somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত সমাপ্তি

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিক্সায় বসেই পিউলী ঝলমলে বাড়িটা দেখতে পাচ্ছে। বাহারি রঙের বাতিতে ঝলমল করছে রাস্তার এক দিক। সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সে। কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি সে মুহিবের বিয়েতে যাবে। যখন পিউলী জানতে পারে মুহিবের বিয়ে হচ্ছে সে মনে মনে ভেবে রেখেছিলো কোনদিন সে এই বিয়েতে যাবে না। মুহিবের কোন স্মৃতি সে ধরে রাখবে না। কিন্তু পরমুহূর্তে সে মুহিবকে ফোন করে। কথা বলতে চায়। কিন্তু কিছুই বলতে পারে না। আজ যখন সেজে গুজে মুহিবের গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে চলে এলো তখন অবাক না হয়ে পারলো না।
মুহিবের সাথে দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিল পিউলীর। যখন তারা ছোট তখন তাঁদের বাবা মা একে অপরকে কথা দেয় যে পিউলী আর মুহিবের বিয়ে হবে। পিউলীর বাবা আর মুহিবের বাবা দুজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সেই সুবাদে মুহিব আর পিউলী একে অপরের বাড়িতে যাতায়াতও ছিল। যখন তারা দুজনই তাঁদের প্রথম যৌবনে পা রাখে তখন থেকেই পিউলী জানে মুহিবের সাথেই তার বিয়ে হবে। দুইজন পাঁচ বছর প্রেম করে। কিন্তু একদিন যখন পিউলী জানতে পারে, মুহিবের পরিবার এই বিয়েতে এক মত না তখন সে পাগলের মতো ছুটে যায় মুহিবের কাছে। তাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। কিন্তু মুহিব তার পরিবারের অমতে বিয়ে করতে চায় না। যে পিউলীর একটু মন খারাপ দেখলে মুহিব পাগলের মতো হয়ে যেতো সেই মুহিব সেদিন পিউলীর চোখের পানি, হাজার কাকুতি মিনতি দেখেও না দেখার ভান করে ফিরিয়ে দেয়।
পিউলী চলে আসে। কিন্তু প্রতি মুহূর্ত তাঁর মন চাইতো এক বার হলেও মুহিব তার মুহিব ফিরে আসুক তার কাছে। কিন্তু মুহিব আসেনি। কিছুদিন পরে পিউলী জানতে পারে মুহিব অন্য একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। পিউলী কেঁদেছিল সেদিন। কিন্তু সেদিন থেকেই হয়তো পিউলী একটু একটু করে মরে যেতে শুরু করে। সবাই দেখছে পিউলী হাসে, অনেক কথা বলে। কিন্তু আসলে কেউ কি দেখেছে যে সে আসলে ভিতরে কতটা দগ্ধ?
একদিন ফেসবুকে মেসেজ গুলো খুলে পড়তে পড়তে দেখে মুহিবের মেসেজ। ছোট্ট একটা কথা লিখা
-      ভালো আছ?
তিন বছর পর মুহিব যোগাযোগ করে পিউলীর সাথে। যে কষ্টগুলো এতো দিন নিজের কাছেও লুকিয়ে গেছে তার বহিঃপ্রকাশ হলো একটা দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস দিয়ে। উত্তর দেয় সে প্রতিটা মেসেজের। পিউলী কোথাও না কোথাও ধরে রেখেছিলো মুহিব তার। সেই মেসেজ দেওয়া নেওয়ার সময় তার সেই বিশ্বাস দৃঢ় হতে থাকে। কিন্তু মুহিব একদিন রিতা আর তার ছবি পিউলীকে সেন্ড করে। তখনই পিউলির ভুল ভাঙে।  সে আর দুর্বল হতে চায় না। কিছুতেই না।
-      আসলে তোমাকে বলা হয়নি, আমিও একটা ছেলের সাথে ইনভল্ভড। আমরা খুব জলদি বিয়ে করছি।
পিউলী মেসেজ করে মুহিব কে। মুহিবের কাঁধ থেকে যেন বোঝা নেমে যায়। সে কনগ্রাচুলেট করে পিউলী কে। ছবি দেখতে চায় সে ছেলের। পিউলি খুব করে অপমান করে মুহিব কে। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। মুহিবও অপমান করে। দুই পক্ষের অপমানের সমাপ্তি হয় ফেসবুকের ব্লক অপশনে গিয়ে।
পিউলী হাসে মনে মনে। না আসলেই কিছু মানুষ কখনোই বদলায় না। কি হবে আর এসব ভেবে, মুহিব রিতার ছিল তারই থাকবে। হয়তো আবার সেই ভালো থাকার অভভিনয় করা, আবার সেই দেখানো যে পিউলীর থেকে স্ট্রং আর কেউ নয়।
-      আফা কই যাইবেন?
রিক্সাওয়ালার কথায় সংবিৎ ফিরে পিউলীর। ঝলমলে বাড়িটা পেছনে ফেলে এসেছে।
-      ভাই এইখানেই থামেন।
রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ফুটপাত ধরে হাটতে থাকে। মুহিবের গায়ে হলুদে আজ পার্লার থেকে সুন্দর সেজে এসেছে সে। হলুদ শাড়ি , খপায় লাল গোলাপ , হাত ভর্তি লাল-হলুদ চুড়ি , কপালে লাল টিপ। সন্ধ্যা মিলিয়ে এসেছে। মুহিবদের এই এলাকাটা একটু নিরব। সে রাস্তা ধরে হেটে হেটে যাচ্ছে মুহিবদের বাড়ির দিকে।
দরজার বেল বাজাতেই মুহিব দরজা খুলে দেয়। সে অবাক হয়ে দেখে হাতে ফুল আর এক গাল হাসি নিয়ে দরজার ওপাশে  পিউলী দাড়িয়ে। বাসার সবাই ছাদে হলুদের আয়োজন করছে। মুহিব পাঞ্জাবী পরার জন্য ঘরে আসে। সেই সময় দরজায় বেলের শব্দ।
-      আরে তুমি আসবে আমি ভাবতেই পারিনি।
-      কেন? তোমার বিয়েতে তো আমাদের বাসার সবাই আমন্ত্রিত তাহলে আমি আসবো না কেন? এই শুধু একটু দেরি হয়ে গেল এই যা। পার্লার থেকে সেজে এলাম তো ।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই পিউলী মুহিবের প্রশ্নের উত্তর দেয়। ঘরে উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে একবার।
-      বাসার সবাই কথায়?
-      ছাদে। আমিও যাচ্ছি। শুধু পাঞ্জাবী পরতে নিচে এসেছিলাম।
-      ও আচ্ছা। আমি তাহলে ছাদেই যাই।
পিউলী হেঁটে ছাদে যেতে থাকে। মুহিব অবাক হয়ে দেখে পিউলী এতো স্বাভাবিক ভাবে কি করে কথা বলছে।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে পিউলী বার বার মনে হচ্ছিলো এই হয়তো মুহিব ডাকবে । এই হয়তো বলবে “তুমি আমার সব। চল আমরা দূরে কোথাও চলে যাই” । পিউলী বার বার মনে মনে বলে
-      মুহিব প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আমার। আমি আগেও যেমন তোমার ছিলাম এখনো আছি। তোমাকে কখনো বলিনি, কিন্তু আমি তোমার অপেক্ষা আজো করে।
কিন্তু এই কথা কখনো মুহিব জানতে পারেনি। মুহিব রিতাকেই বিয়ে করে। বিয়ের পর মুহিব বেশ কয়েকবার পিউলীর সাথে কথা বলতে চেষ্টা করে, কিন্তু প্রতিবার পিউলী তাকে চরমভাবে অপমান করে। এর পর মুহিব আর পিউলীর কোন খোঁজ রাখেনি। রাখলে হয়তো বুঝতে পারতো যে পিউলী সারা জীবন শুধু মুহিবের অপেক্ষায় কাটিয়ে দিয়েছে। এবং ধীরে ধীরে সে ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে। কিন্তু বাইরে থেকে কাউকে বুঝতে দেয়নি।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×