ঢাকা শহরের নানা ফুটপাত থেকে শুরু করে সিনেমা হলের বাইরে, রেলস্টেশনে, ফেরির দোতালায় এমনকি গ্রামে মফস্বলে, চরের ভিসিডির দোকানে এক ধরনের মিউজিক ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে কিছু চটকদার গানের সাথে অল্প পয়সায় নির্মিত ভিডিওচিত্রও থাকে। যেগুলো আমরা মিউজিক ভিডিও বলতে পারি। এগুলো খুব চলে।
মানুষ দেদারসে কেনে। ফার্মগেটে ওভার ব্রিজের নিচে অল্প বয়সী ছেলেরা ঘামতে ঘামতে চারপাশে সন্তর্পণে তাকাতে তাকাতে সেগুলো কেনে। খুব বেশি দরদাম তারা করতে পারে না। নিচু গলায় কথা বলে। ঠকে। তবু কেনে। দোকানদারগুলো বুঝতে পারে এরা দাম নিয়ে বেশি ট্যাঁ ফোঁ করবে না।
গানের কথাগুলো সহজ, আদি রসাত্মক, সবসময় নয়। এরই মধ্যে আবার নানা ভাবের কথাও থাকে। তবে চিত্রায়ন খুবই ব্যয়সাশ্রয়ী। বোঝায় যায়। লাইট ক্যামেরা ইত্যাদির ব্যবহার এমনকি মডেলদের নাচ বা ইত্যাদির আনাড়িপনাই দারিদ্র্যের সাক্ষি হয়ে থাকে।
তবু এগুলো খুব চলে। দেদারসে বিক্রি হয়।
গতকাল কথা হচ্ছিল দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত সিডি/ডিভিডি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের মাজহার ভাইয়ের সাথে। তিনি বলছিলেন, পাটুয়াটুলিতে অসংখ্য ছোট ছোট দোকান, পান দোকানের মতো সাইজ। ওরা একদিন দুইদিনের মধ্যে মিউজিক ভিডিও নামায় ফেলায়। একরাতের মধ্যে পোস্টার কইরা পরের দিন থেইকা মার্কেটিং। আমরা বিখ্যাত বিখ্যাত সব ছবির সিডিও বেচতে পারি না। মাঝে মধ্যে মনে হয়, মারুফ ভাই, সব ছাইড়া ওইসব বানাইতে নাইমা যাই।
জিজ্ঞেস করলাম এগুলো এতো চলে কেন? এর ক্রেতা কারা? তিনি বললেন, কারা আর ক্রেতা হইব, বুঝেনই তো। মফস্বলের সব নিম্নশ্রেণীর মানুষগুলো, রিকশাওয়ালা, ফিকশা ওয়ালা ... এরা।
মাজহার ভাইকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। নিজেকেই নিজে বললাম, এই যে জ্বলজ্যান্ত বাজার চাহিদা, তাকে অস্বীকার করি কী করে? বিশ্ব জুড়েই তো সেক্স ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আছে। বিরাট ইনভেস্টমেন্ট আছে। প্রচুর বিকাচ্ছে। মিলিয়ন মিলিয়ন ক্রেতা আছে। তারা আমার মতই ব্যক্তি। তার পছন্দ (রাইট টু চ্যুজ) আছে। টাকা আছে। বাজারে জিনিস আছে। সে কিনছে। তাকে আটকাই কী করে? কী যুক্তিতে?
তাহলে কি এটাই স্বাভাবিক? বাজার চাহিদা আর উৎপাদন? সূত্র তো তাই বলে!