somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার কাছে চিঠি

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রিয়,
বাবা। কেমন আছো? আশা করি বেশ ভালোই আছো। আমাদেরকে ছেড়ে এত দুরে থাকতে তোমার খারাপ লাগছে না? আমাদের কারও কথা কি তোমার মনে পড়ে না? আমার কথা, ভাইয়ার কথা, বুবুর কথা আর মায়ের কথা। আমাদের কারও কথা কি তোমার মনে পড়ে না বাবা? জানো বাবা! সেজো ভাইয়ার ফুটফুটে একটা ছেলে হয়েছে। দেখতে একদমই তোমার মত। ও সারাক্ষণই বলে আমি দাদুর কাছে যাব, আমি দাদুর কাছে যাব। কিন্তু, ওর অবুঝ মন তো বুঝতে চায় না, জানতেও চায় না যে ওর দাদু আমাদের সবার উপর ভীষণ রাগ করেছে। সেতো আর ফিরে আসবে না। বাবা তুমি যেদিন আমাদের সবার উপর রাগ করে চলে গেলে সেদিন আমি খুব কেঁদেছিলাম। আজও তোমার পথচেয়ে মা অঝোরে কেঁদে যায়। আজও আমি ভুল করে বলে উঠি "বাবা স্কুলে যাব টিফিনের টাকা দাও"। কিন্তু, পরমুহুর্তে সেই ভুলটা ধরিয়ে দেয় তোমার শুণ্য অবয়ব যা স্পর্শহীন হয়ে আমাদের চোখে ভেসে বেড়ায়। বাবা এখনও কি তুমি রাগ করে থাকবে আমাদের উপর? কি এমন অপরাধ করেছি যে তার জন্যে আমাদেরকে তুমি এত বড় শাস্তি দিলে? তোমার কি কষ্ট হয় না আমাকে, বুবুকে, ভাইয়াকে ছেড়ে থাকতে? তুমি হাসছ? ভাবছ বোকা ছেলে বলে কি। তাহলে, কেন? কেন তুমি আবার ফিরে আসছ আমাদের কাছে?
জানো বাবা! সেদিন বাজারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম যে, এক বাবা তার সন্তানকে নিয়ে বাজার করে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। লোকটির ডান হাতে বাজারের ব্যাগ আর বাম হাতে ছোট্ট ছেলেটির হাত আলতো করে ধরা ছিল। ঐটা দেখে জানো বাবা রাস্তাতেই কেঁদে ফেলেছিলাম। তুমিও তো ঠিক একইভাবে আমাকে বাজার থেকে। নিয়ে আসতে। তোমার একহাতে থাকত বাজারের ব্যাগ আর একহাতে থাকত আমার ছোট্ট হাতখানি। তোমার শতকষ্টেও আমার শত আবদার তুমি পূরণ করতে। মনে পড়ে, বাবা আমার নতুন স্কুলের নতুন ব্যাগ যেদিন তুমি আমাকে এনে দিয়েছিলে সেদিন কি খুশিই না হয়েছিলাম আমি। তোমার শত কষ্টও আমাদেরকে কখনও তুমি অনুভব করতে দাও নি। কিন্তু, সেই তুমিই আমাদেরকে রেখে চলে গেলে? জানো বাবা! সংসারে হাল ধরার মত কেউ না থাকলে সংসারটা হয়ে পড়ে অগোছালো। ঠিক খরস্রোতা নদীর মত। পানি যেদিকে যায়, নদীও তার পিছু পিছু সেদিকই অনুসরন করে। তুমি আবার হাসছ! ভাবছ আমি আর সেই আগের ছোট্ট খোকাটি আর নেই। তাই না? কিন্তু, সত্যি বলছি বাবা আজ তুমি নাই বলে পুরো সংসারটা অগোছালো,অপূর্ণ, অতৃপ্ত।
জানো বাবা! আমার কোন সাফল্যে এখন আর কেউ উৎসাহ দেয় না। যেন এটা হবারই কথা। কোন ব্যর্থতায় কেউ রাগ করে না, বকাও দেয় না। জানো বাবা! এখন না বৈশাখী মেলায় কেউ মেলা দেখাতে নিয়ে যায় না। কাউকে বলতেও পারিনা যে আমাকে মেলা দেখাতে নিয়ে চলো না বাবা। এখন না কেউ শীতের দিনে ঊষ্ণ রোদে মাদুর পেতে বলেনা খোকা বই নিয়ে পড়তে বয়। কেউ চায়ের দোকানে নিয়ে গিয়ে পিরিচে করে চা ঠান্ডা করে চা খেতে দেয় না। প্রচন্ড জ্বরে যখন জ্ঞান হারাবার উপক্রম, কষ্টে যখন থরথর করে কাঁপি তখন কেউ কপালে হাত দিয়ে বলে না, খোকা দ্যাখ তোর জন্য ঔষুধ এনেছি। ঔষুধটা খেলেই দেখবি জ্বর ব্যাটা পালিয়েছে। খাবার খেতে কষ্ট হলে তুমি কতই না কিছু আনতে তার কোন ইয়ত্তা ছিলনা। কিন্তু, এসবই এখন অতীত। মনে পড়ে বাবা! আমি যখন আট বছরের খোকা তখন একবার পড়ে গিয়ে আমার বাম হাতটা মচকে গিয়েছিল। তুমি আমাকে আঁড়কোলে করে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তার খানায় নিয়ে গিয়েছিলে। ডাক্তার যখন আমার হাত নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া শুরু করল তখন কি ঝাড়িটাই না দিয়েছিলে তুমি ডাক্তারকে। আজ প্রায় ছয়/সাত বছর হয়ে গেল তোমাকে দেখতে পাইনা, তোমাকে বাবা বলে ডাকতে পারি না। তোমার কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমুতেও পারিনা। বাবা বলে কারও কাছে কোন কিছুর আবদার করতে পারিনা। ঈদের নামায পড়ে এসে তোমার পায়ে সালাম করে বলতে পারিনা "বাবা ঈদ বকশিশ দাও। বাবা বলার তৃষ্ণায় বুকটা হাহাকার করে ওঠে তবুও তোমাকে বাবা বলে ডাকতে পারিনা।
জানো বাবা! আমি খুব ভাল একটা চাকরী পেয়েছি। যথেষ্ট বেতনও পাচ্ছি। জানি তুমি থাকলে অনেক খুশি হতে। দু'হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে ছলছল চোখে বলতে অনেক বড় হ খোকা, তুই আরও অনেক বড় হ। বাবা মাসের প্রথম বেতন দিয়ে মায়ের জন্যে একটা শাড়ি আর তোমার জন্যে পাঞ্জাবী ও লুঙ্গি কিনেছি। তুমি পড়বে না বাবা? আমার কর্মজীবনের প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে তোমার জন্যে কিনেছি। তুমি পড়বে না? নাকি এখনও অভিমান করে থাকবে আমাদের উপর? আমি তো তোমার ছোট আদরের খোকা এখনও আমার উপর রাগ করে থাকবে? প্রতিদিন যখন আকাশে অজস্র তারার মেলা বসে, তখন আমি নীল আকাশের ঐ অজস্র তারার মাঝে তোমাকে খুঁজে বেড়াই। একটা, দুইটা, তিনটা করে ঐ অজস্র তারার মাঝে তোমাকে খুঁজতে গিয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ি, ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তবুও থামেনা তোমাকে খুঁজে ফেরার প্রয়াস। অবশেষে কোন একসময়ে বুঝতে পারি আমার চোখ দুটি ভারী ও ঘন হয়ে আসছে। তার কিছুক্ষণ পরেই নামে অঝোর ধারার শ্রাবণ। জানি কোন নিশ্চয়তা নেই যে, ঐ অজস্র তারার মাঝে তোমাকে কোনদিন খুঁজে পাবোকিনা। তবুও প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঐ অজস্র তারার মেলায় তোমাকে প্রতিনিয়ত খুঁজে বেড়াই এই আশায় হয়ত কোন একদিন খুঁজে পাবো তোমায়।
আমি জানিনা আদৌ কোনদিন এই চিঠি তোমার কাছে পৌছে কীনা! আদৌ কোনদিন তুমি এই চিঠি পড়তে পারবা কীনা! তবুও লিখছি অজানা কোন এক ঠিকানার উদ্দেশ্যে যেখানে তুমি আছ। সৃষ্টিকর্তা হয়তবা কোন একভাবে, কোন এক মাধ্যমে এই চিঠি না হোক এই চিঠির মর্মাথ তোমার কাছে পৌছে দিবে। দেখছো! তোমার কথা মনে করলেই এমন হয়। চোখ দুটো ভারী ও ঝাপসা হয়ে যায়। এখনও তার ব্যতিক্রম হয় না। অনেক কিছুই লেখার ছিল যা এখনও লেখা হয়নি। চিঠি পাওয়ার পর দেরী না করে, আমাদের উপর অভিমান ভুলে জলদি চলে এসো বাবা। তখন সব, সব বলব তোমাকে। কিছুই বাদ দেবো না। তাই আর লিখলাম না। ভাল থেকো, নিজের খেয়াল রেখো। দুশ্চিন্তা একদমই করবে না। তোমার অপেক্ষায় রইলাম।

ইতি,
তোমার আদরের
ছোট খোকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×