সম্প্রতি ভারতের দেওবন্দের ইসলামিক মাদরাসাগুলো পরিদর্শনে গিয়েছিলো নেদারল্যান্ডের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো যোগিন্দার সিকান্দ। দেওবন্দ থেকে ফিরে এসে সে তার নিজস্ব সাইট কালান্দারে সেখানকার মাদরাসা শিক্ষা, উগ্রবাদীদের নিয়ে প্রধান মৌলভীর দৃষ্টিভঙ্গি, মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় মৌলভীদের বক্তব্য ও মাদরাসা ছাত্রদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তার উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ পাঠকদের জন্য দেয়া হলো:
দেওবন্দ মাদ্রাসার সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর মা’লানা মারগুব নিজেকে নারীদের উচ্চশিক্ষার পক্ষে বলে জানালেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, তার নিজের কন্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। নাতনীও এখন আলিগড়ে ডিগ্রি নেয়ার জন্য পড়ছে। (যেমন এদেশীয় দেওবন্দী খতীব ওবায়দুল হকের মেয়ে বেপর্দার উদাহরণ তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে।)
মৌলভীপ্রধানের কক্ষ থেকে দু’রকমের অনুভূতি নিয়ে বেরিয়ে এলাম। তিনি নারীদের উচ্চশিক্ষার যথেষ্ট গুণগ্রাহী হলেও নিম্ন পদমর্যাদার দেওবন্দী উলামাদের অনেককেই আধুনিক শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণের চরম বিরোধিতা করতে দেখেছি।” (আমাদের সময়, ৩ ডিসেম্বর/২০০৫, পৃষ্ঠা নং- ৬)
মূলত, ইসলামের দৃষ্টিতে পর্দার খিলাফ হওয়ার জন্য প্রতিবেদনে উল্লিখিত “নিম্ন পদমর্যাদার দেওবন্দী উলামারা” বিরোধিতা করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
উল্লেখ্য, দেওবন্দীদের এ ইতিহাস নতুন নয়। দেওবন্দীদের গুরু আশরাফ আলী থানভীই এ নীতির পৃষ্ঠপোষক। সে তার বইয়ে লিখেছেন, শেরুওয়ানী আচকান এগুলো পড়বে বিত্তশালী মুসলমানরা। আর গরিব শ্রেণীর মুসলমান পড়বে সুন্নতী কোর্তা, লুঙ্গী ইত্যাদি। (নাউযুবিল্লাহ) ইসলামকে তারা কোথায় ঠৈকিয়েছে?
মূলত, এ বোধের আলোকেই তারা আজকে প্রতিভাত করতে চাচ্ছে যে, উচ্চ শ্রেণীর মুসলমানরা পর্দা করবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে, সমাজের উচ্চবিত্ত ফ্যাশনওয়ালাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে, থার্টি ফাস্ট নাইট করবে ইত্যাদি। আর নিম্নপদস্থ ও নিম্নবিত্ত তারা কেবল পর্দা করবে, বোরকা পড়বে। (নাউযুবিল্লাহ)
তাদের মধ্যে যেন হিন্দুদের জাতিভেদ প্রথা তথা হিন্দুপ্রীতি জেঁকে বসেছে। স্মর্তব্য, দেওবন্দীদের মাঝে হিন্দুপ্রীতি ও তাশাব্বুহ অনেকটা জন্মগত থেকেই। তাদের কিস্তি টুপি, কোণা ফাঁড়া জামা ও পাজামা সবই মূলত হিন্দুদের পোশাক।
বাদশাহ্ আকবরের আমলে যা হিন্দুদের জন্য প্রবর্তিত হয়েছিলো। তারপরেও দেওবন্দীরা অদ্যাবধি তাদের মুরুব্বী পূজার কারণে সে পোশাকই পরে আসছে। যার একটিও সুন্নত নয়।
মূলত, দেওবন্দীদের এই হিন্দুপ্রীতি ও মুরুব্বী পূজা আজকে যেন খোদ গো-পূজারীতে পরিণত করেছে।
৪ঠা জানুয়ারি/২০০৬ ঈসায়ী চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোণে এবং
সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক জালালাবাদে পত্রস্থ হয়:
ঈদে গরু কুরবানী না করতে দেওবন্দের আহ্বান
“এনএনবি: ভারতের উত্তর প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী দেওবন্দ দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এবার ঈদুল আজহায় গরু কুরবানী না করার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। হিন্দুদের ভাবাবেগের প্রতি সম্মান জানিয়ে মাদরাসাটি এ আহ্বান জানায় বলে ভারতের একাধিক সংবাদ মাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
এশিয়ায় বৃহত্তম এই মাদরাসা কর্তৃপক্ষের এ ধরনের মতামতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আহমেদবাদ ও গুজরাটে এই মতামতের প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, এক ধরনের ধর্মব্যবসায়ী দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ইসলামের নাম ব্যবহার করে স্বার্থ সিদ্ধি করতে গিয়ে ধর্মের সর্বনাশ করছে।”
মূলত, আজকের দেওবন্দীরা যে চিহ্নিত ও প্রতিষ্ঠিত ধর্মব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছে পাশাপাশি দেওবন্দের ভাইস চ্যান্সেলর সেই আবুল ফজল, ফৈজীর মতোই গুমরাহ হয়েছে উপরের গরু কুরবানী নিষিদ্ধ করণে অনুমোদনে কেবল তার কুকীর্তি কেবল সীমাবদ্ধ নয়।
সে যে ভারত রাজশক্তির দ্বারা তথা ক্ষমতা ও অর্থপ্রাপ্তির দ্বারা কত প্রলুব্ধ হতে পারে মুহূর্তেই ফতওয়া উল্টিয়ে দিতে পারে তার প্রমাণ পর্যাপ্ত।
আরো প্রমাণ:
বোরকা পরে ভোটে দাঁড়ানোর ফতোয়া
“আবারো সংবাদ শিরোনামে ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ শহরের ১৪০ বছরের পুরনো ইসলামী শিক্ষা ও আইন প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম প্রতিষ্ঠানটি বুধবার উত্তর প্রদেশে এক ফতোয়া জারি করেছে।
মুসলমান মহিলারা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। দাঁড়াতে চাইলে বোরকায় মুখ ঢাকতে হবে। দারুল উলুমের ফতোয়ায় বলা হয়েছে, বোরকা না পরে পুরুষের সামনে বেরুনোর অনুমতি মুসলমান মহিলাদের নেই। ইসলামী আইনে শুধু পর্দানশীন মহিলারাই নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন। উত্তর প্রদেশের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুসলমান মহিলা প্রার্থীদের অবিলম্বে বোরকা পরার নির্দেশ দিয়েছেন এই ইসলামী আদালত। চলতি নির্বাচনের ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। কয়েকশ’ মুসলমান মহিলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।” (দৈনিক সমকাল, ১৯ আগস্ট/২০০৫ ঈসায়ী, পৃষ্ঠা নং ৬)
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বোরকা না পরে পুরুষের সামনে না বেরোনোর ফতওয়া দিলেও মহিলাদের নেতা হওয়া যে নাজায়িয তথা নির্বাচন করাই যে নাজায়িয সে ব্যাপারে ঐতিহ্যবাহী দাবিকৃত দারুল উলুম দেওবন্দ কি লজ্জাকর গুমরাহী ফতওয়া দিলো। মূলত, ক্ষমতা ও অর্থের প্রলোভন ও আশঙ্কা দ্বারা প্রভাবিত হওয়াই যে এর কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার নজীরও রয়েছে নগদ:
ভোট প্রচারে বোরকা নিয়ে জারি ফতোয়া প্রত্যাহার
“বোরকা নিয়ে জারি করা ফতোয়ায় দেশব্যাপী হইচই ওঠায় দেওবন্দের মুসলিম ধর্ম সংগঠন দারুল উলুম আজ নিজেই ঢোক গিলে ফেললো। রাজনীতিতে ধর্মীয় অনুশাসন জারির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ভাইস চ্যান্সেলর মৌলানা মারগুবুর রহমান বলেছেন, সমস্ত মুফতীকে বলে দেয়া হয়েছে যে, কেউ ফতোয়া জারি করবেন না। একই সঙ্গে তাদের প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। ভোট নিয়ে মুসলিম মহিলাদের ওপর জারি করা ফতোয়া তুলে নিতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।” (আমাদের সময় ২৪ আগস্ট/২০০৫ ঈসায়ী, পৃষ্ঠা নং- ৪)
বিষয়টা ঠিক এদেশের দেওবন্দী মাওলানাদের মতই। শুধু তথাকথিত শাইখুল হাদীছের “আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা” বই-ই নয় বরং খতীবসহ সব নেতৃস্থানীয় দেওবন্দী মাওলানা, মুফতীদের বয়ান, ক্যাসেট ও লেখাতেই নারী নেতৃত্ব নাজায়িয ও হারাম- এ ফতওয়া বহুবার এসেছে।
কিন্তু এরপরে তারাই আজ আবার চশমখোরের মতো সে ফতওয়া উল্টিয়ে নারী-নেতৃত্বের আঁচলে জোট বেঁধেছে।
এবং এ ব্যাপারে দেওবন্দীদের প্রধান মুরুব্বী তথাকথিত মালানা মারগুব যে এদেশের দেওবন্দীদের হেদায়েত করতে পারতো, নীতিগত ভাবে এদেরকে হেদায়েত করার দায়-দায়িত্ব যার উপর বর্তায় সেও যে পঁচে গেছে বরং আরো বেশী পঁচে গেছে, বড় গুমরাহ হয়ে গেছে উদ্ধৃত খবর তারই প্রমাণ। মেয়ে ও নাতনীকে বেপর্দায় চালানো, মহিলাদের ভোট যুদ্ধে নামানো এমনকি তাদের প্রতি নিজের দেয়া “বোরকা পরার হুকুমের” ফতওয়াও উঠানোর পর হিন্দু রাজশক্তির নেক নজরে থাকার জন্য মুসলমানদেরকেও কুরবানী না করার জন্য উৎসাহিত করা- এসব কর্মকা- প্রত্যক্ষ ক্বিয়ামতের আলামত হিসেবে প্রকাশিত হয়।
যেমনটি হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “ক্বিয়ামত আসার আগে অনেক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শোননি, তোমাদের বাপ-দাদা, চৌদ্দপুরুষ শুনেনি। তোমরা তাদের কাছে যেয়ো না, তাদেরকে তোমাদের কাছে আসতে দিয়ো না। তবে তারা তোমাদের গুমরাহ করতে পারবে না।”
সত্যিই তথাকথিত দারুল উলুম দেওবন্দীগং আজকে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব জায়িয করা, এমনকি কুরবানী করা সংক্রান্ত যে ফতওয়া দিয়েছে তা আমাদের চৌদ্দপুরুষ কেউ শোনেনি। এদেরকে কাছে আসতে না দিলেই এরা এসব বিষয়ের পাশাপাশি মিলাদ-ক্বিয়াম, চোখে বুছা দেয়া মাযার শরীফ জিয়ারত, উজরত গ্রহণ, কুনূতে নাযেলা ইত্যাদি বিষয়ে আমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না।
অতএব, ঈমান রক্ষার্থেই তাদেরকে আমাদের থেকে দূরে রাখতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




