somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিস্টেমটা আমাদেরকে সুষ্ঠুভাবে নিরাপদে থাকতে দিল না।

২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক দিনের ব্যবধানে চিটাগং ইপিজেড, মিরপুরের ভবন, ঢাকা এয়ারপোর্টে আগুন লাগলো। চিটাগংয়ে পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে গেল। আজকে একটা ভিডিও দেখলাম, একটা কন্টেইনার ফুটা হয়েছে, সেখান থেকে সয়াবিন তেল বেরিয়ে আসছে। পাবলিক বালতি নিয়ে হাজির হয়েছে। বালতিভর্তি সয়াবিন তেল নিয়ে বাড়ি ফিরছে। আগামী কয়েকমাসের রান্নার জন্য তেলের চিন্তা নাই। আন্তর্জাতিক মিডিয়া ঘটনাটা এইভাবে কভার করছে "কন্টেইনার সারাইয়ের দিকে না গিয়ে পাবলিক বালতি হাতে হাজির হয়েছে তেল ভরার জন্য।"
একজন লিখেছে, কেউ যদি ওখানে ভুল করে হলেও বিড়ি টানতো, তাহলে কয়েক শ মানুষের লাইভ বারবিকিউ হয়ে যেত!
আরেকজন কমেন্টে মজা করতে লিখেছে, তেলভর্তি লোহার কন্টেইনার কিভাবে সারাই করবে? এত তেল যাতে রাস্তায় গড়িয়ে নষ্ট না হয়ে যায়, তাই যা পেরেছে উদ্ধার করেছে।"
রসিকতা হলেও কথায় লজিক আছে।
কিন্তু আমরা বাঙালিরা কি আসলেই "পথে গড়িয়ে নষ্ট যাতে না হয় সেজন্য বালতি হাতে হাজির হয়েছি" - টাইপ জাতি? তেমন হলে ঐ বালতিগুলো নিয়ে বাড়িতে যেতাম না। ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকতাম। তারপরে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়ে বলতাম, ভাই, আমাদের সামর্থ্যে এতটুকুই উদ্ধার করতে পেরেছি।
একজনের বাড়িতেও কি কেউ বলল না, "ঐ তেল আমাদের না, ওটা খাওয়ার অধিকার আমাদের নেই। ফেরত দিয়ে এসো।"
চিন্তা করেন, হাজার জনের মধ্যে একটা মানুষ হলেও যদি এক বালতি তেল এনে বলতেন, "আমি এটুকুই বাঁচাতে পেরেছি। আমার সামর্থ্যে এর বেশি করার কিছু ছিল না" - তখন কি আমরা গোটা দেশটাই ভীষণ আশাবাদী হয়ে যেতাম না? কিন্তু না, একটা মানুষও তেমনটা করেননি।
আমাদের ধর্মচর্চা ঐ কার বৌ কার মেয়ে কতখানি পর্দা করলো না করলো ইত্যাদি খুঁজে বেড়ানো পর্যন্ত। এটা করতে গিয়ে যে আমার নিজের চোখের পর্দার হানি হয়, সেই বোধ নাই।
আগুন লাগা ঘটনাগুলোয় একটা কমন অভিযোগ আসছে। আগুন লাগার সাথে সাথে নাকি দমকল বাহিনীকে এগিয়ে যেতে দেয়া হয়নি।
লজিক কি দিয়েছে জানিনা, তবে আমাদের বিদেশেও সাধারণত এমন গুদামে আগুন লাগলে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। কোন দাহ্য কেমিকেল আছে কিনা, রাসায়নিক বিস্ফোরণের সম্ভাবনা আছে কিনা, পানি পড়লে উল্টো আগুন ছড়াবে কিনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়। সাধারণত, পশ্চিমা দেশগুলোয় এইগুলি খুবই সুশৃঙ্খলার সাথে কন্ট্রোল করা হয়। প্রথমে ব্যবস্থা করে আগুন যাতে না লাগে - এরপরে যদি আগুন লেগেই যায়, তাহলে কি করা হবে সেই ব্যবস্থা থাকে। নিয়মিত ফায়ার ড্রিলও হয়। প্র্যাকটিস। যাতে ঘটনার সময়ে সবাই প্রস্তুত থাকে। যেমন আমার অফিসেই সেদিন কাজের মাঝখানে ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলো। আমরা সবাই লিফ্ট বাদ দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে বহুতল ভবনের নিচে নেমে এলাম। এই প্র্যাকটিস বছরে একবার হলেও করা হয়।
তা আমাদের দেশে কি এমন কখনও করা হয়? জানিনা।
তারচেয়ে বড় কথা, গুদামে কোন শৃঙ্খলা থাকে? পণ্যগুলো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সাজানো হয়?
যতদূর মনে পড়ে, আমাদের দেশেই বেশ কয়েক বছর আগে একবার এমন কোন এক গুদামে আগুন লেগেছিল, লাইভ ভিডিও করতে গিয়ে বিস্ফোরণে কয়েকজন মারা গিয়েছিল।
বিদেশে সবাই প্রফেশনালদের উপর ছেড়ে দেয়। কোথাও আগুন লাগলে বা রাস্তায় এক্সিডেন্ট হলে দেখবেন ওরা পুলিশে খবর দিবে, এম্বুলেন্সে খবর দিবে। যখন ওরা চলে আসবে, তারপরে আর কেউ ভিড় করবে না। প্রফেশনালদের হ্যান্ডেল করতে দিবে। ওরা জানে ওখানে আর সাধারণের করার কিছু নেই। ভিড় করলে উল্টো ক্ষতি বাড়বে।
তা এইবার যদি গুদামে পাবলিক এক্সেস দিত, তাহলে ঐ তেলের কন্টেইনারের মতন প্রথমেই বিদেশ থেকে আসা পণ্য লুটপাটে মানুষ মেতে উঠতো। গাজীর ফ্যাক্টরিতে আগুনে পুড়ে অনেকে মরেছিল মনে আছে? কোম্পানি থেকে জানানো হয়েছিল ওরা কেউই কর্মচারী ছিল না। সবাই কারখানা লুটতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মরেছে।
কার্গোতে আসা ডেডবডিগুলোকেও হয়তো কেউ বাড়িতে নিয়ে যেত। আরেকদল মেতে উঠতো লাইভ ভিডিও করার উৎসবে। এত বড় মাপের আগুনের লাইভ ভিডিও সহজে পাওয়া যায় না।
আপনি কাদের বিশ্বাস করবেন?
রাজনীতিবিদেরা ব্যস্ত আছে ব্লেম গেমিংয়ে। এই দল নানান যুক্তি দিয়ে দাবি করছে ঐ দল কাজটা করেছে। আগুনের খবর ছড়াতে শুরু করতেই এক দল কমেন্ট করতে শুরু করলো "জয় বাংলা।" এতে সন্দেহ যাওয়া স্বাভাবিক যে আওয়ামীলীগের কাজ। আওয়ামীলীগ সেটা বুঝতে পেরেই হয়তো বেকুবগুলিকে ধমক ধামক দিয়েছে। কিন্তু একটা ব্যাপার স্পষ্ট, রাজনীতিবিদদের কাছে, সেটা যেই দলই হোক না কেন, দেশের পণ্য, দেশের মানুষ, দেশের ইকোনোমি কিছুই মূল্য রাখে না। সবই ওদের ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যম।
সুষ্ঠু তদন্ত হবে, সেই রিপোর্টের উপর মানুষ ভরসা করবে - এমন পরিবেশ পরিস্থিতি বাংলাদেশে কখনই ছিল না। আমাদের দেশ হচ্ছে যখন যে ক্ষমতায় যায়, বিচার ব্যবস্থাও ওর পক্ষেই কাজ করে। কাজেই সেই রিপোর্টের উপর আস্থা আসবে কোত্থেকে?
ন্যায় বিচার বাংলাদেশে বসে কখনই পাওয়া যাবে না। অভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থান ঘটাবেন, তারপরে দেখবেন আপনাদের সামনে থেকে আপনাদের অভ্যুত্থান চুরি করে ভোগ করছে সুবিধাবাদীরা।
একটা এইচএসসি স্টুডেন্ট বলেছে সে বিদেশে চলে যেতে চায়। সেই মেয়েটাকে দেশপ্রেমিকরা ধুয়ে সাফা করে দিল। অথচ এই দেশপ্রেমিকরাই পারলে অবৈধভাবে ইউরোপে যাবে, কামলা খাটবে, তারপরে "রেমিটেন্স যোদ্ধা" পরিচয় দিয়ে গর্ব বোধ করবে।
দেশটাকে এখনও ভালবাসি। ওটা একটা নির্জীব, অবলা ভূখন্ড, ওটার প্রতি আছে নাড়ির টান। কখনই ছিন্ন হবার না।
কিন্তু সিস্টেমটা আমাদেরকে সুষ্ঠুভাবে নিরাপদে থাকতে দিল না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:২৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×