somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাবি রহস্য

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফনিকোরা খুব গরিব । যদিও পরিবারের সদস্য সংখ্যা খুব কম । স্ত্রী আর দুই ছেলে । ছেলে দুটি খুব ছোট । একজনের বয়স আট আর অন্যজনের দশ । সংসার ঠিকমত চলে না । ফনিকো দিনমজুরের কাজ করে । তার ওপর অনেকসময় কোন কাজ পাওয়া যায় না । সুতরাং অনেকটা সময় বেকার থাকতে হয় । কিন্তু ফনিকো খুবই সৎচরিত্রবান মানুষ । ঝগড়া-ফ্যাসাদ কিংবা কোন অপকর্মের মধ্যে সে নেই । নিয়মিত ধর্ম-কর্ম করে ।
এক প্রতিবেশি হঠাৎ ওর কাছে কিছু টাকা ধার নেওয়ার জন্য আসল । ফনিকো পরল মহামুশকিলে । প্রতিবেশিকে সে ফিরিয়ে দিতেও পারছে না আবার তার কাছে এত টাকাও নেই যে অনায়াসে ধার দিতে পারবে । যা আছে তা দিয়ে দিলে নিজেদের চলবে কি করে? কিন্তু প্রতিবেশিকে ফিরিয়ে দিতে পারল না ফনিকো । ওই প্রতিবেশির একটি মাত্র ছেলে । তার আবার ভীষণ অসুখ । প্রতিবেশির ব্যথায় কেঁদে উঠল ফনিকোর মন । নিজের যা কিছু টাকা পয়সা ছিল সব দিয়ে দিল প্রতিবেশিকে । নিজেদের হয়তো কিছুদিন কষ্ট হবে কিন্তু এই টাকায় যদি প্রতিবেশির ছেলে ভালো হয়ে ওঠে তাহলে ফনিকোর চেয়ে আর খুশি কে হবে ।
ফনিকো সেদিন বাজার করতে গেল । হাতে টাকা খুবই কম । তারই মধ্যে অল্প কিছু কিনে শেষে মাছ কেনার জন্য গেল । যেই টাকা আছে তা দিয়ে সুবিধাজনক মাছ কেনা সম্ভব নয় । তাই বড় কোন মাছের দিকেই সে দৃষ্টিপাত করল না । কিন্তু এক মাছ বিক্রেতা হঠাৎ তাকে ডাকল, ‘এই যে এই মাছটা নিন ।’ বেশ বড়সড় একটা মাছ । ফনিকো বুঝল এই মাছ কেনা তার পক্ষে সম্ভব নয় । তারপরও জিজ্ঞেস করল, ‘কত দাম ভাই?’
ফনিকোর ধারণা ছিল মাছ বিক্রেতা মাছটির উচ্চ দাম হাকাবে । কিন্তু ফনিকোর ধারণা মিথ্যে হল ।
বিক্রেতা মাছটার দাম খুম কমই বলল । তারপরও ফনিকো যখন নিতে চাইল না তখন দাম আরো কমাল । এবার ফনিকো নিয়ে নিল মাছটি । খুশি মনে বাড়ি ফিরল ফনিকো । যাই হোক অনেকদিন পর এতবড় মাছ খাবে তারা । ছেলে দুটিও এতবড় মাছ দেখে খুব খুশি হল । কিন্তু ফনিকোর স্ত্রী খুশি হতে পারল না । সে ঘোষণা করল যে মাছটি পচা । ফনিকো এবার বুঝল বিক্রেতা কেন এত কমদামে মাছটি দিল । ফনিকোর খুশি ভাবটা কমে গেল ।
রাতে যখন খেতে এল তখন তার স্ত্রী বলল,’ ওহ হ্যা তোমাকে তো বলাই হয়নি মাছ কাটার সময় এর মধ্যে একটি চাবি পেয়েছি ।
‘চাবি!’ অবাক হল ফনিকো ।‘কই দেখি তো ।’
‘রান্নাঘরে রেখে দিয়েছি । কাল সকালে দেখো ।’
ভাবতে ভাবতে খাও্য়া শেষ করল ফনিকো । মাছের পেটে চাবি ব্যাপারটা কেমন যেন ঠেকছে না ? এর মধ্যে কি কোন রহস্য আছে ? পরক্ষনেই ভাবনাটা মন থেকে উড়িয়ে দিল ফনিকো । একটি মাছের পেটে চাবি পাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। হয়তো কোন কিছুর সাথে খেয়ে ফেলেছে মাছটি । কিন্তু ভাবনাটা কিছুতেই গেল না মন থেকে । বারবার মনে উঁকি দিতে লাগল ভাবনাটি । রাতে যখন ঘুমিয়ে পরল তখন অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখল ফনিকো । সৌম্য চেহারার একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে । লোকটার চেহারায় অদ্ভুত এক দীপ্তি । হাসল লোকটা । হাতের মুঠো থেকে কিছু একটা ফনিকোর হাতের মুঠোয় রাখল । জিনিসটা কি দেখার আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল ফনিকোর । এই স্বপ্নের মানে কি? অদ্ভুত লোকটা কি দিল ওর হাতে ? ভাবতে লাগল ফনিকো । ভাবতে ভাবতে কোন কূল-কিনারা খুঁজে পেল না । কিছুক্ষন পর ‘পেয়েছি’ বলে চিৎকার করে উঠল ফনিকো । আচ্ছা ওই চাবির সাথে এই স্বপ্নের কোন মিল নেই তো ? হ্যা হ্যা ওই লোকটি নিশ্চয়ই আমার হাতে একটি চাবি দিয়েছিল । চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল ফনিকোর স্ত্রীর । ‘কি হয়েছে এমন করছ কেন?’
‘আচছা চাবিটা না রান্নাঘরে রেখেছিলে ওটা একটু এনে দিবে ?’
‘কেন চাবি দিয়ে আবার কি করবে?’
‘না এমনি । একটু এনে দাও না ।’
‘এই মাঝরাতে ওটি দিয়ে কি করবে ? থাক ওটা তো আর চলে যাচ্ছে না কাল সকালে বরং দেখো ।’
কিন্তু কথাটা মনে ধরল না ফনিকোর । সে এখনই আনতে চাইল চাবিটা । ফনিকোর কথায় অবাক হল তার স্ত্রী । কুপি জ্বালিয়ে রান্নাঘরে গেল সে । ফনিকোও গেল পিছু পিছু । ভালো করে চাবিটি দেখল সে । মাঝারি আকারের চাবিটা । অনেকটা পুরনো আমলের চাবির মত । তার উপর খোদাই করা আছে তিনটি সমান দাগ ।
‘কি এমন দেখছ অমন করে?’ ফনিকোর স্ত্রী জিজ্ঞেস করল ।
‘না এমনিই ।’ জবাব দিল ফনিকো ।
‘এমনিই ! আশ্চর্য আমি বুঝতে পারছিনা কেন সাধারণ একটি চাবি নিয়ে তুমি এত আগ্রহ দেখাচ্ছ ?’
ফনিকো একজায়গায় যতন করে রেখে দিল চাবিটা । কয়েকদিন চলে গেল চাবিটা নিয়ে ভেবে । কিন্তু চাবি রহস্যের কোন কূল-কিনারা করতে পারল না ফনিকো ।
দুই বছর পরের কথা । চাবিটার কথা একরকম ভুলেই গিয়েছিল ফনিকো । ফনিকোর ছেলের ভীষণ অসুখ । কিন্তু ফনিকোর হাতে একটি টাকাও নেই । সুতরাং ফনিকো রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করতে লাগল ।
সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যেবেলা নদীর ধার দিয়ে বাড়ি ফিরছিল ফনিকো । হঠাৎ দেখল নদীর পাড়ে একেবারে পানি ঘেষে কিছু একটা পরে রয়েছে । অনেকটা বাক্সের মত । জিনিসটা ধরে দেখল ফনিকো । বেশ ভারী । ধাতব পদার্থের তৈরি । পুরনো হলেও কিছুটা চকচক করছে । কি আছে এর মধ্যে?
বাক্সটি খুলতে চাইল ফনিকো । কিন্তু পারল না । শক্তভাবে আটকানো আছে এটি । এটা কি কারো কাছ থেকে হারানো গেছে ? ঠিক আছে কাল খোঁজখবর নেব ক্ষণ । এখন এটা বাড়িতে নিয়ে যাই । মনে মনে ভাবল ফনিকো ।
বাড়িতে যেতেই তার স্ত্রী অদ্ভুত বাক্সটি সম্পর্কে জানতে চাইল । ফনিকো সব খুলে বলল । তার স্ত্রী কিছুই বুঝতে পারল না । বলল, ‘এটার মধ্যে কি দামী কিছু আছে নাকি?’
‘যাই হোক এটা অন্যের সম্পদ । আসল মালিককে এটা ফেরত দিতে হবে ।’
রাতে যখন ঘুমোল তখন একটা স্বপ্ন দেখল ফনিকো । এক সৌম্য চেহারার লোক তার হাতে কিছু একটা দিল । ঘুম ভেঙ্গে গেল ফনিকোর । স্বপ্নটা কেমন জানি পরিচিত পরিচিত লাগছে । ভাবতে লাগল ফনিকো । কি দিল তাকে লোকটা? হঠাৎ দু’বছর আগের কথা মনে পড়ে গেল ফনিকোর । ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত হয়ে পরল সে । সেই চাবির সাথে বাক্সটির কোন সম্পর্ক নেই তো?
উঠে পরল ফনিকো । কুপি জ্বালিয়ে বাক্সটা ভালভাবে দেখতে লাগল । হঠাৎ মাটিতে ঢেকে থাকা একটা অংশ খুটতেই একটা ছিদ্র চোখে পরল । চাবির ছিদ্র । সেই পুরনো চাবিটা ছিদ্রে ঢুকাল ফনিকো । কয়েকবার মোচড় দিতেই খুলে গেল বাক্সটা । হাত দিয়ে ঢাকনাটা খুলে ভিতরে যা দেখল তাতে চোখ চকচক করে উঠল ফনিকোর ।


কিছু কথাঃ সৎথাকুন, সৎভাবে বাঁচুন । মানুষের বিপদে এগিয়ে আসুন , সাহায্য করুন নিজের যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকু দিয়েই । জেনে রাখুন আরো অনেক বেশি ফেরত পাবেন । হয়তো আজ নয়তোবা কাল । হয়তো পৃথিবীর মানুষের কাছে নয়তো তাঁর কাছে যিঁনি দূর অন্তরীক্ষে বসে ভাগ্যচাকার কলকাঠি নাড়ছেন ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×