হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে গত পরশু রোববার গুলিস্তানে হযরত গোলাপ শাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ-এ হামলা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে তারা মাযারে হামলা চালিয়ে জানালার কাচ ভেঙে দিয়েছে। এই মাযার শরীফ-এ এটাই প্রথম হামলার ঘটনা ঘটলো। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, ‘গতকাল দুপুরে হেফাজতের কর্মীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার পর তারা মাযার শরীফটিতে হামলা করে।’
শুধু তাই নয়, অসংখ্য পবিত্র কুরআন শরীফ পোড়ানো হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! পুড়ে ছাই হয়েছে পবিত্র বুখারী শরীফসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন কিতাব। নাঊযুবিল্লাহ! জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদসংলগ্ন বেশ কয়েকটি লাইব্রেরিসহ দোকানে আগুন লাগানোর ঘটনায় পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বই পুড়ে গেছে দোকানের লোকজন অভিযোগ করেছেন।
গত পরশু ইয়াওমুল আহাদি বা রোববার সন্ধ্যায় হেফাজতের ঢাকা অবরোধের কর্মসূচির শেষ দিকে হেফাজতের নামে আগত লাঠিবহনকারী ব্যক্তিরা পবিত্র কুরআন শরীফগুলোয় আগুন ধরিয়ে দেয়। নাঊযুবিল্লাহ! এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে তারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। এ সময় অসংখ্য দোকানপাট ও রেলিংয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অবরোধ করে রাখে হেফাজত সমর্থকরা।
শান্তিপূর্ণ ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে ভয়াবহ তা-ব ও ধ্বংসাত্মক কাজ চালিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। তাদের হামলায় ঝরে গেছে গোটা বিশেক তাজা প্রাণ। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি পবিত্র কুরআন শরীফ, জায়নামায, মসজিদ ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ২ শতাধিক দোকানপাট। হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশ, পথচারী ও সাধারণ মানুষসহ আহত হয়েছে অন্তত ৫ শতাধিক। আহতদের মধ্যে এক পুলিশসহ অন্তত ৫ জনের অবস্থা গুরুতর। হামলাকারীরা গুলিস্তান হযরত গোলাপ শাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ ভাংচুর করে মাযার শরীফ থেকে গিলাপ ও টাকা-পয়সা লুটে নিয়েছে। এছাড়া মেট্টোপলিটন পুলিশের ট্রাফিকের পূর্ব শাখার উপ-কমিশনারের অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ সময় জীবন্ত দগ্ধ হয়েছে এক পুলিশ সদস্য। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যদিক গুলিস্তান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, পল্টন মোড়ের সিপিবি অফিস, মতিঝিল বিআরটিএ’র অফিস, পেট্রোল পাম্পসহ ৩ শতাধিক দোকান ছাড়াও অন্তত অর্ধশত যানবাহন ভাংচুর ও পুড়িয়ে দিয়েছে।
রবিবার ভোর থেকেই হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, খিলক্ষেত, গাবতলী, আমিনবাজার, বলিয়ারপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, কাচপুর ব্রিজ, পোস্তাগোলা, বাবুবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। তারা ঢাকা প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এতে রাজধানীতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ঢাকার দিকে রওনা হয়।
সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় সকাল ১০টার দিকে। হেফাজতে ইসলামকে মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ। সকাল থেকে মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিল। তারা পুলিশের অনুমতি পেয়েই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে হামলার উদ্দেশ্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেটে জমায়েত হতে থাকে। তারা শাহবাগের দিকে লাঠিসোটা নিয়ে রওনা হলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় তারা পুলিশের উপর হামলে পড়ে। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ। কয়েক দফায় সংঘর্ষে হামলাকারীরা পল্টনসহ আশপাশের বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে। আর অনেকেই ঢুকে পড়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে। এরপর তারা বেলা ১১টার দিকে আবার শাহবাগের দিকে রওনা হয়। তখন পুলিশের সঙ্গে আবার সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হেফাজতের নেতাকর্মীরা দৈনিক বাংলা মোড়ের পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে শাহবাগের দিকে রওনা হয়। এ সময় আবার সংঘর্ষ হয়। পুলিশের বাধার মুখে তারা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে অবস্থান নেয়। তারা হামলা চালাতে থাকে সাংবাদিক ও পথচারীদের উপর। তারা ডাক বিভাগের প্রধান কার্যালয়ের সামনে পার্কিং করে রাখা অন্তত ১০টি যানবাহন ভাংচুর করে। এ সময় সেখান দিয়ে যাওয়া ২ মোটরসাইকেল আরোহীকে মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে ফেলে দেয়। মাথায় হেলমেট থাকায় মোটরসাইকেলের মালিকরা প্রাণে বেঁচে যান। তারা দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। কিন্তু তাদের মোটরসাইকেল ২টি ভাংচুর করে জ্বালিয়ে দেয়।
এমন তা-ব চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। ২টার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের ওভার ব্রিজের অন্তত ৫০ গজ পশ্চিম দিকে অবস্থান নেয়। সেখানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এ সময় উত্তেজিত হেফাজত নেতাকর্মীরা পল্টন মোড়ে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। টানা ১০ মিনিট ইটপাটকেল দিয়ে ভবনের দরজা জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ফেলে। এরপর তারা হামলা চালায় ভবনটিতে। হেফাজত কর্মীরা পল্টনের বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয় মুক্তি ভবনের নিচে থাকা পুরনো বইয়ের দোকানগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে তারা ভবনে ঢুকে প্রথমেই ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত দরজা-জানালার কাঁচ ভাংচুর করে। পরে ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভানোর জন্য রওনা হয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে পৌঁছলে সেখানেই আটকে রাখে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। তারা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আর এগোতে দেয়নি। অনেক পরে স্থানীয় জনতা ও ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
একই সময়ে হেফাজতের নেতাকর্মীরা হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ভবনের হামলা চালায়। তারা ভবনে ঢুকে বেপরোয়া ভাংচুর চালায়। ভবনের ভেতরে পার্কিং করে রাখা অন্তত ৩০টি যানবাহন ভাংচুর করে। ভাংচুর শেষে কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভবন থেকে মূল্যবান মালামাল লুটপাটের ঘটনাও ঘটে।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। হেফাজতের নেতাকর্মীরা রাস্তায় যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই মারধর করেছে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় মসজিদের ভেতর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর দফায় দফায় বোমা হামলা চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
রাতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি মসজিদ থেকে হেফাজতে ইসলাম হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলাম দেশের প্রতিটি মসজিদে কমিটি করার ঘোষণা দেয়। কমিটির মাধ্যমে সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। এমন ঘোষণার পর থেকেই মসজিদ থেকে প্রতিরোধ ও মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গত ইয়াওমুল আহাদি বা রোববার শত শত বার চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে হেফাজত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম দাবিদাররা যে আসলে হেক্বারতে ইসলাম তথা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননাকারী তা গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক আল ইহসানে বলিষ্ঠভাবে লেখালেখি হয়ে আসছে। আর কার্যত হেফাজতে ইসলাম নামধারীরা বাস্তবে গত পরশু তাই প্রতিভাত করেছে। কোনো কোনো অনভিজ্ঞ মহল এবং সরকারের দায়িত্বশীল কিছু লোক লংমার্চের নামে হেফাজতের তথাকথিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রশংসা করেছিল। কিন্তু এটা যে তাদের আসল পরিচয় নয়, সে কথা তারা বুঝতে পারেনি। আসলে তারা যে জামাতে মওদুদীরই দোসর; তারা যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামধারী, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শত্রু, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার শত্রু, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শত্রু, তারা যে মুসলমানের শত্রু, তারা লুটেরা, তারা যে নাশকতাকারী, তারা যে দেশ ও জনগণের শত্রু সে কথা গত পরশু পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।
সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি হেফাজতে ইসলাম নামধারীদের নিষিদ্ধ করা হোক। সন্ত্রাসী হিসেবে তাদের বিচার করা হোক। সারাদেশ থেকে তাদের উৎখাত করা হোক।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




