somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোকা মানূষেরা সুন্দর পৃথিবী সাজানোর স্বপ্ন দেখে!

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘উপকারী গাছের ছাল থাকে না’ এই প্রবাদবাক্যটি অনেক দুর্দান্ত সত্য হয়ে উঠতে দেখেছি জীবনে অনেকবার। এ জীবনে কতটা মানুষের জন্য করেছেন, এই হিসেব যদি কেউ মেলাতে যান। মিলবে না নিশ্চিত। অংক কষে আর যাই হোক উপকার হয় না। তেমনি এক উপকারী গাছ হয়ে গিয়েছে শাহবাগ, যে গাছের ছাল-বাকরা তো আমরা আমজনতা প্রাণভরে নিয়েছিই। নিন্দুকেরা বলে- সরকারও নিয়েছে অটোমেটিক। সে ‘অটোমেটিক’ কিভাবে হল, তা একটু নিজে বুদ্ধিতেই বাইর করেন। আমার ঘণ্টা মার্কা বুদ্ধি দিয়া বিচার কইরা দেখছি- ছাল যতই কেউ নিয়ে শেষ করে দিক না কেন, উপকারী গাছের ছাল কিন্তু ঠিকই আবার হয়! এখন আর শাহবাগে তেজ নাই, শব্দ নাই, হাজার-লাখো জনতা নাই। নিন্দুকেরা বলে- আরে ভাই শাহবাগে তো লোকই নাই! গত পরশু শাহবাগ থেকে ফেরার পথে বলছিলাম- আর কি হবে এসে? এর চেয়ে ভালো গিয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিবাদ করি। উত্তরে আমার বিচক্ষণ বন্ধুটি বলল- তুমি যেন না আসো, তাই চায় তারা। আমি বললাম- আসবো।

শাহবাগে এখন প্রায়ই একটি পত্রিকা বেশ ঝকঝকে ছাপা এবং উপস্থাপন সম্পন্ন অবস্থায় মানুষের হাতে ফ্রি বিলচ্ছে প্রগতিশীল কিছু মানুষ। পত্রিকাটির নাম ‘রাস্তা’। নামটির নিচেই ‘একটি আন্দোলনের পত্রিকা’ শ্লোগানটি স্পষ্ট করে লিখা, পত্রিকাটি দেখলেই আপনার হাতে নিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে। এরই মাঝে গতকাল একজনের হাতে দূর থেকে দেখছিলাম সে পত্রিকারই একটি লিখার শিরোনাম- ‘বোকা মানুষেরা পৃথিবী সুন্দর করে সাজানোর স্বপ্ন দেখে’।

বাসা থেকে বের হচ্ছি, বড় আপাকে বললাম- দেখত আমাদের বাসায় ছেড়া জুতা, স্যান্ডেল আছি কি না। বলল- দেখি। বলতে দেরি কিন্তু করতে দেরি না এর মতন দ্রুততায় আমি নিজেই চলে গেলাম সে জায়গাটিতে। পুরনো জিনিষপত্র রাখার জায়গাটিতে দেখলাম বেশ কিছু স্যান্ডেল এবং দুই জোড়া কেডস পরে রয়েছে। আমি বললাম- আমি নিলাম। অবাক হয়ে আমার বোনটি চেয়ে রইলো আমার দিকে এবং বলল- ছেড়া জুতা তুই কি করবি? আমি বললাম- জুতা মারবো। বোন শঙ্কার দৃষ্টিতে বলল-কারে মারবি! আমি বললাম- যে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করবার চেষ্টা করবে। তাদের জন্য এই ছেড়া জুতা। একটি পলিথিনের ব্যাগে ভরে নিয়ে নিলাম। পেছনে আর তাকাইনি, তাকালে হয়ত দেখতাম- আমার বোনটি আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে অবাক হয়ে। আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, আমার হাতে একটি ছেড়া জুতার ব্যাগ! কিন্তু আমি গর্বিত অনুভব করছিলাম। এ জুতা আমার প্রিয় দেশটাকে ধংস করার পায়তারায় থাকা লোকজনের সঙ্গীদের জন্য বরাদ্দ। এরই মধ্যে আমি একজনের বাসায় গেলাম, সেখানে আপ্যায়নের চা খেতে খেতে বলে উঠলাম- আপনাদের বাসায় ছেড়া জুতা অথবা স্যান্ডেল আছে? উনারা সবাই অবাক! আমি বললাম হ্যাঁ, ছেড়া জুতা দরকার। কারণটা ব্যাখ্যা করলাম এক্কেবারে কয়েকটি লাইন বলেই। সাথে সাথে উনি নিজে উনার বাসা থেকে এক জোরা জুতো আমার ব্যাগে ভরে দিলেন। উনি পারতেন কিন্তু উনার কাজের মানুষটিকে দিয়ে আমার ব্যাগে ভরে দিতে, তা না করে নিজেই তা করলেন। আমিও সানন্দে গ্রহণ করলাম। গেলাম আমার কর্মস্থলে। তখনো আমার হাতে সে ভারি ব্যাগ। এরপর গেলাম মোতালেব প্লাজায় ব্যক্তিগত কাজে। এরমধ্যে তিনজন ব্যবসায়ীর সাথে বসে চা-টা এবং ছোট একটি আলোচনা পর্বও সেরে নিলাম। আমার হাতে ধরা তখনও ব্যাগটি। সে ব্যাগ এর জুতাগুলি নিয়ে শাহবাগের প্রতীকী প্রতিবাদ এর জায়গায় গিয়ে দেখি ব্যানারই নেই! কিন্তু আমি দমলাম না, সে নির্দিষ্ট জায়গায়ই তা রেখে দিলাম। আমি এবং আমার সে পরিচিত মানুষটির ঘৃণা, প্রতিবাদ জানিয়ে দিলাম নীরবে “যুদ্ধাপরাধী এবং জামাত-শিবির’ রক্ষাকারীদের প্রতি।

এরই মধ্যে শুনলাম, দেখলাম, জানলাম। সরকার আইন করেছে দেশ থেকে ইসলাম অবমাননাকারী, নাস্তিক ব্লগার নিধনের জন্য। কিন্তু মিথ্যা অপপ্রচার করে যে জামাত-শিবির চক্র ইসলামের অবমাননা করলো, মানুষ হত্যা করলো, মানুষকে হত্যা করাল, শহীদ মিনার ভাংচুর করলো, স্বাধীন বাংলাদেশেই পতাকা পুড়ালো, মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করলো, পুলিশকে পেটাল যারা, পুলিশের কবজি উড়ালো যারা, পুলিশের মাথা থেঁতলে দিলো যারা, ককটেল ফুটালো যারা, রেললাইন উপরে ফেলে মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্র করলো যারা,স্বাধীন বাংলাদেশে লুট-তরাজ করলো যারা, আগুন দিয়ে রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিগত সম্পদ যারা ঔদ্ধত্ব নিয়ে জ্বালিয়ে দিলো। আরও অনেক অনেক অনেক অপরাধের যারা অপরাধী, তাদেরকে ধরার জন্য আমাদের মাননীয় সরকারের দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা যখন না দেখি। তখন আমার জুজুর ভয়, সত্যি হয়ে উঠেছে মনে হয়। এক চোখা দৈত্যের কথাও মনে আসে। এ দেশে যারা দেশের কথা বলে, এ দেশে যারা প্রগতিশীলতার কথা বলে, এ দেশে যারা দুর্নীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, আঁতাতের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তাদের টুটি চেপে ধরে নিজ ফায়দা হয়ত হাসিল করা যায় মাননীয় ক্ষমতাবান কিছু সময়ের জন্য। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

এমন যেন না হয় যে, উপকারী গাছের ছাল তো ছাল, গোড়াই কেটে দেয়া হয়। তাহলে মাননীয় আপনার রোগ হলে সারানোর পথ্যও পাওয়া না যেতেই পারে। উপকারী গাছ বাচিয়ে রাখতে হয়।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×