somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝ রাতের চিঠি

২৭ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমু'দা,

কেমন আছিস?খুব অবাক হয়েছিস না?আরে আমিও এমনিই অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে আমি তোকে চিঠি লিখছি!হ্যা রে আমিই!এখন তোর কথা বল।তোর বউটা কেমন আছে রে?শুনেছি খুব নাকি লাজুক?!ইস্,তাহলে তো তোর খুব জ্বালা!হ্যারে তেমনি বোকা আছিস তুই,নাকি বুদ্ধি-সাদ্ধি কিছু হয়েছে?
ভাবছিস তোকে খুব মনে পড়ছে তাই চিঠি লিখতে বসেছি?মোটেও না।আমার বর টা যেন কেমন।শুয়েই ঘুম,ঘুমিয়েই নাক ডাকতে শুরু করে!সারাদিন কত কাজ করে,তাই ক্লান্ত থাকে। বড্ড গৃহস্থি কি না।এখনো নাক ডাকছে।তুই তো জানিসই ছোট খাটো শব্দেও আমার ঘুম হয়না।তাই ভাবলাম শুধু শুধু জেগে না থেকে তোকে একটা কিছু লিখি।কতদিন কোন যোগাযোগ নেই তোর সাথে।
খুব কি বুড়িয়ে গেছিস?মোচ রাখিস নি তো?ছি!ছি!।তাহলে আমার সামনে আসবিনা।তোর কি মনে আছে সেই দিন গুলো।কত্ত মজা ছিল, না রে?ইস কত বোকা ছিলি,মুখ ফুটে একটি বারের জন্যও কিছু বলিস নি।আমি ও একটা বোকার হদ্দ ছিলাম।কেন যে কিছুই বুঝলাম না।না বুঝেই ভালো হয়েছে।না হলে তোর মত একটা ভোম্বল রাম কে সারাজীবন সহ্য করতে হত।মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে হয়ত বলতি "চল পুকুর ঘাটে বসে চাঁদ দেখি"।ধ্যাত,এটা কোন কথা হল!আমার বর টা দেখ্ কত ভাল,৯টা ৫ টা অফিস করে সন্ধায় ফিরে এক কাপ চা,সাথে কুকিজ বিস্কিট।তারপর টেলিভিশন খুলে ২-৪টা নাটক বা সংবাদ।তারপর রাতে খাওয়া।যেদিন খুব ইচ্ছে হয়,বউয়ের সাথে আদিম খেলা তারপর দিব্যি ঘুম।সকালে আবার অফিস।ব্যাস!কি সুন্দর রুটিন মাফিক জীবন! আর তুই!!!!বড্ড বাঁচা বেঁচেছি বলা যায়।
কত কথাই যে মনে ভাসছে.......সেই যে শরতের সকালে পড়তে যেতাম ঘুম ঘুম চোখে।কি যেন নাম ছিল স্যার টার?! মনে পড়ছে না।তুই দৌঁড়ে আসতি আমাকে হেড়ো গলায় ডাকতে ডাকতে,তার পর পিঠ পিছে লুকানো কাগজ থেকে এক গাদা শিউলি ফুল আমার পায়ে ফেলে বলতি,"দেবীর অর্ঘ্য না দিলে আমার দিনটা কি করে ভালো যাবে" আমি হেসেই লুটোপুটি। "দুর,বোকা আমি কিভাবে দেবী হলাম,তোদের দেবী তো মাটি দিয়ে গড়া"!হি হি হি। তুই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতি "তুই বুঝবিনা,বুঁচি"। সত্যি বলছি,এই তোর মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি আমি কিছুই বুঝতাম ন।খোলা পায়ে হাঁটতে বড্ড ভাল্লাগতো আমার।শীতের দিনে যখন শিশির পড়ত ঘাসে,তখন।মনে আছে তোর, খুব ভোরে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে হাঁটতে বেরোতাম দু'জন?তুই আগে আগে হাঁটতি যদি পথে কোন কাঁটা থাকে এই ভেবে।কতদিন কত কাঁটা দেখে তুই সোৎসাহে উঠিয়ে বলেছিস "দেখেছিস,আমি না দেখলে তুই ঠিকই পায়ে ফুটিয়ে কান্না জুড়ে দিতি" আমি হেসেই মরি তোর পাগলামি দেখে।মনে আছে তোর,ঐ যে একবার রীতু দের বাগানে বরই পাড়তে গিয়ে পড়ে গিয়ে আমার হাত কাটলো তুই কেঁদেই ফেললি,রেগেও গেলি ভীষন।সেই বুঝি প্রথম রাগ করেছিলি আমার উপর। বারে, আমি বুঝি জানতাম আমার হাতে চোট লাগলে তোর বুকে লাগে?!বর্ষার সময় যখন কদম ফুল ফুটতো তুই স্কুল ফাঁকি দিয়ে আসতি আমাকে ফুল দিতে।ইস্,কাকাবাবু কত মার দিত তোকে!ঠিকই কোরত!সেই যে সেইদিন বকুল ফুলের মালা গেঁথে নিয়ে এলি।তারপর পায়ে পারালি আমার,মল বানিয়ে।আমি বল্লাম "দূর বোকা, মালা বুঝি কেউ পায়ে পরায়?" তুই হেসে বললি "দেবীর অঞ্জলী পায়েই দেয়,বুঝলি বুঁচি?" আমি না বুঝেই হেসেছিলাম।আমি কি করে জানবো ওটা বকুল মালা ছিল না,ছিল তোর হৃদয়! তুই কতদিন বলতি একদিন সীঁদূর পরতে।আমি বারবার বলতাম"যাহ্,আমি কি হিন্দু? মা দেখলে মারবে"! তুই মুখ নীচু করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তি। জানিস সেদিন শুনলাম এক হিন্দু আর মুসলমান খুব লড়াই করেছে।তুই আমি তো লড়িনি কোনদিন! হিন্দু রা মুসলমান দের মারে কেন?তুই তো মারিসনি কখনও আমাকে।মুসলমান রা হিন্দুদের কেন তাড়িয়ে দেয় ড়ে সমু'দা?তুই কতদিন আমার পাশে বসে থেকেছিস আমি তো তোকে তাড়িয়ে দেইনি!আমার বিয়ের দিন অমন ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছিলি কেন রে? আমি জানি,সব উপহারের ভিড়ে ঐ যে বাক্স ভর্তি সীঁদূর আর আলতা ওটা তোর দেয়া।ঠিক বলেছি না?
এখন আর আমার চাঁদ দেখতে ভালো লাগেনা।কি সেকেলে ঘটনা! ছি! ভাগ্যিস আমার বর টা তোর মত হয়নি।আমি কত ভালো আছি তুই ভাবতেই পারবিনা।আমার শাড়ি আর গহনার হিসেব দিতে গেলে রাতটাই পার হয়ে যাবে!ঘর ভর্তি বিদেশী ফার্নিচার।আরো কত্ত কি! তোর ঘরে গেলে সমাজ ছাড়া,ঘর ছাড়া ছন্নছাড়া জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে হত।খুব সুখে আছি আমি।সত্যি বলছি। তোকে খুশি করার জন্য না।মাসে মাসে নতুন শাড়ি আর সোনা চাঁদির গহনা পেলে কোন মেয়ে খুশি হবেনা বল্!তুই গোটাকতক কবিতা,চাঁদের জ্যোৎসা আর আজলা ভরে ভালবাসা ছাড়া কি দিতে পারতি আমায়?শুনলাম তোর মেয়েটার নাম রেখেছিস পারমিতা?আমার নামটা মেরে দিলি?চোর কোথাকার!আমাকে যদি এভাবে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সাহস তোর হত!
এই, তুই আমার এত কষ্টে লেখা চিঠিটায় চোখের জল ফেলে ভিজিয়ে দিলি?!ধ্যাত,কিচ্ছু হবেনা তোকে দিয়ে।কিচ্ছু না।কিছু হয়ও নি।
একবার আসবি সমু'দা আমাকে দেখতে?সত্যি বলছি মারবো না তোকে।খুব যত্ন করে খাওয়াবো তোকে।আসবি?!!
ভাল থাকিস রে সমু'দা।ঘুমাতে যাই।অনেক রাত হল।চোখ দুটো ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।দূর,কাঁদছি ভাবিস না কিন্তু।ঘুম লেগেছে তো চোখে,তাই।
উত্তর দিস সময় করে।

তোর বুঁচি
মিতা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১১:১২
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×