somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চকবাজারের ঘটনায় ফেসবুকে অতি আস্তিক ও অতি নাস্তিক কিছু উজবুকিও কমেন্ট

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চকবাজারের ঘটনায় ফেসবুকে অতি আস্তিক ও অতি নাস্তিক কিছু উজবুকিও কমেন্ট পড়ে পড়ে মুখ তিতা হয়ে যাচ্ছে। এটি সেই তিতা মন থেকে লেখা স্ট্যাটাস। কেউ মাইন্ড খাইলে খান। আপনার কথায় আমিও মাইন্ড খেয়েছি জেনে রাখুন।

কিছু উদাহরণ দেই।
১. আল্লাহ/ঈশ্বর ভগবান যদি এতই দয়ালু হতেন, তাহলে আগুন লাগলো কিভাবে?
২. আগুন যখন লাগলোই নিভলো না কেন?
৩. সব পুড়ে গেছে, মসজিদ/কুরআন পুড়ে নাই। সুবহানাল্লাহ!
৪. আগুন নেভানোর সময়ে মসজিদ থেকে পানি সরবরাহ করা হয়নি। (কেউ বলছেন এটি মিথ্যা অভিযোগ। যদি মিথ্যা রটনা হয়ে থাকে, তবে এই নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া জরুরি। দোষী ব্যক্তির অবশ্যই শাস্তি হওয়া জরুরি।)

প্রথম ও দ্বিতীয় পয়েন্ট পয়েন্ট নিয়ে বলতে গেলে খুব বেশি মাথা খাটানোর নেই। ফায়ার ইনভেস্টিগেটররা তদন্তে নামার প্রথম ধাপেই ওয়াহেদ ম্যানশনে ঢুকার সময়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা তাঁদের বাঁধা দেন। তারপরেও যখন তাঁরা জোর করে ঢুকেন, দেখেন সেই বাড়ির নিচে কেমিক্যালের গুদাম। যেখানে কোনরকমে আগুন পৌঁছালে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কয়েকগুন হতো নিশ্চিত। ফায়ার ব্রিগেডের কর্মচারীরা বরং দোয়া করেছেন আল্লাহ রক্ষা করেছেন, এখানে আগুন লাগার আগেই তাঁরা আগুন থামাতে পেরেছেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এখানেই, আগুন লেগে এত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরেও স্থানীয় লোকজন এবং ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন না কেমিক্যালের মজুদ আবাসিক এলাকা থেকে সরুক। টাকা পয়সার লোভ এতই মোহনীয়।
নিমতলীর দুর্ঘটনার পরেও আমাদের শিক্ষা হয়নি। চকবাজারের পরেও আমাদের শিক্ষা হয়নি। আমরা কেমিক্যাল সরাবো না। পয়সা কামাবার ধান্দা করবো। আর আগুনে মানুষ পুড়লে আল্লাহ/খোদা/ভগবানের উপর দোষ চাপিয়ে ফেসবুকে আহ্লাদীপনা করবো। বাহ্ বাহ্ বাঙালি! ব্রাভো!
আরে, সত্য কথা হচ্ছে, এত অপরিকল্পিত নগরীতে আমরা যে বেঁচে আছি, সেজন্য, প্রতিটা সেকেন্ডের জন্য আমাদের উচিৎ উপরওয়ালার শুকরিয়া আদায় করা। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে দৌড় ঝাঁপ করবা, আগুনের জন্য ন্যূনতম সতর্কতা অবলম্বন করবা না, টাকা পয়সা কামানোর ধান্দায় জান মালের বাজি ধরবা, তারপরে বলবা "পরম করুণাময়কে মানিনা" - বাবাজি, তোমার মানা না মানায় কিচ্ছু যায় আসে না। বরং কামের কাম যদি কিছু করতে চাও - তাহলে নিহত আহতদের পাশে দাঁড়াও। সরকারের কাছে পিটিশন কর যে এইসব কেমিক্যাল গুদাম আবাসিক এলাকা থেকে দূর করতে। আমি বরং উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দেই, ওয়াহেদ মেনশনে আগুন লাগার আগেই সেটা নেভানোর জন্য।
নাহলে মোটামুটি সব বন্দোবস্ত করাই ছিল আগুন না নেভানোর। সরু গলি, পাইপের উপরে উৎসুক জনতার পায়ের চাপ ইত্যাদি। উপরওয়ালা না থাকলে লাশের সংখ্যা কয়েক হাজার হতো।
এখন দেখা যাক এই বিষয়ে আল্লাহ কুরআনে কী বলেছেন। সূরা আশ শুরার ৩০ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন, "তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন।"
একই ব্যাপার তিনি একটু ঘুরিয়ে সূরা নিসার ৭৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন, "আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে।"
এছাড়া সূরা কাহফের খিদির এবং মুসার (আঃ) বিখ্যাত গল্পে বলা আছে, একটি নৌকায় ফুটো করে বাস্তবে মাঝির ভালই করা হয়েছিল। কারন রাজা যুদ্ধের জন্য সব ভাল ভাল নৌকা জব্দ করছিল। এই মাঝির নৌকা ফুটা বলে রাজা ছিনিয়ে নিবে না। আর এই ফুটা মেরামত করতে মাঝির খুব পরিশ্রমও লাগবেনা।
আজকের এই একশোজনের মৃত্যু কালকের হাজারজনের মৃত্যু ঠেকিয়ে দিল কিনা কে জানে। আমরা যদি সাবধান না হই, তাহলে অবশ্যই সামনে আরও বড় দুর্যোগ আসবে। আর যদি সাবধান হই - তবে হাজারটা প্রাণ রক্ষা পাবে।
আমরা যে ভয়াবহ ভূমিকম্প অঞ্চলে বাস করি, এইটা এখন বিশ্বের যেকোন মানুষ জানেন। আমাদের মাটির নিচে বিশাল ফাটল আছে। যেকোন মুহূর্তে শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটার সুযোগ আছে। এখন ভয়ংকর রকম অপরিকল্পিত ঢাকা শহরে একটা শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানলে কী প্রলয়টা ঘটবে কারোর কোন ধারণা আছে? তারপরেও আমরা বলি উপরওয়ালা করুনাময় নন?

তিন নম্বর পয়েন্ট নিয়ে অতিশয় মূর্খ, গাধা গর্ধব ছাড়া কেউ চিল্লাবে না।
যেকোন মুসলিমের জানা থাকার কথা মক্কার আলামিনের নবী হবার আগে একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেটি হচ্ছে, আগুনে পুড়ে কাবাঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তারপরে সেটা পুনঃনির্মান করে পবিত্র পাথরটি কে বসাবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে নবী (সঃ) চমৎকার সমাধান দেন।
পয়েন্ট এটাই, আগুন লাগলে কাবা ঘরও নষ্ট হতে পারে। সেখানে চকবাজারের মসজিদ কিছুই না।
ইসলামের মিরাকেল "ফিজিক্যাল" জিনিসপত্রে নারে ছাগল, ইসলামের মিরাকেল অন্তরে। আগুনে পুড়ে যাচ্ছে মানুষ, তারপরেও মুখে বলছে আল্লাহু আকবার, সে জানে, তাঁর রব তাঁকে মৃত্যুর মধ্য দিয়েই অনন্ত জীবন দান করবেন। এই বিশ্বাসের নামই ইসলাম। মুসলিম মাত্রই জানার কথা দুনিয়ার কোন কিছুই স্থায়ী নয়, এবং সেটা পবিত্র কাবা ঘর হলেও।

চতুর্থ পয়েন্টটা খুবই সেনসিটিভ। এবং এর বিস্তারিত তদন্ত হওয়া জরুরি।
পাশের আগুনে পুড়ে মানুষ মরছে, মসজিদ যদি ফজরের নামাজের ওযুর জন্য পানি না দিয়ে থাকে, তবে যারা দেয়নি, তাদের কঠোর বিচার হওয়া জরুরি। ইসলামে পানি না থাকলে তায়াম্মুম করেও নামাজ আদায়ের বিধান আছে, কিন্তু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের জন্য ফরজ। সেক্ষেত্রে ফাজলামি করে পানি না নিয়ে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের অপরাধ করেছে ঐ লোকেরা। কঠোর শাস্তি দাবি করি।
আর যদি এইটা গুজব হয়ে থাকে। তাহলে এই ধরণের উষ্কানীমূলক গুজব ছড়ানোর অপরাধেও রটনাকারীর কঠোর শাস্তি দাবি করি। এমন সেনসিটিভ বিষয়কে ব্যবহার করে মানুষের ইমোশনের সাথে খেলা লোক কোন অবস্থাতেই সুস্থ মাথার লোক হতে পারেনা। ক্রিমিনাল মেন্টালিটির এইসব লোকদের পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে ডলা দেয়া অত্যন্ত জরুরি। সাথে মোটা অংকের আর্থিক জরিমানা। টাকায় টান পড়লে বাঙালির আক্কেল ঠিকানায় ফিরে।
চকবাজারের মসজিদের মাইকে ঈমামের কান্নার শব্দটা শুনেছি বলেই মনে হচ্ছে কোন ফাজিল গুজব রটানোর চেষ্টা করলেও করতে পারে।

সবশেষে বলি, একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, এখন আপনার পক্ষে যদি ভালকিছু করা সম্ভব না হয় তবে সেটা নিয়ে ফেসবুকে দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ করুন। এখন দুর্গন্ধ ছড়ানোর সময় না। এখন সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। এমন দুর্ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে, সেটার সমাধান বের করার।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৬
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×