somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

***শুধু বিশ্বাসই কি ঈমান?***

০৭ ই মে, ২০১১ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
ঈমান হচ্ছে, কাওল ও আমল। অর্থাৎ মুখে বলা ও কাজে করা। কিন্তু কেউ যদি মনে করে ঈমান শুধুমাত্র মুখে বলা কিংবা ঈমান হচ্ছে শুধুমাত্র ঈমান সম্পর্কিত পরিচয় থাকা তাহলে সেটা মোটেই ঈমান বলে পরিগণিত হবে না।

মুহাদ্দিস ইমাম আবূ বকর মুহাম্মাদ ইবনুল হুসাইন আল আ-জুরী (মৃত ৩৬০ হিজরী) তার বর্ণনা সূত্র চতুর্থ খলিফা আলী রাদিআল্লাহু 'আনহু পর্যন্ত মিলিয়ে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল ঈমানু ক্বওলুম বিললিসান ০ ওয়া আমালুম বিলআরকান ০ ওয়া ইয়াক্বীনুম বিল ক্বালব ০ অর্থাৎ ঈমান হচ্ছে জিব দিয়ে বলা এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে করা আর অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা। (আশ-শরীয়াহ, ১৩১ পৃষ্ঠা)

দুই বিখ্যাত সাহাবী আলী ইবনে আবী তালিব এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু 'আনহুমা বলেন, বিনা কাজে শুধু কথা ফায়দা দেয় না এবং বিনা কথায় কাজও হয় না। আর বলা ও করা বিনা নিয়তে বা মন থেকে হয় না। আর নিয়তও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকা তথা সুন্নাত মোতাবেক না হলে তা সঠিক হয় না। (আশ-শরীয়াহ, ১৩১পৃষ্ঠা)

এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত এবং তার সাহাবীদের একটি দল থেকে বর্ণিত আর অধিকাংশ তাবিঈ থেকে বর্ণিত আছে যে, ঈমান হচ্ছে- তাস্বদীকুম বিলকালব (অন্তরে সত্য জানা) - ক্বওলুম বিললিসান (জিব দ্বারা বলা) এবং আমালুম বিলজাওয়া-রিহ (অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা তা কাজে পরিণত করা)। আর যারা এ কথা বলে না তারা ওদের মতে কুফরী করে। (আশ-শরীয়াহ, ১৩০ পৃষ্ঠ)

আল্লামা ইবনে রজব ‘শারহে আরবায়ীন’ গ্রন্থে বলেন, সালাফ ও হাদীস বিশারদদের থেকে একথা প্রসিদ্ধ আছে যে, ঈমান হচ্ছে বলা ও করা এবং মনন। আর সমস্ত কাজই ঈমান নামের অন্তর্ভূক্ত। আর ইমাম শাফিঈ রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে সাহাবায়ে কিরাম এবং তাঁদের পরবর্তী তাবেঈনদের ইজমা তথা সর্বসম্মত রায় আছে। (আকীদাতুল মুসলিমীন ২য় খন্ড, ৫০ পৃষ্ঠা)। এজন্যই মনে হয় আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনের ৭০টি আয়াতে ঈমান ও আমলের কথা মিলিতভাবে বর্ণনা করেছেন। (কিতাবুশ শারীয়াত, ৩৪)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই ইসলামের ব্যাখ্যা দিতেন তখনই তিনি ইসলাম শব্দটির সাথে কোন না কোন কাজ বা ইবাদত যোগ করতেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
اﻟﻤﺴﻠﻢ ﻣﻦ ﺳﻠﻢ اﻟﻤﺴﻟﻤون ﻣﻦ ﻟﺴﺎ ﻧﻪ وﻳﺪە
অর্থঃ মুসলমান প্রকৃত সেই ব্যক্তি, যার যবান (কথা) ও হাত থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম) সুতরাং এগুলো হলো এমন কাজ যা একজন মুসলিমকে অবশ্যই করতে হবে। যবানের অনিষ্ট গুলো হলো মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, মুসলমান ভাইয়ের দোষ অন্যের নিকট বলে বেড়ানো প্রভৃতি। আর হাতের অনিষ্টগুলো হলো অবিচার করা, চুরি করা, প্রতারণা করা প্রভৃতি। কাজেই কোন মুসলমানকে অবশ্যই ইসলামের কাজ বা ইবাদতগুলো করতে হবে, যদি তার মাঝে এই কাজগুলো না দেখা যায় তাহলে সে যে একজন মুসলিম তার কোন প্রমাণ নেই।

এখন কোন মুসলিমের মাঝে যদি ইসলামের কোন একটি ইবাদত দেখা না যায় তাহলে এটা বলা খুবই কঠিন সেই ব্যক্তি সত্যিই মুসলমান কিনা। তবে কোন ব্যক্তিকে যদি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে দেখা যায়, যাকাত দিতে দেখা যায়, যদি দেখা যায় সে ইসলাম যে কাজগুলো করতে নিষেধ করেছে সেগুলো থেকে বিরত থাকে তাহলে নিশ্চিতরুপে বলা যায় সে একজন মুসলিম।

আরেকটি বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আমাদের মতো নামাজ পড়ে, আমাদের মতো নামাজে কিবলার দিকে মুখ করে দাড়ায় এবং আল্লাহর নামে কোরবানীকৃত(জবাইকৃত) আমাদের পশুর গোস্ত খায় তাহলে সে একজন মুসলিম”।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে মুসলমানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে কাজ বা স্পষ্ট প্রতীয়মান ইবাদতের কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং বুঝা গেল ইসলাম কোন ব্যক্তির মধ্যে আছে কিনা তা বোঝার জন্য তার মাঝে স্পষ্ট প্রতীয়মান কাজ বা ইবাদতগুলো থাকতে হবে। আর স্পষ্ট প্রতীয়মান কাজ বা ইবাদতগুলো না থাকলে কাউকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেওয়া অসম্ভব।

সাহল ইবনে ‘আব্দুল্লাহ তাসতারী রহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ঈমান কি? তিনি বলেন, কথা ও কাজ এবং মনন ও সুন্নত। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ঈমান যখন বিনা কাজে শুধু কথাতে হবে তখন তা কুফরী হবে। আর যখন তা শুধু কথা ও কাজে হবে বিনা মননে (নিয়তে) তখন তা মুনাফেকী হবে। আর যখন তা সুন্নাত মোতাবেক না হয়ে কেবল কথা ও কাজ এবং নিয়ত অনুযায়ী হবে তখন তা বিদআত ও মনগড়া হবে। (কিতাবুল ঈমান, ১৫২ পৃষ্ঠা)

বাংলা একটি প্রবাদ আছে, ‘শুধু কথায় চিড়ে ভিজে না’। তেমনি শুধু মুখে ঈমান এনেছি বললে তা ঈমান হবে না বরং তা ধোকা দেয়ার নামান্তর। অন্তরে বিশ্বাস রেখে, মুখে দিয়ে ঘোষণা দিয়ে এবং সেই অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করে প্রমাণ দিতে হবে সত্যিই মুসলিম কিনা।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের হক কথা বুঝার সুমতি দান করুন, আমীন।

আরো বিস্তারিত জানতে নিম্নোক্ত বইটি পড়া যেতে পারেঃ
ঈমান ও আক্বীদা
হাফিজ শাইখ আইনুল বারী আলিয়াবী

আর একটি চমৎকার ভিডিও লেকচার, ডাউনলোড করে দেখতে পারেনঃ
What it means to be a MUSLIM
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×