somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে কাম ও কামকেলি (4-1)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০০৬ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্র্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধে করা যাচ্ছে। পুর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)

চতুর্থ কলি

শিশু বিবাহ ঃ
অপরিনত বয়স্কার সাথে সেক্সঃ
বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেই শিশু-বিবাহ আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশুবিবাহ আজকাল মানবতার প্রতি অভিশাপ হিসেবেই গন্য হয়ে থাকে। ভারতবর্ষে প্রাচীন হিন্দু সমাজে এ ধরণের বিয়ের বহুল প্রচলন ছিল। প্রাচীন পুঁথিপত্র পড়ে আমরা জানতে পারি, এমনকি পাচ ছয় বছরের মেয়েকেও পিতামাতা তখন অমানচিত্তে বিয়ে দিয়ে ফেলত। এই শিশুরা বড় হয়ে এমন স্বামীর ঘর করতেও বাধ্য হতো, যে ঘরসংসারকে তারা রীতিমত ঘৃনা করত। এই প্রথাকে নিকৃষ্টতম শিশু নির্যাতন ছাড়া আর কোন নামে অভিহিত করা যায়? কিছুসংখ্যক মানবতাবাদী কর্মীর দুর্বার আন্দোলনে হিন্দু ধর্মের আমুল সংস্কার সাধিত হয়, শিশুবিবাহ বর্তমানে হিন্দু সমাজে অতীত বিষয়মাত্র। কিন্তু ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে অবস্থাটা কী? ইসলামপন্থীরা জোর গলায় দাবী করে থাকেন যে তাদের ধর্মটি বিশ্বের মধ্যে সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে প্রগতিশীল ধর্ম। সুতরাং মানুষ সঙ্গতভাবেই আশা করবে যে এমন একটি প্রগ্রতিশীল ধর্মে শিশূবিবাহের মতো নোংড়া প্রথা নিশ্চয়ই আইনসিদ্ধ নয়। এই প্রত্যাশা অবশ্য প্রচন্ড এক ধাপ্পাবাজি, আসল সত্য হলো- বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে কোন সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারিত নেই। মায়ের বুকে দুগ্ধ পানরত সদ্যোজাত একটি শিশুকেও ইসলামী আইন অনুযায়ী বিয়ে দেয়া যায় এবং সে বিয়ে হান্ড্রেড পারসেন্ট ইসলামসম্মত!

ইসলামি শিশু-বিবাহের নিষ্ঠুরতম দিকটি হলো-- যদি বাপমায়ের সম্মতিক্রমে এই বিয়ের চুক্তি হয়ে থাকে, তবে তা কোনভাবেই রদ করা যায় না। অর্থাৎ- বড় হওয়ার পর দম্পত্তিকে অবশ্যই বিয়েটি পুর্ণাঙ্গ করতে হবে।

শিশুবিবাহ সংক্রান্ত শারিয়া আইন নীম্নরুপঃ
হেদাইয়া (রেফারেন্স-11, পৃ-36)ঃ
শৈশবে চুক্তিকৃত কোন্ প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর অবশ্য প্রতিপাল্যঃ
যদি শিশুদের পিতা কিংবা পিতামহ বিয়ের চুক্তি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর এই চুক্তি বাতিল করার কোন অধিকার তাদের (দম্পত্তির) নেই; যেহেতু এই বিষয়ে পিতৃপিতামহদের সিদ্ধান্ত কোন অসদুদ্দেশ্য হতে উদ্ভুত হতে পারে না কারণ সন্তানসন্ততিদের প্রতি তাদের স্নেহ সংশয়াতীত; ফলতঃ এই বিবাহ উভয় পক্ষের জন্যে অবশ্য প্রতিপাল্য, ঠিক সেইভাবে যেন তারা বয়ঃপ্রাপ্তির পর নিজেরা স্বেচ্ছায় এই সম্পর্কে প্রবেশ করেছে।

শৈশবে চুক্তিকৃত কোন্ প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর বাতিল করা/বহাল রাখার স্বাধীনতা দম্পত্তির
ইচ্ছাধীনঃ
যদি পিতৃপিতামহ ব্যতিরেকে অন্য কোন অভিভাবক চুক্তি করে থাকে, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির পর উভয়ের অধিকার রয়েছে চুক্তি বহাল রাখার অথবা বাতিল করার।

ইসলামের নবী মহম্মদ (দঃ) নিজেই ছয় (অথবা সাত) বছরের একটি শিশুকে বিয়ে করেছিলেন। মহম্মদের (দঃ) এই শিশু কনেটিকে নিয়ে ইদানীং বিস্তর লখালেখি হচ্ছে, এসম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা এই প্রবন্ধের উপজীব্য নয়। পাঠক-পাঠিকাগণকে আমি অন্য কোথাও হতে সেসব লেখা পড়ে দেখতে অনুরোধ করছি। আমি এখানে দু'একটি হাদিস উদ্ধৃত করব, যেখান থেকে দেখা যাবে যে মহম্মদ (দঃ) যখন তার বালিকা বধুটিকে ঘরে তুলে নেন এবং বিয়ে কনজুমেট করেন, বধুটি তখনও পুতুলখেলা ছাড়েনি (কনজুমেট শব্দের অর্থ যৌনমিলনের মাধ্যমে বিয়েকে পুর্ণাঙ্গ করণ বা আইনসিদ্ধ করণ)।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-008, হাদিস নং-3311:
আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুলাহ (দঃ) যখন তাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স ছিল সাত বছর, এবং বউ হয়ে তিনি যখন তার (রাসুলের) ঘরে যান তখন তার বয়স ছিল নয় বছর, এবং তার পুতুলগুলি তার সাথে ছিল; এবং যখন তিনি (রাসুল) ইন্তেকাল করেন তখন তার বয়স ছিল আঠার বছর।

সহি বুখারিঃ ভলিউম-5, বুক নং-58, হাদিস নং-236:
হিশামের পিতা হতে বর্ণিতঃ
নবী মদীনা চলে যাওয়ার তিন বছর পুর্বে খাদিজা ইন্তেকাল করেন। সেখানে বছর দুই কাটানোর পর তিনি আয়েশাকে বিয়ে করেন, আয়েশা তখন ছয় বছরের বালিকা মাত্র, এবং আয়েশার বয়স যখন নয় বছর তখন তিনি বিয়েকে পুর্ণাঙ্গ করেন।

নবী তার বালিকা বধুটির সাথে কীভাবে ক্রীড়াকৌতুক এবং সেক্স করতেন, তার কয়েকটি নমুনা।

সহি বুখারিঃ ভলিউম-1, বুক নং-6, হাদিস নং-298:
আয়েশা হতে বর্ণিতঃ
জুনুব অবস্থায় আমি ও নবী একই পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম (যৌনসঙ্গমের পরবর্তী নাপাক অবস্থার আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে জুনুব)। ঋতুকালে তিনি আমাকে ইজার (কোমর হতে নীচ পর্য্যন্ত পরিধেয় বস্ত্রের নাম ইজার) পরিধান করার জন্যে বলতেন এবং আমার সাথে রঙ্গরস করতেন। ইতিক্কাফ করার সময় তিনি তার মস্তক আমার দিকে বাড়িয়ে দিতেন এবং আমি তা ধুইয়ে দিতাম, এমনকি যখন আমার পিরিয়ড (ঋতুস্রাব) চলত তখনও।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-3, হাদিস নং-0629:
আয়েশা হতে বর্ণিতঃ
আমি এবং রাসুল (দঃ) একই পাত্রে গোসল করতাম এবং একজনের পর আরেকজন হাত দিয়ে পানি নিতাম, যৌনসঙ্গমের পর।

পঞ্চাশোর্ধ কোন প্রৌঢ় যদি নয়-দশ বছরের বালিকাকে বিয়ে করে, তবে তার সাথে কীভাবে রতিক্রিয়া করতে হবে- তার অনুপম আদর্শ বিধৃত আছে উপরের হাদিসগুলিতে।

ছয় বছরের শিশুকে বিয়ে করা এবং নয় বছর বয়সের সময় তার সাথে যৌনসঙ্গমে প্রবৃত্ত হওয়ার ঘটনা হজম করতে যদি কারও অসুবিধা হয়, তবে তার জন্যে আরও একটি চমক আছে। ইবনে ইসহাক রচিত সিরাতে রাসুলুলাহ গ্রন্থটি রাসুলের জীবন চরিত হিসেবে মুসলিম জগতে বহুল পঠিত এবং অত্যন্ত প্রামান্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। মুসলমান লেখকগণ প্রায়শই এই বই হতে বিভিন্ন বিষয়ে রেফারেন্স কোট করে থাকেন। এই গ্রন্থে রাসুল সম্পর্কে একটি মজাদার তথ্য আছে। ইবনে ইসহাক লিখেছেন, রাসুল নাকি সবেমাত্র হামাগুড়ি দিচ্ছে এমন এক শিশুকে বিয়ে করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। আসুন পাঠক, ইবনে ইসহাকের বর্ণনা থেকে আমরা ঘটনাটি জেনে নিই।

(সুহাইলি,ii .79: ইউনুছের রেওয়ায়েত I.I কতৃক রেকর্ডকৃতঃ নবী তাকে (উম্ আল-ফজলকে) দেখেন যখন সে তার সামনে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। তিনি বলেন- 'যদি সে বড় হয় এবং আমি তখনও বেচে থাকি, আমি তাকে বিয়ে করব'। কিন্তু সে বড় হওয়ার আগেই নবী ইন্তেকাল করেন এবং সুফিয়ান বিন আল-আসওয়াদ বিন আব্দুল আসাদ আল-মাখজুমির সাথে তার বিয়ে হয় এবং সুফিয়ানের ঔরসে তার রিজক ও লুবাবা নাম্নী দু'টি সন্তান জন্মে (রোফারেন্স-10, পৃ-311)।

আমরা আরও দেখতে পাই, হযরত ওমর (রাঃ) উম্মে কুলসুম নামের চার বছরের এক শিশুকে বিয়ে করেন। এই উম্মে কুলসুম হচ্ছে আবু বকরের (রা) মেয়ে এবং আয়েশার বৈমাত্রেয় বোন।

ইসলামের সর্বোচ্চ ব্যক্তি মহানবী এবং তার প্রিয় সাহাবিগণ পরবর্তীদের জন্যে এমন মহৎ আদর্শই রেখে গেছেন। রাসুল এবং তার সাহাবিগণ কতৃক প্রতিষ্ঠিত আদর্শের ইসলামি নাম সুন্না। এই সুন্না বা আদর্শ অপরিবর্তনীয়, প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে কেয়ামত পর্য্যন্ত এই আদর্শ অনুসরণ করতেই হবে, একবিন্দু নড়চড় করা চলবে না। পনের শত বছর ধরে এই অপরিবর্তনীয় আদর্শ অনুসরণ করতে যেয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে এখনও পেশাবের পর লিঙ্গাগ্র ধারণ করে চলিশ কদম হাটতে এবং জোরে জোরে কোথ দিতে দেখা যায়, ঢিলা কুলূখের অত্যাচারে অনেক মসজিদের কমোড জাম হয়ে নারকীয় দূর্গন্ধের সৃষ্টি করেছে দেখা যায়। অনেক সম্পন্ন মুছুলির বাড়ীতে ডাইনিং টেবিলের পরিবর্তে মাটিতে বসে খাওয়াদাওয়া করতে দেখা যায়, কারণ নবীর সুন্নত। নবী ডাইনিং টেবিলে খেতেন না, মাটিতে বসে খেতেন। তা বেশ, একনিষ্ঠ অনুসারি হিসেবে নবীর প্রতিটি কাজের অনুসরণ তারা করতেই পারেন। কিন্তু আমার খটকা লাগে যে শিশু বিবাহের সুন্নাটি তারা এড়িয়ে যান কেন! ডাইনিং টেবিলের পরিবর্তে মাটিতে বসে খাওয়াদাওয়া করে কিংবা ঢিলা কুলুখ হাতে নৃত্য করে নবীর সুন্নত পালন করেন, কিন্তু প্রকৃতির ডাকে বাইরে না ছুটে শোভন টয়লেটের দিকে ছুটে যান! ভিলার বাইরে খোলা ড্রেনের উপর খাটা পায়খানা বানিয়ে নেন না কেন? দেড় হাজার বছর পুর্বে নবীজি (এবং তার বিবিরাও) খোলা মরুভুমিতেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেতেন। আশা করি কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমান আমার মনের বিভ্রান্তি দুর করতে এগিয়ে আসবেন।

রিযা ঃ পালক মা/দুধ মা

আপনি কি কখনও এমন অবস্থার কথা চিন্তা করেছেন যে একজন বয়স্ক পুরুষ একই সাথে একজন দুগ্ধপোষ্য শিশু (2 বছর কিংবা তার চেয়েও কম) এবং একজন মহিলাকে বিয়ে করল যার বুকে দুধ আছে? এমন যদি হয় যে স্বামীর ঘরে নবপরিনীতা শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর মতো কেউ নেই (ধরা যাক শিশুটি এতিম)। ঘরে অবশ্য একটি দুধেল বউ আছে, কিন্তু সে কি শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে পারবে? বর্তমান সময়ে হলে অবশ্য কোন সমস্যা ছিল না, বাজারে হরেকরকম টিনজাত দুধ পাওয়া যায়। তবে বোতলের দুধ খাওয়ানো কোন ইসলামি সলিউশন নয়। দেখা যাক, ইসলাম সমস্যাটিকে কীভাবে হ্যান্ডল করেছে।

হেদাইয়া (রেফারেন্স-11, পৃ-71)ঃ
উদাহরণঃ একজন লোক যার দুইটি বউ আছে এবং এক বউ আরেক বউকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। যদি কেউ একইসাথে একজন শিশুকে এবং একজন বয়ঃপ্রাপ্তাকে বিয়ে করে এবং বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী শিশুস্ত্রীটিকে বুকের দুধ খাওয়ায়, তবে উভয় স্ত্রীই লোকটির জন্যে অবৈধ হয়ে যাবে, কারণ লোকটির সাথে যদি তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক যদি চালু থাকে, এর অর্থ হবে দুধ মা এবং দুধ-মেয়ে উভয়ের সাথে
যুগপৎভাবে সহবাস করা যা অবৈধ, ঠিক সেভাবে যেভাবে একজন বায়লজিকাল মা ও তার বায়লজিকাল কন্যার সাথে যুগপৎভাবে সহবাস করা অবৈধ। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে; যদি লোকটি বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে কেনাপ্রকার যৌনসম্পর্ক স্থাপন না করে থাকে তবে সে (বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী) দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে না, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণটি তার কাছ থেকে উদ্ভুত হয়েছে, বিবাহ পুর্ণাঙ্গকরণের আাগে:----কিন্তু শিশুটি অর্ধেক দেনমোহর পাওয়ার অধিকার রাখে, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের যে কারণটি উদ্ভুত হয়েছে তার জন্যে শিশুটি দায়বদ্ধ নয়।

এতক্ষন পর্য্যন্ত আমরা যা আলোচনা করলাম- তা একজন বয়স্ক লোক কতৃক একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিয়ে করা সংক্রান্ত। কিন্তু দৃশ্যপট যদি উল্টো হয়, অর্থাৎ একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুর যদি একজন বয়ঃপ্রাপ্তা নারীর (নয় বছর বা তধোর্ধ) সাথে বিয়ে হয়? (পাঠককে এপ্রসঙ্গে আমি জনপ্রিয় লোক-
কাহিনী রহিম বাদশাহ ও রুপবান কন্যার ঘটনাটি স্মরণ করতে অনুরোধ করি)। শারিয়া আইন অবশ্য এক্ষেত্রে অনেক উদার, এরুপ বিয়ের ক্ষেত্রে শারিয়া তেমন কোন বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। এরুপ বিয়ের ক্ষেত্রে শারিয়া একটিমাত্র শর্তই আরোপ করেছে, এই আজব শর্তটির ইসলামিক নাম 'রিযা' বা 'রিদা'।

ডিক্সনারি অব ইসলাম হতে রিযার সংজ্ঞা (রেফারেন্স-6, পৃ-546)ঃ
রিযা: একটি আইনসংক্রান্ত শব্দ। এর অর্থ - নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কোন নারীর বুক হতে স্তন্য পান করা।

রিযার আইনি সংজ্ঞা:- হেদাইয়া (রেফারেন্স-11) অনুসারে রিযার আইনি সংজ্ঞা নিম্নরুপ।
রিযা: ধাত্রী/দুধ মা (প্রাগুক্ত, পৃ-67)----আইনের দৃষ্টিকোন থেকে রিযা বলতে বুঝায় একটি শিশু কতৃক নির্দিষ্ট সময় ব্যপিয়া একজন নারীর বুক হতে স্তন্যপান করা, স্তন্যপান করার মেয়াদকে 'পিরিয়ড অব ফষ্টারেজ' বা ধাতৃত্বের মেয়াদ বলা হয়ে থাকে।

ধাত্রী-মায়ের কাছে শিশুর স্তন্যপান করানোর ইসলামী নিয়ম এই। এই নিয়মেই একটি নবজাতককে অপর কোন দুধেল নারীর কাছে প্রতিপালন করতে দেয়া হয়। সম্পন্ন আরবদের মধ্যে এই প্রথা আগে চালু ছিল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আজ পর্য্যন্তও চালু আছে। মহম্মদের (দঃ) চাচা আবু লাহাবের ক্রীতদাসী তায়েবা নাম্নী এক মহিলা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে শিশু মহম্মদকে স্তন্যপান করায়, অতঃপর দুধ মা হালিমার কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।

ধাতৃ-মাতৃত্বের ক্ষেত্রে পালনীয় বিধিনিষেধ সংক্রান্ত একটি হাদিসঃ
জন্মসুত্রে যে সব বিষয় হারাম, দুধ-মায়ের ক্ষেত্রে তা হারাম। ---30.3.15
মুয়াত্তাঃ বুক নং-30, হাদিস নং-30.3.15:
ইয়াহিয়ার কাছ থেকে আমি, মালিকের কাছ থেকে ইয়াহিয়া, আব্দুলাহ ইবনে দিনারের কাছ থেকে মালিক, সুলাইমান ইবনে ইয়াছারের কাছ থেকে আব্দুলাহ ইবনে দিনার, উরউয়া ইবনে জুবাইরের কাছ থেকে সুলাইমান এবং উম্মুল মোমেনীন আয়েশার কাছ থেকে উরুয়া বলেছেন যে রাসুলুলাহ (দঃ)
বলেছেন- "জন্মসুত্রে যে সব বিষয় হারাম, দুধ-মায়ের ক্ষেত্রেও তা হারাম"।

এই নিয়মানুযায়ী শিশুটি তার ধাত্রী মায়ের জন্যে হারাম। অর্থাৎ, শিশুটি বড় হলেও বিনাবাধায় তার ধাত্রীমায়ের কাছে যেতে পারবে, যেন ধাত্রী মা এবং জন্মদাত্রী মা সমতুল্য। এই নিয়ম আপাতদৃষ্টিতে
মহৎ বলে মনে হচ্ছে, এর মধ্যে আবার কোন সমস্যা লুকিয়ে আছে কি? আরেকটু নিবিড়ভাবে ষ্টাডি করে দেখা যাক।

ইসলাম ধর্মানুযায়ী একটি মেয়ের যে কোন বয়েসে বিয়ে হতে পারে, এমনকি সদ্যজাত শিশুকেও বাপমা বিয়ে দিয়ে দিতে পারে। নয় বছর বা এর চেয়ে বেশী বয়েসের যে কেউ ধাত্রী মা হতে পারে। এখন একটি কেস্ ষ্টাডি করা যাক। ছয় মাস বয়েসী একটি ছেলে শিশু, তার দুধ মা নয় বছর বয়েসী এক কিশোরী। মেয়েটি শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াল। শিশুটি আঠারয় পা দিল। ইসলামী আইন অনুযায়ী আঠার বছর বয়েসে একটি পুরুষ শিশু সাবালকত্ব অর্জন করে। তখন দুধ মা'র বয়স সাতাশ বা এর সামান্য উপরে, বলতে গেলে সে তখন যৌবনের মধ্যগগনে। প্রেম, বিয়ে, সন্তানধারণ ইত্যাদির প্রকৃষ্টতম সময় তার। ইসলামের আইন অনুযায়ী এই দুধ মায়ের সাথে সদ্য যৌবনে পা দেয়া যুবকটির বিয়ে সম্পুর্ণরুপে হারাম, এমনকি এই মায়ের গর্ভজাত যে কোন মেয়ের সাথে (দুধ বোন) তার বিয়েও সম্পুর্ণরুপে হারাম।

রলায়েন্স অব দ্য ট্রাভেলার নামক প্রামান্য শারিয়া গ্রন্থ থেকে এসম্পর্কিত কয়েকটি আইন পেশ করা হলো
(রেফারেন্স-8, পৃ-575-576। এন12.0- দুগ্ধ পানের কারণে অবিবাহযোগ্য আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠা (রিযা)।

এন12.1-কোন মেয়ে যদি কোন পুরুষ শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ায়, সে বাচ্চাটির মা হয়ে যায়, (তবে সব ক্ষেত্রে নয়) শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যথা- স্ত্রীলোকটির সাথে তার বিবাহ-সম্পর্ক স্থাপন হারাম হয়ে যায়, সে স্ত্রীলোকটির পানে তাকাতে পারবে বা তার সাথে নিরিবিলিতে সাক্ষাত করতে পারবে, এবং তাকে স্পর্শ করলে তার অজু ভঙ্গ হবে না; যদি:-

(এ)- উক্ত দুধ নয় বছর বা তধোর্ধ বয়েসী বালিকার স্তন্য হতে নিঃসৃত হয়ে থাকে, তা সে নিস্বরণ যৌনক্রিয়ার ফলেই হোক কিংবা অন্যকোন কারণেই হোক;
(বি)- এবং দুগ্ধপানরত শিশুটির বয়স দুই বছর বা এর চেয়ে কম হয়;
(সি)- এরুপ দুধ খাওয়ানোর সংখ্যা পৃথক পৃথকভাবে কমপক্ষে পাঁচবার হয় (ড়:স্তন্যদান বা ব্রেষ্ট-ফিডিংয়ের সংখ্যা পাঁচ বারের কম হলে উক্ত বিধিনিষেধ কার্য্যকরী নয়, পৃথক পৃথকভাবে স্তন্যদান করার অর্থ- সর্বসাধারণের কাছে যা পৃথক হিসেবে স্বীকৃত)

এন12.2-এরুপ অবস্থায়:
(1)- এরুপ স্তন্যদায়িনী নার্সের পক্ষে উক্ত শিশু কিংবা তার অধঃস্তন সম্পর্কযুক্ত (পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক) কারও সাথে বিবাহ বন্ধন স্থাপন করা 'এক্সক্লুসিভলি' নিষিদ্ধ (এখানে এক্সক্লুসিভলি বলতে বুঝায় শুধুমাত্র শিশুটি কিংবা তার অধঃস্তন কেউ, উর্ধতন কেউ নয়, অর্থাৎ শিশুটির পিতা, ভ্রাতা ইত্যাদি কেউ নয়):
(2)- সে (স্ত্রীলোকটি) শিশুটির মা হয়ে যায়, এবং শিশুটির জন্যে বিবাহ করা হারাম হয়ে যায় তাকে এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত (পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক) উর্ধতনদেরকে, এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত অধস্তনদেরকে (কারণ অধস্তনরা যেন তার নিজের ভাইবোন হয়ে গেছে)।

রিযা সম্পর্কে বেশ কিছু মজাদার হাদিস রয়েছে, যার কিছু নমুনা নীম্নে পেশ করা হলো।

বিবি আয়েশার বোন উম্মে কুলসুম সেলিম ইবনে আব্দুলাহ ইবনে উমরকে মাত্র তিনবার বুকের দুধ খাওয়ায়; যার দরুন আয়েশার সাথে দেখা করা ইবনে আব্দুলাহর জন্যে হারাম ছিল। যদি কুলসুম দশবার খাওয়াত, সেক্ষেত্রে আয়েশার সাথে সাক্ষাৎ করা তার জন্যে হালাল হয়ে যেতো।

মুয়াত্তাঃ বুক নং-30, হাদিস নং-30.1.7:
....সেলিম ইবনে আব্দুলাহ ইবনে উমর তাকে (ইয়াহিয়াকে) বলেন যে উম্মে কুলসুম বিন্ত আবুবকর আস-সিদ্দিক যখন তাকে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন তখন উম্মুল মুমেনীন আয়েশা তার বোনকে বলেছিলেন-"তাকে দশবার দুধ খাওয়াও, যেন সে আমার সাথে দেখা করার অধিকারী হয়"। সেলিম বলেন- "উম্মে কুলসুম আমাকে তিন বার দুধ খাওয়ানোর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুতরাং----আমি আর আয়েশার সাক্ষাৎ পাইনি, কারণ উম্মে কুলসুম দশ বার শেষ করতে পারেননি"।

ক্রমশ:--->

রেফারেন্সসমুহঃ
1। দ্য হলি কোরাণ; অনুবাদ- আঃ ইউসুফ আলী, পিক্থল, শাকির।
2। সহি বুখারি; অনুবাদ- ডঃ মোহম্মদ মহসিন খান।
3। সহি মুসলিম; অনুবাদ- আব্দুর রহমান সিদ্দিকী।
4। সুনান আবু দাউদ; অনুবাদ- প্রফেসর আহম্মদ হাসান।
5। ইমাম মালিক রচিত মুয়াত্তা; অনুবাদ- আ'শা আব্দুর রহমান এবং ইয়াকুব জনসন।
6। ডিকসনারি অব ইসলাম-1994, গ্রন্থকার- টি.পি.হাফস।
7। ইমাম গাজ্জালির ইয়াহ্ আল উলুমেদ্দিন (আব্দেল সালাম হারুন কতৃক সংক্ষেপিত-1997); ডঃ আহম্মদ এ. জিদান কতৃক সংশোধিত এবং অনুদিত।
8। রিলাইয়ান্স অব দ্য ট্র্যাভেলার (সংক্ষিপ্ত সংস্করণ)-1999, গ্রন্থকার- আহম্মদ ইবনে নাগিব আল মিস্রি, সংকলক- নুহ হা মিম কেলার।
9। শারিয়া দ্য ইসলামিক ল'-1998, গ্রন্থকার-আব্দুর রহমান ই. ডই।
10। ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুলুলাহ, অনুবাদ- এ. গুইলম, 15তম সংস্করণ।
11। দ্য হেদাইয়া কমেন্টারি অন দ্য ইসলামিক ল'স-(পুণর্মুদ্রন-1994); অনুবাদ- চার্লস হ্যামিল্টন।

লেখকঃ আবুল কাশেম, সিডনি, অষ্ট্রেলিয়া।
অনুবাদঃ খেলারাম পাঠক, ঢাকা- বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০০৬ সকাল ১০:২২
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×