somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা-ছেলের সম্পর্কটাই অন্যরকম...............................

০২ রা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা'য়ের সাথে ছেলের সম্পর্কটা থাকে দারুণ ভালো। আর বাবার সাথে মেয়ের।

: আম্মা.....

- কী?

: গোসল করমু। লুঙ্গি কই?

- ড্রয়ারে আছে দেখ।

: পারতাম না। খুইজ্জা দেও ।

- কোন কাজটা তুই পারছ শুনি?

: হু কোন কাজ-ই পারি না। তুমি আছো কি জন্যে?

গোসল খানায় ঢুকার পর চিল্লানি দিয়া.....

: আম্মা.......

- আবার কী?

: টাওয়াল আনতে ভুইল্লা গেছি। টাওয়ালটা দেও।

- তর কোন জিনিসটা মনে থাকে একটু বলবি?

: তোমার মনে থাকলেই হবে। আম্মা.... সাবান শেষ। একটা সাবানও দিও.....

এখন পর্যন্ত আমার কোন কিছুর প্রয়োজন পরলে আম্মুর মাধ্যমে আব্বুকে জানাইছি। আব্বুর কাছে সরাসরি কোন কিছু চাওয়ার সাহস হয়নি। আব্বু কিন্ত তেমন রাগী মানুষ নন। তারপরেও কেন জানি ভয় করে। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই না। বেশিরভাগ ছেলেরাই বাবার কাছে কোন কিছু চাইতে ভয় পায়।

আমার আব্বুকে ভয় পাওয়ার একটা সম্ভাব্য কারণ আছে। তখন আমার বয়স চার বছর হবে। আমরা তখন গ্রামে থাকতাম। আব্বু প্রতি মাসে ঢাকা থেকে বাড়িতে যেতেন।

শীতের দিন। আব্বু আমার জন্য ঢাকা থেকে নতুন সোয়েটার কিনে আনছে। সকাল বেলা সোয়েটারটা পরলাম। সোয়েটারটা আমার মন মত হয়নি। আব্বু ঘুমাচ্ছে। বিছানার পাশে গিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করতেছি, মানুষের সোয়েটারগুলা কত সুন্দর, চেইন আছে, পকেটও আছে। আমার সোয়েটারে চেইনও নাই, পকেটও নাই। আমি এইডা পরতাম না।

কি হইছে আল্লাহ জানে । আব্বু ধ্রীম কইরা আমার গালে ঠাডাইয়া দিল একটা থাপ্পর (ডান গালে না বাম গালে দিছিলো খেয়াল নাই)।

থাপ্পর খাইয়া ঘুরান্টি দিয়া আলমারির সাথে বারি খাইছিলাম। সে কি ব্যাথা.....................


তখন আমাকে আব্বু বলে ডাকতেন। রাতে খাওয়ার সময় আমি না খেয়ে দাদীর সাথে গিয়ে শুয়ে আছি।

- আব্বু খাইছো?

: না........

- আসো খাবে। এই বলে আমার হাতে ধরলো।

আমি যেতে চাইলাম না। একটা ঝারা দিয়া হাতটা সরিয়ে নিলাম। পরে অবশ্য আব্বু কোলে করে নিয়ে গেছিলেন ভাত খাওয়ানোর জন্য।

SSC পরীক্ষার পর ভয়ে ভয়ে আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম, আম্মু আব্বুর হাতের মোবাইলটা আমাকে দিয়ে দিতে বলো। আব্বু এই মোবাইল দিয়ে কি করবে। ওনি কি এইটার কিছু বুঝে নাকি। কথা বলার জন্য একটা মোবাইল হলেই তো হয়।

আব্বু তখন NOKIA 2700 Classic ব্যাবহার করতো। প্রতিদিনই রাত নয়টার দিকে মোবাইলটা আমাকে দিয়ে বলতো...

- দুপুরে একজন ফোন দিছিলো। ঐ নাম্বারটা সেভ করে দে।

: ওকে দিচ্ছি।

- শুভ্র দেবের ঐ গানটা বের করে দে তো।

: আব্বা গানের নাম বলেন.... ঐ গান বললে তো আর গান বাইর করতে পারুম না।

- আরে ঐ যে, 'যখন রাত্রি নিঝুম নেই চোখে ঘুম' এই গানটা (অনেকটা সুর করে বলতেন)।

: এই নেন বের করে দিছি। শুনেন....


আব্বু গান শুনতেছে আর আমি এই দিকে আম্মুকে পটাতে ব্যস্ত যাতে আব্বুকে মোবাইলটা দেওয়ার কথা বলে।


দুইদিন পর মোবাইলটা পাইলাম। আমার খুশি দেখে কে? সারাদিন ফেসবুক গুতাগুতি করতে পারুম এই খুশিতেই আমি শেষ।

এখন পর্যন্ত প্রতিটা ঈদে আমার যেসব জামা-কাপড় কিনা হয়েছে সব আমার আম্মার পছন্দে।

: মেহেদী...

- জ্বি আম্মা....

: মার্কেটে চল তো বাবা...

- আম্মা তোমার পছন্দ মত নিয়ে এসো। প্যান্টের কোমড় ত্রিশ হলেই হবে।

: তর গেলে সমস্যাটা কী?

- বিশাল সমস্যা আম্মা। তোমাদের সাথে চার ঘন্টা মার্কেটে ঘুরাঘুরি করা আমার পক্ষে সম্ভব হলেও আমার পা'য়ের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব না।


কি আর করা আম্মু আন্তাজের উপরেই মার্কেট করে নিয়ে আসেন। অবশ্য আম্মুর পছন্দ ঠিক আছে। যাই আনুক না কেন পরার পর আমাকে বেশ মানায়।



আম্মুর সাথে কত যে মধুর স্মৃতি রয়েছে সব বলে শেষ করা যাবে না।

সর্বশেষ ক্লাস নাইনেও আমার শরীর ডলে গোসল করিয়ে দিছেন। এত জোরে জোরে শরীর ডলতেন আমি মা'গো মা'গো বলে চিল্লাইতাম।

গোসল করানোর সময় আম্মা এই কথাটা বেশি বলতেন, "খাডাইশ। শরীরে ময়লার স্তুপ পইরা রইছে। প্রতিদিন একটু ডলে গোসল করতে পারছ না?"

- না পারি না। ও মা চোখে সাবানের পানি গেছে ..... চোখে পানি দেও.............
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×