বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে একসঙ্গে বেশ কিছু ফুর্তিবাজ বন্ধু পেয়েছিলাম। তবে শুধু ফুর্তিবাজ বললে ভুল হবে। একই সঙ্গে মেধার স্ফুরণও ছিল তাদের মধ্যে। একজনের বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল ছাত্র বয়সেই। অপর একজন ছিল বেশ জ্ঞানী। যাকে আমরা টিচার বলেই ডাকতাম।
তো সেই বন্ধুদের সবাই শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি সব বিষয়েই ভালো দখল ছিল। ক্যাম্পাসের আন্দোলন সংগ্রামেও থাকতো সামনের কাতারেই। আমি ছিলাম শুধুই বন্ধু। দেখতাম। শুনতাম। এ বিষয়গুলো খুব একটা ভালো বুঝতাম না। তবে ওদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বুঝার চেষ্টা করতাম।
যাই হোক বেশ মজা, হুল্লোর করেই সময় কাটছিল। ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চকে ঘিরেই সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত হতো। এক সময় আমরাও চিন্তা করলাম মুক্তমঞ্চে আমাদের কিছু করা উচিত। এক বন্ধু প্রস্তাব দিল আমরা যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করতে পারি।
যে কথা সেই কাজ। যাত্রা নিয়ে হলে রুমের দুই খাটকে একত্র করে রিহার্সেল শুরু হয়ে গেল। আমি ক্লাশে শেষের দিকে বসতাম। যাত্রা রিহার্সেলেও পিছনেই থাকতাম। কখনও রিহার্সেল করিনি। শুধু দেখতাম। তবে আমার মনে আশা ছিল নিশ্চই ক্যাম্পাসে যাত্রা মঞ্চস্থ হবে। কারণ আমাদের কয়েকজন এর আগেই মুক্তমঞ্চে অভিনয় করেছে। আমার মতে ভালো অভিনয় করেছে।
যাই হোক রিহার্সেল ভালোই চলছিল। সমস্যা করলেন পাশের রুমের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এক ভাই।
এক রাতে রিহার্সেল চলছে। মঞ্চরুপি খাটের ওপরে ওঠে বিকট স্বরে চিতকার করছে নামকরা এক টিভি অভিনেতার ছোট ভাই। আমাদের ইয়ারমেট। তার গলা ক্রমেই ওপরে ওঠায় এক পর্যায়ে বাইরে থেকে কেউ একজন খুব বাজে ভাষায় বলে উঠলো এই কে-------- পোলা। জানস না আমার মাস্টার্স পরীক্ষা।
আমরা কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম। কি হইছেরে ভাই। এমন করেন ক্যা। কথা কাটাকাটি। শেষ পর্যন্ত রিহার্সেল বাদ দিয়ে হলের পুকুরের সিড়ি ঘাট গিয়ে বসে রইলাম। যাত্রার উদ্যোগ ক্ষান্ত।
এরপর আর যাত্রা করা হয়নি। ক্যাম্পাসবাসী যাত্রা দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হলো।
না এখানেই শেষ নয়। এবার আবার যাত্রা করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে এবার অফিসের কলিগদের নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:০৮