somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোঃ খুরশীদ আলম
যারা ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ ( আল কুরআন)“সত্য ও সুন্দরকে ভালবাসি, অন্যায়- অবহেলা দেখলে খারাপ লাগে, তাই ক্ষদ্র এ প্রয়াস “

ভাঙ্গন

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাঙ্গন
=== মোঃ খুরশীদ আলম



সুবোধ মেট্রিক এর গন্ডিটাও অতিক্রম করে নাই। সাত কেলাশের একজন ছাত্রীকে পাঠদান করিতে যায় তাহার গৃহে। হামেশাই যায়, বিষয়টা বড়ই অদ্ভুত। তাতে কি? খোদার দুনিয়ায় কতো অদ্ভুত কান্ড জন্ম দিয়া থাকে মানব সন্তান। ইহা হয়তোবা তাহারই অংশবিশেষ। সুবোধ ও ছখিনার পাঠ দেয়া-নেয়ার চক্করখানা সকলের নিকট সমান ঠেকে না। পাঠ গ্রহণ, পাঠ দান, তাহার মাঝে মন দেয়া-নেয়া। সে আজকাল হর হামেশাই ঘটিয়া থাকে।
এই বাড়ী;
ঐ বাড়ী;
আরো কতো বাড়ী।
ইহা শহর; এখানে কে কাহার খবর রাখে; মরণেরও সময় নাই এখানকার আদমগণের।
আবার, সকলেই একই কিসিমের তাহাও নহে। এতো ঘটনা-রটনার মাঝখানে কেহ কেহ চোখ-কান খোলা রাখিয়া নজরদারিও করে বটে।
দুনীয়ার সকলে চলে এক গতিতে;
আর ইহারা ?
সুবোধ- সখিনা যুগল চলে অন্য গতিতে । পরস্পর বিপরীতমুখী হইয়া ।
যাহা হউক,
ইদানিং সখিনা আর সুবোধের সখ্যতা পাঠ গ্রহণের বাইরে অতিক্রম করিয়াছে।
সুবোধের পিতার সহিত ছখিনার পিতার বন্ধুত্ব রহিয়াছে।
আর সেই অজুহাত ভারী পোক্ত ভাবেই কাজে লাগাইয়াছে সুবোধ ।
পশ্চিম আকাশে সূর্য্ ডুবিবামাত্রই ছখিনার গৃহে সুবোধের আগমন ।
পেশায় টেম্পু চালক সুবোধ, সন্ধ্যায় গাড়িখানা বন্ধ করিয়া নিত্যদিন ছখিনার গৃহে হাজিরা দিতে মরিয়া হইয়া উঠে।
আজ আমলকি;
কাল আমড়া-কামরাঙ্গা;
কোন কোন দিন বই-খাতা, পেন্সিল ইত্যাদি লইয়া আসে ।
খালি হাতে বড়ই বেমানান মনে হয় ।
রাত্রী ৭ টা;
রাত্রী ৮ টা;
রাত্রী ৯ টা অতিক্রম করিয়া ১২ টাও ছাড়াইয়া যায়; অথচ তাহাদের পাঠচক্র শেষ পরিণতি পায় না ।
স্বল্প বেতনের সরকারী রেলওয়ে কর্মচারী সখিনার পিতৃদেব সংসারের ঝুট-ঝামেলা লইয়া ব্যস্ত।
তাহার আরো ১টি কন্যা এবং ৩টি পুত্র সন্তান রহিয়াছে ।
সকলকে লইয়া তাহার ভাবনার অন্তঃ নাই ।
একজনকে লইয়া অতি ভাবনা বাকী সকলের প্রতি অবিচার বলিয়াই তাহার মনে হয়।
অপরদিকে, লিকলিকে গড়নের মা-জননী সন্ধ্যা হইতে না হইতেই বিছানায় গা এলাইয়া দেন।
ঘরকন্যাসহ সকল ঝামেলা তাহাকেই মিটাইতে হয়; ইহা অতি দুসাধ্য কর্ম ।
ইহা ছাড়া আরো একটি বিশেষ কারণ এই যে, সুবোধেরে লইয়া তাহার অন্তরে হয়তো বিশেষ কোন ভাবনা ক্রিয়াশীল ছিল যাহার সত্যতা অচিরেই অক্ষিগোচর হইল।
ইহা হইবারই ছিল;
বাকযুদ্ধ;
তর্ক;
ঝগড়া আর পক্ষে বিপক্ষে ত্রুটির অন্বেষণ ;
ইহারা দোষ চাপাইলো উহাদের উপর ;
উহারা দোষ চাপাইলো ইহাদের উপর।
শেষতক, দুইখানা পরিবার উভয়ের চারিহাত এক করিয়া দিল, জনম জনম এক হইয়া রহিবার অঙ্গীকারে।
এক সাল,
দুই সাল,
ক্রমান্বয়ে বারটি সাল অতিক্রম করিয়া তিনটি সন্তানের জননী হইল ছখিনা।
চড়াই-উৎরাই কতো কি ঘটিল ।
এক্ষণে তিনটি সন্তানের মুখে অন্ন জুটাইতে ছখিনা তাহার ভ্রাতাগণের দ্বারস্থ হইতে হয়। প্রতিবেশীগণের তির্র্যক দৃষ্টি আর মুখভঙ্গিমা হজম করিয়া ছখিনা আজ পাথর হইয়া গেছে। কোন কথার বান তাহার মধ্যে প্রতিক্রীয়া করে না।
কি ঘটিয়াছিল এই বার বছরের মাঝখানে ?
তার আগে আরও একটু কহি;
তাহার তিন ভ্রাতা, ত্রিজনই অর্ধাঙ্গী জুটাইয়াছে, শয্যা আর কাহারো হাতরাইতে হয় না, কিংবা বালিশ লইয়া এপাড়-ওপাড় করিয়া চোখ ফুলাইতে হয় না। ভ্রাতাগণ যেই মুহূর্তে ঘোমটাওয়ালীগণ লইয়া বিভোর থাকে সেইক্ষণে ছখিনা অশ্রু বিসর্জন দিয়া বালিশ ভিজাইয়া স্মৃতি হাতরাইতে থাকে ।
পাঠকমনে প্রশ্নের উদ্রেগ ঘটিতে পারে যে,
সখিনা স্বামীর কি হইল ?
আমি অবিবেচক নই, পাঠক জিজ্ঞাসার রহস্য উন্মোচন ঘটানো কর্তব্য মনে করিলাম।
সখিনার স্বামী সুবোধ ত্যাগ করিয়াছে ।
প্রাণ নহে ;
জান নহে ;
সেতো সখিনারে।
সুবোধের মৃত্যু হইয়াছে ।
বজ্রপাতে নহে;
সর্পদংশনে নহে;
খোদাতায়ালার আসমানি গজব তাহার স্কন্ধে নাজিল হয় নাই ।
তাহার মনুষ্যত্ববোধ লাশের খাটে চড়িয়াছে কোন রাক্ষুষীর বিষাক্ত ছোবলে।
মাংস-হাড়ের খাচার ভিতর যাহার বসবাস তাহাইতো মানুষ ।
সেটি তো সুবোধ ত্যাগ করিয়াছে।
কচিকাচা তিনটি নিষ্পাপ শিশুর অবুঝ চাহনি যাহার মনে রেখাপাত ঘটায় না তাহাকে জিন্দা বলিয়া বিবেকের সাথে যুদ্ধ বাধাইবো কোন সাহসে ।
এক সাল পুর্বে তাহাদের পবিত্রতা ছিন্ন হইয়াছে। ছখিনার চোখের জল কিংবা তাহার সন্তানগণের ভাল-মন্দ নিয়া ভাবনার সময় সুবোধের নাই । তাহার ভাবনা কেবল সেই রমনীরে লইয়া যাহার বাহুডোরে সুবোধ বাধা পড়িয়াছে এক সাল পূর্বে। আর তাহার পূর্বের সংসারের একটি ছোট শিশু রহিয়াছে, তাকে নিয়া এখন সুবোধের উৎকৃষ্ঠ সময় কাটিয়া যায়। কতো ভঙ্গিমায় তাহারে সম্বোধন করে সুবোধ ;
বাবা ..
সোনা….
মনা…
ও লে লে লে …. ইয়ে …. ইয়ে । আহা ! আরো কতো কি ।
শুনিয়াছি, ঐ রমনী চাকুরী করে, মাস শেষে কিছু অর্থ সুবোধের হাতে তুলিয়া জাগ্রত বোধ-বিবেকের পরিচয় উপস্থাপন করে।
আর সুবোধ ?
কড়কড়ে নোটগুলো খচরা করে নতুন কোন কপোতীর সন্ধানে ।
এইদিকে,
তিনটি নিষ্পাপ মুখ, তাহাদের পিতার স্নেহের শুষ্কতায় শুকাইতে থাকে ।
শুকাইতে থাকে তাহাদের মন, তাহাদের মানসিকতা ।
সোমা,
নওশাদ,
কনা ।
এই ভাঙ্গনে কার কতটুকু দায় ?
সুবোধ-ছখিনার অপরিণত বয়সের সিদ্ধান্ত ?
রাক্ষুষে সেই নারী ? অথবা
ছখিনার পরিবারের চোখ বুঝে থাকা ।
পাঠক, এ সাওয়াল আপনাদিকের কাছে রাখিলাম।
১৪ আগষ্ট ২০১৬খ্রিঃ

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×