somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিক্ষার নামে অন্তরালে বাণিজ্য

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি দীর্ঘদিন ধরে কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছি। ব্যক্তিগতভাবে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা পছন্দ করি না। দীর্ঘমেয়াদি হলেও হোমিওপ্যাথিতে ফললাভ করেছি। তাই হোমিওপ্যাথিই আমার কাছে বেস্ট। গত একবছর ধরে এক মাস পরপর ডাক্তারের কাছে গিয়ে ঔষধ আনতে হয়। গত ১২ তারিখ দুপুরে যাত্রাবাড়ী মিরহাজিরবাগ মাদ্রাসা রোডে আমি ডাক্তারের চেম্বার থেকে ঔষধ নিয়ে বের হই। ঠিক একটু এগোতেই শুনতে পেলাম ‘‘আল্লাহ–আল্লাহ–আল্লাহ’’ প্রথমেতো ভেবেছিলাম কোন মসজিদে জিকির হচ্ছে। পরে ভাবনার ছেদ কাটল। এক স্বরে জিকির এই জোহরের সময়? সামনে তাকিয়েই দেখি এক প্রতিবন্দি মহিলা বয়স আনুমানিক ২৫, গলায় সাউন্ড সিস্টেম আর মাথার সাথে হেডফোনের মাউথ গাল বরাবর মুখের উপরে। তাহলে এই জিকিরের উৎস ছিল।


মাথায় তখনি ভাবনারা গোলাগুলি শুরু করল, এই মহিলা তার কতটা ক্রিয়েটিভ চিন্তা। হাঁটছেতো, বলতেও পারছে, সমস্যা হয়ত পায়ে লাঠি ভর দিয়ে খুরিয়ে হাঁটছে। চোখের সান্ডগ্লাসটা ভাল মত পর্যবেক্ষণ করলাম। না যদি অন্ধ হত তাহলে রাস্তা চিনে হাঁটতে পারত না। সবশেষে বোঝা গেল শুধু মাত্র পায়েরই সমস্যা। মেয়ের বাবা-মা নেই? স্বামী নেই? ধূর, থাক বা না থাক। তবে ভিক্ষাবৃত্তি কেন? ঠিক এই মহিলার চেয়ে খারাপ অবস্থা আমাদের বাড়িওয়ালাদের কাজের মহিলার। ডান পায়ের হাঁটুতে হাত দিয়ে ধরে প্রায় নিচু হয়ে হাঁটে, স্বামী খেতে দেয় না, বাবা-মা গ্রামে। জেনেছি কাজ করে বাবা-মাকেও টাকা পাঠায়। কই–সেতো এর মত ভিক্ষা করে না।

মাস কয়েক আগে আমাদের এলাকার নতুন মুখের এক ভিক্ষুকের দেখা মিললো। ছাতা মাথায় গলির মুখ থেকে একটু আগে বসে থাকে সকাল থেকে রাত। এরতো কোন সমস্যা নেই, শুধুমাত্র বার্ধক্য ছেয়েছে শরীরে। বয়সতো আমার দাদার থেকে অনেক কম হবে। দাদা গত আড়াই মাস আগে ঢাকার ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। দাদার বয়স পূর্ণ হয়েছিল আশিতে। দুইবার হার্ট স্ট্রোক করে, দুইবার ব্রেইন। চোখের কার্যক্ষমতা প্রায় লোপ পেয়েছিল। প্রথম ব্রেইন স্ট্রোকে শরীরের বা পাশ খানিকটা কার্যক্ষমহীন হয়ে যায়। সাথে স্মৃতিশক্তির অনেকটা হেম্পার হয়। মৃত্যুর দুইমাস আগেও প্রতিদিন সকালে ২ কিলো হেঁটে যেতেন আবার ২ কিলো হেঁটে আসতেন। পথ হারিয়ে যেত মাঝেমাঝে। পুকুরে জাল ফেলে মাস সেঁচে খেত। নিজের কাজ নিজে করত। তিনি যদি এই বয়সে এই পরিস্থিতিতে এতটুক পরিশ্রম করতে পারে তবে কেন এলাকার ভিক্ষুকটি অন্যকিছু করতে পারবে না! কেন ভিক্ষাবৃত্তি। ভিক্ষাবৃত্তিতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য কারণ এদেশে তাদের কর্মসুযোগ দেয়া হয় না। অনেক বুড়ো দেখেছি রিক্সা চালিয়ে খায়, স্যালুট তাদের।


আজকাল মিডিয়ার প্রতিবেদনে দেখা যায় ভিক্ষুকদের নাকি প্রশিক্ষণ করিয়ে ভিক্ষুক সংঘ থেকে তাদের ভিক্ষার এলাকা নির্ধারিত করে দেয়া হয়।

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ভিক্ষুককে নিয়ে। বাড্ডায় যে ভিক্ষুক ৫ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দেয়। তার প্রতিদিন বাহন খরচ ১২০ টাকা, রিক্সা ভাড়া। শুধু মাত্র ভিক্ষার স্থানে আসতে আর যেতে। তার মাসিক খরচ ২০ হাজার টাকা আর যার সম্পূর্ণটাই ভিক্ষা হতে উপার্জিত। বিভিন্ন প্রতিবদনে ও পরিসংখ্যানে উল্লেখ্য আছে বাংলাদেশে ভিক্ষা করে যা উপার্জন হয় তাতে দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষেরও এক তৃতীয়াংশ উপার্জন হয় না। বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যানে দেশে এখনো ১২ লাখেরও বেশি ভিক্ষুক রয়েছে বলে জানা যায়। তবে প্রকৃত হিসেব নেই। অথচ দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখেরও বেশি।

ভিক্ষার অন্তরালে বাণিজ্য করছে কিছু শ্রেণীর লোক। এদিকে প্রকৃত ভিক্ষুক লাঞ্চনা হচ্ছে আরেক সংঘের লোকেদের কাছে। সোনার বাংলার দেশে এ রকম অরাজকতা চলছেই। শিক্ষা কী ভিক্ষার কথা বলে? আমাদের উচিৎ শারীরিক সমর্থযোগ্যদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের কর্মমুখী করা। উচিত সামাজিক সংস্থাগুলকে এগিয়ে আসা, সাথে সরকারেরও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া। ভিক্ষুক মুক্ত দেশে হলেই না, তবে হবে সোনার বাংলা।



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪৮
২৬টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×