somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা'য়ের সাথে রাগ করে থাকা যায় না....

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আম্মুর সাথে রাগ করে সন্ধ্যা সময় ঘর থেকে বের হয়ে গেছিলাম :/ । বিকেলে ছোট খাট একটা কথা নিয়ে আম্মুর সাথে রাগ করি । আম্মুও আমার সাথে রাগ করে :/ ।

রাগের ঠেলায় এক বড় ভাইয়ের রুমে গিয়ে মোবাইল টিপতেছি । মাগরীবের আযান দিতেছে এমন সময় ঘরে এসে পানি মুখে দিয়ে রোজা ভাংলাম । শরবতটা মুখে দেওয়ার পর বুঝতে পারলাম আম্মু একটু পানি ছাড়া এখনো কিছু খায়নি । শরবতটা নিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম । আম্মু তখনো রান্নাঘরে পেয়াঁজু ভাঁজতেছে ।

- শরবতটা খাও...

: সর এখান থেকে...

- খাও না...

: খাইতাম না ।

চলে আসলাম । দুইটা আলুর চপ মুখে দিয়ে বসে আছি । আম্মুর পেয়াঁজু ভাঁজা শেষ । ইফতার করতে না এসে পাশের রুম চলে গেলেন । আমিও পিছু পিছু গেলাম । গিয়েই পায়ে ধরে বসে পরলাম ।

- আম্মা আমার ভুল হইছে...

: পা ছাড়্ । রুবেলের মত পা ধরতে আসবি না (রুবেল নামে এলাকায় একজন ছিলেন যিনি প্রতিদিনই একটা না একটা অন্যায় করতেন আর মা'য়ের পা ধরে মাফ চাইতেন আবার পরেরদিনই একটা অন্যায় করতেন) ।

- ইফতার করবে চলো...

: তর হাতে আমি ইফতার খামু না । হাত ছাড়্ ।

ইমনকে বললাম আম্মুকে ইফতার খাওয়াতে আমি নামাজ পড়তে গেলাম ।

নামাজ পড়ে আবার আম্মুর কাছে গেলাম কিছু খাওয়ানোর জন্য ।

- আম্মা কিছু খাবে চলো...

: আমাকে ধরবি না । তর হাতে আমি কিচ্ছু খামু না ।

কিছু বললাম না । ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম । শিল্পকলার মেইন গেটের পাশে বসে আছি । ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম, "পরিচিতদের বৃত্ত ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে দূরে, বহু দূরে ।

খুব ইচ্ছে করে ।"

একটু পর স্কুল লাইফের বেস্ট ফ্রেন্ড পলাশ কল দিল । রিসিভ করলাম না । চারবার কল দিল রিসিভ করলাম না । কল রিসিভ করি না দেখে পলাশ সম্ভবত বাসায় গেছে ।

বাসা থেকে একের পর এক আমাকে কল দিচ্ছে আমি কল রিসিভ করতেছি না । একবার আম্মু কল দিচ্ছে তো আরেকবার আব্বু । খানিকবাদে এলাকার এক বড় ভাই আর একটা ফ্রেন্ডও কল দিচ্ছে । কারো কলই রিসিভ করলাম না । একটা অপরিচিত বাংলালিংক নাম্বার থেকে কল আসলো বেশ কয়েকবার, রিসিভ করিনি ।

কাকরাইল মসজিদের দিকে হাটা দিলাম । একা একা হাটতেছি । আব্বু কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু আমি রিসিভ করতেছি না । হাটতে হাটতে বেইলি রোডের একটা মসজিদে গিয়ে এশার নামাজ পড়লাম । মোবাইল ভাইব্রেট হয়েই যাচ্ছে ।

নামাজ শেষ করে ভিকারুননিসা স্কুলের অপজিটে গিয়ে বসলাম । আব্বু কল দিয়েই যাচ্ছে । রিসিভ করলাম...

: মেহেদী তুই কই ?

- রাস্তায় বসে আছি । কেন ?

- কার সাথে বসে আছস ? বাসায় আসবি কখন ?

: একা । জানি না...

টুট টুট -_- ।

একটু পর আবার সেই অপরিচিত বাংলালিংক নাম্বার থেকে কল । রিসিভ করার পর বুঝতে পারলাম শশুড় বাড়ি থেকে বোন কল দিছে । দেখলাম জ্ঞান দেওয়া শুরু করছে । দিলাম লাইন কেটে । টুট টুট :/ ।

এলাকার বড় ভাই আবার কল দিছে । রাগের ঠেলায় হেতেরে কতক্ষণ ঝারলাম । তারপর লাইন কেটে দিলাম । টুট টুট টুট O.o ।

আবার আব্বু কল দিল...

: তুই কই ?

- রাস্তায়...

: পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাসায় আসবি । আর একটা কথাও কমু না । আসতে পারবি ?

- আসতেছি...

ফোনটা রেখে হাটতে হাটতে এলাকায় গেলাম । চেহারায় প্রচন্ড মেজাজী ভাব নিয়ে ঘরে ঢুকলাম -_- । আব্বু খাটে বসে আছে :/ । ওনার পাশেই বসলাম ।

আব্বু বুঝতে পারছেন প্রচন্ড রেগে আছি । তেমন কিছুই বললেন না । শুধু বললেন এত রাতে কেউ বাইরে থাকে ?

কোন উত্তর দিলাম না । চুপচাপ শুয়ে গেলাম । চোখে হালকা ঘুম চলে আসছে । আব্বু খাওয়ার জন্য ডাকতেছে । খাবো না বলে আবার ঘুমানোর চেষ্ট করতেছি ।

একটু পর আম্মু আসলেন...

: খাইতে যা...

- খাইতাম না...

: খাইতে যাইতে কইছি না ?

- খামু না, কইছি না :/ ?

: ইফতারে ঠিকমত খাছ নাই । খাইতে আয়...

আর শুয়ে থাকতে পারলাম না । উঠে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম । চেহারায় তখনো রাগ রাগ ভাব । এইবারের চেহারায় রাগ রাগ ভাবটা অবশ্য ইচ্ছে করেই আনছি । কারণ আমি জানি আম্মুর রাগ কমে গেছে আমাকে মাফ করেও দিছেন । কিন্তু এখন যদি আমি রাগ রাগ ভাব না দেখাই তাহলে ঠিকমত আম্মাজানের আদরটা পাবো না :D

ভাত খাচ্ছি আর আম্মু একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে । আমি তো রাগ করে আছি তাই আম্মুর দিকে তাকাচ্ছি না । আসলে রাগ করার ভান করে আম্মাজানের লুকোচরি তাকানোটা দেখছি আর মনে মনে হাসতেছি :-) । নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে আসলো । তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে গেলাম । বুঝতে দিলাম না চোখের কোণে চলে আসা ওনার প্রতি মিষ্টি অভিমানের আবেগভরা অশ্রুর মানেটা । তবে আম্মু মানেটা বুঝে গেছেন এটা নিশ্চিত ।

চিত্‍কার করে বলতে ইচ্ছে করে, আম্মু তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×