somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা ভালোমানুষেরাঃ অবলা নারী পর্ব-১

১২ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এটি একটি ব্যাক্তিগত কাহিনীমূলক পোস্ট। যারা এসেও পড়েছেন, এ ধরণের লেখা পছন্দ না হলে চলে যেতে পারেন। কিচ্ছু মনে করব না। আমি হিট আকাংক্ষী নই।)
মেয়েরা এবং পরবর্তী জীবনে মহিলারা আবেগ এবং রিপুতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন- এই ধারণাটা আমাদের সমাজে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। যে মানুষটাকে জন্য আমার এরকম কোন ধারণা তৈরীই হতে পারেনি তিনি আমার দাদী। আমরা ডাকতাম দিদু!
আগে একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহরে নতুন ডিসি এসেছেন। নতুন ডিসির কাজকর্মে সবাই খুব খুশী। জেলা পর্যায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তখন সরকারী পর্যায়ে শুরু মাত্র। ডিসি শহরের কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে এই ব্যপারে জানাতে একটা সমাবেশের আয়োজন করলেন। অতিথি হিসেবে দিদুকেও দাওয়াত করা হোল, একটা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতাও দিতে হবে!! তিনি আন্তরিকভাবেই নিষেধ করলেন এই বলে যে, বাবারা আমার কথা তো তোমাদের পছন্দ হবে না। তবু ডিসি আবার অনুরোধ করে পাঠালেন। কি আর করা? অনুষ্ঠানের দিন। সবাই ক্যাম্পেইনের পক্ষে রং-বেরঙ্গের মত দিচ্ছেন। আসলো দিদুর পালা। উনার বক্তৃতা শুনেনঃ ‘আমাদের ডিসি সাহেব আসার পরে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার অনেক উন্নতি হয়েছে। শহর আগের থেকে অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর নিরাপদ হয়েছে। সব ক্ষেত্রে আমরা পরিবর্তনের আশ্বাস পেয়েছি। আপনারা কি বলেন? (শ্রোতারা হ্যা বোধক মাথা নাড়লেন) আপনারা কি জানেন, এই ডিসি সাহেব তাঁর মায়ের এগারোতম সন্তান? (এই পর্যন্ত আসার পর বুদ্ধিমান ডিসি সাহেব মাথা নিচু করে ফেললেন) আপনারাই বলেন, উনার মা যদি দুইটা সন্তানের পর জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে আমরা আজকে এই মানুষটাকে পেতাম? (শ্রোতাদের সমবেত উত্তরঃ নাআআ) সুতরাং মিয়ারা, আল্লাহ যা করেন সেটাই ভালো। তাঁর কাজে খালি খালি হাত দিও না। আমার কথা শেষ!’ এই আমার দিদু!
জেলাশহর ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে এখনো আমরা ট্রেন থেকে নেমে শুধু আমাদের বাড়ীর নাম বলতে হয় যার নাম দিদুর নামে, সরাসরি রিকশাওয়ালা বাড়ী নিয়ে যায়। কেন? একটু ভূমিকা দিয়ে নিই। বুঝতে সুবিধা হবে। দিদু তাঁর জমিদার পিতার একমাত্র মেয়ে। একমাত্র ছেলে একটু চুপচাপ ধরণের মানুষ। অতএব, কোন গ্রামে সালিশে নিজে যেতে না পারলে জমিদার মেয়েকেই পাঠিয়ে দিতেন, দুই পক্ষকে খুশী করেই বাড়ী ফিরতেন মেয়ে… আমার দিদু। বিয়েও হয়েছিলো এমন একজন উদার মানুষের সাথে যিনি স্ত্রীর এই যোগ্যতাকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতেন, বাধা দেননি কোনদিন। তাঁর এই বিশ্বাস আর শ্রদ্ধার সম্মানও রেখেছিলেন স্ত্রী। পেশায় দাদা ছিলেন কাস্টম অফিসার, সর্বশেষ পোস্টিং দর্শনা। ছয় ছেলে আর দুই মেয়ের সংসার নিয়ে দাদার সাথে একবার এখানে, একবার ওখানে থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো এজন্য দিদুর বাবা দিদুর নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে এই বাড়িটা কিনে দেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সৎ চাকুরে দাদার এই সামর্থ্য হয়নি যে নিজের পয়সায় আর কোন সম্পত্তি করবেন। দিদু ছেলেমেয়ে নিয়ে এই বাড়ীতেই থাকতেন। বাইরের উঠানে একটা ঘর তুলে ভাড়া দিতেন। কারণ দাদার বেতনে সবাইকে নিয়ে চলা অসম্ভব ছিলো। ভেঙ্গে পড়া তো দূরের কথা, মচকাতেও যেন জানতেন না এই মহিলা! দিদুর কাছ থেকে হোমিও ওষুধ আর কুকুর বা সাপ কামড়ানোর পর ‘থালা’ লাগাতে আসা মানুষের ভিড় লেগেই থাকতো বাড়িটাতে। প্র্যাকটিস করতে করতে এতোই দক্ষ হয়ে গিয়েছিলেন, রাস্তায়ই অনেক সময় ওষুধ বাতলে দিতেন, বই দেখতে হোত না।( দিদুর দুইটা ওষুধের বাক্স ছিলো। একটা বড়, এটা বাড়ীতে থাকতো। আর একটা ছিলো পোর্টেবল। বড়টা এখন আমাদের বাসায়, আম্মু বার্নিশ করে নতুন বানিয়ে ফেলেছেন। ছবি দিলাম।) আর সারা বছর লেগে থাকতো সালিশপ্রার্থী তিতাস পাড়ের মানুষ। অনেক সময় বয়সে অথবা সম্পর্কে অনেক বড় মানুষও আসতেন সুপরামর্শের জন্য। কেউ কোনদিন বেজার হয়ে ফিরে যায়নি পাইকপাড়ার ‘মাসুম মঞ্জিল’ থেকে।
পরের পর্বে চেষ্টা করবো কিছু মজার ঘটনা দিতে।
আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৫
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×