তালের অভাবে সেমিস্টারের সর্বশেষ পরীক্ষাটা পিছিয়ে গেছে। নতুনদের আগমণের কার্যক্রমে পেছানোটা গিয়ে দাড়িয়েছে পেছনের সারির পেছনের বেঞ্চে। এসময় চাপ বেশী থাকে। এলোমেলো চিন্তার চাপ। চাপ কমাতে হাওয়া খেতে হয়। অস্থিমজ্জার এই শহরের গগণচুম্বী ইমারতের ফাঁক গলিয়ে হাওয়া নাক পর্যন্ত পৌছাতে পারে না। হাওয়ার নাগাল পেতে নাকে বেশ বড়সড় সাইজের পাইপ সেট করা যেতে পারে। চিত্ হয়ে শুয়ে সিগারেট খেতে খেতে হাওয়া টানার অনুভূতি মন্দ হবে না।
আর্থিক অবস্হা ভাসা ভাসা মধ্যবিত্ত। যারা কিছুদিন নিম্নবিত্ত আর বেশীরভাগ সময় নিম্ন মধ্যবিত্ত তারাই ভাসা ভাসা মধ্যবিত্ত। পাইপ ফিট করার মত ফিটফাট অবস্হা নাই। বিকেলবেলা তাই পদ্মাপাড়ে যাতায়াত। এখানে বিনামূল্যে সিনেমার রোমান্টিক মোমেন্ট দেখা যায়। উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে জোড়া ছায়ার সমাহার বসায় কাপলেরা। কারও দৃষ্টির চাহনী অসাধারণ তো কারও শরীরের ভাঁজ অসাধারণ। এসব দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই বুকের বাঁ পাশের ব্যাথাটা বাড়া শুরু করে। এসব ব্যাথায় একপ্রকার সুখ আছে। সবাই সে সুখ নিতে চায়।
পাশেই সবুজ মিয়ার চটপটির দোকান। প্রতিদিনের মত আজও গেলাম
-মামা এইডা পাড়ি (বিছায়ে) বসেন
-না, ঘাসের উপর বসেই মজা। মাটির সাথে যোগসূত্র পাওয়া যায়
চটপটি খাবার সময় চেয়ারে বসতে নেই। তাতে তার স্বাদ কমে যায়। কাপলেরা আরো বড় স্বাদের আশায় ছোটে। এই স্বাদ তাদের কাছে অতি নগন্য। এই থিওরি শেখানোর পর আমার জন্য এই ব্যাবস্হা। নেটাগাড়ি দিয়ে বসলাম। এভাবে বসালে নিজেকে পুরুষ পুরুষ মনে হয়। পা দুটি আকাশের দিকে তাক করে থুতনির সাথে যুদ্ধ শুরু করলে নিজেকে মৃগী রোগীর মত মনে হয়। হাফ চটপটি নিলাম। পকেটে দশটাকাই সম্বল। আটটা পকেটে দুই টাকা করে থাকলেও কমপক্ষে ষোল টাকা থাকার কথা। তিনটা আগেই খালি হয়ে গেছে বাকি পাঁচটা গড়ের মাঠ হবার পথে। প্যান্টটা দুই বছর আগের। পায়ের দিকে ছিড়ে গেছে। ফ্যাশান বলেই চালিয়ে দিচ্ছি। একটু টক নিলাম। টক জিনিসটা মেয়েদের খুব প্রিয়। মাঝে মাঝে মেয়েলী খাবার খেতে হয়। মন ফুরফুরে থাকে।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কাপলেরা একজন আরেকজনের হাত ধরে ঘরের দিকে ফিরছে। আমি বসে আছি হাটু গেড়ে। হাটু গেড়ে বসার মাঝে কেমন যেন নায়ক নায়ক ভাব আছে। নদীর পানি ঝন্টুমিয়ার দোকানের কালোজামের মতো কালো আকার ধারণ করেছে। পরিবেশটায় মিষ্টি মিষ্টি ভাব । বুকভরে হাওয়া খাচ্ছি। হাওয়া মনোযোগ দিয়ে খেতে হয়। নতুবা হাওয়া খাওয়া আর মহিন মিয়ার হোটেলের দুই টাকার খুরমা খাওয়ার মাঝে পার্থক্য থাকে না। বাতাসে কেমন জানি মেয়ে মেয়ে গন্ধ। কল্পণাকে প্রশ্রয় দিতে নেই। সব কল্পণাই আবেগ। আবেগকে দূর করতে না পারলে জীবন উপভোগ্য হয় না। গন্ধটা ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে। তবুও চোখ খুলছি না।