মেসে থাকি । প্রায় প্রতি মাসেই একবার করে আমাদের মেসে হিজড়ারা আক্রমণ করে মানে টাকা তুলে । কিছুদিন আগেও আসছিলো । রুমের দরজা খোলা থাকার কারণে ডাইরেক্ট ঢুইকা শুরু করছে, ট্যাকা দে ট্যাকা দে.........
একটা বিষয়ে আমি সবসময় এদের ভয় পাই । বলা তো যায় না টাকা না দিলে কখন লুঙ্গি ধইরা টান দিবো নাইলে হেতেগো নিজের কাপড় খুইলা ফালাইবো । তাড়াতাড়ি উইঠা মানিব্যাগ থাইকা দশ টাকা দিয়া দিলাম । উফফ বাঁচলাম ।
কিন্তু আমার রুমমেট একটাও টাকা দিচ্ছে না । এইবার আমি এক হিজড়ার কানের কাছে গিয়া কইলাম আমি তো টাকা দিছি ওরা দেয় নাই ওদের কাছ থাইকা টাকা লন ।
ওরে কী মজারে .......... এইবার ওগোরে ধরছে ট্যাকা দে ট্যাকা দে......
লেও ঠ্যালা.......... আমি টাকা দিছি আর তোমরা দিবা না এইডা হইবো না ।
পুরা মেস গরম কইরালচে......
মোটামুটি সবার কাছ থেকেই টাকা নিছে । ঐ ট্যাকা দে নাইলে সব খুলুম । কী থ্রেটরে ভাই ।
আমি হিজড়াদের কখনো ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি না । উল্টো এরা যখন আসে কথা না বাড়িয়ে টাকা দিয়ে দেই তারপর একটু মজা করি । একদিন তো একজনের সাথে নাঁচ করছিলাম ।
যাই হোক একটা মজার ঘটনার কথা বলি । প্রেমিকারে নিয়া জিয়া উদ্যানে ডেটিংয়ে গেছিলাম । লেকের উপর ব্রীজটাতে দাড়িয়ে প্রেমিকারে ভালোবাসার কথা শুনাইতাছিলাম । এমন সময় পিছন থেকে দুইটা হিজড়া এসে বললো, কীরে প্রেম করতেছিস ? ঠিক আছে কর । কিন্তু আমাগোরে কিছু ট্যাকা দে চইলা যামু । নাইলে প্রেম করতে দিমু না ।
প্রেমিকা আমার খুব ডরাইছিলো । প্রেমিকারে বললাম ভয় পাওয়ার কিছু নাই । একটু ওয়েট ।
তারপর হিজড়া দুইটার সাথে পাচঁ মিনিটের মত কথা বললাম । হাসাহাসি করলাম । সবশেষ বিশ টাকা দিয়ে বললাম এইবার তো একটু প্রেম করতে দিবেন ?
ইনারা টাকা পেয়ে খুব খুশি হয়ে আমার গালে একটা টিপ দিয়া চইলা গেলো ।
সবশেষ একটা কথা বলি, এরা আমাদের সমাজেরই মানুষ । আপনি এদের সাথে খারাপ ব্যাবহার না করে যত হাসি ঠাট্টা করবেন এরাও আপনার সাথে তাই করবে শুধুমাত্র দশটা টাকা দিয়ে দিবেন ব্যাস ওরা খুশি । এরা খুব মজার মানুষ । এদের অন্য চোখে দেখতে নেই । এদের কাছ থেকেও আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে । একটা হিজড়া মনের ভিতর কত কষ্ট লুকিয়ে রেখে জীবনটা পার করে এটা এদের সাথে গভীর ভাবে কথা না বললে বুঝতে পারবেন না । তারপরেও এরা কত হাস্যজ্জ্বল । এত কষ্ট চেপে রেখে এরকম হাস্যজ্জ্বল জীবনই বা কজন কাটাতে পারে ?