somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্ণেল তাহেরের জেনুইন শিষ্য জিয়াউর রহমান

২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোকে ভাবেন ৭৫’র ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটা সামরিক অভ্যুত্থান হলো। এটা ভুল; ১৫ আগস্ট দেশের প্রেসিডেন্টকে খুন করা হইলো মাত্র; তিনি খুন হইলেন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতে। সিভিল পলিটিশিয়ান খন্দকার মোশতাক নতুন প্রেসিডেন্ট হইলেন।

ক্যান্টনমেন্ট শাসন করবে বাংলাদেশ—এমন কোন চিন্তা এই খুনীদের মাঝে দেখা যায় নাই। তখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানতো, দেশের বৈধ শাসক হলেন সিভিল পলিটিশিয়ানরা। পাকিস্তানে জিয়াউল হকের অভ্যুত্থানের সাথে তুলনা করে বলবো, আমাদের ফ্রিডম ফাইটের মাধ্যমেই আমাদের সামরিক বাহিনীর ভিতরে সিভিল পলিটিশিয়ানদের এই শ্রেষ্ঠতা তৈরি হইছিলো।

পরে খালেদ মোশাররফ সেনাপ্রধান জিয়াকে বন্দি করে অভ্যুত্থান করেন বটে কিন্তু তিনিও রাষ্ট্রের শাসন নিজের হাতে নেবার কথা ভাবতে পারেননি। দুয়েক জন সাংবাদিকের বরাতে জানা যায়, জাতির পিতার খুনীরা আগে জেনারেল জিয়ার সাথে যোগাযোগ করে রাষ্ট্রের শাসন বিষয়ে আলাপ করছিলেন; জিয়া রাজি হননি সামনে থাকতে; এবং খুনীরা রাষ্ট্রের শাসনের দিকটা সামলানোর জন্য মোশতাকের সহযোগিতা চান।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পার্থক্য ঘোচাবার কথা প্রথম ভাবেন কর্ণেল তাহের। তিনি আইউব খানের মতোই ভাবলেন, সিভিল পলিটিশিয়ানরা শাসন করলে জনগণের মুক্তি হবে না।

বিপ্লবের অবসেশনের বাইরে থেকে তাহেরকে নিয়ে ভাবতে পারলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। আইউব খানের মতোই তিনি সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বৈধ শাসক ভাবলেন। তাহের বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সামরিক অভ্যুত্থান করেন জাসদের বেসামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের প্রস্তুতি নাই বলে একমত হন জাসদের বেসামরিক/সিভিল নেতৃত্ব। জাসদের পলিটব্যুরোর অধঃস্তন সদস্য তাহের রিভল্ট করে জাসদে তাঁর অনুগত সিভিল এবং মিলিটারি সদস্যদের নিয়া বিপ্লব করতে গেলেন।

খালেদ মোশাররফদের খুন করে খালেদের বন্দী জিয়াকে বন্দী করেন তাহের। জিয়ার মাধ্যমে পুরা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেন তাহের। জিয়া প্রথমে রাজি হন সম্ভবত; পরে প্রথম সুযোগেই তাহেরের হাত ফস্কে বেরিয়ে যান।

রাজি না হয়ে উপায় ছিলো না জিয়ার; খালেদ মোশাররফের বন্দী থাকার চেয়ে তাহের বন্দী থাকা বেশি ভয়ানক। খালেদ খুন করেন নাই একটাও, আর তাহেরের মিশনটাই খুনের; তিনি এবং তাঁর অনুগত জাসদের কর্মীরা/গণবাহিনীর খুনের বিশেষ ট্রেনিং ছিলো; মুজিব সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ ধরে ধরে খুন করতেন এঁনারা; সরকারের ছিলো রক্ষীবাহিনী; রক্ষীবাহিনী গঠন না করে সেনাবাহিনী দিয়া রাষ্ট্রীয় খুন চালাইলে সেটাকে গৃহযুদ্ধ নাম দিতে হয়; রক্ষীবাহিনী এবং জাসদের ওই খুনাখুনি তাই একটি অনানুষ্ঠানিক গৃহযুদ্ধ।

জিয়াউর রহমান তাই রিস্ক নেন নাই কোন; তাহেরের সকল নির্দেশ মেনে নিজের জানরক্ষায় মনোযোগ দেন তিনি। জিয়ার রাজি হওয়া পুলিশ রিম্যান্ডে হাসিনারে জজ মিয়ার গ্রেনেড মারার কথা স্বীকার করার মতো ঘটনা। বন্দী প্রথম সুযোগেই মুক্ত হবেন–এমনই হবার কথা। সেভাবেই মুক্ত হইছেন জিয়া।

মুক্ত হইয়া তাহেরের মৃত্যু নিশ্চিত করেন জিয়া; এতে শিষ্যত্ব খারিজ হয় না; বরং এইটা তাহেরের বিপ্লবেরই ফলো-থ্রু। খালেদের অভ্যুত্থানে বিশৃংখল সেনাবাহিনীতে অর্ডার ফিরাইয়া আনার দায়িত্ব দেন জিয়ারে তাহের; সেই দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেন জিয়া; সেনাবাহিনীর বিশৃংখলা তৈরিতে তাহেরের চেয়ে বেশি সফল কে ছিলো আর? ফলে সেনাবাহিনীতে অর্ডার ফিরাইয়া আনতেই তাহেরকে মরতে হইলো।

এই খুনরে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা বলা যায় না কেবল। রব, ইনু বহাল তবিয়্যতে বেঁচে আছেন। এদেরকে জিয়া খুন করেন নাই। আদতে ক্যান্টনমেন্টে তাহের একটা ফেনোমেনন ছিলেন, রব, ইনু’র ক্যান্টনমেন্টে কিছু ঘটাবার ক্ষমতা আছিলো না তাহের বিনা। তাহেরের ফাঁসিকে অন্যায় ফাঁসি বলাও কঠিন আসলে; বিপ্লবের মাধ্যমে তাহের যদি একটা আদালত প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন সেই আদালত হয়তো তাহেরকে নায়ক বলে ঘোষণা করতো; কিন্তু অন্য যে কোন আদালতেই মহাখুনী হিসাবে তাহেরকে ফাঁসি দেবার কথা।

বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ায় তাহেরভক্তরা জিয়ারে দোষ দেন সব সময়; পুরাই অযৌক্তিক; জিয়া তো জাসদে যোগ দেন নাই কখনো; বরং সেনাবাহিনীতে জাসদের তৎপরতা রোধে সরকারের অনুগত হিসাবেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন আগে। তাহেরের বন্দী হওয়ার আগে কখনো প্রতিশ্রুতিও দিছেন বলে প্রমাণ দিতে পারে নাই কেউ; ইন ফ্যাক্ট, সেই দাবি তাহেরও করে না মরার আগে।

তাহেরের ফাঁসির পরে তখনি সামরিক শাসক হননি জিয়া। কিন্তু কিছুদিন পরে হলেও তাহেরের স্বপ্ন পূরণ করেন জেনারেল জিয়া; তাহেরের স্বপ্ন ছিলো—সেনাবাহিনী শাসন করবে দেশ, জিয়া সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন; তাহেরের ভাবশিষ্য হয়ে জিয়া ভাবলেন, সেনাবাহিনীই শাসনের সবচে যোগ্য প্রার্থী। ফ্রিডম ফাইটের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে ভিন্ন হয়ে পড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আবার সেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হিসাবে তৈরি করার ফিলজফার কর্ণেল তাহের।

জেনারেল জিয়া এমনকি কর্ণেল তাহেরের অন্য স্বপ্নও পূরণ করেন; সেনাবাহিনী এবং জনগণের সমন্বিত শ্রমে খাল কাটার মাধ্যমে জিয়া তাহেরের জাসদের শ্লোগান ‘সিপাহী-জনতা ভাই ভাই’-এর প্রতীকী বাস্তবায়ন ঘটান। বাংলাদেশে সবচে ক্ষমতাবান, হিসাব-নিকাশের উর্ধ্বে এবং ধনী রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসাবে সেনাবাহিনীর উত্থানে তাহেরের কাছে বেশ কিছু লোন আছে ক্যান্টনমেন্টের।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:২৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×