somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। যার নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রহস্য। যে রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বছরের পর বছর তৈরি হয়েছে নতুন রহস্যের। কিন্তু রহস্য থেকে গেছে রহস্যই। রহস্য থেকে জন্ম নিয়েছে নতুন রূপকথা। যে রূপকথার শুরুটা রোমাঞ্চকর, শেষটা করুণ। এ রূপকথার মধ্যে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, রয়েছে মানুষের অলীক বিশ্বাস।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি অঞ্চলের নাম। জাহাজ এবং বিমান চলাচলের একটি রুট এটি। কিন্তু ভয়ানক কথা এই যে, বিমান কিংবা নৌযানগুলো এ অঞ্চল দিয়ে চলাচলের সময় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়, কিংবা বলা যায় হয়েছে।

যে যানগুলো নিখোঁজ হয়েছে, অনেক চেষ্টার পরেও সেসব নৌজাহাজ বা বিমানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। উপরন্তু যেসব বিমান ও জলযান তাদের খোঁজে বের হয়েছে, তাদের অধিকাংশই আর ফেরেনি। কিন্তু কেন? কী আছে সেখানে? কেনই বা একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে এ স্থানে? সেগুলো কি আদৌ কেনো দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কিছু? বন্ধুরা, চলো আজ এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের অপর নাম ডেভিলস ট্রায়াঙ্গল। বাংলায় যাকে বলা হয় শয়তানের ত্রিকোণ। বিশ্বের মানচিত্রে এর অবস্থানটি লক্ষ্য করলে দেখবে এর উত্তর কোণে বারমুডা, দক্ষিণ কোণে পুয়ের্তো রিকোর সান জুয়ান এবং পশ্চিম কোণে ফ্লোরিডার মিয়ামির অবস্থান। এ তিনটি স্থানের মধ্যবর্তী অংশকে বলা হয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। আর এ অঞ্চলেই সংঘটিত হয়েছে অস্বাভাবিক বেশকিছু ঘটনা।

কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক। ৪ মার্চ, ১৯১৮। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জি. ডব্লিউ. ওউরলের নেতৃত্বে ৩০৯ জন নাবিকসহ ইউএসএস সাইক্লোপস নামক যুদ্ধ জাহাজ বারবাডোজ দ্বীপ থেকে যাত্রা করে। কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে প্রবেশের কিছু সময় পর থেকে এ পর্যন্ত সে জাহাজ বা তার একজন নাবিকেরও আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সাইক্লোপসের মতো আরো দুটি মার্কিন জাহাজ নিখোঁজ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।

১৯১৯ সালে ক্যারোল এ. ডিএরিং নামের পাঁচ মাস্তুলের পালের জাহাজটি একটি বালুচরে আটকে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়, কিন্তু পাওয়া যায়নি তার একজন যাত্রীকেও। ১৯৪৫ সালের পাঁচ ডিসেম্বর ফ্লাইট-১৯ নামক একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান নিখোঁজ হয় এ অঞ্চলেই। বিমানটির খোঁজে বের হয় অন্য একটি উড়োজাহাজ। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেটিও আর ফিরে আসেনি।

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আজোর থেকে বারমুডা যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় ব্রিটিশ সাউথ এয়াওয়েজের যাত্রীবাহী বিমান জি-এএইচএন পি স্টার টাইগার। পরের বছর একই মাসে বারমুডা থেকে কিংস্টোন যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় একই কোম্পানির আরেকটি যাত্রীবাহী বিমান স্টার এরিয়েল। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে পুয়ের্তো রিকো থেকে মিয়ামি যাওয়ার পথে ৩২ জন যাত্রীসহ নিখোঁজ হয় ডগলাস ডিসি-৩ নামক বিমান।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কী এমন আছে, যা এতগুলো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে? কথিত আছে, এ মহাসাগরের তলদেশে ডুবে আছে আরেকটি মহাদেশ। আর সে মহাদেশেরই কোনো বিশেষ শক্তি গ্রাস করছে এ জাহাজ ও বিমানগুলোকে।

অন্য একটি মতে, এ অঞ্চলে একটি বিশেষ চৌম্বকীয় শক্তির প্রভাব রয়েছে, যা দিক নির্ণায়ক যন্ত্রে ত্রুটির সৃষ্টি করে নাবিককে বিভ্রান্ত করতে পারে। তবে বিশেজ্ঞরা বলছেন, কোনো অলৌকিক শক্তির প্রভাবে নয়, বেশ কিছু কারণেই এ সব দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

তারা কারণ হিসেবে বলেছেন, উত্তর আটলান্টিকের একটি প্রচণ্ড শক্তিশালী স্রোতের নাম গল্ফ স্রোত। এর গতি প্রতি সেকেন্ডে ২.৫ মিটার। যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কোনো প্রয়োজনে বিমানকে ওয়াটার ল্যান্ডিং (জরুরি প্রয়োজনে উড়োজাহাজকে কোনো জলরাশির ওপর অবতরণ করানো) করালে এ তীব্র স্রোতের আঘাতে বিমানটি প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একইভাবে স্রোতের সঙ্গে থাকা ভাসমান বস্তুর আঘাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিমানটি।

দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে এ অঞ্চলে সৃষ্ট প্রচণ্ড শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাসের গতিবেগ এতো দ্রুত বেড়ে যায় যে, কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ারও সুযোগ থাকে না। ১৯৮৬ সালে এমন একটি দুর্ঘটনায় ডুবে গিয়েছিলো প্রাইড অব বাল্টিমোর নামক নৌজাহাজ। বেঁচে যাওয়া একজন নাবিকের মতে, বাতাস হঠাৎ করে ঘন্টায় ২০ মাইল থেকে প্রায় ৯০ মাইলে উন্নীত হয়, যা সামলানো জাহাজটির পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ছিল।

এমন বৈজ্ঞানিক বা কাল্পনিক বিশ্বাস কোনোটিই পৌঁছাতে পারেনি রহস্যের শেষ সীমান্তে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বিশ্বের কাছে এমনই এক রহস্য, যার কোনো শেষ নেই।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×