সন্ধ্যা নেমে আসছে শীতের শহরে। সারাদিনের চোখ সওয়া আধো আলো এখন পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। আমি আরেকটু আয়েশ করে গুটিশুঁটি মেরে লেপের তলায় ঢুকে যাই। হাতে পত্রিকা, আমার নপুংসক মনের পরীক্ষা হবে এখন। ভারতের ভুল বাসে উঠে পড়া মেয়েটি এখনো মৃত্যুর সাথে লড়ছে, তুর্কীরা যেন কি একটা চাইছে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ হয়ে। একটা সময় ছিলো, যখন এসব পড়লে রাগে হাত মুঠো হয়ে আসতো।
এখন হয়না।
নিজেকে এখন আর অকেজো মনে হয়না। বরং নিজেকে বাহবা দেই এখনো টিকে আছি দেখে।
কি একটা পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। অনেকগুলো ছোট ছেলেমেয়েদের আনন্দ-হাসির ছবি। নিচে একটু ছোট করে লেখা আরেকটা অভিমানী ছোট মেয়ের কথা। সেও খুব ভালো করেছে...আসলে করেছিলো। ইভটিজিং-এর শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে কদিন আগে মেয়েটা।
ধুর, অভিমান করে কি হয়? কে কি হয়েছে অভিমান করে? বেঁচে থাকো নির্লজ্জের মতো। মেরুদন্ড না থাকা একটা আশীর্বাদ। বোঝোনা?
নুর হোসেনও তো খুব লাফিয়েছিল, তার কি হয়েছে? বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধারাই বা কেমন আছে? কই, তাদের ভালোমন্দের খোঁজ নিয়েছে কেউ? তুরস্কের মতো এতো বড় দেশ...ভাবা যায়? এরা পর্যন্ত আমাদের স্বীকৃত নপুংসকদের চিন্তায় চিন্তিত।
ভার্সিটিতে পরীক্ষা আছে কালকে। চুপচাপ ভাবছি, ঠিক কখন এমন সস্তা হয়ে গেলাম? খুব বেশীদিন হয়নি। অসংখ্য স্মৃতি মাথায় চেপে বসে হঠাৎ। অনেকটাই কষ্টের। অনেক বেশী মানুষ অনেক অকালে চলে গেছে।। হাত ছেড়ে চলে যায় সবাই।
ধুরো, চোখ ভরে আসে ক্যান? কোথাকার কে মারা গেছে তাতে আমার কি? নাহয় স্বাধীন দেশে আরো কয়জন আদিবাসী খুনই হলো, আমি তো টিকেই আছি। আমার বাবা নাহয় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, এই গোলাম আযমেরা আমার তো কিছু করেনাই? আর করলেই কি? এত রাগ হয় ক্যান?
শহরে শীতের রাত নেমে আসে। ঘন কুয়াশা। চোখের পানি ঠান্ডা হয়ে আসে, মুঠি পাকানো আঙুলগুলো হাতের ওপর চেপে বসে, কেটে ফেলবে যেনো। কালকে পরীক্ষা আছে। পড়তে হবে।
আমি লেপ থেকে বেরিয়ে আসি। আজকে আর নপুংসক থাকতে পারলাম না। সেই অপরাধীদের নিজের হাতে শাস্তি দিতে পারলাম না। কিন্তু এই হাত আজকে থেমে থাকবে না।
শহরে শীত নেমে আসছে। যে ভিক্ষুক মহিলাটা একটা শাড়ি দিয়ে তার বাচ্চাকে ঢাকার চেষ্টা করছে, তার পাওনা শীতের কাপড়টা একহাতে ধরে আমি নীচে নামতে থাকি।
কিছু এলোমেলো লেখা(দ্বিতীয় পর্ব)
কিছু এলোমেলো লেখা(প্রথম পর্ব)