somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে যারা তাদের ক্ষমা করা যায় না

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ ১৪ ডিসেম্বর। ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক দুদিন আগেই গভীর বেদনা নিয়ে আসে এই দিনটি—শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। শোকার্ত হূদয়ে আমরা স্মরণ করি জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, স্বাধীনতাসংগ্রামের সূচনা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যাঁদের আমরা হারিয়েছি: অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, নাজমুল হক, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সুরকার আলতাফ মাহমুদ, সাহিত্যিক সেলিনা পারভীন, দানবীর শিক্ষানুরাগী রণদাপ্রসাদ সাহা, গোবিন্দচন্দ্র দেব প্রমুখ। আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছি তাঁদের পরিবার-পরিজনের প্রতি, দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে যাঁরা বয়ে চলেছেন স্বজন হারানোর গভীর বেদনা ও শোক।

পাকিস্তানের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদরের সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাঁদের হত্যা করে। এই দুটি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত। মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে, ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আলবদর বাহিনী আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আলবদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে। এই ১৪ ডিসেম্বরে ঘাতকেরা ধরে নিয়ে যায় শহীদুল্লা কায়সার, মুনীর চৌধুরীসহ আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক দিকপালকে। তাঁরা শহীদ হন এক দূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। রাজাকার, আলবদর ও হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যখন দেখল তাদের চরম বিপর্যয় আসন্ন, তারা দাঁড়িয়ে আছে পরাজয়ের কিনারে, তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যায় চোখ বেঁধে, সবাইকে হত্যা করে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে হত্যা করার পাশবিক আনন্দ লাভ করে।

পাকিস্তানী হানাদার এবং এ দেশীয় রাজাকাররা চেয়েছিল, সদ্য স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, বাংলাদেশ যেন মাথা তুলে দাড়াতে না পারে মেধা ও মননে । আসন্ন পরাজয়ের প্রতিহিংসা আগাম চরিতার্থ করতেও তারা বেছে নিয়েছিল ওই নৃশংস কৌশল, যা আসলে কাপুরুষতা। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ঘটনাটির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, দেশেরই কিছু মানুষ তা ঘটানোর ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। রাজাকার, আলবদর আর আলশামস বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া পাকিস্তানি হানাদারদের পক্ষে এতটা ব্যাপক এবং লক্ষ্যভেদী হত্যাযজ্ঞ চালানো সম্ভব ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুদ্ধিজীবীদের উঠিয়ে এনেছে; তুলে দিয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে, নিজেরাই হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করেছে।

কে না জানে সে একাত্তরের সময়ে জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডারদের নিয়ে গঠিত আলবদর বাহিনী, রাজাকার, আলশামসরা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পাকিস্তানি জান্তার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও জামায়াতের নেতারা মিলে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় আসন্ন বুঝতে পেরে স্বাধীন বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতা সৃষ্টির সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে ওই এক সপ্তাহে তারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

লেখক আনিসুল হক তাই বলছিলেন উনার লিখায় ঠিক এভাবেই- “স্বাধীনতা যখন দোরগোড়ায়, তখনই ঘাতকেরা তালিকা তৈরি করল। স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল, সবচেয়ে মেধাবী মানুষগুলোর তালিকা। শহীদুল্লা কায়সারের মতোন সাংবাদিক-সাহিত্যিক আমরা আর কোথায় পাব? কে আর আমাদের উপহার দিতে পারবেন সারেং বউ বাসংশপ্তক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সাহিত্যভারতী খেতাব পেয়েছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একই বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার পাশার কবিতা ছাপা হয়েছিল বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায়। রাইফেল রুটি আওরাত নামের যে উপন্যাসটি তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়েই লিখে রেখে চলে গেছেন, তার কি কোনো তুলনা হয়? কাকে ছেড়ে কার কথা বলব? এঁরা ছিলেন আমাদের সবচেয়ে মেধাবী মানুষ, সবচেয়ে যোগ্য পেশাজীবী। কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ লেখক, কেউ সাংবাদিক। আলতাফ মাহমুদের মতো সুরকার, গণসংগীতশিল্পী, যিনি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের সুর দিয়েছিলেন, তাঁর বিকল্প কোথায় পাব আমরা? সমস্ত আকাশ ভেঙেচুরে ছেনে তছনছ করেও কি আলতাফ মাহমুদের মতো একটা সংগীত-নক্ষত্র আমরা খুঁজে আনতে পারব? কোথায় বিকল্প পাব দানবীর শিক্ষানুরাগী রণদাপ্রসাদ সাহার? জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া ছবিটা যতবার দেখি, ততবার ভাবি, কী শূন্যতাই না সৃষ্টি হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে, যা আমরা আজও পূরণ করতে পারলাম না? হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফজলে রাব্বী—ওই গুণী চিকিৎসককে ১৫ ডিসেম্বরে যখন আলবদররা ধরে নিয়ে যায়, জিপে তিনি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গোবিন্দচন্দ্র দেব, ডা. আলীম চৌধুরী, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ডা. আজহারুল হক, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, হাজারো নাম। একাত্তরে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, আর তাঁদের মধ্যে অনেককেই ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তালিকা ধরে, ডিসেম্বরে, বাড়ি বাড়ি গেছে ঘাতকেরা, নাম ধরে ডেকেছে, চোখ বেঁধেছে এই শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোর, হাত বেঁধেছে পিঠমোড়া করে, তারপর জিপে তুলে নিয়ে গেছে রায়েরবাজার বা মিরপুরের জলার ধারে, গুলি করে মেরে রেখেছে। সবাই জানে, যারা ডেকে নিয়েছিল আমাদের জাতির এই সেরা মানুষগুলোকে, তারা বাঙালি ছিল, সবাই জানে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠনটির ক্যাডাররাই গঠন করেছিল আলবদর।“

আমাদের হাজারো বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী হারানোর ক্ষতি আমরা আজও অনুভব করি, সে অভাব পুরন হবার নয় জানি। আমাদের যে এতটা বছর লেগে যাচ্ছে উন্নতির সিঁড়িতে পা রাখতে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড তার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। আজ এই স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও দেখতে হয়, সেই সব বুদ্ধিজীবিদের যারা হত্যা করেছে। তাদের অনেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের সমাজে ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে, এমনকি মন্ত্রিত্বও পেয়েছে! নিজ মাতৃভুমির পতাকা উড়িয়েছিল বলে, যারা আমার দেশের নিরপরাধ মানূষদের নৃশংসভাবে হত্যা করে নগ্ন উল্লাস করেছিল। সে পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা আজও স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে সক্রিয়! এ আমাদের জন্য লজ্জার।

শুধুমাত্র বুদ্ধিজীবিদের হত্যার কারনে হলেও রাজাকার, আলবদরদের কখনোই ক্ষমা করবো না। এদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এ দেশে পরিপূর্ন শান্তি আসবে না। ঘৃনা প্রকাশ করছি সে কুলাঙ্গার রাজাকার, আলবদরদের প্রতি। শাস্তি চাই উপযুক্ত, সে সব দেশদ্রোহী কুলাঙ্গারদের অপরাধের।



বিভিন্ন তথ্য সুত্রঃ অন্তর্জাল
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×