"গ্যাস ভিল দিয়ে বের হয়ে পাশের চায়ের দোকানে বসে চা
খাচ্ছিলাম। একটা ছেলেকে লক্ষ্য করলাম,
আনুমানিক বয়স ১১ কি ১২ হবে, ছেলেটা পাশের এক
ভদ্রলোককে খুবই কাতরকন্ঠে বলছে-
"ক্ষুধা লাগছে ভাই কিছু দেননা খামু"
ভদ্রলোক ছেলেটার হাতে দুটাকা ধরিয়ে দিলো, যদিও
দুটাকা ক্ষুধা মিটানোর জন্য খুবই নগন্য,
তারপর ছেলেটা ওখান থেকে চলে গেলো।
খুব খারাপ লাগলো ছেলেটির জন্য পড়া - লেখার
বয়সে ছেলেটা পেটের দায়ে ভিক্ষা করে বেরাচ্ছে,
আমি দ্রুত চা শেষ করে ছেলেটার পিছু নিলাম,
জানিনা কেন পিছু নিলাম, ছেলেটা কিছুদূর গিয়ে
একটা ফাস্টফুড দোকানের সামনে দাড়িয়ে
ডিসপ্লে করা বার্গার আর সেন্ডুইচের দিকে
দূর থেকে তাকিয়ে আছে। আমার কাছে খুবই অদ্ভুত
লাগলো কারন মানুষ কতটা ক্ষুধার্ত হলে এভাবে
খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকে!
আমি আর দেরি না করে ছেলেটার দিকে এগোলাম।
আমি: কিরে খিদা লাগছে?
ছেলেটা: হ ভাইয়া। (কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিল)
আমি: তোর নাম কি? কই থাকস?
ছেলেটা: সাজ্জাদ, কালসি থাকি ভাই।
আমি: বার্গার খাবি?
সাজ্জাদ: না ভাই অনেক খিদা লাগছে ভাত খামু।
আমি আর কথা না বারিয়ে কাছের একটা
বিরিয়ানির দোকানে ওকে নিয়ে গেলাম, কিন্তু ও
ভাত ছাড়া কিছুই খাবেনা। ওর কথামত ভাতের হোটেলে
বসলাম জিজ্ঞেস করলাম, কি খাবি?
সাজ্জাদ: সবজি দিয়া ভাত খামু।
আমি: আর কি খাবি?
সাজ্জাদ: আর কিছু খামুনা।
আমি হোটেলের লোককে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
গরু মুরগির প্লেট কত? সাজ্জাদ আমাকে বললো,
ভাই ডিম দিয়া খামু।
আমি: তুই গরু, মুরগি খাস না?
সাজ্জাদ: না ভাই অডির দাম বেশি, ডিমের দাম কম।
আমি হেসে দিলাম,
জিজ্ঞেস করলাম গরু নাকি মুরগির মাংস বেশি পছন্দ?
সাজ্জাদ: মুরগি।
ভাত মুরগি আর ডাল অর্ডার করলাম।
আমি: তোরা কয় ভাই বোন? তোর বাপ মা কি করে?
সাজ্জাদ: বাপ আরেক বিয়া করছে, দুই ভাই, বড় ভাই
বিয়া কইরা আলাদা থাকে।
আমি: তোর বড় ভাই টাকা পয়সা দেয় না?
সাজ্জাদ: না।
আমি: তুই পুরবিতে কি করস?
সাজ্জাদ: আইজকা দুই দিন ধইরা বাসায় পাক করেনাই
হের লাইগা খাবার খুজতে আইছি।
আমি: তুই কাজ করস?
সাজ্জাদ: হ, কালশির একটা হোটেলে হারি পাতিল
পরিস্কার করি, ঈদের পরথিকা এহনো খুলে নাই হোটেল।
আমি: কত দেয়?
সাজ্জাদ: দুইবেলা খাওন দেয় খালি।
ইতোমধ্যে ওর খাবার চলে আসলো, ও একপ্লেটের বেশি
ভাত খাবে না, তাও জোর করে দুই প্লেট খাওয়ালাম।
সাজ্জাদ: কেউ আমারে কহনো এম্নে খাওয়ায়
নাই, বাপ মায়ও খাওয়ায় নাই। ভাইয়া আপনের নাম কি?
আমি শুনে সাথে সাথে ইমোশনাল হয়ে পরলাম,
নাম বললাম। জিজ্ঞেস করলাম, RC খাবি? বললো না ভাই,
বাসায় যাওনের টাকা নাই ৫ টা টাকা দিলে ভালো হয়।
হোটেল থেকে বের হলাম দুইজন দুইটা
আইস্ক্রিম খেলাম তারপর ওকে রিক্সায় উঠিয়ে
দিলাম। সাজ্জাদ যাওয়ার সময় পেছনে তাকালো
আর হাসি দিয়ে জোরে একটা সালাম দিলো,
খুশি হয়ে গেলাম। জীবনে কতটাকা কতদিকে উরায়ে ফেললাম মনেও নেই, কিন্তু আজ মাত্র ১২৭ টাকা খরচ
করে যা পেলাম তা কোটি টাকা দিয়েও সম্ভব না।
আমি জানি একবেলার খাবার দিয়ে আমার পক্ষে
সাজ্জাদের জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভবনা, জানিনা, পরের বেলা ও কোথায় খাবে!
(সংগৃহিত এবং পরিমার্জিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৩