somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যু কীভাবে হয়? মৃত্যু নিয়ে বিজ্ঞান কী বলছে?

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃত্যু। মৃত্যু বলতেই আমরা বুঝি প্রাণ বা আত্নার অস্তিত্ব দেহ থেকে বিলীন হয়ে যাওয়াকে। অর্থাৎ জীবনের পরিসমাপ্তি। একজন ব্যক্তির তখনই মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় যখন তার ভিতরে প্রাণের কোন সাড়া থাকে না। সে কথা বলতে পারে না, নিশ্বাস নিতে পারে না, খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না, মস্তিস্ক তার কার্যক্ষমতা পরিচালনা করতে পারে না ইত্যাদি। বেঁচে থাকার সব লক্ষণ তার কাছ থেকে হারিয়ে যায়। তবে মৃত্যু এখনো গবেষণার বিষয়। মৃত্যু রহস্য জানার মতো আগ্রহও সবার আছে। বিভিন্ন ধর্মীয় মতে মৃত্যুর নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট ব্যাখা রয়েছে। তবুও আমাদের আগ্রহী ও উৎসাহী মন বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখা জানতে চায়। জানতে চায় বিজ্ঞানের যুক্তি। বিজ্ঞান কিভাবে ব্যাখা দিচ্ছে মৃত্যুর?

বিজ্ঞান কী বলছে মৃত্যু নিয়ে?


(ছবিঃগ গুগল)
মৃত্যু প্রত্যেক জীবের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মৃত্যু বলতে জীবের সেই সকল অবস্থার সমষ্টি যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন শ্বসন, পরিপাক, খাদ্য গ্রহণ, মস্তিষ্ক পরিচলন, কর্মশক্তি ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দেহের কোষগুচ্ছ বিভিন্নভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে থাকে। যেমন হাত-পা কেটে যাওয়া বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া কিংবা নানাভাবে ওই কোষগুচ্ছ বা টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যাকে বলা হয় “মিনি ডেথ” বা ‘‘আংশিক মৃত্যু’’। প্রত্যেক জীবের প্রতিনিয়ত এই মৃত্যু ঘটছে। আর দেহ ও মস্তিষ্কের সমগ্র কোষ যখন একসাথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় তখন তাকে বলা হয় মৃত্যু। তার মানে, মিনি ডেথের সমষ্টিকেও আমরা মৃত্যু বলতে পারি।
আপনার যখন একটি হাত অচল হয়ে গেলো তখন আপনার মৃত্যু ঘটলো। তবে এটা নির্দিষ্ট অঙ্গের মৃত্যু। আর যখন সম্পূর্ণ শরীর এবং মস্তিষ্ক তার তার কার্যক্রম বন্ধ করে দিলো। শ্বশন, পরিপাক, খাদ্যগ্রহণ, অক্সিজেন সরবরাহ, শরীর ও মস্তিষ্ক পরিচলন বন্ধ হয়ে গেলো তখন তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। আর তাকে মৃত বলা হয়।

একটা জীবের কখন মৃত্যু হবে এটা কেউ বলতে পারে না। কোমায় থাকা বা মহামারী কোন উপসর্গ দেখা দিলে হয়ত ডাক্তাররা অনুমানিক একটি সময় বলে দেয়। তবে তা সুনিদ্রিষ্ট না। মৃত্যু এর আগে বা পরেও হতে পারে। মৃতু কখন হবে সেটা জানা সম্ভব নয়, তবে মৃত্যু কিভাবে হয় সেটা জানা সম্ভব। একটা জীবের সম্পূর্ণরুপে মৃত্যুকে সোমাটিক বলা হয়। এটা মৃত্যুর একটা স্তর। যখন কারো সোমাটিক মৃত্যু হবে তখন সে ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক জৈব প্রক্রিয়া হারিয়ে ফেলবে। মিনি ড্যাথের আগে অথবা পরে এই সোমেটিক ড্যাথ হতে পারে। এর মাধ্যমে শ্বসন, মস্তিষ্ক পরিচালন, হৃদস্পন্দন, নড়াচড়া সহ শারীরিক কর্মক্ষমতা কাজ করা বন্ধ হয়ে যায় এবং তার মৃত্যু ঘটে। সোমাটিক মৃত্যু থেকে সম্পূর্ণ মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত বৃক্কগুলি প্রায় ত্রিশ মিনিট, হৃদপিণ্ডের কোষ পনেরো মিনিট এবং মস্তিষ্ক প্রায় পাঁচ মিনিট বেঁচে থাকে। তাই সোমাটিক মৃত্যু ঠিক কখন হয় নির্ণয় করা বিরল প্রক্রিয়া হলেও তার সঠিক মৃত্যু কখন হয়েছে সোমাটিকের পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। মৃত্যুর কয়েক ঘন্টায় শরীরে অক্সিজেন সরবারহ বন্ধ করে দিয়ে রক্তগুল জমাট বাধতে শুরু করে এবং শরীর লাল-নীলচে দেখা যায়। সাত থেকে আট ঘন্টা পর শরীর শক্ত হয়ে যায়। তার ঠিক তিন থেকে চারদিন পর পিউট্রেসিন এবং ক্যাডাভেরিনের মতো জৈবিক যৌগ শরীর ছড়িয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে যায়, ফলে নরখাদক কীট, পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। তারপর দেহ পঁচে গলতে শুরু করে। নখ খসে পড়ে, চুল খসে পড়ে, মগজ গলে নাক কান দিয়ে বের হতে থাকে, ভুঁড়িগুল বের হতে থাকে, অসংখ্য মাছি- পোকা-কীটেরা শরীরের পঁচা দুর্গন্ধী অংশগুল খেতে থাকে। পরিপাক নালীতে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং আণুবীক্ষণিক প্রাণীরা দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আর সবশেষে শুকনো অবশিষ্ট হারে পরিণত হয় চল্লিশ দিন পর।

মৃত্যুর অনুভূতি কেমন?

মৃত্যুর অনুভূতি বা মৃত্যু সময়কার মুহূর্ত কেমন হয়ে থাকে এ নিয়েও বিজ্ঞানীরা কিছু পরীক্ষা চালায়। মৃত্যুর শয্যায় অর্থাৎ কোমায় বা মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা কিছু মানুষের কাছে জিজ্ঞাস করা হলে সেই মুহূর্ত তাদের কেমন অনুভব হয়েছিল। কারো মতে তাদের এমন মনে হয়েছিল যেন তারা অন্য জগতে তলিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার সেই সময় তাদের নিকটাত্মীয়দের চেহারা ভেসে উঠতে দেখেছে। আবার অনেকেই দেখেছে তার গভীর কোথাও তলিয়ে যাচ্ছে যেখানে অন্ধকার আর অন্ধকার। অনেকেই আবার বলেছে তারা এমন অনুভব করেছে যে যেন ধীরে ধীরে সে তার শরীর থেকে বিছিন্ন হয়ে হালকা হয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু মানুষ আবার কিছুই অনুভব করেনি বলে জানায়। তবে বিজ্ঞানের কাছে এর সুনির্দিষ্ট ব্যাখা নেই। মৃত্যু নিয়ে আজও গবেষণা চলছে।

তাহলে মৃত্যু মানেই কী সব শেষ?


বিজ্ঞানীরা বলেছে মৃত্যুর পরে আরেক জীবন থাকলেও থাকতে পারে। যেহেতু মৃত্যু যাত্রা থেকে ফিরে আসা মানুষগুল তাদের অভিজ্ঞতায় বলেছিল তারা তাদের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হালকা হয়ে যাচ্ছিল, কারো বর্ণনামতে গভীর ব্ল্যাক হোলের মাঝে তলিয়ে যাওয়া এটাই নির্দেশ করে যে পৃথিবীর দৈহিক জীবন শেষে তারা অন্য কোথাও বিচরণ করার জন্য এগোচ্ছিল। তবে এখন পর্যন্ত রুপকথাই মানা হয় এমন চিন্তাকে। যদিও এতে ধর্মীয় বর্ণনা আছে। তবুও বিজ্ঞান যুক্তি, বিশ্লেষণ ও প্রামাণ্যসূত্র ছাড়া কথা বলে না।
--
মেহেদী হাসান হাসিব
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ©


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০২
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×