আম্মুর সাথে রাগ করে সন্ধ্যা সময় ঘর থেকে বের হয়ে গেছিলাম :/ । বিকেলে ছোট খাট একটা কথা নিয়ে আম্মুর সাথে রাগ করি । আম্মুও আমার সাথে রাগ করে :/ ।
রাগের ঠেলায় এক বড় ভাইয়ের রুমে গিয়ে মোবাইল টিপতেছি । মাগরীবের আযান দিতেছে এমন সময় ঘরে এসে পানি মুখে দিয়ে রোজা ভাংলাম । শরবতটা মুখে দেওয়ার পর বুঝতে পারলাম আম্মু একটু পানি ছাড়া এখনো কিছু খায়নি । শরবতটা নিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম । আম্মু তখনো রান্নাঘরে পেয়াঁজু ভাঁজতেছে ।
- শরবতটা খাও...
: সর এখান থেকে...
- খাও না...
: খাইতাম না ।
চলে আসলাম । দুইটা আলুর চপ মুখে দিয়ে বসে আছি । আম্মুর পেয়াঁজু ভাঁজা শেষ । ইফতার করতে না এসে পাশের রুম চলে গেলেন । আমিও পিছু পিছু গেলাম । গিয়েই পায়ে ধরে বসে পরলাম ।
- আম্মা আমার ভুল হইছে...
: পা ছাড়্ । রুবেলের মত পা ধরতে আসবি না (রুবেল নামে এলাকায় একজন ছিলেন যিনি প্রতিদিনই একটা না একটা অন্যায় করতেন আর মা'য়ের পা ধরে মাফ চাইতেন আবার পরেরদিনই একটা অন্যায় করতেন) ।
- ইফতার করবে চলো...
: তর হাতে আমি ইফতার খামু না । হাত ছাড়্ ।
ইমনকে বললাম আম্মুকে ইফতার খাওয়াতে আমি নামাজ পড়তে গেলাম ।
নামাজ পড়ে আবার আম্মুর কাছে গেলাম কিছু খাওয়ানোর জন্য ।
- আম্মা কিছু খাবে চলো...
: আমাকে ধরবি না । তর হাতে আমি কিচ্ছু খামু না ।
কিছু বললাম না । ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম । শিল্পকলার মেইন গেটের পাশে বসে আছি । ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম, "পরিচিতদের বৃত্ত ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে দূরে, বহু দূরে ।
খুব ইচ্ছে করে ।"
একটু পর স্কুল লাইফের বেস্ট ফ্রেন্ড পলাশ কল দিল । রিসিভ করলাম না । চারবার কল দিল রিসিভ করলাম না । কল রিসিভ করি না দেখে পলাশ সম্ভবত বাসায় গেছে ।
বাসা থেকে একের পর এক আমাকে কল দিচ্ছে আমি কল রিসিভ করতেছি না । একবার আম্মু কল দিচ্ছে তো আরেকবার আব্বু । খানিকবাদে এলাকার এক বড় ভাই আর একটা ফ্রেন্ডও কল দিচ্ছে । কারো কলই রিসিভ করলাম না । একটা অপরিচিত বাংলালিংক নাম্বার থেকে কল আসলো বেশ কয়েকবার, রিসিভ করিনি ।
কাকরাইল মসজিদের দিকে হাটা দিলাম । একা একা হাটতেছি । আব্বু কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু আমি রিসিভ করতেছি না । হাটতে হাটতে বেইলি রোডের একটা মসজিদে গিয়ে এশার নামাজ পড়লাম । মোবাইল ভাইব্রেট হয়েই যাচ্ছে ।
নামাজ শেষ করে ভিকারুননিসা স্কুলের অপজিটে গিয়ে বসলাম । আব্বু কল দিয়েই যাচ্ছে । রিসিভ করলাম...
: মেহেদী তুই কই ?
- রাস্তায় বসে আছি । কেন ?
- কার সাথে বসে আছস ? বাসায় আসবি কখন ?
: একা । জানি না...
টুট টুট -_- ।
একটু পর আবার সেই অপরিচিত বাংলালিংক নাম্বার থেকে কল । রিসিভ করার পর বুঝতে পারলাম শশুড় বাড়ি থেকে বোন কল দিছে । দেখলাম জ্ঞান দেওয়া শুরু করছে । দিলাম লাইন কেটে । টুট টুট :/ ।
এলাকার বড় ভাই আবার কল দিছে । রাগের ঠেলায় হেতেরে কতক্ষণ ঝারলাম । তারপর লাইন কেটে দিলাম । টুট টুট টুট O.o ।
আবার আব্বু কল দিল...
: তুই কই ?
- রাস্তায়...
: পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাসায় আসবি । আর একটা কথাও কমু না । আসতে পারবি ?
- আসতেছি...
ফোনটা রেখে হাটতে হাটতে এলাকায় গেলাম । চেহারায় প্রচন্ড মেজাজী ভাব নিয়ে ঘরে ঢুকলাম -_- । আব্বু খাটে বসে আছে :/ । ওনার পাশেই বসলাম ।
আব্বু বুঝতে পারছেন প্রচন্ড রেগে আছি । তেমন কিছুই বললেন না । শুধু বললেন এত রাতে কেউ বাইরে থাকে ?
কোন উত্তর দিলাম না । চুপচাপ শুয়ে গেলাম । চোখে হালকা ঘুম চলে আসছে । আব্বু খাওয়ার জন্য ডাকতেছে । খাবো না বলে আবার ঘুমানোর চেষ্ট করতেছি ।
একটু পর আম্মু আসলেন...
: খাইতে যা...
- খাইতাম না...
: খাইতে যাইতে কইছি না ?
- খামু না, কইছি না :/ ?
: ইফতারে ঠিকমত খাছ নাই । খাইতে আয়...
আর শুয়ে থাকতে পারলাম না । উঠে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম । চেহারায় তখনো রাগ রাগ ভাব । এইবারের চেহারায় রাগ রাগ ভাবটা অবশ্য ইচ্ছে করেই আনছি । কারণ আমি জানি আম্মুর রাগ কমে গেছে আমাকে মাফ করেও দিছেন । কিন্তু এখন যদি আমি রাগ রাগ ভাব না দেখাই তাহলে ঠিকমত আম্মাজানের আদরটা পাবো না ।
ভাত খাচ্ছি আর আম্মু একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে । আমি তো রাগ করে আছি তাই আম্মুর দিকে তাকাচ্ছি না । আসলে রাগ করার ভান করে আম্মাজানের লুকোচরি তাকানোটা দেখছি আর মনে মনে হাসতেছি :-) । নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে আসলো । তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে গেলাম । বুঝতে দিলাম না চোখের কোণে চলে আসা ওনার প্রতি মিষ্টি অভিমানের আবেগভরা অশ্রুর মানেটা । তবে আম্মু মানেটা বুঝে গেছেন এটা নিশ্চিত ।
চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করে, আম্মু তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি