somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গত রমজানে খেজুরের ব্যাবসা করছিলাম............................

৩০ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই প্রথম রমজান মাসে পরিবারের থেকে আলাদা। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকার কারণে এবার আর বাসায় যেতে পারিনি। একটুও ভালো লাগছে না। বাসায় থাকলে এতক্ষনে ক্ষুদা লাগছে ক্ষুদা লাগছে বলতে বলতে আম্মাজানের মেজাজ গরম করে ফেলতাম।

গত রমজানে তিনজন মিলে খেজুরের ব্যাবসা করছিলাম। রোজার প্রথম সপ্তাহ ক্লাস হইছিলো কিন্তু আমি ক্লাস না করেই ঢাকা চলে গেছিলাম।

এলাকার এক বড় ভাই, আমার এক ফ্রেন্ড আর আমি এই তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম রমজান মাসে খেজুরের ব্যাবসা করবো। সবাই নতুন। খেজুর কোথায় পাওয়া যাবে, কত টাকা দরে কিনতে পারবো এসব সম্পর্কে এলাকার কয়েকটা দোকানদারের কাছ থেকে জেনে নিলাম।

রমজান মাস শুরু হওয়ার একদিন আগে আমি আর ঐ বড় ভাই গেলাম বাদামতলির খেজুর পট্টিতে (খেজুরের পাইকারি আরত)। বিশাল বড় বড় খেজুরের পাইকারি দোকান। ধারণাও ছিল না এত বড় আরত সম্পর্কে। দুইজনের মাথা ঘুরাইতাছে। কেমনে কি করুম কিছুই বুঝতাছি না।

একটু পরে এক খেজুর ব্যাবসায়ীকে দেখলাম প্রতিটা দোকানে ঘুরে ঘুরে খেজুর দেখতেছে। আমরাও ঐ ব্যাবসায়ীর পিছু পিছু ঘুরতেছি। উদ্দেশ্য, ওনি কীভাবে দাম দর করে এটা দেখা।

প্রায় এক ঘন্টা পর দুইজন একটা দোকানে ঢুকলাম। খেজুর দেখতেছি, দাম জিজ্ঞাসা করতেছি কিন্তু কোনটা নিব বুঝতেছি না। কারণ খেজুর সম্পর্কে আমাদের তেমন কোন ধারণাই নেই।

প্রায় দশটা দোকান ঘুরার পর খেজুর কিনার সিদ্ধান্ত নিলাম। তিন রকমের খেজুর কিনলাম। যেহেতু নতুন তাই কমই কিনছি। একদিন বিক্রি করে দেখি কেমন চলে।

বড় ভাইয়াটার রুমে খেজুরগুলা রাখলাম। পাল্লা-বাটখারা এগুলা আগের দিন কিনে রাখছি। কাল সাকলেই দোকান দিব। তিনজন তখন এইটা নিয়া সেইরাম Excited ।

দোকান খোলার দায়িত্ব পরলো আমার উপর। ফ্রেন্ডের কলেজ খোলা আর ঐ ভাই আফিসে যাবে এবং দুপুরে বাসায় ফিরবে। সুতরাং আমাকেই দোকান খুলতে হবে।

জীবনেও দোকান খুলিনি। অনেক নার্ভাস। পাল্লা-বাটখারা, খেজুর নিয়ে কোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের সামনেই দোকান নিয়ে বসলাম (আমাদের কোয়ার্টার অফিস এরিয়ার ভিতরেই। সুতরাং এখানে অস্থায়ী অনেক দোকান প্রতিদিনই বসে।)।

বুক ধুক ধুক করতেছে। একটু একটু হাসিও পাচ্ছে। নিজের মধ্যে তখন দোকানদার দোকানদার ভাব কাজ করতেছে। দোকানে দাড়িয়ে আছি। অনেকেই খেজুরের দাম জিজ্ঞাসা করে চলে যাচ্ছে কিন্তু কিনতেছে না। একটু চিন্তিত। ও আল্লাহ সবাই খালি দাম জিগায় কিন্তু কিনে না কেন?

মনমরা হয়ে দাড়িয়ে আছি। যোহর নামাজের আযান দিছে। তখন এক ক্রেতা এসে খেজুরে দাম জিজ্ঞাস করলো...

- কিরে ভাতিজা, বড়ুই খেজুর (খেজুরের নাম) কয় টাকা কেজি?

: কাকা আপনের লাইগা মাত্র ১৮০ টাকা কেজি। কয় কেজি দিমু?

- ধূর! এই খেজুর এত টাকা না। কম রাখ। ১৫০ টাকা করে রাখ।

: কাকা পারুম না। কিনা আছে ১৪৫ টাকা কেজি। যান ১৭০ টাকা দিয়েন। কয় কেজি দিমু?

- আরে বেটা ১৫০ টাকাই রাখ। প্রথম বিক্রিটা আমার কাছে কর দেখবি ভালো বিক্রি হবে। এক কেজি দে।

: কাকা লস হয়ে যায় তো।

এই বলেই পাল্লায় খেজুর উঠাইতেছি। নার্ভাস এত বেশি ছিলাম যে আমার হাত কাপতেছিল। আর বুকের ধুক ধুকানি তো আছেই।

খেজুর বিক্রি করলাম। ঐ ভাইয়া আসলো। একটু পর ফ্রেন্ডটাও আসলো। ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি শুনে দুইজনেই অবাক। কারণ ঐ খেজুর অন্য জায়গায় ১৮০ টাকার নিচে বিক্রিই করে না।

সকালে একটা টেবিল নিয়া বসছিলাম। একটু পর একটা ভ্যানে খেজুরগুলা উঠাইয়া দোকান নিয়া সামনে গেলাম। ভ্যানে করেই খেজুর বিক্রি করতেছি।

আফিস ছুটি। দোকানে প্রচন্ড ভির। অনেক কাস্টমার। এক ঝাটকায় প্রায় দুই হাজার টাকার মত খেজুর বিক্রি করলাম। দিন শেষে ৪১০০ টাকা বিক্রি করছিলাম। প্রথম দিন হিসেবে ভালোই বিক্রি করছি। তারপর আস্তে আস্তে ছয় প্রকার খেজুর আনলাম।

প্রতিদিনই আমি দোকান খুলি। এখন আর নার্ভাস লাগে না। অনেক আনন্দ নিয়ে দোকানে বসি, দোকান নিয়ে বসাটা অনেক উপভোগ করি। রোজা থেকে রোদের মধ্যে দোকান নিয়ে দাড়িয়ে থাকা সত্যিই খুব কষ্টের।

আমি খেজুর বিক্রি করি আর বাকি দুইজন বাদামতলি থেকে খেজুর কিনে নিয়ে আসে। এলাকার পরিচিত সবাই আমাদের দোকান থেকে খেজুর নিত। আংকেলরা এসে উৎসাহ দিত। দারুণ একটা ভালো কাজ করছো। রোজার মাস আজাইরা না ঘুরে একটা কামের কাম করছো ভাতিজা।

বিশ রমজান পর্যন্ত খেজুর বিক্রি করছিলাম। অনেক ভালো ছিল খেজুরের দোকান নিয়ে বসা দিনগুলা। আব্বুও অনেক খুশি হইছিলো।

খেজুর বিক্রি করে সবার পকেটেই মোটামুটি কিছু টাকা আসছিলো। নতুন বিধায় আমরা বেশি লাভ করতে পারিনি।

এবারের রমজানে আমি কুমিল্লায় আর বাকি দুজন ঢাকায়। পরীক্ষা না থাকলে এবারও তিনজন মিলে ব্যাবসা করতাম। কিন্তু এবার আর করা হলো না। আমাকে তেইশ রমজান পর্যন্ত কুমিল্লা থাকতে হবে।

নিজে কিছু করতে পারার মধ্যে সত্যি-ই অনেক আনন্দ আছে। মা-বাবাও অনেক খুশি হয় সন্তানের এসব কাজে। আব্বু এক টাকাও আমার কাছ থেকে নেয়নি উল্টো চালানের টাকা পুরোটাই আমাকে দিছিলো।

সত্যি বলতে মা-বাবা বকা দেয় যাতে তাদের সন্তান কিছু একটা করুক, ভবিষ্যতে বেকার না থাকুক। এতে তাঁদের অনেক গর্ব হয় নিজের সন্তানকে নিয়ে। কোন মা-বাবাই চায় না তার সন্তান অকর্মা থাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৮
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×