somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরে নয়, বিয়ের আগেই যাচাই-বাছা !

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিয়ে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একত্র হওয়ার একটি আইনগত ও সামাজিক অনুমোদন।

যদিও প্রাথমিকভাবে একটি বায়োডাটার ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করি; অর্থাৎ ছবি দেখা বা সামনাসামনি দেখা, খোঁজখবর নেওয়া তারপর শেষমেশ সব কিছু ব্যাটে-বলে মিলে গেলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। পাত্র নির্বাচনকালে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া সম্ভব; তবে পুরোপুরি সঠিক কোনো মাপকাঠি নেই, যা আপনাকে সুন্দরভাবে নির্দেশ করে দেখাবে যে এই আপনার যোগ্য পাত্র। সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা হলো –

১. অভিভাবকরা অবশ্যই আপনার ভালো চান। আপনার পছন্দ-অপছন্দ, ভালো-মন্দ- সব কিছু তাঁদের জানা। অতএব তাঁরা সঠিক লোকই খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। তবে তাঁদের নির্বাচিত পাত্রকে নিজের যাচাই-বাছাই ছাড়া চোখ বন্ধ করে বিয়ে করাটাও বোকামি। অবশ্যই নিজে পরখ করার সময় তাঁদের কাছ থেকে আদবের সঙ্গে অনুমতি চেয়ে নেবেন। তাঁদের পছন্দ মনোনীত করলে পরবর্তী সময়ে যেকোনো সমস্যায় তাঁরা আপনার দায়িত্ব নেবেন। পাত্র নির্বাচনের দায়িত্ব অভিভাবক, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়- যার হাতেই থাকুক সমস্যা নেই, কেবল নিজে পরখ করে নেওয়ার বিষয়টি ভুলে যাবেন না।

২. পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে সাধারণত প্রথমে দর্শনধারী, তারপর গুণবিচারি লক্ষ করুন, মানুষটিকে চোখে দেখে কেমন লাগছে, শ্রবণে তাঁর কণ্ঠ, ভাষার মাধুর্য, হাঁটাচলা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আপনার মনমতো কি না। এরপর তাঁর সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত সাফল্য, প্রভাব-প্রতিপত্তি, খ্যাতি ও বিত্ত ইত্যাদি আপনার সন্তুষ্টির পর্যায়ে পড়ে কি না। তারপর লক্ষ করুন, পাত্রের গুণাগুণ, পছন্দ-অপছন্দ, আচার-ব্যবহার, বিবেক-বিবেচনা, মতাদর্শিক অবস্থান ইত্যাদি অন্তর্নিহিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যাঁকে এতক্ষণ দেখলেন, বুঝলেন, জানলেন, তিনি আপনার পাশাপাশি চললে কেমন হবে, সেটাই চিন্তা করার চেষ্টা করুন। দুজনের মধ্যকার বিষয়গুলোর মিল কতটা, কতটা অমিলের, দুজনে দুজনকে কতটা ছাড় দিতে পারবেন, পরস্পরের শর্তগুলো কতটা মেনে নিতে পারবেন, সেগুলোর পরিষ্কার ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন।

৩. নির্বাচিত পাত্রটির যোগ্যতার সীমা নেই, দেখতেও কম কিছু নয়। কিন্তু কথা বলার সময় তাঁর কণ্ঠে আঞ্চলিকতা চলে আসে। আবার সব গুণে গুণময় পাত্রটি আপনার সব নির্বাচনের মাপকাঠিতে সফলভাবে পাস করেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর স্ত্রীকে গৃহিণী হিসেবে চান, অর্থাৎ বিয়ের পর চাকরি করা যাবে না।

আরেকবার ভেবে দেখুন, লোকটি যোগ্যতায় যথেষ্ট, স্বভাব-চরিত্র সব কিছু ভালো, অর্থ-প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান- সব কিছু গ্রহণযোগ্য। সোজা কথায় ‘এ ক্লাস'; কিন্তু তিনি দেখতে ভালো নন। উলি্লখিত প্রত্যেকটি উদাহরণ দেখানো হয়েছে এজন্য যে আপনি পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে উলি্লখিত বিষয়গুলোর সম্মুখীন হবেন। তাই নিজের সঙ্গে আলোচনা করুন, বিশ্লেষণ করুন কতটা ছাড় দেওয়া সম্ভব। পাত্রের চেহারা বা আঞ্চলিক টান ছাড় দেওয়া সম্ভব, নাকি প্রচণ্ড বিরক্তির সৃষ্টি করবে? বিয়ের পর নিজেকে গৃহিণী হিসেবে দেখতে চান কি না। বিয়ের আগে নিজের শর্তগুলো পরিষ্কার জানিয়ে দেবেন। চাই তাতে যোগ্য পাত্র মিলুক বা না মিলুক।

৪. নারীর ক্ষেত্রে বিয়ের কারণ সামাজিক নিরাপত্তা, অভিভাবক বা নির্ভরশীল বন্ধু। ঠিকানা, সামাজিক পরিচয়। মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা, সুন্দর সংসারের স্বপ্ন ও অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা কমবেশি সব নারীর জন্যই প্রযোজ্য। আপনি আপনার বিয়ের কারণ অর্থাৎ প্রয়োজন কী সে বিষয়ে আগে পরিষ্কারভাবে ভাবুন। যাঁকে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন তাঁর কাছে আপনার প্রয়োজন কতটা পূর্ণতা পাবে, তাও ভাবুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন।

৫. অনেকে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে কিছু ছোট ছোট পরীক্ষা করেন। ছোট ছোট স্বাভাবিক কিছু পরীক্ষা নিয়ে পাত্রকে পরখ করে নিতে দোষ নেই; বরং আপনার নির্বাচন আরো সঠিক দিকে এগোতে পারে। তবে পরীক্ষা যেন এমন না হয়, যা কোনো খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

৬. একজন মানুষ সবার কাছে ভালো হয় না। অতএব তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্যও পাবেন। সেগুলো কতটা গুরুতর, বোঝার চেষ্টা করুন। পাত্রের ভূমিকা কী ছিল জানার চেষ্টা করুন।
আরও প্রেম সমাদান

৭. খোঁজখবর, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, দেখাশোনা সব কিছুর পরও অনেক বিষয় অজানা থেকে যায়। যেগুলো বিয়ের পর আস্তে আস্তে সামনে আসে। একজন মানুষের সঙ্গে, একটি পরিবারের সঙ্গে যখন বসবাস শুরু করবেন, একমাত্র তখনই সব কিছু জানা সম্ভব। তার আগে নয়। বাইরে থেকেও নয়। তাই ধরেই নিন, সব খোঁজখবর পরিপূর্ণভাবে নেওয়ার পরও আপনি ৫০ শতাংশ খবর নিতে পেরেছেন এবং বাকি ৫০ শতাংশ আপনার অগোচরেই থেকে যাবে। এই অজানা ৫০ শতাংশের অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার এতটুকুই করণীয় আছে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ইতিবাচক মনোভাব রাখা। আর নিজের শিক্ষা, বিবেক-বুদ্ধি, আচরণ, পারিবারিক শিক্ষার ওপর ভরসা রাখুন। অবশ্যই পারবেন।

৮. কোনো আকাশ-কুসুম চিন্তা বা পরিকল্পনা নিয়ে পাত্র নির্বাচনে এগোবেন না, তাতে কেবল ধাক্কাই খাবেন এবং অযথা সময় নষ্ট হবে। পাত্রকে তাঁর মতো করেই দেখবেন, বিচার করবেন। কেননা সব মানুষেরই রয়েছে নির্দিষ্ট গুণ ও দুর্বলতা। তুলনামূলক মনোভাব নিয়েও এগোবেন না। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী পাত্রের যোগ্যতা খুঁজবেন, তার বাইরে নয়। নিজের বিষয়ে কোনো সমস্যা অনুভব করলে (যেমন মানসিক) কোনো মনোবিজ্ঞানীর সঙ্গে আলোচনা করে নিতে পারেন।

৯. যদি সরাসরি জানতে চান পাত্র নির্বাচনে কোন বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার, তবে বলব, অবশ্যই তার মন-মানসিকতা, শিক্ষা ও জ্ঞান, আর্থিক সচ্ছলতা, পরিবারের প্রতি মনোভাব। এর বাইরে হাজার বিষয় আছে, সেগুলো যোগ বা বিয়োগ করেই হয়তো আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বলা বাহুল্য, কিছু দিনের দেখাশোনা ও জানার ওপর ভিত্তি করে সারা জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়তো একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তার পরও সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই সিদ্ধান্তের হাত ধরেই আসে সফল সংসারজীবন বা বিফলতা। তবে যা কিছুর যাচাই-বাছাই বিয়ের আগেই করুন, বিয়ে পরে নয়।
আরও প্রেম সমাদান
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×