সামনের গ্লাসটির দিকে এক
পলকে তাকিয়ে রয়েছি ।সিএনজির গ্লাসে বৃষ্টির
পানি মৃদু আওয়াজ তুলে পড়ছে অনবরত । গ্লাসের
উপর ফোটা ফোটা পানিবিন্দু
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এলোমেলো ভাবে ।
মাঝে মাঝে দু'এক ফোটা গড়িয়ে পড়েছে নিম্নের
দিকে । এক একটি ফোটা নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ার
সময় আরো কয়েক ফোটাকে সঙ্গী বানিয়ে নেয় ।
এভাবে সে এক ফোটাতে পরিণত হয়ে ঝরে পড়ে ।
গ্লাসটির ভিতর দিয়ে সামনের অংশ
স্বচ্ছভাবে দেখা যাচ্ছে না । একটু মুছে দিলে হয়ত
অস্বচ্ছতা দূর হয়ে সামনের রাস্তার
অংশটি প্রকাশ পেত, রাস্তা দেখা যেত আনায়েসে ।
গ্লাসের উপরে লাঠির মতো কালো একটি দন্ড
পড়ে আছে স্থির হয়ে । কিছু কিছু
ফোটা গড়িয়ে তার গায়ে পড়ছে, তারপর তার
গা বেড়িয়ে নিচের অংশ দিয়ে ঝরে যাচ্ছে অন্য
ফোটা গুলোর মতো ।
যাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ায় ড্রাইবার
সিএনজি ছাড়ছেন না ।আমি বসে বসে বৃষ্টির
পানি পড়ার দৃশ্য উপভোগ করছি ।শত শত,
এলোমেলো ভাবনা মাথায় ভর করছে ।
আজাইরা বসে থাকলে প্রায় মানুষকেই এই রকম
চিন্তা আক্রমণ করে ।আমার বেলায়ও ঠিক
তেমনি হল ।
সিএনজির পাশের পর্দার ফাক
দিয়ে বাহিরে দৃষ্টি ফেললাম । সবুজ গাছ
পালা গুলো দাঁড়িয়ে আছে স্থির মূর্তির মতো ।
বৃষ্টির পানির আভায় গাছ গুলোর সবুজের
লাবণ্যতা, সজিবতা মনে হয় আরো বহু
গুণে বেড়ে গেছে ।
রাস্তায় দূরের দিকে তাকালাম, বৃষ্টির
ফোটা কালো রাস্তার উপর পড়ছে অনবরত,
সৃষ্টি করছে অস্বচ্ছল, ঘোলা, সাদা স্তর,
দেখা যাচ্ছে শুধু বৃষ্টির ফোটার ছিটকানি ।
দেখতে ভালোই লাগছে ।
কানের মধ্যে রিনিঝিনি মৃদু শব্দ লাগছে ।
সিএনজির প্লাসটিকের ছাদের উপর বৃষ্টি পড়ার
শব্দ, বাহিরের বৃষ্টির শব্দ মিলে সৃষ্টি করছে এক
অন্য রকম রিনি রিনি আওয়াজ । যার মধুরতা বড়ই
গভীর ।
সিএনজি গর্জে উঠলো,
হালকা ঝাকুনি দিয়ে চলা শুরু করলো । দোকানপাট
পেরিয়ে দু'পাশে সবুজ গাছ পালা ছড়ানো রাস্তায়
চলে এসেছে । গাছ গুলোর সজিবতা মনে হয় যেন
বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে । সারা গ্লাসের উপর
সরুকালো দন্ডটি এপাশ ওপাশ করে আঁচর
দিয়ে যাচ্ছে । বৃষ্টির ফোটা গুলো আর স্থির
থাকতে পারছে না, এক সঙ্গে গড়িয়ে পড়ছে । উপর
থেকে বর্ষিত হয়ে আবার ফোটা তৈরি করার ব্যর্থ
চেষ্টা করছে, কিন্তু দন্ডের
আঘাতে টিকতে পারছে না ।
গ্লাসটির ভিতর দিয়ে এখন স্বচ্ছ ভাবে সামনের
রাস্তার দেখা যাচ্ছে, আগের মতোই ধূসর
সাদা আস্তর তৈরি করছে ।
গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে তার গন্তব্য পানে ।
মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছিটকা পর্দার ফাক
দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে, হুমড়ি খেয়ে যাত্রীর
গায়ে পড়ছে । বিরক্ত হচ্ছে, তবুও মেনে নিচ্ছে ।
বাজারের পর বাজার পেরিয়ে ছুটে চলছে তিন চাকার
জ্যান্ত গাড়িটি । এক সময় রাস্তার মাথায়
এসে থেমে গেল ।আমার গন্তব্য এসে গেছে ।
বাহিরে এখনো অঝোর ধারায়
বারিরধারা বয়ে যাচ্ছে ।
ভিতরে বসে ভাড়া মিটিয়ে দিলাম । ব্যাগ
কাঁদে নিয়ে বৃষ্টিতেই নেমে পড়লাম ।বৃষ্টির মৃদু
আঘাত গায়ে লাগছে । মাথা গুজাবার জন্য
হাটা দিলাম । একটা চা দোকানের বারান্দায় ঠাঁই
মিললো । আমাদের মতো আরো অনেকেই
মাথা ঢাকলো । জীবনের ঘূর্ণমান সময়ের জীবিকার
টানে তারা এখানে, তবে গন্তব্য হয়ত অনেক দূরে,
কিন্তু বৃষ্টি তাদের থামিয়ে দিল ।
এই সুযোগে কেউ কেউ আলাপ করছে ,
আমি চুপচাপ বসে বসে বৃষ্টি দেখছি, আর মানুষ
গুলোর ছুটাছুটি দেখছি । সম্মুখের
কালো রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে ছুটে যাচ্ছ বিশাল
বিশাল যাত্রীবাহী বাস ।
মানুষ গুলোর ছুটাছুটিতেই ডুবে গেলাম ।
চা দোকানটা খোলা থাকলে এখান থেকে গরম গরম
লাল চা যেত । বৃষ্টির এই শীতলতায় চা খেলে হয়ত
বেশ ফুরফুরে লাগতো ।
আধা ঘন্ট পেরিয়ে গেল বৃষ্টি থামার নামগন্ধও
নেই, আর এভাবে থাকা যায় না । নেমে পড়লাম
বৃষ্টি ভেজা রাস্তায়, বৃষ্টি লাগছে পুরা দেহে ।
শীতলতা চেয়ে যাচ্ছে সারা দেহে । উঁচু নিচু রাস্তার
মধ্যে পা ফেলতে এক রকম কষ্টই হচ্ছে, তাও
আবার আকাশের বারি বর্ষণ, এক রকম বিরক্তিকর
অবস্থা । ভিতরে ভিতরে মজাও লাগছে । এরকম
বৃষ্টিতে ভিজা কয়জনেরেই বা ভাগ্যে জোটে ।