somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন গোয়েন্দার নবীন-প্রবীণ ভক্তরা কই? ছোট একটা গল্প লিখায় হাত দিয়েছি। পড়ে মতামত জানান। :)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব


প্রথম পর্বের পর
_________________________
গরম মেজাজ নিয়েই ফগ বাসায় ঢুকল। তিন গোয়েন্দার কাওকে তো হাতের কাছে পাচ্ছে না বা পাবেও না। ঝাল কার উপর মেটাবে? ববটাও নেই। আচ্ছা, ও আসুক। আমাকে বলে ঝামেলা! তাহলে আজকে রাতটুকু ওর জন্য একটু স্মরণীয় করে রাখতে হবে। ফগের ঠোটে মুচকি হাসি দেখা গেল। একটু পরে ফগকে দেখা গেল বাথরুমে ঢুকতে গোসলের জন্য। ঝর্ণার পানির আওয়াজের সাথে গুন গুন গানও শুনা যেতে লাগল। মনে হচ্ছে ফগ বেশ আনন্দিত। পানির স্পর্শে তাহলে ক্লান্তি-ক্রোধ সব দূর হয়ে গেছে। বব তাহলে মৃদু ঝাড়ি খেয়েই পার পাবে আজ।

বাসায় ফিরার সময় একটু যেন দুশ্চিন্তা পেয়ে বসল। তখন নাহয় সাথে কয়েকজন ছিল। এখন তো কেও সাহায্য করবেনা। আর যাই হোক, বড় হয়েছি। এবার নিজেকেই কথা বলতে হবে। তখন ছোট ছিলাম বলে মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছে। আজকে... হঠাৎ কিছুর সাথে ধাক্কা লাগল, সাথে কিছু একটা পতনের শব্দ।
“গেল গেল! গ্রিনহিলসে রাতকানা থাকতে পারে এটা ভাবা উচিত ছিল। এই ছেলে, স্লিপ ওয়াকিং করছিলে নাকি? ঘুম ভেঙ্গেছে?” লোকটি বলল। বব ধাতস্থ হয়ে দেখল নিচে একটি মোবাইল ফোন পড়ে আছে। লোকটি ফোন তুলে তুলে নিতে নিতে আবার জিজ্ঞেস করল,-“ তুমি বোবা না বধির?” বব জ্বলে উঠল। মনে মনে ভাবল, আরে! এ তো দেখি আমার চাচার মতই বদমাশ। যা তা বলেই চলেছে! “ রাস্তা তো যথেষ্ট চওড়া, আমার তো মনে হয় আপনি চোখে এতই কম দেখেন যে চওড়া রাস্তাকে সরু ভেবে সাইড ও নিতে পারেননি।” “এটা দেখেছ? আমি এটায় জরুরী কাজ করছিলাম। তুমি তো বেকার ছিলে। রাতকানা দেখেই সাইড নিতে পারো নি”-মোবাইল দেখিয়ে প্রশ্ন করল আগন্তুক। “মোবাইল ভাঙ্গে নি। এবারের যাত্রায় বেচে গেলে খোকা।” বলেই চলে গেল। বব মনে মনে আগন্তুককে কাল্পনিক মাইর দিতে দিতে বাসায় গেল।

বাসায় ঢুকে নিজের রুমে যাচ্ছে এমন সময় ফগ তাকে ডাকল। “আমি ঝামেলা, তাই না?”- ফগের প্রশ্ন। বব প্রস্তুত ছিল এর জবাব দেয়ার জন্য। কিন্তু বলতে যাবে তখনই আবার ফগ বলল- “ আরেকদিন বললে সেদিনই বের করে দিব। আর স্টেশনে গাড়ি করে পৌছিয়ে দিয়ে আসব না। তুই যেভাবে পারিস যাবি। এখন সরে যা” বব এত কম ঝাড়ি পাবে আশা করে নি। তবে মনে মনে একটু গর্ববোধ করল। এবার আর মারধোর করে নি। বড় হয়েছি দেখে আমাকে আর মারে নাই। হুমমম।

ডিনার টাইম। ফ্রাইড চিকেন, ম্যাশড পটেটোস উইথ গ্রেভি, সুইট কর্ন, সাথে লেমন জুস।

বব নীরবে খেতে বসল। ফগ আগেই তার খাবার নিজের প্লেটে তুলে নিয়েছে। বব নিজে সার্ভ করে নিল। ফ্রাইড চিকেন দিয়ে শুরু করল। চিকেন গুলো এত কালো কেন! মুখে দিয়েই চেহারা কুচকে ফেলল। কেমন অস্বাভাবিক পোড়া পোড়া লাগছে। চাচাকে নির্লিপ্তভাবে খেতে দেখে ভাবলো তারই সমস্যা বোধহয়। কিন্তু যতই খাচ্ছে স্বাদ বিশ্রী থেকে আরোও বিশ্রী হচ্ছে। কোনরকমে চিকেন শেষ করল। ম্যাশড পটেটো মুখে দিতেই স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে গেল। এতো ঝাল কেন! চোখে পানি এসে পড়লে ঝালে। “চাচা, খাবার এরকম কেন? তুমি কিছু টের পাচ্ছ না?”- ববের জিজ্ঞাসা। ফগ ভ্রু উঁচু করে বলল-“খেতে বসেও দুষ্টামি?” বব জোরে বলে উঠল-“খেয়ে দেখ আমার থেকে”। ম্যাশড পটেটো একটু নিয়ে খেল ফগ। “কই, ঠিকই তো আছে! তুই ছোট মানুষ তাই তোর বেশি ঝাল লাগছে”। এক চুমুক লেমোনেড খেয়ে বলল-“খাবার ফেলা যাবেনা। খেয়ে ফেল সব।” বব অনেক কষ্টে আবার ম্যাশড পটেটো মুখে দিল। কিন্তু ব্যার্থ হল খেতে। “ফ্রিজে রেখে দেই, পরে খাব”-বব বলল চাচাকে।

সুইট কর্ন খেয়ে শান্তি পেল। এটায় কোন ঝামেলা নেই। লেমোনেড হাতে নিল। একটানে অনেকটুকু খেয়ে ফেলল। এবার স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে ফেটে পড়তে চাইল। ওহ গড! এত টক! “চাচা, লেমোনেড খাচ্ছ কিভাবে? তুমি কি চিনি দাওনি?”-ববের প্রশ্ন। “তাই নাকি? দেইনি? সরি তাহলে। এখন দিয়ে নে।”-ফগ বলল।

চাচা কি তাহলে ইচ্ছা করে খাবারে ঝামেলা করেছে? কিন্তু তাহলে পটেটো খেলো কিভাবে? আমিই হয়ত অযথাই সন্দেহ করছি! চিনি মিশিয়ে লেমোনেড শেষ করে নিজের রুমে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর ববের ডাক পড়ল। “এদিকে আয় তো, ওয়ার্ডরোব টা সরাতে হবে। আমার একটা পেজ পিছনের চিপা দিয়ে পড়ে গেল।” দুইজনে মিলে ধরে সরানো শুরু করল। বব টেনে পেরে উঠতে পারছেনা। আসবাবপত্র তাহলে এতো ভারী। “হেই বব, টান দিচ্ছিস না কেন? তোকে কি অভিনয় করার জন্য ডেকেছি?” বব এবার সমস্ত মানসিক আর শারীরিক শক্তি একত্রিত করে দিল টান। আঙুল সাদা হয়ে গেল অথচ ওয়ার্ডরোব কয়েক ইঞ্চি সরল। বব হাতে শক্তি পাচ্ছেনা। কেমন অবশ অনুভব করল। কিছুক্ষণ ধরে টানাটানি করার পর পেজ দেখা গেল। ওটা তুলার পর ওয়ার্ডরোব আগের জায়গায় রাখতে গিয়ে ববকে আরো কসরত করতে হল। এমনিতেই শক্তি কম। ঠেলার শক্তিও পাচ্ছে না। দাঁতে দাঁত চেপে ঠেলে যখন জায়গামত বসাল তখন সে কুকুরের মত জিভ বের করে হাপাচ্ছে। “তুই এত দুর্বল ভাবিনি”-ফগের এই কথা যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত লাগল। “ব্যাটা মোটকা হাবা বলে কি! আমি দুর্বল! আমার জায়গায় থাকলে মুখ চালানোর শক্তিও পেত না।”

“ওহ, আজকে গাছগুলোতে পানি দেয়া হয় নি। চল।”

বাইরে এসে হোস পাইপ হাতে নিয়ে ফগ বলল-“পানির কল ছেড়ে দিয়ে আয়।”
বব কল ছাড়ল। খোলা জায়গায় বসে বুক ভরে শ্বাস নিল। বেশ হাপিয়ে গেছে। “এই বব, কল ঘুরানোর মত শক্তি পাচ্ছিস না?”-ফগের হাঁক। কি ব্যাপার! পানি ছাড়ার পরেও এই কথা বলে কেন! বব এসে কল ঘুরালো যাতে বেশি পরিমাণে পানি যায়। ওদিকে ফগ ববের কাছে এসে পড়েছে। “কিরে? পানি কই?”-ফগের প্রশ্ন। বব দেখল ফগ হোস পাইপের চাবি খুলে নাই। “চাচা, পাইপের চাবিটা খুল। তুমি তো আসলেই বোকা।” ওহ আচ্ছা বলেই পাইপটা একটু উপরে উঠিয়ে চাবিটা খুলে দিতে প্রচন্ড গতিতে পানি বের হয়ে ববকে প্রায় সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিল। ফগ হাসতে হাসতে বসে পড়ল। বলল-“আমাকে ঝামেলা বলার শাস্তি কেমন লাগল?”

বব এবার সব বুঝতে পারল। খাবারে আসলেই ঝামেলা করেছে চাচা, ওয়ার্ডরোব সে ইচ্ছে করেই টানা আর ঠেলার অভিনয় করেছে। সিংহভাগ সরানোর কাজ ববই করেছে। চাচা মাঝে মাঝে সাহায্য করেছে। আর হোস পাইপ এর চাবি ইচ্ছে করেই খুলে নাই যাতে ববকে ভিজাতে পারে। বব কি বলবে ভেবে পেল না। অম্লান বদনে নিজের রুমে চলে গেল কাপড় পাল্টাতে।

আজকে রাতে ফগের ভালো ঘুম হবে। ববের থেকে ম্যাশড পটেটো যেটুকু খেয়েছিল তা জিভে লাগতেই দেয়নি বললেই চলে। মুখে দিয়ে গিলে ফেলেছে আর চাবানোর ভান করেছে। যেটুকু ঝাল লেগেছে তা লেমোনেড দিয়ে মিটিয়ে ফেলেছে। আর, ওয়ার্ডরোবে অনেক ওজনের সেলাই মেশিন রেখে দিয়ে ববকে ডাকার আগে। তাই ববের এত কষ্ট হয়েছে। তাছাড়া সাহায্যের নামে অভিনয় তো ছিলই। আর পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়ার ঘটনা তো বর্ণনা করার কিছু নেই আর।
ফগ মানসিক প্রশান্তি নিয়ে ঘুমোতে গেল। মিশন সাক্সেস।
আচ্ছা ফগ, তুমি ঘুমোও। আগামী দিনগুলোর কথা ভুলে যেও না।

বিঃদ্রঃ- ইহা সম্পূর্ণই আমার নিজের লিখা। কেও কপি-পেস্ট করে নিজের নামে চালায় দিলে তার ইহকাল আর পরকাল দুটার ক্ষতিই কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×