somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কন্ট্রাক্টর

১৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিচ্ছিরি ! এবং বিরক্তিকর। পানিতে ঠেসে ধরলে মানুষ কতটা বিরক্তিকর শব্দ তৈরী করতে পারে এটা অবিশ্বাস্য। এ্যালকোহলের বোতলে এক চুমুক দিয়ে সোজা লোকটার দিকে তাকালাম। কত হবে বয়স ? টেনেটুনে পঁয়ত্রিশ হতে পারে, তবে তার বেশি নয় আমি নিশ্চিত। ভুস ভুস করে শব্দ হচ্ছে। ছুটে যাওয়া মনোযোগ একত্রিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। কয়েকদিনের না কাটানো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, চোখের নিচে আঘাতের ফলে কালশিরা, প্রায় ছেঁড়া শার্ট। তুলনামূলক তার জিনসের পান্টের অবস্থা ভালো, তবে ময়লা। এ্যালকোহলে আরেক চুমুক দিয়ে বোতলটা স্টিলের টেবিলে ঠকাস করে রাখলাম। আরেকটু জোরে হলে বোতল ভাঙ্গাটা অসম্ভব না। এখনো অর্ধেকের বেশি বাকি আর এখন বোতলটা ভাঙলে নিশ্চিত আফসোস হতো। লোকটাকে চেয়ার বসিয়ে বাকিদের রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বললাম। হা করে নেওয়া নিঃশ্বাসে লোকটি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। লোকটার নামটা ? মনে আসছে না। 'শ' দিয়ে কিছু একটা হওয়ার কথা। বোতলটা ঠেলে দিলাম, কয়েক মূহুর্ত তাকিয়ে হাতে তুলে নিলো সে। দুহাত বাঁধা থাকার কারনে বোতল ধরতে তার অসুবিধা হচ্ছে, এমনটা মনে হচ্ছেনা। কয়েক ঢোক পেটে যাওয়ার পরপরই বমি শুরু হলো তার। যদিও বমিতে পানি ছাড়া কিছু ছিলোনা। গত কয়েকদিনে খুব অল্প পরিমাণ খাবার পেয়েছে সে আর খাবার পানিটা এসেছে জল চিকিৎসা থেকে। যেটা পাঁচ মিনিট আগেও লোকটা ভোগ করছিলো।
"আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি। আমরা পূর্ব পরিচিত ?" লোকটার উদ্যেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম।
"সম্ভবত না।" এক মূহুর্ত দ্বিধা না করেই বললো লোকটি, "আমাদের আজকের আগে কখনো দেখা হয়নি"
ওয়েল, লোকটার কথা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। গত দুইদিন ধরে সে আমার লোকদের হাতে বন্দী কিন্তু আমার সাথে আজ প্রথম দেখা। ভেবেছিলাম অধীনস্ত সব সামলিয়ে নিতে পারবে কিন্তু এই লোক এমন চীজ. কে জানতো !
"টাকাগুলো কোথায় বললে কিন্তু এত ঝামেলায় যেতে হয়না।" কথাটা বলে লোকটার চোখের দিকে তাকালাম। কোন ভাবান্তর নেই। লোকটার নাম মনে পড়ছে, মহিউদ্দিন রহমান। সেসময় 'শ' দিয়ে কেন মনে হলো ! অদ্ভুত ব্যাপার তো। কিসের টাকা জন্য জল চিকিৎসা চলছে প্রশ্নটা মনে আসতেই পারে। ওয়েল, টাকা আমার না তবে মহিউদ্দিন রহমানেরও না। এর মানে না আমি চোরের উপর বাটপারি করছি। মূলত যার টাকা তার হয়েই কাজ করছি আমি, বলা যায় মাল তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত। এই প্রশ্নটাও মনে আসতে পারে, আমার কাজটা কি ? ভদ্র ভাষায় কন্ট্রাক্টর। চুরি, ডাকাতি হওয়া মালামাল নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ফিরিয়ে দেওয়াটাই আমার কাজ। সেটা আসল মালিকের কাছে হতেও পারে, নাও পারে। সবাই পড়াশোনা শেষে চাকুরী করে, আমি কন্ট্রাক্টর তাতে কি ক্ষতি ? তাছাড়া অন্যের চাকরিতে জীবনের উন্নতি কঠিন বিষয়। তবে কন্ট্রাক্টরিতে ভবিষ্যৎ খারাপ না। হয়তোবা আর পাঁচ বছরের মাথায় ঢাকায় ছয়তলা বাড়ি বানানোর সামর্থ্য থাকবে।
"আপনার নাম মহিউদ্দিন না আর আমি আপনাকে চিনি। আপনার সত্যিকারের নাম শামীম ইসলাম।"
"কমন নাম। অন্য কারো সাথে গুলিয়ে ফেলছেন।" ঠান্ডায় বসা ভাঙা গলায় বললো শামীম ইসলাম।
"উহুঁ, কোন ভুল নেই। আমার মেয়ের বান্ধবীর বাবা আপনি। আপনার মেয়ের নাম সম্ভবত অর্পা, তাই না ?" কোন জবাব আসলো না শামীম ইসলামের থেকে। ইশরাতের স্কুলে মাস তিন আগে দু'বার শামীম ইসলামের সাথে দেখা হয়েছিলো। স্মিত হাসি ফুটে উঠেছে আমার মুখে। শিকার জালে আটকা, রণে ভঙ্গ দেওয়া সময়ের ব্যাপার। "তো কত টাকার ব্যাপার এটা ?"
"সাড়ে তিন কোটি" কথাটা শুনে নিজের অজান্তেই শীষ বাজালাম। বড় অংকের সংখ্যা, এই কারনেই কাষ্টমার টাকা পয়সার বিষয়টা এড়িয়েছে। আমাকে দশ লাখ দিবে তাই অতটা গা করিনি। অধীনস্ত দুজনকে আড়াই আড়াই করে দেওয়ার পরও নিজের লাখ পাঁচ থাকবে। এত চিন্তাভাবনার কোন মানে আছে !
"তো টাকাটা কোথায় ?" কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কোন জবাব আসলো না। "না বলতে চাইলে অসুবিধা নেই। আপনার বউ বাচ্চা হয়তো সাহায্য করতে পারবে। ওদের তুলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি। দেখা যাক জল চিকিৎসায় লাভ হয় কিনা।"
আবার অপেক্ষা করলাম শামীম ইসলামের কথা শোনার জন্য। কোন ভাবান্তর নেই, সম্ভবত এই পাঠা ভেবেছে আমি একাজ করবো না। তাহলে অবশ্য গাধাটাকে হতাশ হতে হবে। নিজের লোককে শামীমের সামনেই নির্দেশ দিলাম। ঠিকানা সংগ্রহের জন্য আমার মেয়ের স্কুল তো আছেই। শামীম সবকিছু তাকিয়ে দেখলো তবে কিছু বললো না। মানতে হবে লোকটার নার্ভ আছে তবে তাতে চিড় ধরিয়ে দিয়েছে আমি। আমাকে জানানো হয়েছিলো তার পরিবার নেই, একা মানুষ। একারণে তাকে কোনভাবে বসে আনা সম্ভব হয়নি। কারন ওকে খুন করাও যাবে না ওদিকে কিছু স্বিকারও করবে না। তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে, দেরীতে হলেও হার স্বীকার করার সময় হয়েছে।
"অর্পা জল চিকিৎসা সহ্য করতে পারবে কিনা চিন্তার বিষয়।" শামীম ইসলামকে খোঁচা দিয়ে বললাম, "তবে বাচ্চা দেখেতো ছাড় দিতে পারিনা। যাইহোক শামীম সাহেব বিদায়। আমাদের সম্ভবত আর দেখা হচ্ছে না।"
"দাঁড়ান রাহাত সাহেব" রুম থেকে চলে যাবার পূর্বে পিছনে থেকে ডাক আসলো। নাহ্, আমার ভুল হয়নি। শামীম ইসলামও আমাকে চিনতে পেরেছে। "আমার পরিবার নিয়ে টানা-হেঁচড়া অপ্রয়োজনীয়। আমি লোকেশন বলছি।"

ব্যাগ দুইটার ধুলো ঝেড়ে এক একে চেইন খুললাম। না, শামীম ইসলাম তাহলে মিথ্যা বলেনি। প্লাস্টিকের ট্রান্সপারেন্স পলিথিনে হাজার টাকার নোটের বান্ডেল দেখা যাচ্ছে। চেইন লাগিয়ে ব্যাগসহ নিজের এসইউভিটায় চেপে বসলা। আমার স্বপ্নগুলো পূরণ হতে খুব বেশি দেরী নেই। টাকা ফেরত দেওয়ার মত বেকুব অন্তত আমি না, কারন জীবনে বড় বড় সুযোগ হাতে গোনা কয়েকবার আসে। কাষ্টোমারকে বলববো টাকা পাওয়া যায়নি, কিছু স্বিকার করেনি শামীম ইসলাম, কেস ক্লোজ। আপাতত এ বিষয় নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না, অন্য কিছু ভাবতে পারি। তামান্নার জন্য একটা শাড়ি কেনা যায়, কয়েকদিন পর তো আমাদের ম্যারেজডে। আর ইশরাতের জন্য কিছু জামা কাপড়, খেলনা। মোবাইলের ভাইব্রেশনে ধ্যান ভাঙলো, মেসেজ এসেছে। হু শামীমের স্ত্রী আর মেয়েকে তুলে এনেছে আমার লোক, কিছুক্ষণের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ ও জল চিকিৎসা শুরু হবে। হোক সেটা, আমার কি ক্ষতি ? মেসেজ ডিলিট দিয়ে পকেটে রেখে দিলাম।

হ্যাঁ যা ভাবছিলাম, ইশরাতের জন্য বড় একটা পুতুল, কয়েক বক্স চকলেট তবে আগেরবারের গুলো না..... তামান্নার জন্য একটা শাড়ি, না না একজোড়া শাড়ি। একটা কচু পাতার মত সবুজ আরেকটা নীল। কয়েক গোছা কাঁচের চুড়ি শাড়ির সাথে ম্যাচ করে। কানের দুল, সুন্দর দেখে পায়েল............

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×