ইসলামিক পোশাক বিশেষ করে "পর্দা" নিয়ে আমাকে লিখতে অনেকেই অনুরোধ করেন। বিষয়টি নিয়ে আসলে লেখার কিছু নেই। আল্লাহ সরাসরি স্পষ্ট করে বলেছেন "পর্দা" করতে হবে। পুরুষের জন্য চোখের দৃষ্টি নত রাখা এবং মেয়েদের শরীর ঢেকে রাখা। দুইজনের জন্যই ব্যাপারটি সমানভাবে প্রযোজ্য। যে পুরুষ মেয়ে মানুষের পর্দা নিয়ে অভিযোগ তোলে, তার আগে তার নিজের চোখের পর্দা কই ছিল - এই বিষয়টা ক্লিয়ার করা জরুরি। নিজের দৃষ্টি অবনত রাখলে সেতো বেপর্দা মেয়ে মানুষ দেখারই কথা ছিল না। নিজেই যেখানে অপরাধ করেছে, সেখানে অন্যের অপরাধ নিয়ে অভিযোগ করার সে কে? আগে ব্যাটার শাস্তি হোক, তারপরে মহিলার পর্দা নিয়ে কথা।
আর যে মেয়ে অন্যের পর্দা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাঁর নিজের সব ফরজ কর্ম ঠিক আছেতো? অন্যের সমালোচনা করাকে আমাদের ধর্মে সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুনাহ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই আমাদের এই বিষয়টা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, এবং নিজের নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। মুসলিম জাতি এই কারণেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যে তাঁরা নিজেদের কর্মকান্ড নিয়ে না ভেবে অন্যের বিষয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ছে। অথচ কমন সেন্স থাকলে সহজেই বুঝার কথা, হাশরের ময়দানে আমাকে আমার প্রতিবেশীর জন্য জবাবদিহি করতে হবেনা। আমার আমলনামা আমার নিজের।
পর্দানশীন মেয়েদের জন্য আমার মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। অনেকেই তাঁদের নানানভাবে আক্রমন করেন।
"তুমি এখনও ইয়ং, এখুনি কেন পর্দা করছো?"
"তুমি "নিনজা" হয়ে ঘুরছো কেন? তুমি কী জানো, তোমাকে দেখতে বাঁধাকপির মতন দেখায়?"
এইরকম অনেক আলতু ফালতু কথা তাঁদের শুনতে হবে। বেশিরভাগ সময়ে এমনসব মানুষের কাছ থেকে এসব বাক্যবাণ আসে, যারা নিজেদের মুক্তমনা দাবি করেন। পোশাকের স্বাধীনতায় তুমি নিজে বিশ্বাসী হলে তাঁর বোরখা বা বিকিনি ইত্যাদি নিয়ে কথা বলার কথা না। তুমি তাহলে কেন তাঁর পর্দা, হিজাব নিয়ে ব্যঙ্গ করে নিজেকে সবার চোখে হিপোক্রেট প্রমান করছো?
কেউ কেউ বোরখাকে প্রগতিশীলতার অন্তরায় মনে করে। এর মাধ্যমে নিজেদের বিদ্যা ও বুদ্ধির দৌড় কতটা ক্ষুদ্র, সেটাই বোকার মতন তুলে ধরে। আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও হিজাব পরিহিতা ছাত্রী দেখা যায়, শিক্ষিকাও পাওয়া যায়। বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার প্রমুখ প্রফেশনে প্রচুর হিজাব পরিহিতা রমণীর আনাগোনা। এই গন্ডমূর্খরা কী বলতে চায় যে এই সব রমণীরা প্রগতিশীল নয়?
হিজাবি নারীদের জবাব একটাই হতে পারে, "আমি পর্দা করি, কারন আমাকে আল্লাহ পর্দা করতে বলেছেন। আমি আমার প্রভুর কথার অবাধ্য না হতেই পর্দা করছি।"
এরপরে আর কোন তর্ক খাটেনা। যদি কেউ বলে, "আমিওতো মুসলিম, কই আমিতো পর্দা করিনা।"
তাহলে ভদ্রভাবেই বলা উচিত, "আপা, আপনি নিজেকে কবে থেকে ইসলামের স্ট্যান্ডার্ড বিবেচনা করছেন? আপনার কথায় ইসলাম চলে না, যার কথায় চলে, আমি তাঁরই নির্দেশ পালন করছি।"
এইবার কিছু উদাহরণ দিব। ১০০% সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখছি। এক বিন্দুও মিথ্যা নেই।
ঘটনা এক: এক মেয়েকে তাঁর বাবা মা ছোটবেলা থেকেই জোর জবরদস্তি করে পর্দা করিয়েছেন। মেয়েটি বড় হয়ে যখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একা একা যাওয়া শুরু করলো, তখন মাথার হিজাব খুলে ফেললো। বাড়ি থেকে বেরুবার সময়ে মাথায় হিজাব জড়িয়ে বের হয় - বাড়ি ফিরেও হিজাব মাথায়। মাঝের সময়টা তাঁর হিজাব তাঁর কাঁধের ব্যাগের ভিতরে থাকে।
ঘটনা দুই: এক মেয়ে একদিন মাথায় হিজাব জড়িয়ে দেখে তাঁকে আসলেই সুন্দর দেখাচ্ছে। তাঁর সমস্যা ছিল তাঁর চুলে, চুলটার কারণেই তাঁর চেহারা সৌন্দর্য্য হারায়। হিজাব দিয়ে সেই চুল ঢেকে দেয়ায় তাঁকে দেখায় জান্নাতের হুরের মতন। সে তারপর থেকে হিজাব পরে ঘুরে।
ঘটনা তিন: ঢাকার সস্তা আবাসিক হোটেলগুলোয় দিনে রাতে কী ঘটে সেটা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরেই বনানী কাকলি এলাকায় এমন কিছু হোটেল ছিল। আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা মেয়ে মানুষদের সেই হোটেলে ঢুকতে এবং বেরুতে দেখা যেত। আমি নিশ্চিত, এখনও অনেকেই এইভাবে বোরখায় শরীর ঢেকে সেইসব হোটেলে যাতায়াত করেন।
উপরের তিন ঘটনায় একটি মেয়ে তাঁর বাবা মায়ের জন্য হিজাব পরছে, দ্বিতীয় মেয়েটি পরছে নিজের সৌন্দর্য্যের জন্য এবং তৃতীয়জন পরেছেন এই কারনে যাতে তাঁকে কেউ চিনতে না পারে। আল্লাহর "নির্দেশের" জন্য কে পরলো? তাঁদের পর্দা করাটা তাহলে কতটুকু যৌক্তিক?
আমরা যদি মক্কায় ইসলাম আবির্ভাবের ক্রোনোলজিক্যাল অর্ডার দেখি, তাহলে আমরা দেখবো, আল্লাহ প্রথমে নবীকে (সঃ) প্রচার করতে বলেছেন এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নাই এবং হজরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর প্রেরিত পুরুষ।
কোন নামাজ, কোন রোজা, কোন যাকাত, কোন হজ্ব, কোন পর্দা না। শুরুতে আপনার অন্তরে এই বিষয়টায় পাকাপাকি হবে, তারপরে অন্য নির্দেশ।
তাওহীদের বাণী প্রচারের সাথে সাথে শুরু হলো গুনাহ এড়িয়ে চলার নির্দেশ। এখনও ইসলামের আর কোন স্তম্ভের নির্দেশ আসেনি। বড় গুনাহ যেমন মিথ্যা বলা, গুজব রটানো, ব্যাভিচার, চুরি, ডাকাতি, খুন ইত্যাদি থেকে বিরত থাকো।
তারপরে আসে নির্দেশ গরিব দুঃখী, বন্দি, অসহায়দের পাশে দাঁড়াও, নির্যাতিতকে ইনসাফ দাও, অন্নহীনে অন্ন দাও, বস্ত্রহীন বস্ত্র। এতিমের দেখভাল করো। মাতাপিতার সেবা করো, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করো, এবং তাঁদের হক আদায় করো। খেয়াল করুন - এখনও কোন নির্দেশ আসেনি অন্যান্য স্তম্ভের।
এরপর নিষিদ্ধ হলো মদ্যপান।
নির্দেশ এলো নামাজের, রোজার, ধনীদের জন্য যাকাতের, ধনী এবং শারীরিকভাবে সক্ষমদের জন্য নির্দেশ এলো হজ্জ্বের।
এবং তারও বহু বছর পরে নির্দেশ এলো, মুসলিম পুরুষদের চোখের পর্দা নত করতে - এবং মহিলাদের শরীর ঢেকে রাখতে।
এখন প্রশ্ন করি নিজেকে, আল্লাহ কী শুধু শুধু এইভাবে ধারাবাহিকভাবে ইসলামের বাণী আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন? এর পেছনে কোনই কারন নেই?
না।
এই ধারাটা তিনি এই কারণেই এভাবে সাজিয়েছেন যেন আমরা বুঝতে পারি কোনটা জরুরি, কোনটার উপর বেশি জোর দিয়ে আমাকে সামনে এগুতে হবে। ক্লাস ওয়ানের পড়ায় আমি মনোযোগ দিলাম না, কারন এসএসসির সার্টিফিকেটটা বেশি জরুরি, ওয়ানের রিপোর্ট কার্ডে কবে চাকরি হয়েছিল? কিন্তু ওয়ানের সিলেবাসে যেই ছাত্র কাঁচা থেকে যায় - সে এসএসসিতে ভাল রেজাল্ট করতে পারবে না, এইটা প্রমাণিত সত্য। তেমনি, যাদের অন্তরে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস - রাসূলের নব্যুয়াতিতে ভরসা ইত্যাদি পাকাপাকিভাবে না জাগিয়ে শুরু থেকেই জোর করে পর্দা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে - তাঁদের অন্তরে বরং ইসলামের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির সম্ভাবনা শতকরা ৯৯%।
আপনার সন্তানকে আপনি ইসলামি জ্ঞান দিতে চান? সবার আগে তাঁকে বুঝান আল্লাহ কে, মুহাম্মদ (সঃ) কে। কুরআন কী, কেন আমাদের পড়া উচিৎ? হাদিস কী? বাচ্চা গল্প শুনতে চায়? মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সঃ) জীবনী থেকে ঘটনা শোনান। কিভাবে মক্কার এক এতিম শিশু স্থান যুগ কাল ছাপিয়ে কোটি কোটি মানুষের ভালবাসার আধার হয়ে গেল - শোনান সেই গল্প। বাজারে হাটতে গেলে বেশেপ পোলাপানদের গায়ে রোনালদো মেসির জার্সি দেখেন না? ভুরি ঝুলে যাচ্ছে, অথবা এতই চিকন যে হালকা বাতাসে উড়ে যাবে। অথচ সবাই সিক্স প্যাকের রোনালদো, মেসি, নেইমার। কেউ ওদের জোর করে এইসব পরিয়ে দেয়? না। ওরা ওদের হিরোর মতন হতে চায় বলেই এমন পোশাক পরে।
আপনি বাচ্চাদের অন্তরে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করুন - তাঁরা আপনাতেই পর্দা করবে, নামাজ পড়বে। যতক্ষণ না নিজ ইচ্ছায় করছে, বুঝবেন ঈমান প্রতিষ্ঠা হয় নি।
এখন আসা যাক ইসলামিক পোশাক প্রসঙ্গে।
ছেলেদের কথাই ধরা যাক। দাড়ি না থাকলে, পাগড়ি/টুপি মাথায় না দিলে, পাঞ্জাবি বা জোব্বা না পরলে - সে যেন "সহীহ মুসলিমই" না। এখন আপনি কী জানেন যে আবু জাহেলের পোশাক এবং আমাদের সাহাবীদের পোশাকে খুব একটা পার্থক্য ছিল না? সেও মাথায় পাগড়ি পরতো, তারও গালভর্তি দাড়ি ছিল।
ইসলামে পুরুষের পোশাক তাহলে কী? মুসলিম পুরুষকে তাঁর নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে। টুপি বা পাগড়ি মাথায় দিলে সোয়াব বেশি, তবে না দিলে কাফির হয়ে যাবেন না।
আর মেয়েদের জন্য কেবল হাতের কব্জি, পায়ের গোড়ালির নিচ এবং মুখমন্ডল বাদে পুরো শরীর ঢাকা রাখতে হবে। চুলও।
এবং হ্যা, নারী পুরুষ উপভয়েরই অবশ্যই টাইট পোশাক হতে পারবে না, ঢিলেঢালা হতে হবে।
কেন এই নিয়ম?
কারন যেই আল্লাহ আমাদের বলেছেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে, রমজান মাসে রোজা রাখতে, মা বাবার যত্ন নিতে, গরিব অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে - সেই আল্লাহই এই নির্দেষ দিয়েছেন। মুসলিম হলে আমাকে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে বা তিরিশটি রোজা রাখলে আমার কী লাভ - সেইটা নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার আমার নেই। অনেকের কাছেই দুঃখজনক মনে হলেও এইটাই সত্য। ইসলাম মানে "আত্ম সমর্পন।" আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার। ইবলিস সারেন্ডার করেনাই বলেই সে অভিশপ্ত। সারেন্ডার যারা করে তাঁরাই মুসলিম।
তবে হ্যা, এই প্রশ্ন আমি করতেই পারি, আসলেই এটি আল্লাহর নির্দেশ কিনা।
অনেকেই "কুরআনে আছে," "হাদিসে আছে" বলে আজগুবি কথা বলে বেড়ায়। যেমন "জ্ঞানার্জনের জন্য চীনে যাও" "শিক্ষকের বেত্রাঘাত শরীরের যেখানে পড়বে, সে স্থান আগে জান্নাতে যাবে" কিংবা "দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ" - ইত্যাদি বাণীগুলো আমাদের দেশে হাদিস হিসেবে চালানো হয় - যা ভুয়া। আমাকে অবশ্যই প্রমান দিতে হবে কুরআনের কোথায় আছে, হাদিসের কোথায় আছে ইত্যাদি। এবং এখানেই শেষ না। কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে আয়াতটি, বা হাদিসের নির্দেশটি নাজেল হয়েছিল - কী ঘটেছিল এর প্রেক্ষাপটে, ফলশ্রুতি কী ছিল - ইত্যাদি বিস্তারিত খুঁটিনাটিও আমাকে জানাতে হবে। আউট অফ কন্টেক্স্ট কোন আয়াত বা হাদিস অবশ্যই নেগেটিভভাবেও ব্যবহার করা সম্ভব। সমাজে এই যে এত বিশৃঙ্খলা, সবই এই কারণেই।
যাই হোক - আমি অন্য লাইনে চলে যাচ্ছি। বলছিলাম পোশাক বিষয়ে। তা আমাদের দেশের অনেক মা বোন এই অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশের গরমে বোরখা পরা অসম্ভব একটি ব্যাপার। কথা হচ্ছে, আপুরা, আপনারা বোরখা কিভাবে পরেন? প্রথমে অন্তর্বাস, তারপরে কি জানি একটা কাপড় (শেমিজ বা এইরকমই কিছু একটা নাম) পরে তার উপর স্যালোয়ার কামিজ,(শাড়ি হলে নিচে পেটিকোট, ব্লাউজ ইত্যাদি) তারপরে বোরখা। এত এত কাপড়ের লেয়ারের নির্দেশ কী আল্লাহ দিয়েছেন? জ্বি না। আপনাকে বলা হয়েছে কাপড়ে শরীর ঢাকা রাখতে - সেটা এক লেয়ারের কাপড় হলেই হলো। নিজেই কম্বল জড়াচ্ছেন, আবার নিজেই বিচার দিচ্ছেন! বোরখা মধ্যপ্রাচ্যের পোশাক, আপনাকে যে বোরখাই পড়তে হবে এমন কোন শর্ত নেই। আপনি আপনার মতন পোশাক পরবেন, শুধু নিয়মটা মেনে চললেই হলো।
ন্যারো মাইন্ডেড লোকজন পুরুষের স্যুট টাই পরাকেও ইস্যু বানানোর চেষ্টা করে। কিছু আঁতেল ফতোয়া জারি করে "টাই" যেহেতু খ্রিষ্টানদের ক্রসের "প্রতীক" - তাই এটি পরিধান হারাম! কিসের ভিত্তিতে এই ফতোয়া আল্লাহ মালুম!
একবারতো এক হুজুর ওয়াজে "বৈজ্ঞানিক সত্য" তুলে ধরলেন। টাখনুর নিচে নাকি আমাদের কী সব হরমোন থাকে, যা ঢেকে রাখলে আমাদের যৌনক্ষমতা কমে যায়। ওটাতে আলো বাতাস লাগতে হয়। বিজ্ঞানীরা প্রমান করেছেন। তাই ইউএস প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন যখন আমাদের দেশ ভ্রমনে এসেছিলেন, তিনি টাখনুর নিচে প্যান্ট পরেননি। আমরা মুসলিমরা এই কারণেই টাখনুর নিচে পোশাক পরিনা।
সবাই "সুবহানাল্লাহ," "আলহামদুলিল্লাহ," "ঠিক ঠিক" বলে শোরগোল তুললো।
এই ব্যাপারে একটি সত্য ঘটনা বলে ইতি টানি।
অতি প্রিয় এক বড় ভাই তখন সদ্য আমেরিকায় এসেছেন। মসজিদে গেলেন নামাজ পড়তে। গিয়ে দেখেন ঈমাম সাহেবের প্যান্ট গোড়ালির (টাখনু) নিচে নেমে গেছে। তিনি সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিলেন "এই শালার পেছনেতো নামাজ পড়লে নামাজ কবুল হবেনা।"
তিনি সেই জামাতেই দাঁড়ালেন না।
যেই বন্ধু তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন, নামাজ শেষে তিনি অবাক হয়ে জানতে চাইলেন "তুই জামাতে দাঁড়ালি না কেন?"
ভাই নিজের মনের কথা খুলে বললেন। ঐ ভাই তাঁকে সরাসরি ঈমামের কাছে নিয়ে গিলেন। তাঁরও একই দুশ্চিন্তা। ফাজিল ব্যাটা সবার নামাজ নষ্ট করে দিল নাকি?
ঈমাম সাহেব হাসিমুখে তাঁর অভিযোগ শুনলেন। তারপর তাঁর ঠোঁটের হাসি আরও বিস্তৃত করে বললেন, "তুমি ১০০% সত্য ভাই। আসলেই আমাদের ধর্মে টাখনুর নিচে কাপড় যাওয়া কবিরা গুনাহ। তবে তুমি কেবল একটি ছোট্ট শব্দ মিস করে ফেলেছো। "With pride." অহংকারের সাথে এই কাজটা করা যাবেনা।"
এই একটি শব্দই আমাদের চিন্তায় ফেলতে বাধ্য করে যে নিশ্চই তখনকার সমাজে এইরকম পোশাকের পেছনে "অহংকার" জড়িত ছিল। বিস্তারিত জানতে আমাদের আরও পড়া উচিৎ।
কিন্তু আমাদের দেশে আমরা এই ভুলটাই করি। বিস্তারিত ভাবে গবেষণামূলক হাদিস বা কুরআন পাঠতো বহু দূরের কথা, আমরা সাধারণ ভাবেই পড়িনা। পড়লেও বুঝিনা। এবং না বুঝেই লাফালাফি শুরু করে দেই।
সামনে আসছে রমজান মাস। গ্যারান্টি দিচ্ছি সবাই উঠে পড়ে লাগবেন কুরআন খতমের ব্যাপারে। কিন্তু কেউ কী একটি আয়াত পড়ে, সেই আয়াত কিভাবে তাঁর নিজের জীবনে এপ্লিকেবল সেইটা নিয়ে ভেবে দেখেন? এইভাবে পড়তে গেলে গ্যারান্টি দিচ্ছি, এক মাসই না, আস্ত বছরেও হয়তো আপনার কুরআন খতম শেষ হবেনা। তবে মাথায় রাখুন, আল্লাহর কাছে কোয়ান্টিটি না, কোয়ালিটির মূল্য অসীম। নাহলে কুরআন নাজেল করতে ২৩ বছর সময় নিতেন না। লাইলাতুল কদরের রাতে জিব্রাইল আস্ত বই এনে নবীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতে পারতেন "এই নাও কুরআন। এইটা বুঝে না বুঝে পাঠ করো - এই তোমার প্রভুর নির্দেশ।"
সেদিন পত্রিকায় পড়লাম, শ্রীলঙ্কার জঙ্গি হামলার প্রধান বদমাইশটা তিন বছর বয়সে কুরআনের হাফেজ হয়েছে। সাধারণ বাচ্চাকাচ্চারা "জনি জনি ইয়েস পাপা" মুখস্ত করতে হিমশিম খায়, উনি আইছেন আস্ত কুরআন হিফযের চাপাবাজি শোনাইতে। চটকানা দিয়ে কানে ধরে উঠবস করানো উচিত ছিল। সাথে এইটাও সবার বুঝা উচিত যে না বুঝে মুখস্ত করলে ফল কী হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৯ রাত ৩:৫৮