সকালে এক রুগী আসলো... কয়েকদিন হল জ্বর। ওষুধ লেখলাম। প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দেখি আমতা আমতা করছে।
- ডাক্তার সাহেব, কয় টাকা লাগবে ওষুধগুলো কিনতে?
- ২০০-৩০০ টাকা লাগতে পারে।
শুনার পর দেখলাম প্রেসক্রিপশনের দিকে তাকিয়ে আছে। বললাম,
- কোন সমস্যা? কি কাজ করেন?
- আমি ভ্যান চালাই। কিন্তু জ্বরের কারণে কয়েকদিন ভ্যান চালাতে পারিনি।
বুঝলাম লোকটার কাছে টাকা নেই।
যাই হোক, আমার ড্রয়ার খুললাম... ফ্রি স্যাম্পলগুলো খুজে কিছু ওষুধ পেলাম...। এবার ওয়ার্ড বয়কে ডেকে একটা কাগজে বাকি ওষুধের নাম আর টাকা দিয়ে বললাম যে ওষুধগুলো কিনে নিয়ে আসতে। এরপর যখন ওষুধগুলো লোকটার হাতে দিলাম, দেখি তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। একটুপর শুরু করল আরও জোড়ে জোড়ে কান্না... পুরুষ মানুষ যে এভাবে কাঁদতে পারে আমি দেখিনি কখনো !!
তার কান্নাভেজা চেহারা দেখে খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু ডাক্তারদের কখনো নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে নিজেকে উন্মুক্ত করতে হয়না। তাই, আমার অনুভুতি এবং আবেগকে আমি কখনো Show করিনা চেহারায়... কেউ আমার মন পড়ে ফেলুক, সে সুযোগ আমি কাউকে দিতে চাইনা... যাই হোক, গলাটা স্বাভাবিক করে লোকটাকে বললাম, চাচা এবার যান। ওষুধগুলো ঠিকমত খাবেন।
আসলে, শুধু আমি না, সব ডাক্তারই এমন করে। কিন্তু আমরা এগুলো কখনো বলে বেড়াই না। আমার এখানে বলার কারন এটাই যে, বর্তমানে মিথ্যুক মিডিয়া ডাক্তারদের নামে যে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে, একটু হলেও সবাই যেন ডাক্তারদের ব্যাপারে সঠিক ধারণা নিতে পারে। আমি আজ যা করেছি, হাজার হাজার ডাক্তার প্রতিনিয়ত এমনটা করছে। আমাদের সেবা হয় সম্পূর্ণ মানব চক্ষুর আড়ালে, যেগুলো সাধারণ মানুষেরা কেউ কখনো দেখবে না কিংবা দেখার চেষ্টাও করবে না। আমাদের কসাই বলা হোক, আমাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করা হোক তবুও আমরা এভাবেই সেবা করে যাব।
আর, আপনি ডাক্তার হন কিংবা সাধারণ জনগণ হন... যাদের সত্যিকার সাহায্য দরকার, নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের সাহায্য করুন। গ্যারান্টি দিচ্ছি, তাহলে দুঃখ জিনিসটা আপনাকে কখনোই স্পর্শ করবেনা। এটাই হল সবসময়য় হাসি-খুশি ও সুখী থাকার গোপন টিপস।