দৌলতদিয়া। সন্ধ্যা তখনও হয়নি। খুব বৃষ্টি। সারা দুনিয়া ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। মায়া হরিণ। নাম মায়া। হয়ত টেক নেম। মায়া শোনার সাথে সাথে আমার মনে হল মায়া হরিণ।
পেনফোল্ডস খোলা হল। সবচেয়ে দামী ওয়াইন। গাঢ় বাদামী। সুঘ্রাণ। মায়ার শরীরে কিন্তু অতটা সুঘ্রাণ নাই। সস্তা পারফিউম আর ঘামের টক গন্ধ।
কোন কোন সন্ধ্যায় এমন হয়, নোংরা সোঁদা গন্ধও খুব ভালো লাগে। ড্রেনের গন্ধ, নিজের বগলের ঘামের ঝাঁঝালো গন্ধ, কেন যেন ভালো লাগে। পুরনো পিতলের এক টাকার কয়েন থেকেও কেমন একটা গন্ধ বের হয়। সেটাও ভালো লাগে।
মায়ার সঙ্গ ভালো লাগছিল। ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে সে আমার গায়ে গা ঘেঁষে বসছিল। আমার উরুর উপর হাত বুলাচ্ছিল। আমি আমার ভেতরে তেমন কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। হয়ত আমার জাত-পাত বোধ বাধ সাধছিল। কে জানে? আমি তো জানি আমি উচ্চনিচ মানুষকে ঘেন্না করি না। কিন্তু আমি জানি কি? কে জানে?
কিন্তু আমার তা মনে হচ্ছিল না। আমার মনে হচ্ছিল, সারাদিন ভয়াবহ পরিশ্রম, রোদে পুড়ে একটানা কাজ আর সন্ধ্যার আচমকা বৃষ্টিতে দামী ওয়াইন সব মিলেই হয়ত মায়ার আর আমার মাঝখানে এক দেয়াল তুলে ফেলেছিল। হতেও পারে সেই দেয়াল চিরকেলে সংস্কারের। আমার কেন যেন তা মানতে ইচ্ছা করল না।
আমি কাজেই মায়ার হাত ধরলাম। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে আঙুল চালিয়ে দিলাম। মায়া হাসল। আমি আচমকাই মায়াকে জিজ্ঞেস করলাম, কোনদিন, কোনও একদিন কি সে কারো সাথে শুয়ে যৌনতা উপভোগ করেছে? নাকি সবই শুধু অনুভূতিহীন পরম্পরাহীন খদ্দের তোষণ? কখনই সে উপভোগ করেনি কি? একদিনও না? একবারও না?
মায়া হাসে। আচমকাই আমার ডান কাঁধের উপর চড়ে বসে কান কামড়ে দেয়। আমাকে প্রশ্ন করে, কী আনন্দ পেলেন?
আমি বুঝতে পারি না। আমি তাকিয়ে দেখি মায়া হাসছে। বড় তীব্র সেই হাসি। মায়ার চোখ লাল। আমি জানি সেটা ওয়াইনের কারণে। পাঁচ ছয় পেগের বেশি হয়ে গেছে।
আমি কি মায়ার প্রশ্নের জবাব দিব? নাকি তার জবাবের জন্য অপেক্ষা করব? মায়া জবাব দেয়নি কি?
আমার মতো সভ্য মানুষ সেই জবাব বোঝে, সাধ্য কী? আমি পেনফোল্ডস গিলতে থাকি। আমার আরেকবার মনে হয়, পেনফোল্ডস সবচেয়ে দামী ওয়াইন। মায়াও জীবনে প্রথম এমন দামী মদ খাচ্ছে, আমিও।