ভারত কিংবা বাংলাদেশে আইপিএস কিংবা বিসিএস অফিসার হওয়ার যে ক্রেজ তা ওয়েস্টে নেই। সরকারি চাকরিগুলো এই দেশগুলোতে খুবই লুক্রেটিভ, কেননা মধ্যবিত্ত স্যালারির পাশাপাশি পাওয়ার প্রাক্টিসের মাধ্যমে খুব দ্রুত ধনী হওয়া যায়, অন্যের উপর প্রভাব খাটানো যায়।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিজ্ঞানী কিংবা শিল্পী হলে এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায় না বা অনাচারগুলো করবার সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে দলবাজি, চামচামি কিংবা ভাড়ামি করে টিকে থাকতে হয়। দক্ষ কিংবা অদক্ষ বেসরকারি চাকরিতে সুযোগ-সুবিধা ও অর্থলাভের মাধ্যমে সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের সুযোগ না থাকায় ভারতীয় উপমহাদেশে ইউরোপের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেনি। বলা বাহুল্য নয়, আমেরিকাতেও এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিটি অনুপস্থিত, যারা সমাজের কার্যকর অংশ হিসেবে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের চর্চা করবে।
আমি হিন্দি সিনেমা টুয়েলভ ফেল দেখিনি। কিন্তু এই দেশগুলোর রাষ্টকাঠামোই এই সিনেমার পেক্ষাপট তৈরি করেছে। টুয়েলফ ফেল একজন মানুষেরও যে সকল নাগরিক সুবিধা পাওয়ার অধিকার আছে, মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার রয়েছে, তা এখনও এখানকার স্ক্রিপ্ট রাইটাররা ভাবতে পারেন না। কারণ রাষ্ট্র সেই সুযোগ ও চিন্তার কাঠামো দেয়নি তাকে। টুয়েলফ ফেল মানে তার জীবন কুকুর কিংবা শৃগালের, আইপিএস অফিসার মানে দেবতার।
আর একারণেই দেবতা ও কুকুরের জীবনকে পাশ কাটিয়ে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকবার আশায় এই দেশগুলোর বড় একটি অংশ দেশান্তরিত হচ্ছে। আমি তোমাদেরকে বলতে চাই, একজন অশিক্ষিত জেলেকেও এপ্রিশিয়েট করতে হবে তার কাজের জন্য। একজন তাঁতীকে বলতে হবে আপনার পেশা অনন্য। সমাজের সামগ্রিক কাঠামো ও চিন্তার কারণে তাঁতীর ছেলে আর তাঁতী হতে চায় না, কেননা এখানে তাঁতী হওয়া সম্মানজনক নয়। এজন্য কোন কারিগর কালাকার হয়ে উঠেন না, কুম্ভকার ভাস্কর হয়ে প্রকাশিত হন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৪:২৭