somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বিচিত্র ট্র্যাজেডি

০২ রা জুন, ২০১১ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখার শুরু
পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পড়াশোনা থেকে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন। এটা আমার স্বভাব। পরীক্ষার পর পুনরায় পড়াশোনায় ফিরে আসাটা আমার জন্য মোটামুটি জটিল একটি ব্যাপার। প্রতিদিন সকালে উঠে চিন্তা করি আজকে অন্তত ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে। অথচ দিনশেষে দেখা যায় কিছুই হয় নি।
আজ সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ করে চমৎকার উৎসাহ পেলাম। ফিজিক্স বইটা নিয়ে এক দুই পৃষ্ঠা পড়ার চেষ্টা করছি। আবার পুরো বইটা উল্টেপাল্টে দেখছি। হঠাৎ করে বইয়ের একটি জায়গায় চোখ আটকে গেল। বইয়ের লাইনটা এরকম, "এই 1.4 Mo ভরের সীমাকেই চন্দ্রশেখর সীমা (Chandrasekhar Limit) বলে।" স্মৃতি হাতড়ানো শুরু করলাম। কোথাও এ কথাটুকু পড়েছি বলে মনে হতে লাগল।
যাই হোক, কোথায় এ ব্যাপারটা পড়েছি মনে করতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হতে হল বিশ্ব বিস্তৃত জালের কাছে। মানে ইন্টারনেটের কাছে। সামান্য ঘাটাঘাটি করলাম। কিছু পড়াশোনা করার চেষ্টা করলাম। নিজের পুরোনো ডায়েরী থেকে কিছু নোটও পেলাম। এবং শেষ পর্যন্ত খুব অদ্ভূত একটা ট্র্যাজেডির কথা জানতে পেরেছি। দু:খবোধ থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করছে।

দু'মেরুর দু'জন বিজ্ঞানী
এবার প্রসংগে চলে আসা যাক। প্রথমেই আমরা দুজন বিজ্ঞানী সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

প্রথমজনের নাম Sir Arthur Stanely Eddington (28th December 1882-22 November 1944). তিনি ছিলেন ইংলিশ জ্যোতিপদার্থবিদ (Astrophysicist) এবং কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির প্লুমিয়ান প্রফেসর। 'এডিংটন লিমিট', 'এডিংটন নাম্বার' এবং 'এডিংটন-ডাইরঅ্যাক নাম্বার' - এ তিনটা কাজের জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচত। রয়্যাল মেডেল (১৯২৮), স্মিথ'স প্রাইজ (১৯০৭), RAS gold medal (১৯২৪), Henry Draper Medal (১৯২৪), ব্রুস মেডেল (১৯২৪), Knights Bachelor (১৯৩০) এবং অর্ডার অফ মেরিট (১৯৩৮) পুরস্কার প্রাপ্তির সম্মান তিনি অর্জন করেন। মজার ব্যাপার হল, স্যার আলবার্ট আইনস্টাইনের Theory of Relativity নিয়ে কাজের জন্য এডিংটন বেশ বিখ্যাত ছিলেন। General Theory of Relativity (যেটি বোঝার জন্য অনেক উচ্চতর গণিতের প্রয়োজন হয়) বিষয়ে তার অনেকগুলো আর্টিকেল ইংরেজী ভাষাভাষী বিশ্বের কাছে এ তত্ত্বটিকে ছড়িয়ে দেয়। সে সময় যেসব বিজ্ঞানী Theory of Relativity নামক তত্ত্বটিকে চমৎকারভাবে গ্রহণ করতে পেরেছিল তাদের মধ্যে এডিংটন ছিলেন অন্যতম। (যতদূর মনে পড়ে- কারো কাছ থেকে শুনেছিলাম- এডিংটন নাকি Theory of Relativity আইনস্টাইনের থেকে ভালো বুঝতেন! যদিও এটার সত্যতা বিচার করা হয় নি।)

দ্বিতীয়জনের নাম Subrahmanyan Chandrasekhar (October 19, 1910 – August 21, 1995)। তাঁর খ্যাতি 'চন্দ্রশেখর লিমিট' এর জন্য। তিনিও জ্যোতিপদার্থবিদ (Astrophysicist) এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তাঁর সবচেয়ে বড় কীর্তি ১৯৮৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে William A Fowler নামক আরেকজন বিজ্ঞানীর সাথে যৌথভাবে নোবেল প্রাইজ অর্জন। এছাড়া তিনি পদ্ম ভূষণ (১৯৬৮), ন্যাশনাল মেডেল অফ সায়েন্স (১৯৬৬) এবং Copley Medal (১৯৮৪) পুরস্কার লাভ করেন। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো এবং ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন সময়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল।

শ্বেতবামন (White Dwarf)
আমরা লেখার একেবারে মূল অংশে প্রবেশের আগে নক্ষত্র সম্পর্কিত কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করব।
নক্ষত্রসমূহের নির্দিষ্ট গঠন রয়েছে। প্রতিটি নক্ষত্র মূলত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে তৈরি। নির্দিষ্ট করে বললে নক্ষত্রে হাইড্রোজেন গ্যাসের চারটি নিউক্লিয়াস পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে (ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে) একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস উৎপন্ন করে। হিলিয়াম নিউক্লিয়াসের যে ভর পাওয়া যায় তার পরিমাণ চারটি হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসের মোট ভরের তুলনায় কিছু কম হয়। আইনস্টাইনের E=mc^2 সূত্রানুযায়ী হারানো ভরটাই শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ শক্তি আলোক শক্তি হিসেবে নক্ষত্র পৃষ্ঠ থেকে নির্গত বা বিকিরিত হয়।
নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু বলে একটি বেশ চমৎকার ব্যাপার আছে। আমাদের সূর্যও এরকম একটি নক্ষত্র এবং এটিও জন্মের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী সূর্য এখন "যৌবন কাল" নামক দশায় আছে। আসল কথা হল মহাবিশ্বের অধিকাংশ নক্ষত্রই এখনো যৌবন কালেই রয়েছে। সূর্য মোটামুটি ৫০০ কোটি বছর ধরে এ অবস্থায় আছে এবং আরো ৬০০ কোটি বছর ধরে এ অবস্থাই বজায় রাখবে।

বৈজ্ঞানিক ধারণা অনুযায়ী প্রতিটি নক্ষত্র একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জন্ম লাভ করে এবং একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মৃত্যুবরণ করে। "সুপারনোভা (Supernova)" শব্দটা নিশ্চয়ই অনেকে শুনে থাকতে পারেন। সুপারনোভা (Supernova) বিস্ফোরণের পরই নক্ষত্র তার মূল অংশের ভরের উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট পরিণতি বরণ করে। কোন কোন নক্ষত্র "নিউট্রন তারকা (Neutron star)", আবার কোন কোন নক্ষত্র কৃষ্ণ গহ্বরে (Black hole) পরিণত হয়।
আমাদের মূল অালোচনায় নক্ষত্রের মৃত্যু- বিশেষ করে শ্বেত বামন বা White Dwarf নামক অন্তিম অবস্থাই বিবেচ্য। তারকার জন্ম-মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় গেলে এ লেখা শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই সরাসরি শ্বেত বামন নিয়ে আলোচনা করা যাক।

শ্বেত বামন বা White Dwarf হল নক্ষত্রের জীবনকালের শেষের দিকের অবস্থা। লোহিত দৈত্য বা Red Giant এর পরবর্তী দশাই হল শ্বেত বামন। নক্ষত্র তার জীবনকালের শেষের দিকে একটি বিেশষ পরিস্থিতি অর্জন করে। এসময় নক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা 10^7 কেলভিন পর্যন্ত পৌঁছায়। পূর্বের ফিউশন বিক্রিয়ার পরিবর্তে ভিন্ন একটি ফিউশনের আবির্ভাব ঘটে। তখন হিলিয়াম নিউক্লিয়াস পরিবর্তিত বা ভেঙে কার্বনে পরিণত হয়। এটার নাম দেওয়া হয়েছে "ট্রিপস আলফা রিঅ্যাকশন"। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি তারা আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে রেড জায়ান্ট বা লোহিত দৈত্যে পরিণত হয়। মজার ব্যাপার হল আমাদের সূর্যও ৬০০ কোটি বছর পর রেড জায়ান্টে পরিণত হবে! রেড জায়ান্ট অবস্থায় থাকাকালীন সূর্যের আকার এত বেশি পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে যে সৌর জগতের বেশ কিছু গ্রহকে গ্রাস করে ফেলবে!

একটি তারার জীবনকালের শেষদিকে তারার সমস্ত জ্বালানি শেষ হয়ে যেতে থাকে। তখন তারা নিজের ভরের কারণে সৃষ্ট মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে তীব্রভাবে সংকোচনশীল হয়ে ওঠে। তারপর এর আকার ছোট হতে থাকে। ছোট হতে হতে এটি প্রায় পৃথিবীর সমান আকারে পরিণত হয়। এ অবস্থাটাই হল শ্বেত বামন বা White Dwarf. এসময় এর ঘনত্ব বা Density'র পরিমাণ বৃদ্ধি পায় অনেক। তখন ঘনত্বের মান 10^9kg/m^3. অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে তারার ভরের মান হয় 1000000000 kg! এ পরিমাণটা যে কত বেশি সেটা অনুভব করা উচিত। ব্যাপারটিকে ছোট্ট একটি উপমার সাহায্যে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়- ধরা যাক, আমরা একটি চায়ের কাপে হোয়াইট ডোয়ার্ফ নিলাম। এর ফলে যে পরিমাণ ভর পাবো তার মান পঁচিশটির বেশি হাতির ভর থেকে কম না, বরং বেশিই হবে! ".....a white dwarf's mass is comparable to that of the Sun and its volume is comparable to that of the Earth...." অর্থাৎ, শ্বেত বামনের ভরকে সূর্যের সাথে তুলনা করা যায়, কিন্তু এর আয়তন পৃথিবীর সমতুল্য!
আমরা সাধারণ একটি নক্ষত্রের কথা বিবেচনা করতে পারি। সাধারণ দশায় একটি নক্ষত্রের ভর যদি বাড়ানো হয় তবে এর আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে। অথচ শ্বেত বামনের ক্ষেত্রে এ নিয়ম খাটে না কখনোই। বরং উল্টোটাই প্রযোজ্য। অর্থাৎ ভর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এর আয়তন হ্রাস পায়!
মোটামুটি এই হল শ্বেত বামন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কিছু কথা। লেখার প্রয়োজনে অতিরিক্ত কিছুর দরকার হলে আমরা যোগ করে দেব।

চন্দ্রশেখরের বিরোধিতা
নক্ষত্রের মৃত্যুর ক্ষেত্রে শ্বেতবামন সংক্রান্ত এ রকম ধারণা বিজ্ঞানীদের মাঝে বেশ কিছু সময় ধরে বিদ্যমান ছিল। অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা ধারণা করতেন যে সকল নক্ষত্রেরই শ্বেতবামন দশা বরণ করতে হবে। তারা বিশ্বাস করতেন, সকল নক্ষত্র জ্বালানী শেষ হয়ে গেলে এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধ সাধেন সুব্রাহ্মনিয়াম চন্দ্রশেখর নামক একজন তৎকালীন অখ্যাত তরুণ বিজ্ঞানী।
চন্দ্রশেখরের জীবনের দিকে তাকানো যাক। তাঁর জন্ম পাঞ্জাবের লাহোরে। ১৯২২-১৯২৫ এ বছরগুলোতে তিনি বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ১৯২৫ সালে চেন্নাইয়ের প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তাঁর বিষয় ছিল পদার্থবিজ্ঞান। ১৯৩০ সালের জুন মাসে স্নাতক শেষ করার পরপরই জুলাই মাসে সরকারের কাছ থেকে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য স্কলারশিপ পান। ট্রিনিটি কলেজের প্রফেসর R H Fowler এর রিসার্চ স্টুডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করার সময় থেকেই জ্যোতিপদার্থবিদ্যা সম্পর্কে তিনি বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মজার ব্যাপার হল, অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা জ্যোতিপদার্থবিদ্যার প্রতি তাঁর মাঝে যে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছিল, তার পেছনে অার্থার এডিংটনের ভূমিকা ছিল। জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞান নিয়ে এডিংটনের কিছু চমৎকার বই চন্দ্রশেখরকে বেশ উৎসাহিত করে। প্রকৃতপক্ষে একজন সুলেখক হিসেবে অার্থার এডিংটন সারা বিশ্বের বিজ্ঞান মনস্ক মানুষদের কাছে পরিচিত ছিলেন। Space, Time and Gravitation: An Outline of the General Relativity Theory (1920), The Mathematical Theory of Relativity (1923, 1952), Stars and Atoms (1926), The Internal Constitution of Stars (1926), The Nature of the Physical World (1928), Science and the Unseen World (1929), Why I Believe in God: Science and Religion, as a Scientist Sees It (1930), Relativity Theory of Proton and Electron (1936) ইত্যাদি তার অসাধারণ কিছু বই।‌
যাই হোক, শ্বেতবামন সংক্রান্ত তৎকালীন জ্যোতিপদার্থবিদদের ধারণায় হস্তক্ষেপ করেন চন্দ্রশেখর। কেমব্রিজে পি এইচ ডি করার সময় নক্ষত্রের মৃত্যু সংক্রান্ত গবেষণায় নিবিষ্ট হন এবং বিস্তৃত গবেষণা শেষে তিনি নক্ষত্রের ভাগ্য তথা শ্বেতবামন সম্পর্কে তার মতামত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, যেসকল নক্ষত্রের ভর সূর্যের (অামাদের নিকটতম নক্ষত্র) ভরের 1.4 গুেণর বেশি হবে, সে সকল নক্ষত্র কখনোই শ্বেতবামনে পরিণত হবে না। এটিই চন্দ্রশেখর সীমা বা Chandrasekhar Limit। সূর্যের ভরের 1.4 গুণ = 2.8*10^30 kg. একটু নিখুঁতভাবে দেখলে সূর্যের ভর = 1.98892*10^30 kg এবং এ ভরের 1.4 গুণ = 2.784488*10^30kg.

এডিংটনের প্রতি-আক্রমণ
কেমব্রিজের একজন তরুণ অখ্যাত বিজ্ঞানীর এ ধরনের স্পর্ধা এডিংটন সহ বেশ কয়েকজন বাঘা বাঘা ব্যক্তি সহ্য করতে পারেন নি। কারণ সে সময়কার বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের সবাই বিশ্বাস করতেন যে সব নক্ষত্রই শ্বেতবামনের পরিণতি বরণ করতে বাধ্য। তাই যখন চন্দ্রশেখর এসে হঠাৎ করে নতুন ধারণার অবতারণা করলেন, তখন স্বভাবতই এডিংটন ব্যাপারটিকে সুদৃষ্টিতে দেখলেন না।
শ্বেতবামন নিয়ে গবেষণার শেষ পর্যায়ে একদিন এডিংটনের সাথে চন্দ্রশেখর দেখা করেন। তিনি তাঁর গবেষণার ফলাফল এডিংটনকে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে এডিংটনের আচরণ চন্দ্রশেখরের জন্য কষ্টকর ছিল। চন্দ্রশেখর গাণিতিকভাবে কোন ভুল ত্রুটি ব্যতিতই প্রমাণ করেছিলেন যে, সূর্যের ভরের 1.4 গুণ বেশি ভর বিশিষ্ট নক্ষত্রদের ভাগ্যে শ্বেতবামন নামক পরিণতি নেই। কিন্তু এ ধরনের নক্ষত্রদের পরিণতি কি অর্থাৎ তারা শ্বেতবামনে পরিণত না হলে কিসে পরিণত হবে- এ প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারেন নি।
এডিংটন চন্দ্রশেখরকে ঠিক এই প্রশ্নই করেন। "সূর্যের চেয়ে 1.4 গুণ বেশি ভর বিশিষ্ট নক্ষত্রগুলো যদি শ্বেতবামনে পরিণত না হয় তাহলে তাদের অবস্থা কি হবে? তাদের ক্ষেত্রে পরিণতিটা কি?" চন্দ্রশেখর তখন এই প্রশ্নের জবাব দিতে অক্ষম ছিলেন। এ সুযোগটাই এডিংটন গ্রহণ করলেন। চন্দ্রশেখরের গাণিতিক ও পরীক্ষালব্ধ ফলাফল সঠিক হওয়া সত্ত্বেও এডিংটন ব্যাপারটিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেন। চন্দ্রশেখর বেশ হতাশ হলেও আশা ছাড়েন নি। তিনি তাঁর গবেষণার ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশের অপেক্ষা করলেন।

চূড়ান্ত অপমান
সময়টা ১৯৩৫ সালের ১১ জানুয়ারি। লন্ডনে Royal Astronomical Society'র রাজকীয় সদস্যদের সামনে চন্দ্রশেখর তার গবেষণার ফলাফল প্রকাশের চমৎকার সুযোগ পান। তিনি তাঁর নির্ভুল যুক্তি ও ব্যাখ্যার সাহায্যে চমৎকারভাবে শ্বেতবামন সংক্রান্ত নিজ তত্ত্ব প্রদান করেন। তাঁর শেষ কথা ছিল এরকম, "In my paper, I have finally showed you that a star having a mass of 1.4 times larger than the sun will never become a white dwarf. But to know what will happen to these stars, many doors of possibilities are open for future."
চন্দ্রশেখর জানতেন না যে ঐ সম্মেলনে তাঁর পরপরই এডিংটনের বক্তৃতার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আসলে এ কাজটি করা হয়েছিল এডিংটনেরই ইচ্ছায়। এডিংটন সম্মেলনের আগেরদিনই চন্দ্রশেখরের সাথে তাঁর গবেষণা নিয়ে কথা বলেন। অথচ নিজের বক্তৃতা নিয়ে একটি কথাও তিনি বলেন নি। এডিংটনের উপস্থাপিত নিবন্ধের নাম ছিল "Relativistic Degeneracy". প্রকৃতপক্ষে এডিংটনের এ কাজের উদ্দেশ্য ছিল চন্দ্রশেখরের গবেষণার অর্থহীনতা প্রমাণের চেষ্টা করা।
After his presentation, his hero Eddington stood up and ridiculed his paper without warning and said "The star has to go on radiating and radiating and contracting and contracting until, I suppose, it gets to a few kilometers radius, when gravity becomes strong enough to hold the radiation and the star can at last have peace."
বক্তৃতা মঞ্চে উঠে এডিংটন এ কথাগুলো বলেন। তাঁর মূল বক্তব্য ছিল "এমন কোন না কোন প্রাকৃতিক নিয়ম আছে যা নক্ষত্রদের এ ধরনের উদ্ভট আচরণ করার হাত থেকে বাঁচাবে।" প্রকৃতপক্ষে চন্দ্রশেখরের বক্তব্য ও ব্যাখ্যার পরিপূর্ণ যৌক্তিকতা থাকা সত্ত্বেও এডিংটন এর বিরোধিতা করেছিলেন এক ধরনের অহমিকা বোধ থেকে। ঐ সম্মেলনে এডিংটনের প্রতি-আক্রমণের পর অন্য সভ্যগণ চন্দ্রশেখরের গবেষণার পক্ষে কিছু বলার আর সাহস করেন নি। কারণ সে সময়ে এডিংটনের দাপট এতো বেশিই ছিল যে তাঁর বক্তব্যের বিরুদ্ধে যাওয়া যেকোন বিজ্ঞানীর জন্য মোটামুিট ঝুঁকিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ ছিল। ফলে পুরো রয়্যাল এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সামনে এডিংটনের কাছ থেকে চন্দ্রশেখর চূড়ান্ত অপমানের শিকার হন। এমনকি চন্দ্রশেখরের এরূপ কাজকে এডিংটন "নাক্ষত্রিক ভাঁড়ামি" হিসেবে অভিহিত করেন!

দুর্দশায় চন্দ্রশেখর
চন্দ্রশেখরের গবেষণা কর্মের বিরোধিতা করাটা অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ যেকোন নতুন ধারণার অবতারণা ঘটানোর শুরুই হয় কারো না কারো বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। কিন্তু এডিংটন চন্দ্রশেখরকে রয়্যাল এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সদস্যদের সামনে ভয়ানকভাবে অপদস্থ করলেন। চন্দ্রশেখরের প্রতিটি কাজকে অভিহিত করলেন ভাঁড়ামি হিসেবে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হলেন চন্দ্র। এডিংটনের মতো বিজ্ঞানীর কাছ থেকে এ ধরনের অাচরণের সম্মুখীন হওয়াটা তাঁর পক্ষে সহ্য করাটা প্রায় অসম্ভব ছিল। মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়লেন তিনি।
এ ঘটনাটি চন্দ্রশেখর পরবর্তীতে মূল্যায়ন করেছিলেন এভাবে- "I went there thinking that I was going to learn something new. But instead of this, Eddington made me a simple clown. I was destroyed. I was thinking whether I could continue my work. I returned Cambridge 1 o'clock at night....I remember, looking at the fireplace, I said....the world gets diminished like this...not because of any blast...rather because of silent tears...". (আমি সেখানে গিয়েছিলাম নতুন কিছু শিখবো বলে। কিন্তু তার পরিবর্তে এডিংটন আমাকে ভাঁড় বানিয়ে ছাড়লেন। আমি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভাবছিলাম আমি আর আমার কাজ চালিয়ে নিতে পারবো কি না। আমি কেমব্রিজে ফিরে আসি রাত একটায়।...আমার মনে পড়ে, ফায়ারপ্লেসের দিকে তাকিয়ে আমি বলেছিলাম- এভাবেই পৃথিবী ধ্বংস হয়....কোন বিস্ফোরণের কারণে নয়.....বরং নীরব অশ্রুতে।)

ফিরে পাওয়ার চেষ্টা
কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া ছাড়া চন্দ্রশেখরের কোন উপায় ছিল না। তিনি বেশ কিছুদিন ভয়ানক হতাশার মধ্যে কাটালেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে থাকা অবস্থায় যে এডিংটনকে গুরু হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন, যে এডিংটন তাঁর কাছে সবসময়কার নায়ক ছিল, সেই এডিংটনের কাছ থেকে বিচিত্রভাবে অপদস্থ হয়ে চন্দ্রশেখর নিজের প্রতি অাত্মবিশ্বাস হারাতে বসলেন। কিন্তু তাঁর এটুকু বিশ্বাস ছিল যে তাঁর গবেষণার ফলাফল সঠিক। অার এই নিশ্চয়তাই তাকে উঠে অাসতে সাহায্য করে।
অার্থার এডিংটন একাই যে চন্দ্রশেখরের বিরোধিতা করেছিলেন তা নয়। তাঁর সাথে অারেকজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তাঁর নাম Edward Arthur Milne (14 February 1896 – 21 September 1950)। বেশ বিখ্যাত জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী (Astrophysicist) এবং গণিতবিদ ছিলেন। ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে জন্ম। Victoria University of Manchester এবং University of Oxford কাজ করেছিলেন তিনি। প্রথম দিকে তাঁর কাজ ছিল Mathematical Astrophysics (গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যা) নিয়ে। তাঁর বিখ্যাত কাজ হল Relativity, Gravitation and World Structure. Expanding Universe বা সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব নিয়ে তাঁর নিজস্ব মডেল ছিল এবং আইনস্টাইনের বর্তমান আধুনিক মডেল থেকে এর বেশ ভিন্নতা দেখা যায়।
তাঁর ক্ষেত্রে চন্দ্রশেখরের বিরোধিতা করার যথেষ্ট কারণ ছিল। চন্দ্রশেখর বেশ পরিষ্কারভাবেই দেখিয়েছিলেন যে Milne এর বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক ধারণাই গোলমেলে এবং গ্রহণযোগ্যতা বর্জিত ছিল। স্বভাবতই এডিংটনের পাশাপাশি চন্দ্রশেখর Milne এর ক্ষোভের শিকার হন।
কেমব্রিজে চন্দ্রশেখরের পরবর্তী সময়গুলো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক চিন্তাভাবনা করে শেষ পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এডিংটনের দেশ তাঁর জন্য অাক্ষরিক অর্থেই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত তাঁর নতুন কর্মক্ষেত্র হয় ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি Theoretical Astrophysics এর সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। দু:খজনক হলেও সত্য এডিংটন ওখানেই থেমে যান নি। ১৯৩৬ সালের দিকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি বক্তৃতায় নিজ নীতি নিয়ে আলোচনার পর তিনি চন্দ্রশেখরের গবেষণা ফলাফলের নিন্দা করেন।

সাহায্যের হাত
প্রফেসর P A M Dirac (এডিংটনর সাথে যিনি এডিংটন-ডিরঅ্যাক নাম্বারের জন্য বিখ্যাত) এর উৎসাহে ১৯৩৩ সালে নিজের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার অংশ হিসেবে এক বছরের জন্য Institute of Theoretical Physics (Copenhagen) এ অতিবাহিত করেন। সেখানেই তাঁর সাথে বিখ্যাত বিজ্ঞানী Niels Bohr এর পরিচয় হয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে চন্দ্রশেখর Niels Bohr এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রোজেনফেল্ডকে চিঠি লিখেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল নিজ গবেষণার নির্ভুলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। পাশাপাশি তিনি বোরের মতামত এবং হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উল্লেখ্য, Niels Bohr (7 October 1885 – 18 November 1962) তাঁর সময়কার একজন অসাধারণ বিজ্ঞানীদের একজন। তাঁর জন্ম ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। মূলত পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি রসায়ন শাস্ত্রেও বেশ অবদান রেখে গিয়েছেন। তিনি Bohr Atomic Model, Sommerfeld-Bohr Theory, BKS Theory, Bohr- Einstein Debate, Complementarity ইত্যাদি অসংখ্য কাজের জন্য বিখ্যাত। তাঁর মূল প্রেরণা ছিল Ernest Rutherford (যিনি Rutherford Atomic Model প্রদান করেন)। ১৯২২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯২১ সালে বোর ড্যানিশ সরকার এবং কার্লসবার্গ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় Institute of Theoretical Physics প্রতিষ্ঠা করেন। পৃথিবীর অধিকাংশ সেরা তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানীরা (Theoretical Physicist) তাঁর এই ইনস্টিটিউটে কাজ করেছিলেন।
যাই হোক, রোজেনফেল্ড চন্দ্রশেখরকে চিঠির উত্তরে অত্যন্ত উৎসাহিত করেন। তাঁর চিঠির শেষের দিকের একটি কথা ছিল এরকম, "...Both Bohr and I can not understand anything of the speech of Eddington...." যথাযথ ব্যাখ্যার সাহায্যে রোজেনফেল্ড চন্দ্রশেখরকে বলেন যে তাঁর গবেষণা নির্ভুল। বরং ভুলটা এডিংটনেরই।
প্রসংগত, শ্বেতবামন সংক্রান্ত এ ধরনের আলোচনা বা ব্যাখ্যার একেবারে মূল বা গভীর ব্যাপারগুলো ছিল পলির বর্জন নীতি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, লরেঞ্জিয়ান রূপান্তর বা বিবর্তন, অপজাত ইলেকট্রন ব্যবস্থা, আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রভৃতি সংশ্লিষ্ট। মজার ব্যাপার হল, বিভিন্ন ঘটনার পর এক চিঠিতে বিজ্ঞানী Milne কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মৌলিক ধারণা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন! সময়টা ১৯৩৫ এর কাছাকাছি। অথচ এর অনেক আগেই কোয়ান্টাম মেকানিক্স চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানকে ওলট পালট করে দিয়ে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে জায়গা করে নিয়েছিল।

ফিরে আসা
বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের (চন্দ্রশেখর সহ) গবেষণা নির্দেশ করছিল যে মহাবিশ্বের যে কোন নক্ষত্র কোন না কোন সময় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সংকুচিত হতে হতে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পরিণত হবে। এডিংটনের মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যাপারটিকে উড়িয়ে দেন। এডিংটনের মূল কথা ছিল একটাই, "There is some natural law which will save stars" অর্থাৎ, এমন একটি প্রাকৃতিক নিয়ম অবশ্যই আছে যা নক্ষত্রকে বাঁচাবে।
পরবর্তীতে R H Fowler শ্বেতবামন নিয়ে কাজ শুরু করলে এডিংটন বেশ সন্তুষ্ট হন। কিন্তু পরবর্তীতে যখন চন্দ্রশেখর তাঁর সীমা প্রদান করেন প্রচন্ড মাত্রার ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর এ ক্ষোভের মূল্য দিতে হয় চন্দ্রশেখরকে। জীবনের থেকে দীর্ঘ সময় দিয়ে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়টা হয় চন্দ্রশেখরেরই। বোর-রোজেনফেল্ড-পলি'র মতো বিজ্ঞানীদের সমর্থন লাভ করার ফলে তিনি বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠেন। শিকাগোতে থাকাকালীন প্রকাশ করেন তাঁর সবচেয়ে অসাধারণ বই "An Introduction to the Study of Stellar Structure" (1939). এবং ধীরে ধীরে চন্দ্রশেখর স্বীকৃতি পেতে শুরু করেন। তাঁর এ বইটিই প্রমাণ করে জ্যোতিপদার্থবিদ্যার জগতে চন্দ্রশেখর নামে একটি নতুন জ্যোতিষ্কের আবির্ভাব হয়েছে। ১৯৪৪ সালে নির্বাচিত হন Fellow of the Royal Society. তারার গঠন নিয়ে কাজ করার জন্য ("....for his studies on the physical processes important to the structure and evolution of star....") ১৯৮৩ সালে William Alfred "Willy" Fowler (August 9, 1911 – March 14, 1995) নামক একজন আমেরিকান জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানীর সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। যদিও নোবেল দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাঁর প্রথম জীবনের কর্মকান্ড বিবেচনায় আনা হয়।

পারস্পরিক সম্পর্ক
বিস্ময়কর হলেও সত্য এডিংটন এবং চন্দ্রশেখরের পারস্পরিক ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালোই ছিল। বিশেষ করে চন্দ্রশেখর তাঁর নায়ককে সবসময় শ্রদ্ধা করেছেন। চন্দ্রশেখর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পরও এডিংটনের সাথে তাঁর বেশ যোগাযোগ হয়। এমনকি এডিংটনের মৃত্যুর পর বিভিন্ন সময়ে চন্দ্র তাঁর সম্পর্কে অকুন্ঠ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলেন। কখনোই এডিংটনকে কোন রূপ অপমান করার চেষ্টা তিনি করেন নি। ১৯৮২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের এক অনুষ্ঠানে (অনুষ্ঠানটি ছিল এডিংটনের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন) চন্দ্রশেখর "Eddington: The Most Distinguished Astrophysicist to His Time" শিরোনামে একটি চমৎকার বক্তৃতা দেন। এককথায় একজন বিজ্ঞানী হিসেবে অন্য একজন বিজ্ঞানীর প্রতি চন্দ্রশেখরের শ্রদ্ধাবোধের কোন অভাব ছিল না।

মূল্যায়ন
Arthur I Miller (বিখ্যাত লেখক এবং সাংবাদিক, Deciphering the Cosmic Number, Empire of the Stars, Einstein Picasso প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত বই) Empire of the Stars: Friendship, Obsession and Betrayal in the Quest for Black holes বইটি লিখেছেন চন্দ্রশেখর এবং এডিংটনের এই দ্বন্দ্ব নিয়ে। এ বইয়ে চমৎকারভাবে তিনি পুরো ঘটনাকে তুলে এনেছেন। বইটির কিছু কথা এরকম, "It is also the moving tale of one man’s struggle against the establishment – an episode that sheds light on what science is, how it works, and where it can go wrong. In this way it exposes the deep-seated prejudices that plague even the most rational minds. Indeed, it took the nuclear arms race to persuade scientists to revisit Chandra’s work from the 1930s, for the core of a hydrogen bomb resembles nothing so much as an exploding star. Only then did physicists realise the relevance, truth, and importance of Chandra’s work, which was finally awarded the Nobel Prize in 1983."

শেষ কথা
জীবনের শেষ দিকে চন্দ্রশেখর তাঁর কাজের স্বীকৃতি পান। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি জীবনের প্রায় চার দশক বঞ্চিত ছিলেন। বিচিত্র ট্র্যাজেডির শিকার না হলে চন্দ্রশেখর নিশ্চিতভাবেই জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানকে আরো অনেক সমৃদ্ধ করে যেতেন- এ কথা একবাক্যে স্বীকার করতে হয়। তিনি সাফল্য পেয়েছিলেন অনেক পরে। কিন্তু তাঁর কাজকে কখনোই পুরস্কার দিয়ে মূল্যায়ন করা যাবে না। কেবল বিজ্ঞানী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে তিনি যে মনুষ্যত্বের দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন তা নির্দ্বিধায় অতুলনীয়। নিজের চারপাশে সৃষ্টি হওয়া প্রতিকূল স্রোতকে আঁকড়ে ধরে চন্দ্র অবিরাম সংগ্রাম করে গিয়েছিলেন। অাত্মসম্মানবোধ ছিল তাঁর, কিন্তু কখনোই অাত্মাভিমান ছিল না। এ বৈশিষ্ট্যই এডিংটন থেকে তাঁকে সুস্পষ্টভাবে অালাদা করে দেয়।
কিছু সংযুক্তি
"The black holes of nature are the most perfect macroscopic objects there are in the universe: the only elements in their construction are our concepts of space and time."
Subrahmanyan Chandrasekhar
"Indeed, I would feel that an appreciation of the arts in a conscious, disciplined way might help one to do science better."
Subrahmanyan Chandrasekhar
"I am aware of the usefulness of science to society and of the benefits society derives from it ."
Subrahmanyan Chandrasekhar
"We are bits of stellar matter that got cold by accident, bits of a star gone wrong."
Sir Arthur Stanely Eddington
"I believe there are 15,747,724,136,275,002,577,605,653,961,181,555,468,044,717,914,527,116,709, 366,231,425,076,185,631,031,296 protons in the universe and the same number of electrons."
Sir Arthur Stanely Eddington
"We are all agreed that your theory is crazy. The question that divides us is whether it is crazy enough to have a chance of being correct."
Niels Bohr
Some Books by Subrahmanyam Chandrasekhar:
1) Introduction to the Study of Stellar Structure, 1939.
2) Principles of Stellar Dynamics, 1943.
3) Radiative Transfer, 1950.
4) Hydrodynamic and Hydromagnetic Stability, 1961.
5) The Mathematical Theory of Black Holes, 1983.
6) Eddington: The Most Distinguished Astrophysicist of His Time, 1983.
7) Truth and Beauty, 1987.
8) Newtons Principia for the Common Reader, 1995.
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×