somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথা: গুরুতের নীলগিরি অভিযান

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওই নীল পাহাড়ের ধারে যাও বুঝি!
গায়ে নতুন কোন পথিক দেখলে তাকে এমনি ভাবে সাবধান করত পাতাচি গায়ের লোকেরা। পথিকরা কারণ জিজ্ঞেস করলে বলত

আছে জানো মস্ত থাবার
খনখনে এক ডাইনী
উজবুকেরা যারাই গেছে
তাদের ফেরত পাইনি,
কেটে তাদের টুকরো করে
রান্না করে সবাইকে
আর বুঝি চাইবে যেতে
পাওনা ভয় জবাইকে?


তাই গায়ের লোক কি দূরের লোক, পুঁচকে লোক কি মস্ত লোক,পালোয়ান কি চিমসে কেউ যায়না নীল পাহাড়ের ধারে, ধরে যদি ডাইনী এসে ঘাড়ে। অথচ দ্যাখো ব্যাপার,একদিন এল এক পায়ে খোঁড়া আর চোখে কানা, চুপসানো জামা গায়ে আর দুমড়ানো জুতা পায়ে এক জোয়ান লোক। নাম ওর গুরুৎ। নিজেকে অথচ ভাবে রাজপুত্তুর। মরি আরকি! হবে কোন ছোটলোক টোটলোক। বলে, দৈত্যি দানোর সাথে লড়াই করে একটা পা গেছে,আর পাতালপুরীর রাক্ষস-খোক্ষসের সাথে যুঝতে গিয়ে গেছে একটা চোখ। এসব বলে লোক হাসাল আরকী! ওকে যেই না সাবধান করা, ওমনি নীলপাহাড়ে যেতে সে একপায়ে খাড়া। বলল-

গেল না হয় আরেকটা চোখ
যাক না হয় বাকী পাটা
ডাইনীটাকে মারব যখন
দেখবে কেমন বুকের পাটা!
হারবে যখন বুঝবে মজা
আমার সাথে লড়াইতে,
মুন্ডুটাকে করব সেদ্ধ
রাঁধত যেই কড়াইতে।


শুনে গায়ের বুড়ো লোকরা হতাশ হল আর জোয়ানেরা একচোট হাসল। আর কোন কোন ছিচকাঁদুনে মেয়ে খানিকটা চোখের পানি ফেলল।

ওদিকে গুরুৎ চলছে তো চলছে,পথ যেন আর ফুরোয় না। নীলগিরি চূড়ো দেখা যায় কাছে,অথচ ডাইনী বুড়ির নাম গন্ধ নেই। ব্যাপার কী? ভাবতে ভাবতে গুরুৎ পৌছুল একেবারে চুড়োয়, যাত্রা তার ফুরোয়,চোখ তার জুড়োয়। চুড়ো থেকে যেন পুরো রাজ্য দেখা যাচ্ছে,আর ডাইনী বুড়ি বোধহয় বোগাস!

ফিরতে যাবে এমন সময় দেখে একটা মেঘ কতক্ষন থেকে চুড়োর উপর জমে আছে। গুরুতের ভারী সন্দেহ হল,করলো কী,সাথের রশিতে আঁকশি বেধে উপরে ছুড়ে মারল। সেটা মেঘের গায়ে লাগতেই টেনে দেখল শক্ত ভাবে লেগেছে কিনা। জানোই তো,পিছলে পড়লে গুরুৎ কে আর দেখতে হবেনা,যমরাজ মহানন্দে খেয়ে নেবে। আর আমার গল্পও এখানেই ফুরিয়ে যাবে!

তারপর গুরুৎ রশি বেয়ে মেঘটায় উঠল। উঠে দেখে, কী সুন্দর এক প্রাসাদ। ছাদটা তার সোনায় মোড়ানো,দেয়ালে হীরে,চুনি গোঁজা। গুরুৎ তো বীর,তাই ওর কাছে এসবের গুরুত্ব নেই। সাধারন কেউ হলে দেখতে লোভে একেবারে হা হা করে উঠত। গুরুৎ এক মেঘের খাঁজে গা ঢেকে প্রথমে ভালোভাবে খেয়াল করলে কোথায় কী আছে। তারপর প্রাসাদের দরজায় উঁকি দিয়ে দেখে ভিতরে বিরাট ফরাস পাতা। তার এক কোনে বসে আছে বুড়ি ডাইনীটা। গুরুৎ তার পকেটের কুড়ালটা হাতে তুলে নিল। এ কুড়াল হাতে থাকলে তাকে আর রোখে কার সাধ্যি!

কিন্তু ঢুকতে যাবে হঠাৎ কী হল,কুড়ালটা হ্যাঁচকা টানে উপরে উঠে গেল। চেয়ে দেখে উপরে লোহার এক বাঁকা নল মতন, যাতে কুড়ালটা লেগে আছে। আর সাথে সাথে এক দত্যি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত পা বেঁধে নিল,আর ডাইনীটা খুব হাসল,

মারতে এলি আমায় তবে
এলি যে খুব লেটে,
এবার দেখিস রাঁধি ক্যামন
ঝোল খাব খুব চেটে !
কুড়াল নিয়ে বাহাদুরি
ভাবিস তোর নেই জুড়ি
এখন ?
কুড়াল দিল উড়াল
লাগল গিয়ে ম্যাগনেটে !


গুরুৎ তাকিয়ে দেখল তাইতো। ডাইনীটা এক বিরাট ম্যাগনেট লাগিয়েছে দোরে, যাতে বীরপুরুষেরা না ঢুকতে পারে অস্ত্র হাতে। আর এক বিরাট দৈত্য দাঁড়িয়ে আছে যেটা তাকে কুপোকাৎ করেছে। গুরুৎ বললে,
'ছ্যা ছ্যা, এই তোর বিদ্যে, শেষমেষ মন্ত্র ভুলে যন্ত্র দিয়ে কারসাজি। লোকে শুনলে তো রূপকথার রাজ্যে রী রী পড়ে যাবে।'
'তা আর জানবে কী করে, তোকে ফিরতে দিলে তো,আর রূপকথার পাঠকরা কী তোর মতন পাড়াবেড়ানী যে বলে বেড়াবে। শোন বাছা,আমার বয়স হয়েছে,ওসব মন্ত্র ফন্ত্র আর ভাল লাগেনা,তাই ওই ম্যাগনেটটা জোটালাম। আর এই দৈত্যটা দেখছিস,একে তো চিনিসই মেঘের উপরের দৈত্য। সিম গাছের মাথা পেলে মেঘ থামিয়ে ওৎ পেতে থাকে। আমি ভাবলাম এমন একটা মেঘ পেলে মন্দ হয়না। শেষ বয়সটা ঘুরে ঘুরে কাটাব। তাই নীলগিরিতে সিম গাছ লাগিয়ে নিজেই ওৎ পেতে ছিলাম।আর আমার কাছে আসতেই বশ করে নিলাম। জানিস তো, দেহে যত বড়, বুদ্ধিতে তত খাট, তাই বশ করতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। তাই না গিলটু?'
গিলটু দৈত্য মাথা নাড়ল,
জী, মহামান্যা
'যা এবার একে ধরে নিয়ে রান্নার তোড়জোড় কর।'

দানবটা গুরুৎ কে নিয়ে রান্নাঘরে পৌঁছে দিল। বড় বড় ডেকচি পাতিলে ভরা,উনুনে আগুন ধরা। গুরুৎ দানবটাকে বলল,

'দেখ দৈত্য,ভাল হচ্ছেনা কিন্তু। হাতের বাঁধন খুলে দে, তুইও ডাইনী থেকে মুক্তি পাবি।'
বললে কি হবে,দানবটা যে ডাইনীর বশ।
দানব শুধু বলল,'বেশি বকোনা ছোট মানুষ,এখুনি বাবুর্চিরা এসে পড়বে।'
'বাবুর্চি ও আছে নাকি !' গুরুৎ অবাক হয়।

বলতে বলতে একদল বাবুর্চি এসে হাজির। হৈ হৈ করে তারা ঢুকল। পাঁচ ছ জন কালচে মানুষ, হাতে বল্লম, গায়ে গাছের বাকলের পোষাক আর গলায় কীসের যেন মালা। এসেই গান জুড়ে দিল,

খাব খাব
মেরে খাব
খাব ঝোলে ডুব দিয়ে
রোস্ট করব,টোস্ট করব
খাব ঝাল খুব দিয়ে !
ভুনা হবে কালিয়া হবে
হবে দেখিস কোর্মারে
ডাইনী খাবে,দৈত্যি খাবে
খাবে সব শর্মারে !


শুনেই গুরুতের ভারী রাগ হল। দানবটা বলল,'এরা আফ্রিকার নরখাদক। ডাইনী বুড়ি এদের ধরে এনে প্রাসাদে রেখেছে এদের রান্না ভাল বলে। ভারী মজা করে রাধে।' বলে লাল টানল দানবটা। ' তবে ঝালটা একটু বেশি দেয় এই যা।'

কিন্তু যেইনা নরখাদকেরা গুরুতের হাতের বাঁধন খুলে মশলা মাখিয়ে উনুনে দিতে যাবে, ওমনি গুরুৎ তার কানা চোখের উপরকার পট্টি সরিয়ে নিল, সাথে সাথে ভারী দীপ্তিময় এক আলো চোখ থেকে বের হয়ে ঘর ভরে গেল।
দেখে তো সবাই তাজ্জব। ব্যাপার ভারী আজ্জব।

ফের আবার পট্টি দিয়ে চোখ ঢেকে দিল। ততক্ষনে সবার বশ হওয়া ছেড়ে গেছে। আসলে গুরুতের কানা চোখটা ছিল মন্ত্রপুত। গুরুৎ বলল, 'কি এবার আমাকে রাধঁবি?'
'না, মহামান্য বীর, বেয়াদবি মাপ করবেন।' ওরা বলে উঠে। দৈত্যটাতো কেঁদেই ফেলল।

'তবে এখানে চুপচাপ বসে থাক,আমি ডাইনীটাকে দেখছি।' বলে গুরুৎ হাজির হল ডাইনীর ঘরে। দেখে ডাইনীটা ডাইনীং টেবিলে বসে দাঁত খুঁটছে। গুরুৎকে দেখে ভারী অবাক হল।
গুরুৎ বলল 'এবার ডাইনী বুঝবি মজা। তোর বশ কেউ নেই। মারব গলা টিপে।'

'খবর্দার, ব্যাটা ছেলে, কাছে আসবিতো মন্ত্র দিয়ে পিপঁড়ে বানিয়ে ফেলব।'
'মন্ত্র তুই কেমন জানিস জানা আছে বেশ! দোরে যন্ত্র লাগিয়ে বীরদের সাথে মশকরা'
'তবেরে হাবলিং টাবলিং.....' ডাইনী মন্ত্র পরে ছুড়ে মারল গুরুতের দিকে যাতে ও পিপঁড়ে হয়ে যায়। আর সত্যি সত্যি গুরুৎ পিপঁড়ে হয়ে গেল। আর তক্ষুনি গুরুৎ ডাইনীটাকে দিল এক কামড়। তাতেই ডাইনীটার মুন্ডুপাত হয়ে মারা গেল। হবে না বা কেন। গুরুৎ পিপঁড়ে হলেও পিপঁড়েটা হল আকারে ঠিক গুরুতের মতনই। আর জানো তো, অতবড় পিপঁড়ে কামড় দিলে না মরে বাঁচা যায়!

আসলে ডাইনীটাই বোকা! পিপঁড়ে হবার পর আকারে ছোট করার মন্ত্র সে কবেই ভুলেছে, তা কী তার মনে আছে।
ও হ্যাঁ, ডাইনীটা মরতেই গুরুৎ ফের মানুষ হল, কেন যে তা নিজেরাই ভেবে বের কর।

তারপর? তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করা শুরু করল এই তো ভেবেছ। উহু তা নয়। সুখ শান্তি কি আছে মানুষের পোড়া কপালে! গুরুৎ মেঘ থেকে নেমে ফের তার পথ ধরল। কত রাক্ষস-খোক্ষস, দৈত্যি দানো এখনো আছে, তাদের বিনাশ না করে তার শান্তি আছে!

চলল গুরুৎ খুড়িয়ে
লোকের মন জুরিয়ে
বলছি যা সত্যি জানো!
মারল কত দৈত্যি দানো
করল কত রাজ্যি জয়
বলব ফের সে কাহিনী
গুরুৎ যদি রাজ্জি হয়





প্রকাশিত: বছর দুয়েক আগে প্রথমআলোর শিশুতোষ ক্রোড়পত্র গোল্লাছুটে
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×