somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা রম্য ছায়াছবি :: প্রেমের ম্যালফাংশন

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রেষ্ঠাংশে: আলমগীর , জসিম , ইলিয়াস কাঞ্চন , শাবানা , ববিতা , রোজিনা , দিতি , নতুন , সুচরিতা , সুনেত্রা , অঞ্জনা , চম্পা , রাজীব , মিজু আহমেদ , প্রবীর মিত্র এবং খালেদা আক্তার কল্পনা

ছবিটি পরিবেশিত হচ্ছে শাইনপুকুর , গরু মার্কা ঢেউ Teen এবং পেডরোলো গ্যাস পাম্পের সৌজন্যে
------------------------------------------------------

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : "বাংলা" সিনেমা , কাজেই নিজ দায়িত্বে দেখবেন (পড়বেন)। মেজাজ খারাপের জন্য পরিচালক দায়ী নয়।

------------------------------------------------------

প্রথম দৃশ্য:
চাকুরিজীবি মধ্যবিত্ত প্রবীর মিত্র। স্ত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা গৃহিনী , গান-বাজনা ভালবাসেন। দু'সন্তান আলমগীর আর কাঞ্চনকে নিয়ে তাদের সুখের সংসার। প্রবীর মিত্র ভীষণ দয়ালু একজন মানুষ। দেশের বাড়ি থেকে জসিম নামের এতিম একটি ছেলেকে নিজের বাসায় এনে রেখেছেন । জসিম ফুট-ফরমায়েশ খাটে , কিন্তু এ পরিবারের মানুষগুলোর তার প্রতি ভালবাসার কমতি নেই । প্রবীর-কল্পনা মনে করেন , জসিমসহ তাদের তিন সন্তান ।

ঢাকা শহরে তিন কাঠা জমির উপর এক তলা বাড়ি ছাড়াও দেশের বাড়িতে পৈতৃক সূত্রে কিছু সহায়-সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন প্রবীর মিত্র। সে সম্পত্তির দিকে আশে পাশের কিছু মানুষের শকুন-দৃষ্টি প্রবীর সাহেবের চোখ এড়ায় না। তার বেজায় ভয় হয় , সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে তার সন্তানদের পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত না করে ফেলেন । সে কারণে প্রতিটা মুহুর্তে তিনি সচেতন থাকেন। স্ত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা ছেলেদের গান-বাজনা শেখাতে চেয়েছিলেন । পরিবারের সবাই মিলে প্রবল কোন আনন্দের দিনে সমবেত কন্ঠে কোন পারিবারিক সঙ্গীত রচনা করে গেয়ে ফেলে কিনা , সেই ভয়ে ছেলেদের গান-শিক্ষায় সবসময় কঠোরভাবে তিনি বাধা দেন। প্রতিবছর ছেলেদের জন্মদিন পালন করেন উৎসবমুখরভাবে। কিন্তু সেসব দিনে অফিস থেকে ফেরার পথে কোন অমঙ্গল হওয়ার ভয়ে তিনি অফিসে যান না। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আনন্দের মাঝে খালেদা আক্তার কল্পনা সবাইকে নিয়ে সমবেত গান ধরার চেষ্টা করেন । গান না শেখা আলমগীর-কাঞ্চন হেঁড়ে গলায় দু'চার লাইন গাওয়ার পর কল্পনা গানের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন , পারিবারিক সঙ্গীত গড়ে ওঠে না দেখে প্রবীর মিত্রও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন । ছেলেদের জন্মদিনে প্রবীর মিত্রের আরেকটি আতঙ্ক হল আবেগে পরিবারের সবাই মিলে ট্রেন বানিয়ে সারা ঘর দৌড়াদৌড়ি করা , এসব হাসিখুশির পরই ট্রাজেডি নেমে আসে কিনা। এমন ট্রেন তৈরি হওয়ার উপক্রম হলেই প্রবীর সাহেব বগিগুলো (স্ত্রী/ছেলে) ছুটিয়ে ফেলে ট্রেন ভেঙে দেন ।

এমন কঠোর সচেতনতার কারণে সুখে শান্তিতে তার পরিবার কোন ট্রাজেডি ছাড়াই ২৫ টি বছর কাটিয়ে দেয় ।

বিজ্ঞাপন বিরতি



১৮ বছর পর

আলমগীর এখন নর্থ-সাউথ এ পড়ে । জসিমের পড়াশোনা সেভাবে হয়নি , ঘরে বসে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি।এ পাশ করেছে সে । তবে এ পরিবারে সে কতটা আদর যত্নে ছিল তার প্রমাণ মেলে তার বিশাল বপুতে । ছোট ছেলে কাঞ্চন কলেজ পড়ুয়া , প্রতিবেশি রহমান সাহেবের মেয়ে চম্পার সাথে ছোটবেলা থেকেই তার প্রেম-পিরিতি চলে। প্রবীর সাহেব রিটায়ার করেছেন , ঘরে বসেই সময় কাটে তার ।

ভার্সিটিতে সিক্সথ সেমিস্টারের ফাইনাল রেজাল্ট বের হয় । আলমগীর জিপিএ ফোর পায় । নর্থ সাউথের বসুন্ধরা ক্যাম্পাস থেকে কালের কন্ঠ পত্রিকা কিনে এক দৌড়ে সরাসরি বাসাবো এলাকায় নিজের বাসায় পৌছে মায়ের ঘরে ঢুকে মাকে জড়িয়ে ধরে , পত্রিকা দেখিয়ে বলে "মা মা , আমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছি" । মা কল্পনার তখন আর কিছুই করার থাকে না , রোবটের মত , অথচ ভীষণ আবেগ জড়ানো গলায় বলেন , "তোর বাবা যদি আজ বেঁচে থাকত , তবে কতই না খুশি হত"। আলমগীর বলে , "ছিঃ মা , অমন অলুক্ষণে কথা বলতে নেই । বাবা তো পাশের রুমেই টিভি দেখছেন"। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে । প্রবীর মিত্র আড়াল থেকে স্ত্রীর কথা শুনে সান স্ট্রোক করেন । নিজ ঘরে বিছানার উপর চিরকুটে লেখেন , "আমি আর তোমাদের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না , আমি চলে যাচ্ছি"।

আলমগীর পত্রিকা হাতে বাবার ঘরে গিয়ে চিরকুট দেখে উচ্চস্বরে বিলাপ করে বলে , "বাবা এ তুমি কেন করলে ? কেন তুমি আমাদের রেখে ঘর ছেড়ে গেলে?"



-------------------
ভার্সিটিতে যাবার পথে বাসে একদিন আলমগীরের চোখে পড়ে সুনেত্রাকে । খোঁজ নিয়ে দেখেন সুনেত্রা এআইইউবি তে পড়ে । সুনেত্রার নেত্র কল্পনা করতে করতে সেভেনথ সেমিস্টারে আলমগীর ফোর এর বদলে থ্রি মেরে বসে । আলমগীরকে উদাস হয়ে থাকতে দেখে একদিন জসিম তার চুলের চিপ টেনে ধরে বলে , "কার কথা ভাবিস , হমম ?" আলমগীর বলে , "ছেড়ে দাও ভাইয়া , আঁ , আঁ, বলছি বলছি"

আপন ভাই না হয়েও জসিম যেন পরমাত্মীয় । আলমগীরকে যুৎসই একটা পরামর্শ দেয় সে। এআঈউবি ক্যাম্পাসে লাইব্রেরীর সিঁড়িতে সুনেত্রার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ করতে হবে আলমগীরকে । সুনেত্রার হাত থেকে বই পড়ে যাবে । তারপর দু'জনাই নিচু হয়ে বই তুলতে যাবে , চোখাচোখি হবে , মুচকি হাসবে দু'জনা । ব্যাস , একেবারে অব্যর্থ পদ্ধতি । আর দু'জনাই নিচু হওয়ার সময় মাথায় টোকাটুকি লাগলে তো সোনায় সোহাগা ।

পরেরদিন থেকে আলমগীর বসুন্ধরায় এনএসইউ ক্যাম্পাস ছেড়ে বনানীর এআঈউবি ক্যাম্পাসের লাইব্রেরীর নিচ তলায় অস্থায়ী ডেরা স্থাপন করে । সন্ধ্যা হয়ে যায় , তবুও সুনেত্রা লাইব্রেরীর দোতলা থেকে নিচে নামেনা । আলমগীর কল্পনায় সুনেত্রার চোখের মাঝে ঘুরপাক খায় । হঠাৎ দেখে সুনেত্রা সিঁড়ির সবগুলি ধাপ বেয়ে নিচে পৌঁছে গেছে , এ মুহূর্তে দৌড়ে গিয়ে সংঘর্ষ ঘটানোর সুযোগ নেই ।

পরপর তিন দিন সুনেত্রাকে ঠিক পজিশনে মিস করার পর জসিমকে সব খুলে বলে আলমগীর । জসিম বলে , "ধুর গাধা , আমাকেই দেখি যেতে হবে । আমি দোতলায় বসে সুনেত্রাকে ফলো করব , ও যেই বের হবে তোকে মিসকল দেব , তুই রেডি হবি , যেন সিঁড়ির মাঝ বরাবর সংঘর্ষ করতে পারিস ।"

কথা মত পরের দিন সুনেত্রা নিচে নামার প্রস্তুতি নিলেই ফলো করতে থাকা জসিম দোতলা থেকে মিসকল দেয় । আলমগীর নিচ থেকে দৌড়ে গিয়ে সুনেত্রার ডান হাত বরাবর মোক্ষম একটা ধাক্কা মারে । সুনেত্রার বই পত্র ছিল তার বাঁ হাতে , আর ডান হাতে ছিল চিকেন বিরিয়ানীর প্যাকেট । প্যাকেট খুলে ঝুরঝুর করে সব ভাত পড়ে সিঁড়িতে ছড়িয়ে যায় । আর চিকেনের টুকরোটা গিয়ে পড়ে সুনেত্রার স্যান্ডেলের উপর । আলমগীর ধাক্কা দিয়েই নিচু হয়ে দেখে তার সামনে সুনেত্রার মুখের বদলে তার পা , তার মানে সুনেত্রা নিচু হয়নি । সাড়া সিঁড়িতে ছড়ানো বিরিয়ানি । হতচকিত হয়ে দু'হাতে সব বিরিয়ানি জড়ো করে , পায়ের উপর থেকে চিকেন টুকরো সহ প্যাকেটে ভরে হাসিমুখে সুনেত্রার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে , "নিন , খেয়ে নেবেন"। সুনেত্রার সম্বিত ফেরে , ঠাস করে শব্দ হয় একটা । ইজ্জত নিয়ে বনানী থেকে কোন রকমে পালিয়ে আসে আলমগীর । জীবনের প্রথম প্রেমের ইতি ঘটে ওখানেই ।

এদিকে একই সময়ে শাহবাগ এলাকা দিয়ে বাদাম চিবুতে চিবুতে হেঁটে যাবার সময় টেনিস কম্প্লেক্সে মাথায় ব্যান্ড বেঁধে টেনিস খেলা একটি মেয়েকে দেখে মনে ধরে যায় জসিমের । টেনিস কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে মেয়ে নিজে ড্রাইভ করে বাড়ি যায় । কয়েকদিন পিছু নিয়ে মেয়ের খোঁজ খবর করে ফেলে জসিম। মেয়ের নাম নতুন । একদিন এক গ্যারেজে গাড়ি সারাতে ঢোকে নতুন । চলে যাবার পর জসিম কাকুতি মিনতি করে সেই গ্যারেজে চাকুরি নেয় । ছয় মাস চলে যায় , কিন্তু একটা বারও নতুন গাড়ি সারাতে আসে না । জসিম জানতে পারে , নতুন ভীষণ সাবধানি ড্রাইভার , গাড়ির কোন ক্ষতি যেন না হয় , সেজন্য সদা সতর্ক । ধৈর্য হারিয়ে জসিম নতুনদের বাসার সামনে রাস্তায় রাতে খানা-খন্দক খুঁড়ে আসে , তার-কাঁটা বিছিয়ে দিয়ে আসে । তারপর সেই খন্দকের পাশে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে , নতুনের টায়ার পাংচার হলেই সে নিজে লিফট দেবে । কিন্তু নতুন ভীষণ দক্ষতায় সেই গর্ত এড়িয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যায় , একটা বারও তার গাড়ির সামান্যতম ক্ষতি হয় না । কিছুতেই ব্যাটে-বলে হয় না, জসিমের প্রেমের কলি বিকশিত হওয়ার আগেই ঝরে যায় ।

কাঞ্চন এদিকে চম্পার সাথে তুমুল ইটিশ পিটিশ চালিয়ে যায়।



-------------------
প্রথম প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়ার পর আলমগীর-জসিম দু'জনার জীবনেই নতুন প্রেম আসে । আলমগীর প্রেমে পড়ে পাশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভার্সিটির ছাত্রী ধনী তনয়া রোজিনার , জসিম প্রেমে পড়ে মহিলা হোস্টেলে থাকা চাকুরিজীবি সুচরিতার ।

বেশ কিছুদিন চুটিয়ে প্রেম করার পর রোজিনা-সুচরিতা দু'জনাই প্রেমের গান গাইতে ঢাকার বাইরে যেতে চায় । হেঁড়ে গলার কারণে আলমগীর-জসিম কেউই শুরুতে আগ্রহী হয় না , তবুও বাধ্য হয় দু'জনাই । আলাদা আলাদা ভাবে প্রথম জুটি গান গাইতে যায় রাজেন্দ্রপুর ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি আর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে ।

রাজেন্দ্রপুরে জঙ্গলে ঢোকার পরেই রোজিনা-আলমগীরের প্রবল প্রেমের গান শুরু হয় । আলমগীর গাইতে না জানলেও , নাচের মুদ্রা ভালই রপ্ত করে রোজিনার গানের সাথে তার নাচের মুদ্রা আয়ত্ত্ব করে নাচতে থাকে । কিন্তু প্রতি ২০ কি ২৫ সেকেন্ড পরপরই গানে ছেদ পড়ে । গানের লাইন শেষ না করেই রোজিনা ড্রেস বদলাতে যায় । আলমগীরের বিরক্ত লাগলেও সহ্য করে । গানের শেষ দিকের একটি মুদ্রায় আলমগীর রোজিনা দু'জনাই এক পায়ে দাঁড়িয়ে অন্য পা শূন্যে বাঁকিয়ে থাকা অবস্থায় রোজিনা আবার জামা বদলাতে চলে যায় , নতুন জামা পড়ে এসে ঐ একই মুদ্রায় মাত্র ১ সেকেন্ড থাকে , আবার জামা বদলাতে চলে যায় । আলমগীরের কাজ হল রোজিনার দিকে ঐ নির্দিষ্ট ভঙ্গিমায় হাসিমুখে তাকিয়ে থাকা , এর মাঝে রোজিনার ১০ টি ভিন্ন রঙের জামা বদল হবে । কাঁহাতক আর সহ্য করা যায় , ৫ মিনিটের গান গাইতে ততক্ষনে ৩ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে , আর এক পায়ে দাঁড়িয়ে অন্য পা শুণ্যে আলমগীর রয়েছে প্রায় মিনিট দশেক । মেজাজ খিঁচড়ে যায় তার , মনে মনে বলে গুল্লি মারি এই প্রেমের , যে প্রেমের গান এত রঙিন আর বৈচিত্রময় । রোজিনার সাথে আলমগীরের ব্রেক-আপ হয়ে যায় ।

এদিকে গলফ কোর্সে জসিম-সুচরিতার নাচা গানা চলে । সুচরিতা শাড়ি পড়ে গাইছে নাচছে বলে খুব বেশি শাড়ি বদলও করে না । গান না জানা জসিমের কন্ঠে অবশ্য গান পল্লী গীতির মত শোনায় । গানের ফাঁকে জসিমের বারবার মনে হয় , গলফ কোর্সের গাছের আড়ালে কেউ উঁকি মেরে তাদের দেখছে, স্মার্ট ফোনে ছবি তুলছে ব্ল্যাকমেইল করতে । এমন রোমান্টিক গানের সময় এসব তো অহ-রহই হয়ে থাকে । বারবার গান ফেলে তাই সেই গাছ আর ঝোপঝাড়ের আড়াল চেক করতে যায় । জসিমের খুঁত খুঁতে স্বভাবের কারণে গান গেয়ে নেচে সুচরিতা একটুও আনন্দ পায় না । যে প্রেমে একটা গানও ঠিকমত হয় না , সে প্রেম কি করে টিকবে ? টেকে না , ভেঙে যায় তাদের প্রেম ।

কাঞ্চন-চম্পা এদিকে কলেজ পাশ করার পর ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য প্রস্তুত হয় । মাঝের কয়েকটা দিন কাঞ্চন তাবলীগে কাটানোর পরিকল্পনার কথা বলে , চম্পা খুশি মনেই কাঞ্চনকে অনুমতি দেয় ।

বিজ্ঞাপন বিরতি




-------------------
প্রেম ছাড়া চলচ্চিত্র থেমে থাকে , আলমগীর-জসিমের প্রেম তাই সিনেমার প্রয়োজনে আবার আসে। আলমগীর প্রেমে পড়ে ধনী তালুকদার সাহেবের দুলালী ববিতা আর জসিম প্রেমে পড়ে ভুয়েট ভিসি সামাদ বংশীয় এস এম রবীন্দ্রনাথ ইসলামের মেয়ে দিতির।

তালুকদার সাহেব শহরের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং জনৈক চৌধুরী সাহেবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। জসিম-আলমগীর দু'জনাই এবার সাবধানে ডেটিং , ফোনালাপ আর নাচা-গানা চালিয়ে যায় । ববিতা-দিতি দু'জনাই এক পর্যায়ে চায় তাদের প্রেমিকরা তাদের বাবার সাথে দেখা করুক । রাতে ঘরে ফিরে আলমগীর, জসিমের পরামর্শ চায় , দু'জনারই মনে হতে থাকে মেয়ের বাবারা হয়ত নাকচ করে দেবেন। জসিম সাজেশন দেয় প্রেমিকার বাসায় গিয়ে বলিষ্ঠভাবে দাবী উথাপন করতে।

ববিতার মুখে শোনার পর তালুকদার সাহেব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে আলমগীরকে বরণ করে নেয়ার জন্য । সারা পথ আলমগীর জসিমের কাছে রাতে শেখা একটা ডায়ালগ আওড়ে মুখস্ত করে । ববিতাদের ঘরে ঢুকেই তালুকদার সাহেবকে কোন সুযোগ না দিয়ে তর্জনী উঁচিয়ে আলমগীর চিৎকার করে বলতে থাকে , "চৌধুরী সাহেব , আমি গরীব হতে পারি , কিন্তু কোন ষড়যন্ত্র করেই আপনি ববিতাকে আমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারবেন না" । আলমগীরকে অনেক্ষণ শান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে তালুকদার সাহেব দারোয়ান ডেকে আলমগীরকে বের করে দেন । ববিতা কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে বলে , "যে ছেলে আমার বাবার নামটাও ঠিকমত মনে রাখতে পারে না , তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই"

একই সময় জসিম দিতির বাসায় ঢুকে চিৎকার করে বলতে শুরু করে , "চৌধুরী সাহেব , আমার হয়ত স্বাস্থটা ভাল , কিন্তু মনটা ছোট নয়" । সামাদ বংশীয় ভিচি সামাদ মাহমুদ(এস এম) রবিন্দ্রনাথ ইসলামকে বারবার চৌধুরী সাহেব ডাকায় তিনি অপমানিত এবং বিব্রত বোধ করে জসিমকে বের করে দেন আর দিতিকে হুমকি দেন , জসিমের সাথে কোন সম্পর্ক রাখলে তিনি দিতিকে ত্যাজ্য কন্যা করবেন।

তাবলীগ থেকে এর মধ্যে ফিরে আসে কাঞ্চন । তার উপলব্ধি হয়ে চম্পার সাথে বিবাহ বহির্ভূত অবাধ মেলামেশা ঠিক হচ্ছে না । চম্পাকে ডেকে ক্ষমা চেয়ে বলে , "বিয়ের আগে কোন ইয়ে আর নয়, পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে, তারপর সবকিছু"

বিজ্ঞাপন বিরতি




-------------------
আলমগীরের প্রেম জীবনে অবশেষে আসে মধ্যবিত্ত ঘরের শাবানা । শাবানা সর্বংসহা , উচ্চস্বরে কথা বলে না, আলমগীরের দিকে তার সমস্ত মনযোগ । নাচা-গানার সময় আলমগীরের গলার কথা ভেবে নিজেই পুরোটা গেয়ে দেয় , হেঁটে হেঁটে গান গায় , দৌড়াদৌড়ি ঝাঁপাঝাঁপি করে না। পারলে এক শাড়িতেই পুরোটা গান শেষ করে ।

জসিমের প্রেম হয় খান সাহেবের মেয়ে অঞ্জনার সাথে । অন্জনার সাথে প্রেমের কারণে ক্ষিপ্ত হয় অঞ্জনার বিলাত ফেরত কাজিন রাজীব। জসিমকে শায়েস্তা করতে মনস্থ করে সে । কিন্তু সে জন্য আস্তানা প্রয়োজন । ঢাকার আশেপাশে আস্তানা কোথায় বানানো যায় , সে খোঁজ-খবর করে রাজীব। কিন্তু সাভার-আশুলিয়ায় সেরকম নিরাপদ নিরিবিলি জায়গার খোঁজ মেলে না । আস্তানার খোঁজ করতে করতে ৬ মাস কেটে যায় , এর মাঝে জসিম-অঞ্জনার প্রেমটা জমে যায় । এর মাঝে রাজীবের পরিচয় হয় আরেক পান্ডা মিজু আহমেদের সাথে । মিজু পরামর্শ দেয় কক্সবাজারে আস্তানা করার । সমুদ্র সৈকতে নাচ গান রত জসিম-অঞ্জনার উপর হামলা চালাতে ছাদ খোলা জীপও সে সরবরাহ করবে বলে জানায় ।

হিমছড়ির কাছাকাছি পাহাড় কেটে আস্তানা বানায় রাজীব-মিজুর সাঙ্গপাঙ্গরা । কার্টন আর তেলের ড্রাম জোগাড় করে আস্তানা ভরিয়ে ফেলে । তারপর অপেক্ষা করতে থাকে । অনেকদিন কেটে যায় , কিন্তু জসিমের কক্সবাজার আসার নাম নেই । রাজীব খবর পায় জসিম-অঞ্জনার সব নাচা-গানা যমুনা রিসোর্ট , মাধব-কুন্ড আর ভাওয়ালে হচ্ছে । মিজুর কাছে সে সাহায্য চায় ।

মিজু ট্রাভেল এজেন্ট সেজে ভুয়া লটারি সাজায় । তারপর জসিমকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ৪ টা প্লেন টিকেট জেতায়। টিকেট পেয়ে জসিম মহাখুশি , এর মাঝে ২ টা দেয় আলমগীরকে । পরের উইকেন্ডে কক্স-বাজার উড়ে আসে আলমগীর-শাবানা , জসিম-অঞ্জনা।

সমুদ্র সৈকতে তাদেরকে লক্ষ্য করে রাজীবরা হৈ হৈ করতে করতে খোলা ছাদের জিপ চালিয়ে এসে হামলা করার পরিকল্পনা করে । কিন্তু লাবণী পয়েন্ট আর কলাতলী বীচে বিপুল লোক সমাগমের মাঝে জিপ চালিয়ে হামলা সম্ভব নয় , সেটা বুঝতে পারে। উপায়ন্তর না দেখে সরল সোজা শাবানাকে মিসকল দিয়ে ডেকে নিয়ে অপহরণ করে রাজীব । শেষ মুহুর্তে শাবানা তার শাড়ির আঁচল দাঁত দিয়ে কুচি কুচি করে , তার টুকরো এবং সুতো পথে ফেলতে ফেলতে যায় । আলমগীর-জসিম-অঞ্জনা সে কাপড়ের টুকরো আর শাবানার শাড়ির সুতো ফলো করে ভাড়া করা জীপে আস্তানায় গিয়ে পৌঁছায় । দেয়াল ভেঙে জীপ নিয়ে আস্তানায় ঢোকার চেষ্টা করে , কিন্তু শক্ত দেয়ালে বাড়ি খেয়ে জীপ দেবে যায় , তারা তিনজনই জ্ঞান হারায় । আস্তানার দিকে রওনা হওয়ার আগে তারা কাঞ্চনকে জানায় সব কিছু । মা কল্পনাকে নিয়ে কাঞ্চন বিমানে করে কক্সবাজারে রওনা হয় ।

আলমগীর জসিমের জ্ঞান ফিরলে নিজেদের তারা আস্তানায় আবিষ্কার করে । সেখানে শাবানা আর প্রবীর মিত্রকে বেঁধে রাখা হয়েছে । প্রবীর মিত্র জানায় ,আস্তানা তৈরীর পরপরই তাকে ধরে আনা হয়েছে দিনাজপুর অঞ্চল থেকে , কিন্তু কেউ তার জন্য অভিযান কেন চালায় না , সে কথা ভেবে রাজীব বেশ আশ্চর্য হত।

ইতোমধ্যে রাজীব মারপিটের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে একটি কৌশল অবলম্বন করে । মিজু আহমেদের নেতৃত্বে একটি দলকে ব্যাক-আপ রাখা হয় । এর মাঝে কাঞ্চন লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে যায় । আস্তানায় আগুন জলছে দেখে নিজের দু'বাহু ফুটো করে রক্ত ছিটিয়ে আগুন নেভায় , তারপর সবাইকে মুক্ত করে ।

আলমগীর-জসিম-কাঞ্চন মোচড়ানো জীপ নিয়েই রাজীবকে ধাওয়া করে । রাজীবকে উত্তম মধ্যম দিয়ে অঞ্জনাকে উদ্ধার করে। হঠাৎই শোনা যায় পুলিশের কন্ঠ- "আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না"। পুলিশ রাজীবকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় । শাবানা হঠাৎ করে রাজীবকে মিটিমিটি হাসতে দেখে , চট করে প্রধান পুলিশের দিকে তাকিয়ে বাংলা সিনেমার ভিলেন মিজু আহমেদের চেহারার সাথে মিল খুঁজে পায় । কিন্তু শাবানা কিছু বলে উঠার আগেই পুলিশ-সন্ত্রাসীরা জীপ টান দিয়ে চলে যায় ।

কল্পনা প্রবীর মিত্রের কাছে ক্ষমা চান । মেয়েরা সবাই প্রবীর মিত্রের কদমবুচি করেন , এর মাঝে একজন স্কার্ফ পড়া :)। সবার মুখে তখন হাসি

সমাপ্ত




----------------------------------------------------------------
(এটি নিছক পাগলামো ভরা একটি অসমাপ্ত পান্ডুলিপি । তবে বিজ্ঞাপনগুলো ব্লগার নিবিড় এর তত্ত্বাবধায়নে আমাদেরই তৈরি করা , প্রদর্শিত হয়েছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ নাইটে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৮
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার ১৫ বছর

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:১৭

১৫ বছর পূর্তির এই পোস্টটা যখন লিখছি, তখন আমি একটা বড় পারিবারিক দূর্বিপাকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমার ছোটভাইয়ের কনিষ্ঠ পুত্র, যার বয়স ১১ মাস, সে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

জিম্মি বিনিময়ের সুনামে হামাস দেশ ত্যাগ করলে, ফিলিস্তিনের জন্য ভালো হতো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬



হামাস জিম্মি/বন্দি বিমিয়মে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে: তারা নেতানিয়াহুর সামরিক নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যা, অসফলতা ও বিশ্বের চাপকে কাজে লাগিয়ে, জিম্মি বিনিময়ের কন্ট্রোল নিজের হাতে রেখেছিলো। তারা জিম্মিদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিব্যক্তি

লিখেছেন আরোগ্য, ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০০





১. অদ্ভুত মোহ মায়ার জগৎ এটা। সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে জেনেও বারবার আঁকড়ে ধরার ব্যর্থ চেষ্টায় রত থাকি। শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে কেউ আর বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতা কিংবা বচন-২

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:২৪

আগের বচনগুলোর লিংক :

১। অম্লতিক্ত অপ্রিয় সত্যাবলি

২। অম্লবচন-১

৩। অম্লবচন-২

৪। অম্লবচন-৩

৫। রম্যমধুর অম্লবচন

৬। অম্লবচন মধুরবচন - আমাদের মন ও মানবতা

৭। কবিতা কিংবা বচন

নিঠুর পৃথিবী

আমি এক আলাভোলা ঘরকুনো প্রেমখোর বাঁদর
ভালো লাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদিন প্রেম খুলবে স্বর্গ দ্বার।

লিখেছেন সামরিন হক, ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ২:০৪

একদিন অভিমানি সব চোখ,জলে ভরে উঠবে ।
একদিন তোমারআমার ক্ষোভ ওপারে ফিরবে ।

২৫শে জুলাই ২০২০

একদিন আধাঁর ,আলোকিত করবে সব বোধ।
একদিন তোমারআমার হাসি ,আকাশের নেবে কোল।

২৮শে জুলাই ২০২০

একদিন ধু ধু মরুভূমি ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×