবি ১৯২৪ সালের ২৪ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন।
এ বাড়ির একটি আটচালা ঘরে হয় নজরুল-নার্গিসের বাসর। ১৯৬২ সালে ঘরটি সংস্কার করে চৌচালা করা হয়। এ ঘরে রয়েছে নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক। এক সময় এই ঘরে নজরুল-নার্গিসের বাসর খাটটি ছিল। সেটি এখন পাশের একটি সেমিপাকা টিনের ঘরে রাখা হয়েছে। বাড়ির পাশেই রয়েছে কবির স্মৃতিবিজড়িত পুকুর ও পুকুরপাড়ের আমগাছ। আমগাছে একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। সাইনবোর্ডে কবি বুলবুল ইসলামের তথ্যের আলোকে নজরুল স¤পর্কে কিছু কথা লেখা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেÑ কবি এ আমগাছের নিচে শীতলপাটি বিছিয়ে লেখালেখি করতেন ও খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ-গান শেখাতেন। আর এ পুকুরে কবি গোসল করতেন, সাঁতার কাটতেন ও মাছ ধরতেন। খানবাড়ি, আমগাছ, পুকুরঘাট নজরুল মঞ্চের মাঠে। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে এখানে এই মেলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া কবির স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নার্গিস-নজরুল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও নার্গিস-নজরুল সংগীত নিকেতন।
যেভাবে যাবেন : ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে মুরাদনগরের উদ্দেশে ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেস বাস ছেড়ে যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টা। মুরাদনগর থেকে অটোরিকশায় যাওয়া যাবে দৌলতপুর গ্রামে। প্রবেশমুখে নজরুল তোরণ। সেখান থেকে ২০ মিনিট হাঁটলেই নজরুল তীর্থ খানবাড়ি।