somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরাবানী:

২৮ শে নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানব পশু নিজের মুক্তির জন্য স্মরাণাপন্ন নিল তার থেকে নিন্ম মানের এক নিরিহ পশুর নিকট। কে বড়? ত্যাগ করতে বলা হল পশুত্ব আর হত্যা করে বসল এক নিরিহ প্রানী। বাহ!!

আল্লাহর প্রিয় মানুষ, আল্লাহ মানুষ চায়, আর মানুষ তার নিজের দিকেই না তাকায় চোখ দিল তার থেকে নিন্ম মানের পশুর দিকে। কি সুন্দর সুন্দর হাদিস বের হলঃ নিরীহ প্রানী হতে হবে, চার পা হতে হবে...কত কি?? কেন তাহলে বিড়াল জবেহ দিত!! সেটা দেয় না কেন? চার পায়া পশু কি শুধু গরু, ছাগল, ঊট, দুম্বা এই সবই বুঝায়? কুত্তা, শিয়াল, বিড়াল হয়না। গরুর মাংস মজা তাই গরুই হল বেচারা।

একজন মানুষকে মুক্তি দিতে একটা গরু তার নিজের জীবনকে করল উৎসর্গ। এমন এক সময় আসবে যখন নাকি কারো আমল নামা কারো কাজে আসবেনা, কেউ কাঊকে হেদায়েত করতে পারবেনা, কিন্তু এখানে দেখছি এক গরু সৃষ্টির সেরা কতগুলো জীব মানুষকে মুক্তি দিচ্ছে।

কত অসহায় এক জীব, মানুষের জন্য নিজেদের জীবনকে বিলীন করল। যাইহোক ধন্য হোক সেই গরু সকল। মুক্তি পাক তারা, আর যারা নিজেদের মুক্তির জন্য অবলম্বন করল পশু তারা থাকল বন্ধনে। এই জীব হত্যার হিসাব না দেয়া পর্যন্ত তাদের মুক্তি হতে পারেনা।
জাহিদুর রহমান মাসুদ:
প্রতিবছর কোরবাণীর ঈদে সেই একই দৃশ্যের অবতারণা দেখি। মৌলভী সাহেব ভয়ংকর এক ছুরি নিয়ে দিক-বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। যতো বেশি কতল করতে করবেন অতো বেশি সালামী। তার অবসরের কোন সুযোগ নেঈ। পশুর রক্তে তার পোশাক লাল হয়ে গেলেও সেদিকে তাকানোর কোন অবকাশ নেই। একটু দেরি হলেই অন্য মৌলনা এসে কতল করে ভাগটা নিয়ে দিয়ে যাবে। জবাইকালে পশুর ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে আর অদূরে দাড়িয়ে কোমলমতি অবুঝ শিশুরা এ দৃশ্য দেখে আনন্দে আটখানা হচ্ছে। পাশে দাড়ানো বৃদ্ধ নানা বা দাদা তাতে সায় দিচ্ছেন। এই করুণ দৃশ্যগুলো-কে উপভোগের মাধ্যমে পরিনত করে আমরা আমাদের সন্তানদের কতোটা সহনশীল করছি?

বলা হয়ে থাকে পশু কোরবাণীর মাধ্যমে মানুষ তার মনের পশুত্ব-কে কোরবাণী দেয়। কিন্তু আমিতো নিরীহ জীবটির মাঝে কোন পশুত্ব দেখিনা, অসহায়ত্ব দেখি। বরং যে মানুষগুলো অবলীলায় তাঁর গলায় ছুরি চালায়, ফিনকি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়াকে উপভোগ করে তাদেরই পশু বলে মনে হয়। নিরীহ জীবটিকে নয় বরং যে তাঁর দড়িটি প্যাচিয়ে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেয় তাকেই আমার পশু বলে মনে হয়।

আরো বলা হয়ে থাকে যে, দরিদ্রদের সাহায্য করা এবং তাঁদের-কে আনন্দের সঙ্গী করার জন্যই এই কোরবাণী। ভাল কথা, কিন্তু দরিদ্রদের সাহায্য করারতো আরো অনেক ভাল উপায় আছে। একটা চাইনিজ প্রবাদ আছে যে, একজন লোককে একবেলা মাছ খাওয়ানোর চাইতে তাঁকে মাছ ধরার পদ্ধতিটা শিখানোটাই তাঁর জন্য বেশি উপকারের। ঠিক তেমনি একজন দরিদ্র-কে একবেলা মাংস খাওয়ালে এটা তার জীবনাচরণে কোন পরিবর্তনই আনবেনা। সে দরিদ্রই থেকে যাবে। কিন্তু কোরবাণীর পিছনে একজন ব্যক্তি যে পরিমান টাকা খরচ করেন সে পরিমান টাকা দিয়ে তিনি একজন দরিদ্র-কে অতি সহজেই সচ্ছল এবং স্বাবলম্বী করতে পারেন। দেশের সকল মানুষ যারা কোরবাণী দেন তাঁরা যদি একই আচরণ করেন তাহলে নিশ্চিতভাবেই দেশের দারিদ্রতা অনেকাংশে লাঘব হবে। এবং আমি নিশ্চিত কোরবাণীর মাধ্যমে ত্যাগ স্বীকারের ধর্মীয় শিক্ষার সাথে এটি মোটেও বিরোধপূর্ণ হবেনা।

এখানে একটা কথা আসতে পারে যে, খাদ্যাভাসের কারণে মানুষকেতো জীব হত্যা করতেই হবে। হ্যাঁ, সত্যিই তা করতে হবে। আমি নিজেও কিন্তু এখানে জীব হত্যার বিরোধীতা করছিনা। কিন্তু মানুষের যতোটুকু প্রয়োজন ততোটুকুই তাঁর প্রকৃতি থেকে নেওয়া উচিত। কোরবাণীর নামে আমরা যা করছি তা স্রেফ অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। বনের হিংস্র পশু বলে পরিচিত বাঘ বা সিংহের মতো চতুষ্পদরাও কিন্তু নিজের যতোটুকু প্রয়োজন ঠিক ততোটুকুই প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে।

আসলে সামান্য দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটালেই কোরবাণী প্রথাটি অপচয়ের পরিবর্তে দেশের দারিদ্রতা লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা এবং সংঘবদ্ধ প্রচার। কিন্তু এ কাজে যাদের বেশি ভূমিকা রাখার কথা সেই মহান বুদ্ধিজীবীদের এদিকে কোন নজর আছে বলেতো মনে হয়না। দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের চেয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সুস্বাদু পিঠা সংস্কৃতি-কে টিকিয়ে থাকা। যাক, সাহস করে অনেক বেশিই বলে বলেছি। এরচেয়ে বেশি কিছু বলে নিজের বাঙ্গালীত্বটা হারাতে চাইনা।

নাস্তিকের ধর্মকথা,
নির্বিচারে পশু হত্যার উৎসব কোন ফর্মেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জাকির নায়েকদের কাছ থেকে এই জিনিসটারই ব্যাখ্যা চাইতেছিলাম। কিন্তু তারা দুনিয়ার যত আজে বাজে কথা বইলা তাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাজির করে- কিন্তু এই প্রসঙ্গটা সযত্নে এড়াইয়া যায়। শুরু করে ভেজিটেরিয়ানদের নিয়া। "পশুহত্যা মহাপাপ" এইটার জবাব দেন মনের মাধুরি মিশাইয়া। জ্ঞানীর মত সকলকে জানিয়ে দেন- পশুহত্যা মহাপাপ- কিন্তু "গাছেরও তো প্রাণ আছে"। যেনবা আমরা কেউ এই তথ্যটি জানতাম না! চলে মানুষ ও বিভিন্ন পশু পাখির দাঁতের গঠনের পার্থক্যের সচিত্র প্রতিবেদন, যা দেইখ্যা এক নিমিষেই বুঝা যাইবো- আল্লাহ মানুষরে যে মাংস চিবানোর জন্যই পয়দা করছে সেইটা। তারপরে তারা শুরু করেন ইসলামে জবাই করার নিয়মের মধ্যকার যত বৈজ্ঞানিক ব্যাপার স্যাপার। .... এগুলো নিয়াই পেচাইতে থাকেন। পেচাইতে পেচাইতে একদম ছ্যাড়াবেড়া- আর ধার্মিক ব্যক্তিরা ভাবেন- আহা! এই না হইলে আমাগো ইসলাম!!

আমি ভাবি- যে আমি ছোটবেলা থেকে পশুর মাংস খেয়ে অভ্যস্ত, যে আমার পশু জবাই করা নিয়ে কোনই বাছবিচার নাই (তিন কোপ আর এক কোপে জবাই হয়েছে কি না সেটা নিয়া মাথাই ঘামাই না, একবার আদিবাসীদের মারা পশুর মাংসও খেয়েছিলাম যা নাকি খুচিয়ে খুচিয়ে মারা)- সেই আমারে এইসব কথা কইয়া কি লাভ? আমরা আজ কসাইখানা নামক একটা আলাদা জায়গা রাখছি- কিন্তু ধর্মের নামে একটা দিন দুনিয়ারে এইরকম কসাইখানা বানায় দেয়ার মানে কি হতে পারে- এইটাই বুঝতে পারি না এবং সেইটা কেউ বুঝাইতেও আসে না। একবার একজন অবশ্য বুঝাইতে আইসা কইছিল- অন্য ধর্মেও এইরকম নির্বিচার পশুহত্যা আছে- আমি কেবল ইসলামরে নিয়া লাগছি ক্যান। আজব একখান প্রশ্ন বটে! অন্য ধর্মরে দিয়া ইসলামরে রক্ষা করার চেস্টায় বেচারার যে ঈমানের পরীক্ষায় মুনকার-নাকির দুইটা বেশী প্রশ্ন করবো- সেদিকে খেয়াল নাই- আমারে জিগায়, আমি ইসলামের পেছনে লাগছি ক্যান! যাউকগা, জবাব চাইতে গিয়া দেখি লোকে আমার কাছেই জবাব চায়- এই টাইপের প্রশ্নের মেলা জবাব দিছি, তাই এইটারে পাত্তা দেওনের খুব বেশি কারণ দেখি না।

আরেকজন আইসা কইলো- আল্লাহ কোরবানী দিতে কইছে- নিজ হাতে তো পশু হত্যা করবার কয় নাই- আলাদা নির্দিষ্ট স্থানে বা কসাইখানায় সমস্ত পশুর কোরবানীর ব্যবস্থা হইলেই তো হয়। আমি খুব খুশী হই, হুম যান পারলে এই ব্যবস্থা চালু করেন - আর আপত্তি করুম না। রোযার ঈদেও মুসলমানরা পোলাও-মাংস খায়, ফলে ঐদিনও দেশে বেশী গরু ছাগল জবাই হয়, কই এই ঈদ নিয়া তো বর্বরতার অভিযোগ কেউ তুলি না। কসাইখানা থেকে দরকারে রোযার ঈদের তুলনায় দশগুন কইরা মাংস কিনেন, কিইনা নিজে খান- বিলি করেন, ছোয়াব হাসিল করেন, পরকালের খাসা খাস সব জিনিসগুলানের বুকিং দিয়া দ্যান- কোনই আপত্তি নাই; খালি দয়া কইরা দুনিয়াটারে একটু বাসযোগ্য রাখেন- খালি আমাগো নাস্তিকগো লাইগা না- আপনেগো নিজেগো লাইগাও।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×