কিছু কিছু বিষয় নিয়ে আদিখ্যেতা বাঙ্গালীর স্বভাবগত, জাতিগত এবং আর একটু detail-এ বললে nucleic acid এর sequence গত। এই যেমন ধরুন স্মৃতি এবং অতীত রোমন্থন। এই মুহুর্তে চোখ বুজে চারিদিকের মানুষের মুখগুলো মনে করে দেখুন তো... এমন কারো কথা মনে পড়ছে কি যার কাছে একবারের জন্য হলেও “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম” বোধক কোন শব্দগুচ্ছ শোনেননি? কি? পেলেন? না পাওয়াটাই স্বাভাবিক আর যদি পেয়েই থাকেন তাহলে নিজের ওপর গর্ব অনূভব করুন এই ভেবে যে আপনি একজন অতি দূর্লভতম বাঙ্গালী বা মহাবাঙ্গালীর সন্ধান পেয়েছেন কারন এই বাঙ্গালীর হাতেই তো লেখা হয়েছে “স্মৃতি সততই সুখের”। এ বিষয়েপ্রশ্ন তুললে বিতর্ক অবধারিত কারন ছোটোবেলা থেকেই বাঙ্গালী বংশানুক্রমিকভাবে ‘চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস’-এর বিজ্ঞাপন শুনতে শুনতে (সৌজন্যে- DD গেঞ্জি) ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু,তর্কে বহুদূর’ কথাটাকে স্নায়ুর ডেন্ড্রন-এ ডেন্ড্রন-এ প্রবেশ করিয়ে জীবনের আপ্তবাক্য করে ফেলেছে।
কিন্তু প্লিজ একবার ভেবে দেখুন স্মৃতি কি সততই সুখের?! এই ধরুন আপনার ছোটবেলার কথা। আপনি তখন নিয়ম করে ইউনিফর্ম পড়ে দিব্যি সাজুগুজু করে সময়মত স্কুলে যান। তো একদিন আপনি পড়া না পারা/ homework না করা/ Class এ দুষ্টুমি করা বা অন্য কোনো গর্হিত অপরাধ সম্পাদনের শাস্তিস্বরূপ মাস্টারমশাই/ দিদিমনি শুধু আপনাকেই Class এর বাইরে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেন। আপনি অসম্ভব লজ্জায় অধোবদন হয়ে কোনরকমে কানদুটো just ছুঁয়ে রেখেছেন।এদিকে তাই দেখে জানলা দিয়ে Class এ আপনার সব থেকে বড় শ্ত্রুর “ দেখুন স্যার, ঠিক করে কান ধরেনি” বলে অভিযোগ প্রদান, স্যারের আগমন, পুনরায় বকুনি, টানটান করে কান ধরিয়ে দেওয়া এবং তাই দেখে অভিযোগকারীর বিচ্ছিরি রকমের কান এঁটো করা হাসি। এদিকে ঠিক তখনি বড় দাদাদের PT period এর নিমিত্ত বাইরে আগমন এবং আপনাকে দেখে "কিরে পড়া পারিসনি বুঝি?" সূচক অপমান। এখানেও ইতি নয়... দুখের রজনীর মত দুখের দুপুরও কি এত সহজে অতিক্রান্ত হয়? ঠিক এই মুহুর্তে প্রধান শিক্ষক, যিনি কিনা আবার আপনার বাবার বিশেষ বন্ধু ,তিনি বাইরে আসবেন এবং পৃথিবীর ঘৃণ্যতম জীব দেখার দৃষ্টিতে আপনাকে দেখবেন এবং বলবেন “ ছিঃছিঃ...”। অতঃপর যা যা হয় আরকি... তো এই স্মৃতিকথা শুনে আপনার কি একবারও মনে হচ্ছে “আহাঃ কি শুনিলাম, জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না”?
তারপর ধরুন ‘প্রথম প্রেমের স্মৃতি’। এ বিষয়টিকে বাঙ্গালি মহিমান্বিত করে মোটামুটি ঐতিয্যের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সে অভিজ্ঞতা যতই তিক্ত হোকনা কেন, সম্পর্কের বন্ধনে আপনি যতই অতিষ্ঠ হয়ে, হাঁফিয়ে উঠে “ উফঃ কবে যে মুক্তি পাবো” বলে থাকুন না কেন, পরবর্তি প্রেমিক/প্রেমিকার কাছে সদ্য প্রাক্তনী সম্পর্কে যতই গালাগালি করে থাকুন না কেন, প্রথম প্রেম তাকে তো মহান হতেই হবে। নাহলে বাঙ্গালীমন আপনাকে খোঁচাবেই খোঁচাবে- “…সুখস্মৃতি-/কিছু নাই মনে?...” তো, এখনো মনে হচ্ছে “স্মৃতি সততই সুখের”? একটু মনে করে দেখুন আপনার আরো ভুরি ভুরি উদাহরন মনে পড়ছে...
এই লেখাটা পড়ে যদি আপনার একবারও মনে হয়ে থাকে যে লেখার শুরুতে উল্লেখিত সেই ‘মহাবাঙ্গালী’ আমিই,যে স্মৃতিভারে মোটেই জর্জরিত নয়, তাহলে সেটা হবে ‘প্রাগৈতিহাসিক ভুল’ ...কারন নিজের স্মৃতি নিয়ে যথেষ্ট টানাপোড়েন না থাকলে এরকম একটা লেখা লিখতাম বুঝি?? হু হু দাদা...ব্যাথা ব্যাথা...বড্ড ব্যাথা... “ উঃ দাদা বড্ড লেগেছে”
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪