মা'য়ের সাথে ছেলের সম্পর্কটা থাকে দারুণ ভালো। আর বাবার সাথে মেয়ের।
: আম্মা.....
- কী?
: গোসল করমু। লুঙ্গি কই?
- ড্রয়ারে আছে দেখ।
: পারতাম না। খুইজ্জা দেও ।
- কোন কাজটা তুই পারছ শুনি?
: হু কোন কাজ-ই পারি না। তুমি আছো কি জন্যে?
গোসল খানায় ঢুকার পর চিল্লানি দিয়া.....
: আম্মা.......
- আবার কী?
: টাওয়াল আনতে ভুইল্লা গেছি। টাওয়ালটা দেও।
- তর কোন জিনিসটা মনে থাকে একটু বলবি?
: তোমার মনে থাকলেই হবে। আম্মা.... সাবান শেষ। একটা সাবানও দিও.....
এখন পর্যন্ত আমার কোন কিছুর প্রয়োজন পরলে আম্মুর মাধ্যমে আব্বুকে জানাইছি। আব্বুর কাছে সরাসরি কোন কিছু চাওয়ার সাহস হয়নি। আব্বু কিন্ত তেমন রাগী মানুষ নন। তারপরেও কেন জানি ভয় করে। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই না। বেশিরভাগ ছেলেরাই বাবার কাছে কোন কিছু চাইতে ভয় পায়।
আমার আব্বুকে ভয় পাওয়ার একটা সম্ভাব্য কারণ আছে। তখন আমার বয়স চার বছর হবে। আমরা তখন গ্রামে থাকতাম। আব্বু প্রতি মাসে ঢাকা থেকে বাড়িতে যেতেন।
শীতের দিন। আব্বু আমার জন্য ঢাকা থেকে নতুন সোয়েটার কিনে আনছে। সকাল বেলা সোয়েটারটা পরলাম। সোয়েটারটা আমার মন মত হয়নি। আব্বু ঘুমাচ্ছে। বিছানার পাশে গিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করতেছি, মানুষের সোয়েটারগুলা কত সুন্দর, চেইন আছে, পকেটও আছে। আমার সোয়েটারে চেইনও নাই, পকেটও নাই। আমি এইডা পরতাম না।
কি হইছে আল্লাহ জানে । আব্বু ধ্রীম কইরা আমার গালে ঠাডাইয়া দিল একটা থাপ্পর (ডান গালে না বাম গালে দিছিলো খেয়াল নাই)।
থাপ্পর খাইয়া ঘুরান্টি দিয়া আলমারির সাথে বারি খাইছিলাম। সে কি ব্যাথা.....................
তখন আমাকে আব্বু বলে ডাকতেন। রাতে খাওয়ার সময় আমি না খেয়ে দাদীর সাথে গিয়ে শুয়ে আছি।
- আব্বু খাইছো?
: না........
- আসো খাবে। এই বলে আমার হাতে ধরলো।
আমি যেতে চাইলাম না। একটা ঝারা দিয়া হাতটা সরিয়ে নিলাম। পরে অবশ্য আব্বু কোলে করে নিয়ে গেছিলেন ভাত খাওয়ানোর জন্য।
SSC পরীক্ষার পর ভয়ে ভয়ে আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম, আম্মু আব্বুর হাতের মোবাইলটা আমাকে দিয়ে দিতে বলো। আব্বু এই মোবাইল দিয়ে কি করবে। ওনি কি এইটার কিছু বুঝে নাকি। কথা বলার জন্য একটা মোবাইল হলেই তো হয়।
আব্বু তখন NOKIA 2700 Classic ব্যাবহার করতো। প্রতিদিনই রাত নয়টার দিকে মোবাইলটা আমাকে দিয়ে বলতো...
- দুপুরে একজন ফোন দিছিলো। ঐ নাম্বারটা সেভ করে দে।
: ওকে দিচ্ছি।
- শুভ্র দেবের ঐ গানটা বের করে দে তো।
: আব্বা গানের নাম বলেন.... ঐ গান বললে তো আর গান বাইর করতে পারুম না।
- আরে ঐ যে, 'যখন রাত্রি নিঝুম নেই চোখে ঘুম' এই গানটা (অনেকটা সুর করে বলতেন)।
: এই নেন বের করে দিছি। শুনেন....
আব্বু গান শুনতেছে আর আমি এই দিকে আম্মুকে পটাতে ব্যস্ত যাতে আব্বুকে মোবাইলটা দেওয়ার কথা বলে।
দুইদিন পর মোবাইলটা পাইলাম। আমার খুশি দেখে কে? সারাদিন ফেসবুক গুতাগুতি করতে পারুম এই খুশিতেই আমি শেষ।
এখন পর্যন্ত প্রতিটা ঈদে আমার যেসব জামা-কাপড় কিনা হয়েছে সব আমার আম্মার পছন্দে।
: মেহেদী...
- জ্বি আম্মা....
: মার্কেটে চল তো বাবা...
- আম্মা তোমার পছন্দ মত নিয়ে এসো। প্যান্টের কোমড় ত্রিশ হলেই হবে।
: তর গেলে সমস্যাটা কী?
- বিশাল সমস্যা আম্মা। তোমাদের সাথে চার ঘন্টা মার্কেটে ঘুরাঘুরি করা আমার পক্ষে সম্ভব হলেও আমার পা'য়ের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব না।
কি আর করা আম্মু আন্তাজের উপরেই মার্কেট করে নিয়ে আসেন। অবশ্য আম্মুর পছন্দ ঠিক আছে। যাই আনুক না কেন পরার পর আমাকে বেশ মানায়।
আম্মুর সাথে কত যে মধুর স্মৃতি রয়েছে সব বলে শেষ করা যাবে না।
সর্বশেষ ক্লাস নাইনেও আমার শরীর ডলে গোসল করিয়ে দিছেন। এত জোরে জোরে শরীর ডলতেন আমি মা'গো মা'গো বলে চিল্লাইতাম।
গোসল করানোর সময় আম্মা এই কথাটা বেশি বলতেন, "খাডাইশ। শরীরে ময়লার স্তুপ পইরা রইছে। প্রতিদিন একটু ডলে গোসল করতে পারছ না?"
- না পারি না। ও মা চোখে সাবানের পানি গেছে ..... চোখে পানি দেও.............