somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"টেলিভিশন" চলচিত্র রিভিউ

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেখে এলাম মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীর “টেলিভিশন” ছবিটি। এক কথায় অসাধারন। যদি কেউ বলে যে, দৃশ্যায়ন, এঙ্গেল, চিত্রনাট্য, কাহিনী, শিক্ষা, শালীনতা, গল্পের বিশেষত্ব, নাটকীড় মোড় সৃষ্টি এগুলোয় ছবিটির মুল্যায়ন করতে, তবে, আমি এটিকে ১০০% দেব।
১. ছবিটির একটা মজার দিক হল, টেলিভিশনকে কেন্দ্র করে কাহিনী গড়াতে থাকলেও এর শেষ হয় চেয়ারম্যান সাহেবের হজ্বে যাওয়ার দু:খকে প্রকাশ করে, এক কথায়, এই প্রথম কোন ছবি, যেটায় ইসলামী আদর্শকে কেন্দ্র করে এতকিছু করা হল, ফারুকী সাহেব বিশাল চ্যালেন্জ নিয়েছেন, বলতে গেলে বাংলাদেশ থেকে এই প্রথম কেউ সাহস করলেন ইসলামী একটি চিন্তাকে এত কঠিনভঅবে ফুটিয়ে তুলতে।

১. মুলত, সারা ছবিতেই আমরা দেখতে পাই চেয়ারম্যান সাহেব টিভি দেখাকে পাপ কাজ বলে মনে করায় এর বিরোধীতা করে আসতেন, কিন্তু ছবির শেষাঙশে দেখা যায়, দু:খজনকভাবে ঢাকায় তার হজ্ব এজেন্সী ধোকা দেয়ায় তিনি অত্যন্ত দু:খ পান। বাড়ি কি বলে মুখ দেখাবেন সে চিন্তা আর হজ্বে না যেতে পারার দু:খ তাকে অসুস্থ করে ফেলে। হোটেলের রুমে তিনি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে ক্রমে অসুস্থ হয়ে যেতে থাকেন। এমন সময় একদিন তিনি এক বাড়ীর টিভিতে হজ্বের দৃশ্য দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং নিজেই তার রুমের টিভিতে হজ্ব দেখা শুরু করেন। যে টিভি নিয়ে সারা জীবন বিরোধীতা করেছেন, সেই টিভি দিয়েই অতৃপ্ত হজ্বের বাসনা পূরন করেন।
২. ফটোগ্রাফী বলতে যদি শুধু বাটনে টিপ দিয়ে ছবি তোলাকেই বোঝাত, তাহলে আর সমস্যা থাকত না। কিন্তু, একটি স্বার্থক ফটোগ্রাফীতে ফটোগ্রাফার যানেন, তাকে অবজেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড রেশীও, আলো, এঙ্গেল এগুলোতে অবশ্যই জ্ঞান থাকা দরকার। ফারুকীর এবারের ছবিটিতে মনপুরার তুলনায় আরো ভালো ফটোগ্রাফীর কাজ করেছেন, যদিও সিনেমায় সিনেমাটোগ্রাফীই হয়ত বলে। অনেকগুলো দৃশ্যই আছে যেগুলো জটিল ধরনের দৃশ্যায়ন হয়েছে। আমি ভাবতাম বিদেশী মুভি থেকেই এ সম্পর্কে শেখার আছে, তবে, এবার ফারুকীর দৃশ্যায়ন দেখে তাকে অভিনন্দন না দিয়ে পারছিনা, তার ছবিতেও শেখার আছে। তবে, আফছোছ, খুলনার এই বাজে পর্দায় দৃশ্যগুলো এতটা বোঝা গেলনা, পুরো মজাটা তুলতে পারলাম না। তবে এর ডিজিটাল কপি বের হলে তা অবশ্যই খুব মজার হবে।
৩. ছবিটি দেখে হাল আমলের অনেক হিন্দি সিনেমার চাইতে বহু গুন ভাল মনে হয়েছে, যার জন্যে অনেকেই পাগল হয়ে যান। এর ছবির অনেকগুলো মেসেজ আছে।
৪. তবে ছবিটির একটা প্রধান সমস্যা আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে। কিছু ক্ষেত্রে কথা বুঝতেই পারিনী। আবার হলের সাউন্ড সিস্টেমও এতটা স্বচ্ছ নয়। তবে, কখনও কখনও আবার আঞ্চলিক ভাষার কারনে বেশ মজাও লেগেছে।
৫. একটা ব্যাপার হল, আপনাকে কিছু শর্ত দেয়া হবে, যেমন একটা গ্রাম ধরুন যেখানে বিদ্যুত আছে, কিন্তু গোড়া ধরনের চেয়ারম্যান ছবি তুলবে না, টিভি দেখবে না, সেখানে কি কি হতে পারে সেটার একটা চিত্র ছবিটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

যদি কেউ এখন এই যুক্তি ওই যুক্তিতে সব কিছুই ধরে বসেন তাহলে আর বিনোদনে সিনেমা বাদ দেন। ভারতের দাবাং, তালাশ, জাপানীজ ওয়াইফ, টার্মিনেটর কোন কিছুই যুক্তিপূর্ন হবেনা। কেননা, যুক্তি দিয়ে হয়ত কেউ কমেন্ট করে বসবে, টার্মিনেটর? লোহা-লক্করের গাজাখুরী গল্প একটা, ফাউল গল্প। বা রেসিডেণ্ট ইভিল? গাজাখুরী স্বপ্নে দেখা কাহিনী। কথা হল, আপনি কাহিনী ভাল না লাগলে দেখবেন না, কিন্তু একটা গল্পকে কারন ছাড়া নেতিবাচক হয়ত আপনার কাছে, সবার কাছে না। টার্মিনেটর/এলিয়েন আপনার না ভাল লাগতেই পারে, তারমানে সেটা ফালতু হয়ে গেল এটা মোটেই সঠিক না। তবে দৃশ্যায়নে অযুক্তি থাকলে সেটা একটা সমালোচনার বিষয়। কাহিনীকে মিসম্যাচ থাকলে সেটা সমালোচনার বিষয়।

৬. মজার ব্যাপার হল, ছবিটি চালানোর সময় দেখলাম windows media
player, my computer desktop ভেসে উঠল। ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে পারিনী। পরে বুঝলাম, এ ছবিটির ফির্ম ভার্সন এখানে আনা হয়নি। ডিজিটাল ভার্সনটাই আনা হয়েছে, যেটি কম্পিউটার প্রজেক্টর এর সাহায্যে দেখান হয়েছে। আমার ধারনা, এগুলো আমরা সচরাচর যে প্রজেক্টর দেখী সেগুলোই, তাই ছবি এতটা ভাল আসবেনা, তবে কিছু করার নেই। কারন জানি, একটা ভাল সিনেমা প্রজেক্টরের জন্য যে লক্ষাধিক টাকার ইনভেষ্ট লাগবে, তার বর্তমান সিনেমা মালিকদের পক্ষে কষ্টকর। সারা বছর কর্মচারীদের বেতন যোগাড়েই কষ্ট হয়। আবার সবাই ডিজিটাল ভার্সন হয়ত ছাড়েনও না, ফিল্ম ছাড়েন।

৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×