বিশ্বাস করো, কেবল তোমারই অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম
এই কাঠফাটা রোদ্দুর মাথায় ভেঙে
অপেক্ষায় ছিলাম, তুমি আসবে
ট্যাঙলেট রূপসীর মতো ঘন কালো চুলের ঢেউ তুলে তুলে
কিংখাব মখমলের পেলবমাখা সমীরণে ঠোঁট ছুয়েঁ ছুঁয়ে
শাপলার বিলে নিস্তরঙ্গ দুপুরে বয়ে চলা একাকি ডিঙি নায়ের মতো
ভয় খাওয়া পাখির মতো, শ্যাওলায় হোঁচট খাওয়া হাঁসের মতো
অসংলগ্ন পদক্ষেপে নূপুরের নিক্কন সুর তুলে-
দুলে দুলে তুমি আসবে
তাই অফিস ফাঁকি দিয়ে আশুলিয়ার নির্জন পথে হাঁটছিলাম
একটা অবিস্মরণীয় নস্টালজিক দৃশ্য দেখার তাড়নায়
ভেবেছিলাম, তুমি আসবে
আর এসেই সাবধানী মায়ের চোখের সামনেই
স্কুল ফেরত বাবুটাকে আচমকা ভিজিয়ে দেবে
তারপর যেনো কিছুই হয় নি- এমনই নির্দ্বিধ পায়ে
সোজা আমারই সামনে হেঁটে আসবে তুমি,
রিমিঝিমি গান গাইতে গাইতে
আড়চোখে তোমার খেয়ালিপনা দেখবে কাশ কুড়ানো এক সরল বিধবা
চিতার আগুন ভুলে হৃদয়ে গুঁজবে সেও বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল
তাহলে এলে- স্বগতোক্তি করবো আমি- এমনি বেগানা তুমি
যৌবন ছলকে আসা খলখল হাসিতে আমাকে থমকে দেবো
প্রেমান্ধ পুরুষ হয়েও লজ্জায় ছাতার আড়ালে মুখ লুকোবো আমি
কিন্তু তুমি আরো দুরন্ত উচ্ছলতায় ছুটে আসবে আমার কাছে
তারপর তোমাতে আমাতে মাখামাখি হবে..ভালোবাসা বাসি হবে
অবিরল সেই আগেরই মতো, যেমন প্রতিবার হওয়ার কথা ছিলো
কিন্তু আফসোস, তুমি এসেছো
প্রবল আক্রোশে ফুঁসতে ফুঁসতে তুমি এসেছো
কালো শাড়ির আচলে দুর্ভাগ্যের কালিমা মেখে তুমি এসেই
প্রথম ঝাপটায় বাবুইর শিল্পিত বাসাটা ভেঙেছো কী নির্মম ক্রোধে
তারপর উন্মাদের মতো ঢুকে পড়েছো আসমানীদের জীর্ণ বস্তিতে
খোদার দোহাই, নাইয়রের গান আর গরিব মুয়াজ্জিনের করুণ আজান হলো
কিন্তু তোমার গতি রুদ্ধ হলো না
নগরে এসেই তুমি খুলে দিলে সবগুলো ম্যানহোলের ঢাকনা
রিক্সাটা উল্টে গেলো,
খোয়া গেলো বউয়ের গয়না বেচে কেনা সৌদিগামী পাসপোর্ট
তারপরই রাজপথে ফাঁসিয়ে দিলে একটা নবজাতকবাহী অ্যাম্বুলেন্স
ভিতরে সন্তানের মুখে স্তন রেখেই মরে গেলো অভাগা মা’টা
মাটিকাটা মজুর, ইটভাঙা শ্রমিকের পেটেও লাথি মেরেছো তুমি
তুমি কি নাস্তিক?
সেবার তুরাগ পাড়ের অর্ধকোটি মানুষের আখেরি আর্তনাদ
ম্লান করে দিয়েছিলে তো তুমিই, তাই না?
একটুও বদলাও নি?
প্রিয়তমা, তোমার ‘আশীর্বাদে’ দেখো
দুকূল ছাপানো বন্যা নেমে এসেছে আজ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে
সন্ধ্যার ভাঙনে তলিয়ে গেছে অগুণতি কৃষকের ভিটা
তিন-তিনটি মসজিদ
বেনোজলে ভেসে গেছে ভাগাড়ের সব আবর্জনা
তাই তিনদিনের অনাহারে ভুগছে পথের টোকাই
আর একটা নেড়ি কুকুর
অথচ তোমাকে ভালোবাসবো বলেই মুখস্ত করে নিয়েছিলাম
প্রেয়সীর করকমলে অঞ্জলি দেবার কালজয়ী কবিতাগুলো
আনমনে গেয়েছিলাম ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’..
কিন্তু তুমি এ কী রুদ্ররূপ দেখালে প্রিয়া
তারপরও কি তোমাকে ভালোবাসা যায়, বলো
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:২৫