সাম্প্রতিককালে জামাত-বিএনপির সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক তৎপরতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং হরতাল, ধ্বংশযজ্ঞ, নৈরাজ্য, বোমাবাজী, হত্যাকান্ডসহ যা করছে তার কোনকিছুই নির্বাচনী সরকার ব্যবস্থা কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে নয়; এগুলো শুধুমাত্র বলার জন্য এবং প্রচারনার জন্য। প্রতিক্রিয়াশীল ধারার এই চক্রের চাহিদা একটাই, তা হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে এর ব্যবহার করা। কেননা দল দুইটির নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ের নেতৃত্বের প্রায় প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত ভাবে স্বাধীনতার পূর্বে, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অথবা স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গনহত্যা কিংবা চোরাকারবারীতে ওত-প্রত ভাবে জড়িত ছিলেন। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন যুগপযোগী এবং নাগরিকদের স্বার্থসংরক্ষন ও কল্যাণকর সংবিধান, প্রতিরক্ষানীতি, স্বরাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি নামক ব্যবস্থাপনা। অথচ প্রতিক্রিয়াশীল এই গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে সকল ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করে এই দেশ এবং দেশের মানুষের চেতনা এবং মূল্যবোধ ধ্বংশের লক্ষ্যে। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যানে এই সময়ে মিডিয়ার চোখকে ফাঁকি দিয়ে অপকর্ম বা অপতৎপরতা করা অনেক কঠিন। জামাত-বিএনপি এবং সমমনারা ইদানিং আবার গনঅভ্যূথ্থানের গল্পও শোনান। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্ট জাতির জনককে হত্যার পর তারা বলেছিল গনঅভ্যূথ্থানের মাধ্যমে দেশের শাসন তারা নিয়েছে। এই প্রতিক্রিয়াশীলরা এখনও চুপ করে বসে আছে বা আরেকটি ১৫ই আগষ্ট তারা সংঘটিত করার চেষ্টা করবে না মনে করাও বোকামী হবে বলে মনে হয়। যদিও ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এর মত তাদের জীবন আবারও বিপন্ন। ৭১ এর ২৫মার্চের গনহত্যায় চেতনার সংগ্রাম থামেনি, নয় মাসের হত্যা, ধর্ষনে দেশত্ববোধের বিচ্যূতি ঘটেনি, ১৪ই ডিসেম্বরের মেধাশূণ্যের পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। উল্টো পাকিস্তানি হায়েনা এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের জীবনই বিপন্ন হয়ে যায়। শর্তহীন আত্নসমর্পনের মাধ্যমে তারা এদেশের স্বাধীকার বা চেতনাকে মেনে নেয়নি। বরং ১৬ই ডিসেম্বর ছিল পাক-হানাদার এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের জীবন রক্ষার একটি কৌশলমাত্র। পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে পরাজিত শক্তি জাতিসত্ত্বাকে ধ্বংশ এবং চেতনাকে হত্যার যে রণকৌশল প্রয়োগ করে তা ছিল অনেক বেশি পরিকল্পিত এবং নিখুঁত। ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে তাঁর পরিবার-পরিজন সহ হত্যার মাধ্যমে পরাজিত শক্তি অর্জন করে বাঙালীর স্বকীয়তা, চেতনা, স্বাধিকার এবং হাজার বছরের লালিত অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্ত-চিন্তার মূল্যবোধের ভিত্তি বিলীন করার সু-দীর্ঘ চব্বিশ বছরের প্রচেষ্টার সবচেয়ে কার্যকর সফলতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীকে হত্যার মাধ্যমে মস্তিষ্ক বিকৃত শকুঁনের দল রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে স্বপ্নের মানচিত্রে নতুন একটি রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করে। কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতা, সেক্টর কমান্ডার, কর্নেল তাহের, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী, প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িকতার চেতনার ধারকদের নৃশংসভাবে পরিবারসহ হত্যা করে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা, চেতনা, রাজনীতি এবং স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ইতিহাসের লাল অক্ষরগুলোকে পাকিস্তানী দালাল এবং ক্ষমতালিপ্সুরা তাদের জিঘাংসার আগুনে পুড়িয়ে প্রবাহিত রক্তগঙ্গায় ভাসিয়ে দিল। ছাপানো হল নতুন ইতিহাস। ৭২এর সংবিধান ডাস্টবিনে ছুঁড়ে লেখা হল নতুন সংবিধান। অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকে সার্বজনীন সমাজ ব্যবস্থার মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু জীবনের মূল্যবান ২৩(তেইশ) বছর কারাগারে কাটালেন, ততোধিকবার মৃত্যুর দুয়ারে গিয়েও জাতির যে মৌলিক সত্ত্বার বিষয়ে আপোষ করেননি, সংবিধান থেকে সর্বপ্রথম বাদ দেয়া হল সেই সত্ত্বা, রাষ্ট্রের জন্য ধর্ম নির্ধারন করা হল। রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি হল পাকিস্তান ভিত্তিক, স্বরাষ্ট্রনীতির হার্ডরোলারে পিষ্ট হল রাষ্ট্রের ঐসকল নাগরিক সমাজ, যাদের কর্মকান্ড বা কথাবার্তা বা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতা, প্রগতিশীলতা অথবা নতুন ইতিহাসের কালো অধ্যায় তথা ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধের কোন চেতনার প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিরক্ষাবাহিনীকে দিয়ে নির্বিচারে মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যার করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুমতি দেয়া হল। যেই ইতিহাসের লক্ষ লক্ষ অক্ষরের মধ্যে শুধুমাত্র বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশ ছাড়া সকল কিছুই পরিবর্তন করল। যে ইতিহাসের বইতে শেখ মুজিব একজন রাষ্ট্রীয় বেইমান, শেখ জামালকে বলা হল ব্যাংক ডাকাত, শেখ কামালের স্ক্রীপ্ট লেখা হল চরিত্রহীন বলে।..... (চলবে।)
আলোচিত ব্লগ
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা
সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন