শিরোনামে প্রবাসীদের শব্দটা ব্যবহার করলেও আমি শুধু আমার চারপাশের কয়েকজনকে নিয়ে যা অভিজ্ঞতা করছি তা লিখতে চাই। এখানের সকল প্রবাসীরা কিভাবে রোজা-রমজান পালন করছে তা আমার জানার বাইরে।
সিঙ্গাপুরে অল্পকিছু বাংলাদেশী যারা আছেন তাদের মধ্যেও ধনী-গরীবের ব্যবধান ঠিক আমাদের দেশের মতো। কেউ আছেন যাদের মাসের আয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আর কেউ ৪০/৫০ হাজার টাকা। তবে পার্থক্য হলো কোটি হোক বা হাজার এখানে সবাইকে সময় ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিরসল পরিশ্রম করেই আয় করতে হয়। অর্থাৎ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে করতে আমরা সবাই প্রায় সব সময় ক্লান্ত থাকি। বেশীরভাগ পুরুষই এখানে রোজা রাখতে পারেন না বা রাখেন এই কারনে/অজুহাতে।
আমার ঘরে ফেরা হয় রাত্র ১২টা বা ১টা সময়। এর পর গোসল এবং রাতের খাওয়া। প্রায় ২টা/আড়াইটা বেজে যায়। এরপর দ্রুত ঘুমাতে যেতে হবে কারণ সেহেরীর জন্য ৫ টায় উঠতে হবে। ৫:৪৫ ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমানোর সুযোগ হয় কিন্তু অবশ্যই উঠতে হবে ৭টায় ছেলেকে স্কুলে পৌছাতে হবে। অতঃপর ৮টা বাজবে।
১০টায় কাজ শুরু করতে হলে আর ঘুমানোর সাহস কোথায়।
প্রতিদিনের এক ঘেমেতি মাঝে মধ্যে দেশপ্রেমের ছুতো নিয়ে টিভিতে ভালো বাংলা নাটক খুঁজি। রাতের খাওয়া শেষে বিছানা আর টিভি দুটোরই টান অনুভব হয় সমান ভাবে।
সবাইমিলে যদি টিভি দেখার সিদ্ধান্ত হয় তবে শর্ত থাকে অল্প সময়ে শেষ হয় এমন নাটক খু্ঁজে বের করতে হবে। দায়িত্ব আমারই ওপর পড়ে সব সময়। দীর্ধ সময়ের নাটক হলে ঘুম হারাম আর সকালে কাজে যাওয়া বন্ধ। সকালে কাজে যাওয়া বন্ধ মানে মাসের আয়ে ঘাটতি মাসের আয়ে ঘাটতি মানে দেশে টাকা পাঠানোর বাজেট কাটতি। সব মিলে দেশের আত্নীয় স্বজনের কষ্ট আর দেশ প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) কমে যাওয়া চিন্তিত এমনটায় রসিকতা করছিল গতকাল রাতে দীর্ধক্ষণ নাটকের দর্শকরা। রসিকতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে ব্লগের শিরোনামটি একটি দাবী সম্পর্কিত হওয়ার কথা। সেটি হলো টিভি নাটকের সময় নির্দিষ্ট করন এবং সেটি ১৫-২০ মিনিট হতে হবে নতুবা দেশ বিপুল অংকের প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) থেকে বঞ্চিত হবে।
আসল প্রসংগে আসি, আমি প্রায়ই ইফতার করি মসজিদে। ইফতারের সময়ের পূর্বে যথারীতি ছেলেকে ডাকি মসজিদে চলে আসার জন্য। আমার ছেলে শুধু রবিবারেই তৃপ্তিভরে ইফতার খেতে পারে। কারণ আমাদের এলাকার মসজিদটিতে প্রতিবছরই পুরা রমজান মাসের প্রত্যেক রবিবারের ইফতার বাংলাদেশীরাই স্পন্সর করে থাকে। সিঙ্গাপুরে সব মসজিদ-ই ইফতারের ব্যবস্থা করে তবে অন্য কোথাও বাংলাদেশীরা এভাবে confirm প্রতি রবিবার মসজিদ কমিটিকে বছরের পর বছর একটা Tradition বানিয়ে ফলতে পেরেছে শুনিনি। রবিবার ছাড়া অন্য দিনগুলোতে লোক সমাগম হয় ১৫০-২০০ জন। কিন্তু রবিবারের ইফতার যেন একটা বাঙালীর উৎসবে পরিণত হয়। ১০০০-১২০০ লোকের ইফতার তৈরী শুরু হয় মসজিদ প্রাঙ্গনেই। সকাল থেকেই রান্নার কাজ শুরু হয়। খাওয়ার মেন্যু থাকে অন্যান্য দিনের থেকে উন্নত।