somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরকীয়া - প্রেমহীন ভালোবাসা দেশেদেশে ভেঙ্গেছে সুখের ঘর!!

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকটা বাস্তব গল্প দিয়ে শুরু করি। আসলে এই গল্পগুলোই দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করছে আমাকে বেশ কিছুদিন ধরে। এজন্যই লিখতে বসা।
১। ৩ সন্তানের জনক, বিবাহিত জীবন ৩২ বছর। ভদ্রলোকের বয়স ৫০+। স্ত্রীর কলিগের স্বামী মারা যাওয়ায় ব্যবসায়িক কারণে স্ত্রীই পরিচয় করিয়ে দেন স্বামীর সাথে। এরপর ৫ বছরের প্রেম(!) এবং মাসখানেক আগে তিনি ওই মহিলাকে বিয়েই করে ফেলেছেন, তা-ও গোপনে। এখন জনে জনে বলে বেড়াচ্ছেন, প্রথম বিয়েটা ছিলো তাঁর জীবনের সবচে বড় ভূল!
২। এই ঘটনাটা প্রায় প্রথমটার মতই। পরিচয়ের ক্ষেত্রটাই যা আলাদা। অবশ্য এক্ষেত্রে ভদ্রলোকের বাবা বিষয়টা জানতে পেরে অনাচার ঠেকানোর জন্য বিয়েটা করিয়ে দিয়েছেন। এখন দুই স্ত্রী একই বাসায় থাকছেন। প্রথম স্ত্রীর রাত কাটে ঘুমের ওষুধের দয়ায়! প্রথম পক্ষের ছেলেমেয়েরা লজ্জ্বায় বিমূঢ়।
৩। স্বামীর বয়স ৩৫, স্ত্রী সমবয়সী। পছন্দের বিয়ে। বাচ্চা হয় না ৪ বছর। ডিপ্রেশনে স্ত্রীর আশা করার ক্ষমতা ফুরিয়ে গেলেও অসীম ধৈর্যশীল স্বামী সাহস যুগিয়ে যান বারবার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সুখবর আসে। সম্পূর্ণ বেডরেস্টের জন্য স্ত্রীকে চলে যেতে হয় বাবার বাড়ি। এই ফাঁকে স্বামীপ্রবরের একাকীত্ব ঘুচাতে এগিয়ে আসেন তার এক্স কলিগ। বাচ্চা কোলে বাসায় ফিরে স্ত্রী দেখেন তাঁর জায়গাটি আর খালি নেই। ড্রেসিং টেবিলে সগর্বে অবস্থান করছে আরেকজনের নির্লজ্জ প্রসাধনী। ভালোবাসার দাবিতে মাটি কামড়ে কিছুদিন পড়ে ছিলেন বেচারী। কিন্তু দিনের পর দিন তাঁর সামনেই একসাথে ঘরে ঢুকে বেডরুমের দরজা আটকে দিতেন স্বামী আর তার প্রেমিকা। লজ্জ্বা, ঘৃণা, অপমানে তিনি মাসখানিক পর ফিরে এলেন বাবার বাড়ী, সম্ভবত চিরতরেই...
৪। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লেও ইসলামী অনুশাসনের মধ্যেই বড় হয়েছিলো মেয়েটা। বিয়ের পর স্বামির সাথে পাড়ী জমায় মধ্যপ্রাচ্য। চাকুরী করতেন সেখানে আর বাকি সময় শপিং। যদিও স্বামীর আয় এবং সামাজিক মর্যাদা অনেক বেশী ছিলো, তবু চাকুরিতে বাধা পাননি কখনো। বিয়ের ১২ বছরে কোলে আসে দুটি ছেলে, মায়ের মতই মায়াভরা সুন্দর দুটা খেলনা যেন! এরপর স্ত্রী ঘোষণা দেন তিনি আর এই লোকের সাথে থাকতে পারবেন না। কেন? সে গোসল করে না, ব্যবহার খারাপ। কিছুদিন আগেই ফেসবুকে আর এক বাঙ্গালী ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে। সে ২ বছর পর বিয়ে করবে উনাকে। সেই ভরসায় ১২ বছরের সংসার ভেঙ্গে এসে পড়লেন। পরিবারের অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের সামনে স্বামী মেয়েটার পায়ে পড়ে গেলেন। তিনি মৈনাক পর্বত! প্রথমে ছেলেদের কাছে রাখলেও পরে পাঠিয়ে দেন তাদের বাবার কাছে। ২য় বিয়েটা করে ফেলেছেন মাস ছয়েক হয়।
..........................................................................................
জানেন, এরকম আরও কয়েকটা ঘটনা তাজা ক্ষতের মত আমার চোখের সামনে ভাসছে। কিন্তু এতো মন খারাপ লাগছে আর লেখা সম্ভব না। এই সবগুলো পরিবারের উভয় পক্ষ আমার পরিচিত, কারো সাথে শৈশবের কত স্মৃতিও আছে। বিশ্বাস হয় না সেই নরম মানুষগুলো আজকে এইভাবে বদলে গেছে। এটা ঠিক আমি কোনটার ব্যপারে দুইপক্ষের সাথে সমাধানকারীর মানসিকতায় কথা বলি নাই। আমার জানায় ফাঁক থাকতেই পারে। কিন্তু আমি কেন যেন এখন আমাকেই বিশ্বাস করতে পারিনা। মনে হয় কেউ যদি কখনো আমার বাবা সম্পর্কেও এসে এরকম একটা অভিযোগ করে আমি মনে হয় তাকে বকা দেয়ার আগে আব্বুকে একবার জিজ্ঞেস করে নেব!
আমি মানুষ অনেক ছোট। কোন বিশ্লেষণের জন্য এখানে বসিনি। কিন্তু আমার কাছে এসবের কারণ হিসেবে একটা কারণকে খুব প্রমিনেন্ট মনে হচ্ছে। দুনিয়ায় আমরা সব পেতে চাই, এই জীবনটাকে করতে চাই সবচেয়ে পারফেক্ট। আমার সব লাগবে, সব। সাজানো সংসারও লাগবে, টাকা লাগবে অঢেল, সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মত পারফেক্ট গ্ল্যমারাস জীবনসঙ্গী লাগবে,যে কখনো আমাকে ভালোবাসতে টায়ার্ড হবে না, আমার সংসারের সর্বময় ক্ষমতা হবে আমার। কোন কিছুতে একটু ঘাটতি পেলেই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি শূন্যস্থান পূরণে। মা-সন্তান, স্বামি-স্ত্রীর সম্পর্কগুলোর চিরায়ত বাঁধনগুলো আমাদের কাছে মাকড়সার জালের মত পলকা। আগে বিবাহিত/বিবাহিতা হলেই অনেক উটকো মানুষের আগ্রহ থেকে রেহাই পাওয়া যেতো, আজকাল এই প্রশ্নও শুনতে হয়ঃ আপনি ওর সাথে হ্যপি তো?(মানে হোল আমার জন্য একটু ফাঁকা আছে নাকি?)।
আমার একজন দুঃসম্পর্কের ননদ স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর দুই বাচ্চা না পেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। মাঝে মাঝেই ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন। এভাবেই একবার বের হয়ে আর ফেরেননি। এখনও কেউ জানে না তিনি কোথায়। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে উনাকে পেলে জিজ্ঞেস করতাম কোত্থেকে পেয়েছেন এত্তো ভালোবাসা? কোন টানে ঘর ছেড়েছেন?আমাদের বাচ্চারাও তো এরকম নাড়ি ছিঁড়েই বের হয়, বাবার ঘামে ভেজা কষ্টে বড় হয়? তবু কেন আজকাল আর এইরকম ভালোবাসা বাসতে দেখি না? কেন এই মায়ার বাঁধনকে অগ্রাহ্য করে নতুন সুখের জন্য দৌড়াই আমরা? নাকি আমরাই পাগল?
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×