somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শূনয থেকে শুরু ৪

১৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাফাদ স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দারিয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে। গত তিন দিন ধরেই এই রকম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সাফাদ প্রতিদিন তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা তার পর রাত নামে। কিন্তু মা আসে না। স্কুলের দপ্তরী তাঁকে আবার হস্টেলের ভিতর নিয়ে যায়। ফাঁকা বিছানা গুলো দেখে সাফাদের বুক হুঃ হুঃ করতে থাকে। যতটা না হতাশায় তার থেকে বেশি ভয়ে। সে ভাবতে থাকে তাঁর মা আর তাঁকে নিতে আসবে না।
আজো যখন একের পর এক গাড়ি স্কুলের গেট পাশকাটিয়ে চলে যাচ্ছে তখন সাফাদের মনে হোল আজো মা আসবে না। তাঁর ছোট্ট মনে অভিমানের পাহাড় জমতে থাকে। সে আর মায়ের কাছে যাবে না , কোন দিন না। এসব ভাবতে ভাবতে সাফাদের চোখ ঝাপ্সা হয়ে যায়। মা কে না দেখে আর কতো দিন থাকতে হবে সে জানে না। কিন্তু এটা প্রায় অসম্ভব যে মা এসে তাঁকে নিয়ে যেতে চাইবে আর সে যাবে না।
- কি বাবাই কাঁদছ কেন?
সাফাদের বুক আনন্দে ভরে যায়। মা। হ্যাঁ মাই তো। সে মাথা তুলে তাকায়। মায়ের শ্যামলা মুখটা দেখে সাফাদের ইচ্ছা করছিল আনন্দে একটা লাফ দিতে, কিন্তু তা না করে সে বোকার মতো মা কে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে থাকে।
- ছিঃ বাবাই কাঁদে না। এতো বড় এক ছেলে মাকে জড়িয়ে কাঁদে বুঝি?
সাফাদ মা কে না ছেড়েই কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
- এতো দিন তুমি আসনি কেন আম্মু? জানো আমি প্রতিদিন এখানে তোমার জন্য দাড়িয়ে থাকি, একদম রাত হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু তুমি আসোনা। আমার বুঝি কষ্ট হয় না?
নিবেদিতার চোখ সিক্ত। কিন্তু মুখে একটা হাসি টেনে বলে
- আমি যদি প্রথম দিনই চলে আসতাম তাহলে কি জানতে পারতাম যে আমার বাবাই আমাকে এতো ভালোবাসে ?
- যাও আম্মু তোমার সাথে কাট্টি। আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না।
সাফাদ মা কে জড়িয়ে ধরেই অভিমান করে বলে উঠে। নিবেদিতা হেসে দেয়। বড্ড আদুরে হয়েছে ছেলেটা। না আর একে দূরে রাখা যাবে না। যে যাই বলুক এখন নিবেদিতা তার ছেলেকে নিজের কাছেই রাখবে। সব সময়ের জন্য। এই ছেলেই তো এখন নিবেদিতার সব।
নিবেদিতা ছেলের মাথার চুল এলোমেলো করে এক পলক দেখে নেয়। নিবেদিতার মতো চাপা গায়ের রঙ না। বরং বেশ উজ্জ্বল। পাতলা অভিমানি ঠোঁট, বড় বড় চোখে দীর্ঘ পল্লব। থুতনিতে একটু ভাঁজ। নিবেদিতার থেকে আবিরের গড়ন বেশি চোখে পরে। কিন্তু কি নিষ্পাপ দেখলেই নিবেদিতার বুকটা কেমন কেমন করে উঠে। সাফাদের কপালে একটা চুমু দেয় নিবেদিতা।
- বাবাই তুমি আমার সাথে থাকবে?
আনন্দে সাফাদের ইচ্ছা করছিল একটা লাফ দিতে। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় সে।
- সত্যি আম্মু? আমি তোমার সাথে থাকবো ? কিন্তু তোমার অফিসের ক্ষতি হবে না?
- সে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি আমার সাথে থাকবে কি না বল?
- থাকবো না মানে? এক’শ বার থাকবো, হাজার বার থাকবো। তুমি জানো আমার এখানে একা একা একটুও ভালো লাগে না। ইশ! আমি তোমার সাথে থাকব! কি মজা হবে তাই না আম্মু?
- মজা তো হবেই। তার আগে চলো কিছু খেয়ে নিই। খুব ক্ষুধা লেগেছে। তারপর শহরের একটা হোটেলে আজকে রাত টা থাকবো আর তার পরে তোমার প্রিন্সিপালের থেকে পারমিশান নিয়ে সোজা আম্মুর সাথে চলে যাবো। কেমন?
- ওয়াও আম্মু। সত্যি আমরা এক সাথে থাকবো ? কি মজা কি মজা!
নিবেদিতা ছেলের মুখে এই সরল উচ্ছ্বাস দেখে খুব খুশি হয়। কতো অল্প চাওয়া সাদাফের। কিন্তু এতোদিন তাও পূরণ করতে পারছিল না। এখন একটু শান্তি লাগছে নিবেদিতার।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×