somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুনটুনি ও তার সোনাপাখি................................................

২৬ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটার নাম টুনটুনি। গ্রামেই বেড়ে উঠা। নামের সাথে কথা আর কাজের বেশ মিল আছে। সারাক্ষণ টুনটুনি পাখির মতই চঞ্চল। কোথাও পাঁচ মিনিট স্থির হয়ে থাকতে পারেনা।

উচ্চতা পাঁচ ফিট। চিকনা একটা মেয়ে। টোকা দিলেই পরে যাবে এরকম চিকনা। ফর্সা শ্যামলা গায়ের রং। কণ্ঠটা বেশ মিষ্টি। চেহারাটা অনেককক সুইট কিন্তু কিউট না। ঠোটের ডান পাশে এটকা তিল আছে। তিলটার জন্য চেহারাটা আরো বেশি সুইট লাগে। চোখের দিকে তাকানো যায় না। যথেষ্ট লজ্জাবতী মেয়ে। চোখে চোখ পরলেই একটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে চোখটা সরিয়ে ফেলে।

প্রাইমারীর গন্ডি পার হয়ে হাই স্কুলে ভর্তি হলো। গ্রামের স্কুল হওয়াতে আশেপাশের প্রতিটা গ্রাম থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা ঐ স্কুলে এসে ভর্তি হয়। কিছুদিনের মধ্যেই তার চারটা বান্ধবী হয়ে গেল। চারজনের বাড়িই পাশের গ্রামে।

বান্ধবীদের সাথে কি ভাব। চারজনের সাথেই তার গলায় গলায় ভাব। স্কুলে গেলে শুধু ঐ চারজনের সাথেই কথাবার্তা বলে। ছেলেদের তেমন কেয়ার করে না। কিন্তু ছেলেদের সাথে ভাবও নেয় না। কেউ কথা বলতে আসলে কম কথায় উত্তর দেয়। তবে একটা ছেলের সাথে তার দা-কুমড়া সম্পর্ক। তারা একটা ব্যাচে কোচিং করতো। ঐ ব্যাচে ছেলেটাও পড়তো। স্যার কিছু বুঝানোর সময় ছেলেটা যদি কোন প্রশ্ন করতো ওমনি টুনটুনি ছেলের সাথে তর্ক করা শুরু করতো। এহ্ কোচিং করতে আসছে! এই সামান্য ব্যাপারটাই বুঝে না। এটা না বুঝার কি হলো? শুধু শুধু প্রশ্ন করে সময় নষ্ট। স্যার নেক্সট অংকটা বুঝান তো।
বেচারা কিছু বলতেও পারতো না। চুপচাপ থাকতো।

ওরা পাঁচ বান্ধবী ছিল চরম রকমের ফাজিল। কখনোই ক্লাসে পড়া শিখে আসতো না। স্যার প্রতিদিনই পাঁচটাকে দাড় করিয়ে রাখতেন। কোন কোন দিন কানও ধরাতেন। তারপরেও লজ্জা হত না। পরেরদিনও পড়া শিখে আসতো না। পড়া না শিখে আসার জন্য কান ধরা, বেঞ্চের উপর দাড়িয়ে থাকা এতে লজ্জার কি আছে। ভালোই তো লাগে। ক্লাসের সবার থেকে নিজেদের আলাদা মনে হয়।

এরকম করেই সবাই SSC পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলো। লেখপড়া না করে কি পরীক্ষায় ভালো করা যায়? হল থেকে বেরিয়ে কান্না কান্না অবস্থা সবটির। পরীক্ষা ভালো হয়নাই।

রেজাল্ট দিল। সবাই পাশ। কেউ আবার A গ্রেডও পাইছে। দারুণ ব্যাপার। টুনটুনিও A গ্রেড পাইছে।

HSC পরীক্ষাও তেমনই হলো। এদের পাঁচজনের মধ্যে একজন A+ পাইছে আর বাকিগুলা মনে হয় A পাইছে। এবারও টুনটুনি A পাইছে।

HSC পরীক্ষা দিয়েই সবাই ঢাকা চলে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করার জন্য। ভর্তি কোচিং করতেছে, একসাথে থাকতেছে, বাড়ি থেকে মাসে মাসে টাকাও অনতেছে কিন্তু কেউই পড়াশুনা একটুও করেনা। সারাক্ষণ ফাজলামির মধ্যে সময় কাটাচ্ছে।

একদিন বিকেল বেলায় টুনটুনি ঘুমাচ্ছে। একটা ফোন আসলো। ঘুম ঘুম ভাব নিয়েই ফোনটা রিসিভ করে। ওপাশ থেকে একটা ছেলে বলতেছে...

: হ্যালো, কেমন আছেন?

:ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

: জ্বি ভালো আছি। কি করতেছেন?

: বসে আছি। আপনি কে? (এতক্ষণে খেয়াল হল টুনটুনি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতেছে)।

: জ্বি আমাকে তো আপনি চিনবেন না। তবে আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলুন ভালো লাগবে।

টুনটুনিও কি মনে করে জানি অপরিচিত সেই ছেলেটার সাথে কথা বলেই যাচ্ছে। পূর্বে এমন কখনোই হয়নি। অপরিচিত ফোন হলে লাইন কেটে দিতো। কিন্তু এবার কেন জানি সে কথা বলতেছেই তো বলতেছে।

ছেলেটা কৌশলে টুনটুনির স্কুল জীবন নিয়ে কথা বলতেছে। এদিকে টুনটুনির তো খুবই ভালো লাগতেছে। কারণ টুনটুনির স্কুল জীবনটা ছিল সবচাইতে মজার। একটা পর্যায়ে টুনটুনি ছেলেটার পরিচয় জানার জন্য পাগল হয়ে যায়।

অনেক নাটকের পর ছেলেটা তার পরিচয় দিল। ছেলেটার নাম শুনার পর টুনটুনি আবেগ প্রায় কেঁদেই ফেলছে।

ছেলেটা কে ছিল? এটা কি সেই ছেলে যাকে সে কোচিংয়ে স্যারকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগই দিত না? নাকি অন্য কেউ?

কোচিংয়ের সেই ছেলে হলে তো টুনটুনি ছেলের ভয়েস শুনেই চিনতে পারতো। তাছাড়া ঐ ছেলের নাম শুনে এত আবেগাপ্লুত হওয়ার তো কিছু নেই। তাহলে ছেলেটা আসলে কে? যেকিনা তার অতীতের প্রায় সবকিছুই জানে..........
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ছেলেটা টুনটুনির সাথে ৭০ মিনিট এর মত কথা বলে। এই ৭০ মিনিট তাদের মাঝে কি কথা হয়েছিল?

বর্তমান নিয়ে তেমন কোন কথাই হয়নি। ছেলেটা ফোন দেওয়ার আগেই ভেবে নিয়েছিল যে, পরিচয় না দিয়ে টুনটুনির সাথে কথা বলতে হলে তাকে তার অতীত জীবনের ভালোলাগার পুরনো স্মৃতিগুলা মনে করিয়ে দিতে হবে। কারণ মানুষ যখন তার অতীতে কাটানো ভালো সময়গুলার কথা ভাবে তখন তার মন অজানা কোন রাজ্যে হারিয়ে যায়। আর তখন তাকে ফাঁকি দেওয়াটা খুব সহজ হয়।

ছেলেটার উদ্দেশ্য সফল। কিন্তু একটা সময়ে টুনটুনি বেঁকে বসলো। মেয়েদের ঘাড়ের একটা রগ এমনিতেই একটু তেরা। টুনটুনির ঘাড়ের রগও সোজা হওয়ার কথা না। এক ঘন্টা কথা বলার পর শুরু করল তেরামি। তাকে পরিচয় দিতেই হবে। পরিচয় না দিলে সে ছেলেটার ফোন কখনোই রিসিভ করবে না।

অবস্থা বেগতিক দেখে ছেলেটা পরিচয় দিল। ছেলের নাম শুনে তো টুনটুনি একদম টাসকি খাইয়া গেছে। প্রায় পনেরো সেকেন্ড কারো মুখে কোন কথা নাই। তারপর টুনটুনি ছেলেটার নাম নিয়ে অনেকটা কান্না কান্না কণ্ঠে বললো, তুই? তোর সাথে আবার কথা হবে আমি ভাবতেই পারিনি। এর কিছুক্ষণ পরেই ছেলেটার মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গেছে। ফোন অফ। এদিকে কারেন্টও নাই।

তাদের মাঝে আবার নতুন করে বন্ধুত্ব শুরু হলো। প্রতিদিনই ফোন কথা হয়, ম্যাসিজিং হয়। একদিন ফেসবুকের মধ্যামে ছেলেটার ছবি টুনটুনির বান্ধবির ফেসবুক আইডিতে দিল। টুনটুনি তখনও ফেসবুক ব্যাবহার করে না।

ছবি দেখার পর ছেলেটার প্রতি টুনটুনির প্রথম কথা, এই আমাকে তুমি করে বলো। আমি তো তোমার প্রেমে পরে গেছি। হা হা হা হা হা হা হা।

এই কথা শুনার পর ছেলেটার ভিতর দিয়ে অদ্ভুত রকমের এক বাতাস বয়ে গেল। প্রেমের আভাস।

ছেলেটার সাথে কথা বলতে টুনটুনির খুব ভালো লাগতো। একদিন ছেলের মোবাইলে ব্যালেন্স নাই। টুনটুনি ফোন দিলো...

: কইরে তুই কোন খবর নাই?

: দোস্ত আমার তো ব্যালেন্স নাই। রিচার্জ করে তোকে বিকলে ফোন দিবো। শুধু শুধু তর টাকা নষ্ট হচ্ছে।

: আমার টাকা গেলে তর কী? আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে তুই কথা বলবি ব্যাস।

: আচ্ছা বান্দরনী বল কী বলবি?

: না কিছু বলবো না। তুই তো একটা গরু। বাই ।

টুট টুট টুট ।

এভাবেই চলতে লাগলো। একদিন ছেলেটা SMS এর মাধ্যমে টুনটুনিকে প্রপোজ করে বসলো। কি মনে করে জানি টুনটুনিও তার ডাকে সাড়া দিয়ে ফেললো। শুরু হয়ে গেল দুজনের মধ্যে প্রেম নামক পাগলামি।

সারাদিন ফোনে কথা বলা, ম্যাসেজিং করা চলতেই আছে। প্রেমও বেশ চলতেছে।

ছেলেটা ফোনে পট পট করে বেশি কিন্তু টুনটুনির সামনে গেলেই একদম চুপ হয়ে যায়।

একদিন দুইজন দেখা করতে গেলো। ছেলেটার মুখ দিয়ে যেন কথাই বের হচ্ছে না। এই অবস্থা দেখে টুনটুনি বলতেছে, কি ব্যাপার? ফোনে তো ভালোই পট পট করতে পারো আর এখন এমন চুপ করে আছো কেন? আর এইযে চুলগুলা ছোট করলা কেন? তোমাকে ছোট চুলে মানায় না বুঝছো?

ছেলেটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো জ্বি আচ্ছা।

এরকম আরো কত যে মিষ্টি দুষ্টমি তাদের মাঝে চলে তারাই ভালো বলতে পারবে।

টুনটুনি ছেলেটাকে আদর করে সোনাপাখি ডাকে। ছেলেটা যতই রাগ করুক না কেন টুনটুনি যদি একবার আই লাভ ইউ সোনাপাখি বলে তাহলে মুহূর্তের মধ্যেই ছেলের সব রাগ চলে যায়।

কিন্তু টুনটুনির সোনাপাখিটা কে?

টুনটুনির সাথে প্রাইমারীতে একটা ছেলে পড়তো। পরবর্তীতে ছেলেটা ঢাকা চলে আসে এবং টুনটুনির সাথে কোন যোগাযোগ থাকে না। ছেলেটা দেখতে বেশ সুন্দরই ছিল। ছয় বছর পর ছেলেটা এক ফ্রেন্ডের কাছ থেকে টুনটুনির নাম্বার নিয়ে ফোন দেয়।

তারপর কি হইছে সেটা তো এতক্ষণে জেনেই গেছেন।

টুনটুনি আর তার সোনাপাখি এখন কেমন আছে? এক বাক্যে হয়তো বলে দিবেন তারা তো বেশ ভালোই থাকার কথা।

নাহ্ টুনটুনি আর তার সোনাপাখি মোটেও ভালো নেই। আতংক, একে অপরকে হারানোর ভয় এসবের মধ্য দিয়েই তাদের একেকটা দিন প্রতিবাহিত হচ্ছে।

কিন্তু কেন?

সব কেন এর উত্তর তো আর জানা যায় না। এই কেন এর উত্তরটাও না হয় অজানাই থাকুক।

ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসা.......
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×