somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো টুকরো ভালবাসা - ৪

৩০ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি রিডিং রুমে বসে আছে সেই সন্ধ্যা থেকে। ছয়টায় ছেলেটার আসার কথা। আটটা বাজতে চললো - ছেলেটার খবর নেই। মোবাইলও বন্ধ। কি ব্যাপার? খারাপ কিছুর চিন্তাই মাথায় আগে চলে আসে। বই সামনে খুলে রাখা, কিন্তু পড়ায় কি আর মন বসে? হোস্টেলের এক সহপাঠীর কাছে ফোন করে খোঁজ নিয়েছে, ছেলেটি রুমে নেই। কোথায় গেছে মেয়েটিকে বলে যায়নি।
মেয়েটি যখন ভাবছে, এবার সে নিজেই ছেলেদের হোস্টেলে গিয়ে খোঁজ নেবে কিনা- এই সময় ছেলেটি রিডিং রুমে ঢোকে। হাতে দুটো প্যাকেট। মেয়েটির কাছে গিয়ে বলে - 'বাইরে আসো।'
'কোন প্রবলেম? এত দেরী যে? খারাপ কিছু ঘটেছে?'
'আরে নাহ।'
এবার একটু চটে গেল মেয়েটি -' তাহলে এত দেরী করলে কেন? মোবাইলও বন্ধ। আমাকে তো জানাবে যে দেরী হবে। এদিকে আমি চিন্তায় অস্থির।'
'রাগ করে না লক্ষীটি। চল ছাদে বসি।' ছেলেটির গলায় দুষ্টুমির সুর।
'হইছে, আর ঢং করা লাগবে না। হাতে কি?'
কথা বলতে বলতে ওরা দুজন রিডিং রুমের পাশে কলেজের ছাদে এসে বসে। ছাদটায় কোন লাইটের ব্যবস্থা নেই। আধেক চাঁদের আলোয় পুরোপুরি অন্ধকার কাটেনি। তবু আবছা বোঝা যায় ছাদের এখানে-ওখানে জুটি বেধে বসে আছে ছেলে-মেয়েরা। একটু ফাঁকামতো জায়গা দেখে ওরাও বসে।
ছেলেটি প্যাকেট খোলে। মেয়েটি অন্ধকারে খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে বুঝতে পারে, এক প্যাকেটে কেক, উপরে কিছু একটা লেখা। আরেক প্যাকেটে গ্রীল চিকেন, পরোটাসহ - মেয়েটির খুবই প্রিয় খাবার। কিন্তু আজ কেন এনেছে ছেলেটি এগুলো? আজ তো তাদের কারোরই জন্মদিন না। এমনকি তাদের নিজস্ব কোন 'বার্ষিকী'ও না। তাদের অ্যাফেয়ারের এক বছর পূর্ণ হয়নি এখনো।
ভ্রূ কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকায় মেয়েটি - 'কি ব্যাপার? আজকে কি বিশেষ দিন? আজ তো পহেলা ফাল্গুন না, ভ্যালেন্টাইনস ডে না, পহেলা বৈশাখ না... তো এই আয়োজন কি জন্যে?'
ছেলেটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। রঙচঙে একটা মোমবাতি বের করে কায়দা করে কেকটার উপর বসায় - 'আজ তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়ার তিন বছর পূর্তি। তোমার মনে নাই হয়তো, আমার হিসাব আছে।'
'আরে মোমবাতি জ্বালাচ্ছ কেন এখানে? আশেপাশে জুনিয়ররা আছে, ভাইয়া-আপুরা আছে, হাসবে সবাই।' মুখে বলে বটে মেয়েটি, তবু মনে মনে পুলকিত হয়। মেডিক্যালে ঢোকার পর প্রথম কাকে কবে দেখেছে, তা তো সে মনে রাখেনি। তখন সে আর দশটি ছেলের মতোই একজন ছিল মেয়েটির কাছে। অথচ ছেলেটি...? সে-ই প্রথম থেকেই..? অথচ তাদের পরিচয় হয়েছে ফার্ষ্ট ইয়ারের চার মাস যাওয়ার পর। আর অ্যাফেয়ার তো বছরও পেরোয়নি। অ্যাফেয়ারও যে খুব ঘটা করে, প্রপোজাল দিয়ে হয়েছে তা-ও না। একসাথে ক্লাস, ক্লাব করতে করতে কিভাবে যেন দুজনের মাঝে আলাদা বন্ধন গড়ে ওঠে। বোঝে দুজনেই। দুজনেই একদিন আলোচনা করে দুজনের এই 'বোঝা' নিয়ে। প্র্যাকটিক্যাল টাইপের আলোচনা। যেটুকু বাধা ছিল, সেটুকুও সেদিন ঘুচে যায়।
'আচ্ছা, ওদেরকেও ডাকি।' বলে মেয়েটির সম্মতির অপেক্ষা না করেই উঁচু গলায় বলে ছেলেটি - 'ছাদে যারা কেক খেতে আগ্রহী, তারা তাড়াতাড়ি এখানে চলে আসেন।'
ওরা দুজনেই ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। ছাদেও তাদের আড্ডা নিয়মিতই। অন্য যারা বসে আছে আশে-পাশে, পরিষ্কারভাবে দেখা না গেলেও তারা সবাই ওদের পরিচিতই। ছেলেটির কথা শুনে দুপাশ থেকে দুজন ডাকও দেয় তাদের নাম ধরে। জুনিয়র চারটা জুটি চলেও আসে। ঘিরে দাঁড়ায় ওদেরকে - 'কি ব্যাপার ভাইয়া, কি দিবস?'
ওদের দিকে তাকিয়ে দাঁত-বের-করা হাসি দেয় ছেলেটি। উত্তর না দিয়ে মোমবাতি জ্বালায়। মোমবাতির আলোয় পরিবেশটা অদ্ভূত সুন্দর মনে হয় মেয়েটির কাছে। ছেলেটি পকেট থেকে বের করে একটা আংটি। মোমবাতির আলোয় ডান হাতে উঁচু করে ধরে যাতে সবাই দেখতে পায়। তারপর বাম হাতে মেয়েটির ডান হাতটা ধরে ছেলেটি। মেয়েটি খুব লজ্জা পায়। এত ছেলেমেয়ের সামনে কি শুরু করেছে ছেলেটি? আবার ভালোও লাগে তার, খুব ভালো লাগে।
ছেলেটি আংটিটি মেয়েটির হাতের কাছে এনে চোখে চোখ রেখে বলে - 'উইল ইউ ম্যারি মি?'
খুব ভালো লাগে মেয়েটির। নিজেকে রাজকন্যা মনে হয় তার। মনে হয়, কোন রাজপুত্র হঠাৎ তার কাছে এসে বলছে কথাগুলো, স্বপ্ন দেখাচ্ছে রূপকথার রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার। অদ্ভূত ভাল লাগায় হঠাৎ তার দুচোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। সে কিছু বলার আগেই জড়ো হয়ে থাকা আটটি ছেলে-মেয়ে চেঁচিয়ে ওঠে - 'ইয়েস'।
মেয়েটির দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দুফোঁটা জল।
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×